লতিফুর রহমান ব্যবসায় স্বীকৃতি by শওকত হোসেন
‘১৯৭৪ সালের কথা। তখন আমার হাতে নগদ টাকা ছিল না। কিন্তু চা কিনতে হলে টাকা লাগবে। নেদারল্যান্ডসের রটারডাম-ভিত্তিক ভ্যান রিস তখন বিশ্বে চা সরবরাহকারীদের মধ্যে সেরা কোম্পানি। নানা দেশ থেকে চা কিনে তারা সরবরাহ করে। বাংলাদেশে তাদের হয়ে চা কেনার কাজটি পেলাম।
আমাদের পাটকলের একটা হিসাব ছিল উত্তরা ব্যাংকের সঙ্গে। ব্যাংকের কাছে চাইলাম ৫০ লাখ টাকার ঋণ। মেজবাহ উদ্দীন সাহেব তখন উত্তরা ব্যাংকের মুখ্য ব্যবস্থাপক। তিনি ঋণের ব্যবস্থা করে দিলেন, কিন্তু ঋণের মার্জিন ২০ শতাংশ। এর অর্থ হলো আমার নিজের থাকতে হবে ১০ লাখ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ঋণের প্রস্তাবটি গেল ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে। উত্তরা ব্যাংকের এমডি তখন মুশফিকুর সালেহীন।
‘অনেক নামকরা মানুষ। তিনি আমার বাবাকে চিনতেন। বাবা কেমন আছেন জানতে চাইলেন। উঠল মার্জিনের প্রসঙ্গটি। সালেহীন সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিক আছে, মার্জিন ১০ শতাংশ থাকুক।
‘আমার তো তখন চরম আর্থিক সংকট। তাই আমি বললাম, আমার কাছে টাকা নেই। আমি ১০ শতাংশ মার্জিন দিতে পারব না। তিনি এবার বললেন, ঠিক আছে, ৫ শতাংশ দিন। আমি এবার মরিয়া হয়েই বললাম, আমার কাছে কোনো টাকাই নেই। তিনি বললেন, আচ্ছা, কোনো মার্জিনই লাগবে না।
‘সেই ৫০ লাখ টাকা নিয়ে আমি চা কেনা শুরু করলাম। চট্টগ্রামে একটা অফিস নিলাম। শুরু হলো নতুন ব্যবসা। এর ঠিক ১৪ বছর পর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) একটি বড় প্রতিনিধিদল গেল চীন, জাপান ও কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে। সেখানে সালেহীন সাহেবও ছিলেন। সিউল এয়ারপোর্টে আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, আজ আমার যা কিছু অর্জন, তা আপনার জন্যই। কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, সেদিন কেন আপনি আমাকে শূন্য মার্জিনে ঋণ দিয়েছিলেন। এভাবে তো ঋণ দেওয়া হয় না। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, আমার বাবাকে তিনি চিনতেন। তাঁর সুনাম, ব্যাংক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার কথা জানতেন। সেই বাবার ছেলে বলেই বিশেষ সুযোগটি দিয়েছিলেন। তারপর সালেহীন সাহেব আরও একটি কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ১৪ বছর হয়ে গেল। আপনার প্রতি যে আস্থা রেখেছিলাম, তার প্রতিদান দিয়েছেন। এখন যদি আপনার ছেলে আমার কাছে আসে, আমি তাকেও এভাবে ঋণ দেব।’
এবার আমরা চলে যেতে পারি আরও বেশ কয়েক বছর সামনে। ২০১২ সালের ৭ মে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, সুনাম আর সততার স্বীকৃতি হিসেবে এই মানুষটির হাতেই তুলে দেওয়া হলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড। তিনি লতিফুর রহমান, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান।
অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড ব্যবসা-বাণিজ্যের নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত। যাঁরা ব্যবসায় নীতি-নৈতিকতা মানেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভাবেন, মনে রাখেন শ্রমিক ও কর্মচারীদের কল্যাণের কথা, আর যাঁদের রয়েছে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা—তাঁদের জন্যই এই পুরস্কার। বলা যায়, পুরস্কারটি পেয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে আরেকবার উঁচুতে তুললেন লতিফুর রহমান।
জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়ার গল্প
গুলশানে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে বসে লতিফুর রহমান বলছিলেন ফেলে আসা জীবনের গল্প, উঠে আসার গল্প। এখনো তিনি মনে করেন, সেই যে মুশফিকুর সালেহীন বিনা শর্তে ৫০ লাখ টাকার ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেটিই তাঁর জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’। জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল সেই এক ঘটনায়। অথচ এভাবে ঋণ নেওয়ার কথা ছিল না। বলতে গেলে, সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম নিয়েছিলেন। অর্থ কখনোই কোনো সমস্যা ছিল না। বললেন, ‘সেই ১৭ বছর বয়সে আমার একটা নিজস্ব গাড়ি ছিল। ছোট একটা ফিয়াট। আমাদের পাটের বড় ব্যবসা ছিল। বাঙালির তৈরি করা প্রথম পাটকলটি ছিল আমাদের। আর ছিল চা-বাগান। গুলশানে নিজের বাড়ি হয় সেই ১৯৭০ সালেই।’
তার পরও স্বাধীনতার পর সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। সেই গল্পও শোনালেন তিনি, ‘দাদা খান বাহাদুর ওয়ালিউর রহমানের জন্ম চাঁদপুরের চৌদ্দগ্রামের চিওড়া গ্রামে। খুব ছোটবেলায় চলে যান আসামের জলপাইগুড়িতে, মামার কাছে। শুনেছি, কোনো একটা অসুখের কারণে দাদাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মামার কাছে। লেখাপড়া সেখানেই। আইন পাস করে জলপাইগুড়ি বারে আইনি পেশা শুরু করেছিলেন। ১৮৮৫ সালে সেখানে কিছু জমি কিনে চা-বাগান শুরু করেন। তখন চা-বাগানের মালিক ছিল মূলত ব্রিটিশরা। আমার দাদার চা-বাগানই ছিল স্থানীয় কারও মালিকানার প্রথম বাগান। আমার দাদা খান বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন। বাবা মুজিবুর রহমানের জন্ম সেখানেই। কলকাতায় লেখাপড়া করে আসামের তেজপুরে ফিরে সেখানেই জমি কিনে চা-বাগান তৈরি করেন। বাবাও খান বাহাদুর উপাধি পান। দেশভাগের পর সবাই চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৫১ বা ৫২ সালের দিকে সিলেটে নতুন করে চা-বাগান করেন। পাটের ব্যবসাও শুরু করেন। ভৈরব-আশুগঞ্জ এলাকাজুড়ে পাটের ব্যবসা ছিল।’
লতিফুর রহমানের জন্ম জলপাইগুড়িতেই, ১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট। দুই বোনের পর তাঁর জন্ম। পরে আরও এক বোন ও এক ভাই আছেন। ঢাকায় থাকতেন গেন্ডারিয়ায়। ছোটবেলায় পড়তেন সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। সেখান থেকে চলে যান হোলিক্রস স্কুলে। সে সময় হোলিক্রসে ছেলেরাও পড়ত। ১৯৫৬ সালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিলংয়ে। সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে ভর্তি হলেন ক্লাস থ্রিতে। সেখান থেকে কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে।
সময়টা তখন উত্তপ্ত। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা—এসব কারণে ঢাকায় ফিরে এলেন লতিফুর রহমান। এসে ঢুকে গেলেন পাটের ব্যবসায়। বাবা তখন চাঁদপুরে গড়ে তুলেছেন ডব্লিউ রহমান জুট মিল। ১৯৬৩ সালে কাজ শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হলো ১৯৬৬ সালে। ‘সেখানে আমি ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করি ১৯৬৬ সালে। দেড় বছর কাজ শেখার পর একজন নির্বাহী হিসেবে যোগ দিলাম। আমি প্রশাসনটা দেখতাম। এভাবে কাজ করলাম ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।’ বলছিলেন তিনি।
সে এক কঠিন সময়
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবকিছু জাতীয়করণ করা হয়। এর মধ্যে পাটকলও ছিল। কেবল চা-শিল্পে হাত দেওয়া হয়নি। তখন বেশির ভাগ চা-শিল্পের মালিকানা ছিল ব্রিটিশদের। এ কারণেই হয়তো জাতীয়করণের আওতায় এই শিল্প পড়েনি। সে সময় চা পুরোটাই যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। বাইরের সঙ্গে ব্যবসা করার কোনো সুযোগ ছিল না, কীভাবে চা রপ্তানি করতে হয়, তাও জানা ছিল না।
লতিফুর রহমান বললেন, ‘রাতারাতি আমাদের অবস্থা পাল্টে গেল। এটা ঠিক, আমাদের বাড়ি ছিল, চা-বাগান ছিল। কিন্তু হাতে কোনো নগদ টাকা ছিল না। বিক্রি করতে পারছিলাম না বলে চায়ের স্তূপ জমছিল। তখন আমার একটা অফিস ছিল—৫২ মতিঝিল। কিন্তু জাতীয়করণ করায় অফিসের ফার্নিচার পর্যন্ত সরকারি সম্পদ হয়ে গেল। এক হাজার স্কয়ার ফুটের সেই অফিসে ফার্নিচারও থাকল না। জজ কোর্টের পেছনে তখন ফার্নিচার ভাড়া দেওয়ার দোকান ছিল। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু ফার্নিচার ভাড়া করলাম। মনে আছে, ঘর থেকে পাখাও খুলে নিয়ে লাগিয়েছিলাম অফিসে। আমরা বেশ অবস্থাপন্ন ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে যে সবকিছু চলে যেতে পারে, তা তখনই প্রথম দেখলাম। এটা আমার জীবনের একটা বড় শিক্ষা।’
এই জীবনেরও পরিবর্তন এনেছিলেন লতিফুর রহমান। তিনি বললেন, ‘১৯৭২ সালের শেষের দিকে রেনে বারনার নামের একজন সুইস ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁকে নিয়ে গেলাম আমাদের চা-বাগানে। বাগানের অবস্থা তখন করুণ। বিক্রি করতে না পারায় সব চা খোলা পড়ে আছে। সব দেখে তিনি দেশে ফিরে যোগাযোগ করলেন। তখন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে হতো সরকারি সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে। সুতরাং, নিজে থেকে কিছু করার উপায় ছিল না। পণ্যের বিনিময়ে পণ্য, অর্থাৎ বার্টার বা কাউন্টার ট্রেডের ব্যবস্থা ছিল। আমি তা-ও জানতাম না। রেনে বারনার আমাকে জানালেন, বাংলাদেশ বিদেশ থেকে কীটনাশক কিনতে চায়। চায়ের সঙ্গে কীটনাশকের বার্টার ট্রেড হতে পারে। অর্থাৎ, আমি চা দেব, আর ওরা এর বিনিময়ে কীটনাশক দেবে। জার্মানির বায়ার কোম্পানি কীটনাশক বিক্রি করবে। এর অনুমতি নিতে গেলাম তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকীর কাছে। তিনি বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার জন্য লিখে দিলেন। মনে আছে, প্রতিদিন সকাল আটটার আগে সচিবালয়ের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কর্মকর্তারা আসতেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা করতাম। এভাবেই শুরু হলো চা রপ্তানির কাজ। আর এর জন্য গড়ে তোলা হলো নতুন এক কোম্পানি—টি হোল্ডিংস লিমিটেড। বলা যায়, এর মাধ্যমেই আমি আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করলাম। এর পরই আমরা নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি ভ্যান রিস বিভির প্রতিনিধি হলাম।’ তারপর সেই ৫০ লাখ টাকা নেওয়ার গল্প।
কোনো স্থায়ী সম্পদ নয়
কঠিন একটা সময়ে নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও লতিফুর রহমানের মনোজগতে এর ছাপ রয়ে গেল। সে কথা অকপটে মেনেও নিলেন, ‘আমার মধ্যে প্রথম যে ভাবনাটা এল, তা হচ্ছে, অর্থই সবকিছু নয়। হঠাৎ করে সব চলে যেতে পারে। আরেকটা ভাবনা আমার মধ্যে গেঁথে গেল, কোনো স্থায়ী সম্পদে আর কখনো বড় বিনিয়োগ করা যাবে না। আমি ইচ্ছা করলেই একটা ভালো জায়গায় বিশাল ভবন বানাতে পারতাম। সেই ভবনের ভাড়া দিয়েই জীবন চালানো যেত। অনেকেই এভাবে জীবন কাটিয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে জীবনে কিছু কঠিন সময় পার করার কারণে আমি আর এই পথে গেলাম না। কারণ এসব স্থায়ী না-ও হতে পারে। ফলে আমি আর জায়গাজমি বা ভবনে বিনিয়োগ করিনি। আমি কেবল বাণিজ্য করেই ভালো থাকতে পারতাম। এর বদলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়েছি। এসব প্রতিষ্ঠান সব সময় জীবন্ত। এগুলো চালু রাখতে হয়, সম্প্রসারণের দিকে যেতে হয়। বসে থাকার কোনো উপায় নেই।’
১৯৭২ সালে লতিফুর রহমান যখন সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন মাত্র পাঁচজন। ট্রান্সকম গ্রুপে এখন কাজ করছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে নতুন করে শুরু করেছিলেন তিনি। এখন এই গ্রুপের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বছর ট্রান্সকম গ্রুপ ৫৫১ কোটি টাকা কর (আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক মিলিয়ে) দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে তা ১০০ বছর পরও টিকে থাকে। তাহলেই মনে করব কিছু একটা করলাম আমি।’
১০০ বছর টিকে থাকার জন্য নিজস্ব কিছু ভাবনাও আছে লতিফুর রহমানের। আর সেটি হচ্ছে আধুনিক ব্যবস্থাপনা। প্রতিদিন শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু একটি চেকেও তিনি নিজে সই করেন না। তিনি বললেন, ‘আমার নীতি হচ্ছে, সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় নিয়ে এসে তাকেই পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। তাকে সম্মান দিতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠান সেভাবেই চলে। এভাবে না চললে তো সব প্রতিষ্ঠান পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, ব্যবস্থাপনার মানও হতে হবে বিশ্বমানের। আমি সেভাবেই চেষ্টা করছি।’
জীবনের আরেক গল্প
লতিফুর রহমানের জীবনে ছোট্ট আরেকটি গল্পও আছে। পড়তেন শিলংয়ে। কাছাকাছিই থাকতেন শাহনাজ রহমান। তখনই পরিচয়, তারপর সম্পর্ক। তাঁরা বিয়ে করলেন ১৯৬৫ সালে। তারপর দুজনই চলে এলেন ঢাকায়। দীর্ঘ ৪৭ বছরের সংসারজীবন। এক মেয়েকে হারিয়েছেন। এখন এক ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে পুরো পরিবার।
ভালো সিনেমা এলে দেখেন ডিভিডিতে। গান শুনতেও পছন্দ করেন লতিফুর রহমান। কিছুটা শাস্ত্রীয় ঘরানার গান বেশি পছন্দ। তবে অবসর সময়ের বড় সঙ্গী এখন চার নাতি। আর পুরো পরিবার চেষ্টা করে একসঙ্গে বাইরে থেকে কোথাও ঘুরে আসতে। সময় পেলেই সবাই এক হন, বাইরে কোথাও যান।
পারিবারিক মূল্যবোধকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন লতিফুর রহমান। আর আস্থা রাখেন দেশের ওপর। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবার একটাই পাসপোর্ট—বাংলাদেশের। আমরা কখনো অন্য দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করিনি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, এ দেশের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি মনে করি, অনেক সম্ভাবনা আছে এখানে। যদি রাজনৈতিক বিভেদ না থাকত, তাহলে আরও অনেক দূর এগোতে পারত বাংলাদেশ।’
লতিফুর রহমান বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক এই সংঘাত সব সময় থাকবে না। সময়ের পরিক্রমায় এসব চলে যাবে। কেননা তরুণেরা এগিয়ে আসছে। তাঁর সবচেয়ে বেশি আস্থা এই তরুণ প্রজন্মের প্রতিই। গভীর প্রত্যয় নিয়ে তিনি বললেন, ‘তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে যাবে, এটি আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
‘অনেক নামকরা মানুষ। তিনি আমার বাবাকে চিনতেন। বাবা কেমন আছেন জানতে চাইলেন। উঠল মার্জিনের প্রসঙ্গটি। সালেহীন সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিক আছে, মার্জিন ১০ শতাংশ থাকুক।
‘আমার তো তখন চরম আর্থিক সংকট। তাই আমি বললাম, আমার কাছে টাকা নেই। আমি ১০ শতাংশ মার্জিন দিতে পারব না। তিনি এবার বললেন, ঠিক আছে, ৫ শতাংশ দিন। আমি এবার মরিয়া হয়েই বললাম, আমার কাছে কোনো টাকাই নেই। তিনি বললেন, আচ্ছা, কোনো মার্জিনই লাগবে না।
‘সেই ৫০ লাখ টাকা নিয়ে আমি চা কেনা শুরু করলাম। চট্টগ্রামে একটা অফিস নিলাম। শুরু হলো নতুন ব্যবসা। এর ঠিক ১৪ বছর পর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) একটি বড় প্রতিনিধিদল গেল চীন, জাপান ও কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে। সেখানে সালেহীন সাহেবও ছিলেন। সিউল এয়ারপোর্টে আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, আজ আমার যা কিছু অর্জন, তা আপনার জন্যই। কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, সেদিন কেন আপনি আমাকে শূন্য মার্জিনে ঋণ দিয়েছিলেন। এভাবে তো ঋণ দেওয়া হয় না। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, আমার বাবাকে তিনি চিনতেন। তাঁর সুনাম, ব্যাংক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার কথা জানতেন। সেই বাবার ছেলে বলেই বিশেষ সুযোগটি দিয়েছিলেন। তারপর সালেহীন সাহেব আরও একটি কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ১৪ বছর হয়ে গেল। আপনার প্রতি যে আস্থা রেখেছিলাম, তার প্রতিদান দিয়েছেন। এখন যদি আপনার ছেলে আমার কাছে আসে, আমি তাকেও এভাবে ঋণ দেব।’
এবার আমরা চলে যেতে পারি আরও বেশ কয়েক বছর সামনে। ২০১২ সালের ৭ মে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, সুনাম আর সততার স্বীকৃতি হিসেবে এই মানুষটির হাতেই তুলে দেওয়া হলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড। তিনি লতিফুর রহমান, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান।
অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড ব্যবসা-বাণিজ্যের নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত। যাঁরা ব্যবসায় নীতি-নৈতিকতা মানেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভাবেন, মনে রাখেন শ্রমিক ও কর্মচারীদের কল্যাণের কথা, আর যাঁদের রয়েছে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা—তাঁদের জন্যই এই পুরস্কার। বলা যায়, পুরস্কারটি পেয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে আরেকবার উঁচুতে তুললেন লতিফুর রহমান।
জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়ার গল্প
গুলশানে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে বসে লতিফুর রহমান বলছিলেন ফেলে আসা জীবনের গল্প, উঠে আসার গল্প। এখনো তিনি মনে করেন, সেই যে মুশফিকুর সালেহীন বিনা শর্তে ৫০ লাখ টাকার ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেটিই তাঁর জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’। জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল সেই এক ঘটনায়। অথচ এভাবে ঋণ নেওয়ার কথা ছিল না। বলতে গেলে, সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম নিয়েছিলেন। অর্থ কখনোই কোনো সমস্যা ছিল না। বললেন, ‘সেই ১৭ বছর বয়সে আমার একটা নিজস্ব গাড়ি ছিল। ছোট একটা ফিয়াট। আমাদের পাটের বড় ব্যবসা ছিল। বাঙালির তৈরি করা প্রথম পাটকলটি ছিল আমাদের। আর ছিল চা-বাগান। গুলশানে নিজের বাড়ি হয় সেই ১৯৭০ সালেই।’
তার পরও স্বাধীনতার পর সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। সেই গল্পও শোনালেন তিনি, ‘দাদা খান বাহাদুর ওয়ালিউর রহমানের জন্ম চাঁদপুরের চৌদ্দগ্রামের চিওড়া গ্রামে। খুব ছোটবেলায় চলে যান আসামের জলপাইগুড়িতে, মামার কাছে। শুনেছি, কোনো একটা অসুখের কারণে দাদাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মামার কাছে। লেখাপড়া সেখানেই। আইন পাস করে জলপাইগুড়ি বারে আইনি পেশা শুরু করেছিলেন। ১৮৮৫ সালে সেখানে কিছু জমি কিনে চা-বাগান শুরু করেন। তখন চা-বাগানের মালিক ছিল মূলত ব্রিটিশরা। আমার দাদার চা-বাগানই ছিল স্থানীয় কারও মালিকানার প্রথম বাগান। আমার দাদা খান বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন। বাবা মুজিবুর রহমানের জন্ম সেখানেই। কলকাতায় লেখাপড়া করে আসামের তেজপুরে ফিরে সেখানেই জমি কিনে চা-বাগান তৈরি করেন। বাবাও খান বাহাদুর উপাধি পান। দেশভাগের পর সবাই চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৫১ বা ৫২ সালের দিকে সিলেটে নতুন করে চা-বাগান করেন। পাটের ব্যবসাও শুরু করেন। ভৈরব-আশুগঞ্জ এলাকাজুড়ে পাটের ব্যবসা ছিল।’
লতিফুর রহমানের জন্ম জলপাইগুড়িতেই, ১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট। দুই বোনের পর তাঁর জন্ম। পরে আরও এক বোন ও এক ভাই আছেন। ঢাকায় থাকতেন গেন্ডারিয়ায়। ছোটবেলায় পড়তেন সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। সেখান থেকে চলে যান হোলিক্রস স্কুলে। সে সময় হোলিক্রসে ছেলেরাও পড়ত। ১৯৫৬ সালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিলংয়ে। সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে ভর্তি হলেন ক্লাস থ্রিতে। সেখান থেকে কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে।
সময়টা তখন উত্তপ্ত। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা—এসব কারণে ঢাকায় ফিরে এলেন লতিফুর রহমান। এসে ঢুকে গেলেন পাটের ব্যবসায়। বাবা তখন চাঁদপুরে গড়ে তুলেছেন ডব্লিউ রহমান জুট মিল। ১৯৬৩ সালে কাজ শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হলো ১৯৬৬ সালে। ‘সেখানে আমি ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করি ১৯৬৬ সালে। দেড় বছর কাজ শেখার পর একজন নির্বাহী হিসেবে যোগ দিলাম। আমি প্রশাসনটা দেখতাম। এভাবে কাজ করলাম ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।’ বলছিলেন তিনি।
সে এক কঠিন সময়
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবকিছু জাতীয়করণ করা হয়। এর মধ্যে পাটকলও ছিল। কেবল চা-শিল্পে হাত দেওয়া হয়নি। তখন বেশির ভাগ চা-শিল্পের মালিকানা ছিল ব্রিটিশদের। এ কারণেই হয়তো জাতীয়করণের আওতায় এই শিল্প পড়েনি। সে সময় চা পুরোটাই যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। বাইরের সঙ্গে ব্যবসা করার কোনো সুযোগ ছিল না, কীভাবে চা রপ্তানি করতে হয়, তাও জানা ছিল না।
লতিফুর রহমান বললেন, ‘রাতারাতি আমাদের অবস্থা পাল্টে গেল। এটা ঠিক, আমাদের বাড়ি ছিল, চা-বাগান ছিল। কিন্তু হাতে কোনো নগদ টাকা ছিল না। বিক্রি করতে পারছিলাম না বলে চায়ের স্তূপ জমছিল। তখন আমার একটা অফিস ছিল—৫২ মতিঝিল। কিন্তু জাতীয়করণ করায় অফিসের ফার্নিচার পর্যন্ত সরকারি সম্পদ হয়ে গেল। এক হাজার স্কয়ার ফুটের সেই অফিসে ফার্নিচারও থাকল না। জজ কোর্টের পেছনে তখন ফার্নিচার ভাড়া দেওয়ার দোকান ছিল। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু ফার্নিচার ভাড়া করলাম। মনে আছে, ঘর থেকে পাখাও খুলে নিয়ে লাগিয়েছিলাম অফিসে। আমরা বেশ অবস্থাপন্ন ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে যে সবকিছু চলে যেতে পারে, তা তখনই প্রথম দেখলাম। এটা আমার জীবনের একটা বড় শিক্ষা।’
এই জীবনেরও পরিবর্তন এনেছিলেন লতিফুর রহমান। তিনি বললেন, ‘১৯৭২ সালের শেষের দিকে রেনে বারনার নামের একজন সুইস ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁকে নিয়ে গেলাম আমাদের চা-বাগানে। বাগানের অবস্থা তখন করুণ। বিক্রি করতে না পারায় সব চা খোলা পড়ে আছে। সব দেখে তিনি দেশে ফিরে যোগাযোগ করলেন। তখন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে হতো সরকারি সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে। সুতরাং, নিজে থেকে কিছু করার উপায় ছিল না। পণ্যের বিনিময়ে পণ্য, অর্থাৎ বার্টার বা কাউন্টার ট্রেডের ব্যবস্থা ছিল। আমি তা-ও জানতাম না। রেনে বারনার আমাকে জানালেন, বাংলাদেশ বিদেশ থেকে কীটনাশক কিনতে চায়। চায়ের সঙ্গে কীটনাশকের বার্টার ট্রেড হতে পারে। অর্থাৎ, আমি চা দেব, আর ওরা এর বিনিময়ে কীটনাশক দেবে। জার্মানির বায়ার কোম্পানি কীটনাশক বিক্রি করবে। এর অনুমতি নিতে গেলাম তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকীর কাছে। তিনি বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার জন্য লিখে দিলেন। মনে আছে, প্রতিদিন সকাল আটটার আগে সচিবালয়ের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কর্মকর্তারা আসতেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা করতাম। এভাবেই শুরু হলো চা রপ্তানির কাজ। আর এর জন্য গড়ে তোলা হলো নতুন এক কোম্পানি—টি হোল্ডিংস লিমিটেড। বলা যায়, এর মাধ্যমেই আমি আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করলাম। এর পরই আমরা নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি ভ্যান রিস বিভির প্রতিনিধি হলাম।’ তারপর সেই ৫০ লাখ টাকা নেওয়ার গল্প।
কোনো স্থায়ী সম্পদ নয়
কঠিন একটা সময়ে নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও লতিফুর রহমানের মনোজগতে এর ছাপ রয়ে গেল। সে কথা অকপটে মেনেও নিলেন, ‘আমার মধ্যে প্রথম যে ভাবনাটা এল, তা হচ্ছে, অর্থই সবকিছু নয়। হঠাৎ করে সব চলে যেতে পারে। আরেকটা ভাবনা আমার মধ্যে গেঁথে গেল, কোনো স্থায়ী সম্পদে আর কখনো বড় বিনিয়োগ করা যাবে না। আমি ইচ্ছা করলেই একটা ভালো জায়গায় বিশাল ভবন বানাতে পারতাম। সেই ভবনের ভাড়া দিয়েই জীবন চালানো যেত। অনেকেই এভাবে জীবন কাটিয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে জীবনে কিছু কঠিন সময় পার করার কারণে আমি আর এই পথে গেলাম না। কারণ এসব স্থায়ী না-ও হতে পারে। ফলে আমি আর জায়গাজমি বা ভবনে বিনিয়োগ করিনি। আমি কেবল বাণিজ্য করেই ভালো থাকতে পারতাম। এর বদলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়েছি। এসব প্রতিষ্ঠান সব সময় জীবন্ত। এগুলো চালু রাখতে হয়, সম্প্রসারণের দিকে যেতে হয়। বসে থাকার কোনো উপায় নেই।’
১৯৭২ সালে লতিফুর রহমান যখন সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন মাত্র পাঁচজন। ট্রান্সকম গ্রুপে এখন কাজ করছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে নতুন করে শুরু করেছিলেন তিনি। এখন এই গ্রুপের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বছর ট্রান্সকম গ্রুপ ৫৫১ কোটি টাকা কর (আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক মিলিয়ে) দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে তা ১০০ বছর পরও টিকে থাকে। তাহলেই মনে করব কিছু একটা করলাম আমি।’
১০০ বছর টিকে থাকার জন্য নিজস্ব কিছু ভাবনাও আছে লতিফুর রহমানের। আর সেটি হচ্ছে আধুনিক ব্যবস্থাপনা। প্রতিদিন শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু একটি চেকেও তিনি নিজে সই করেন না। তিনি বললেন, ‘আমার নীতি হচ্ছে, সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় নিয়ে এসে তাকেই পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। তাকে সম্মান দিতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠান সেভাবেই চলে। এভাবে না চললে তো সব প্রতিষ্ঠান পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, ব্যবস্থাপনার মানও হতে হবে বিশ্বমানের। আমি সেভাবেই চেষ্টা করছি।’
জীবনের আরেক গল্প
লতিফুর রহমানের জীবনে ছোট্ট আরেকটি গল্পও আছে। পড়তেন শিলংয়ে। কাছাকাছিই থাকতেন শাহনাজ রহমান। তখনই পরিচয়, তারপর সম্পর্ক। তাঁরা বিয়ে করলেন ১৯৬৫ সালে। তারপর দুজনই চলে এলেন ঢাকায়। দীর্ঘ ৪৭ বছরের সংসারজীবন। এক মেয়েকে হারিয়েছেন। এখন এক ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে পুরো পরিবার।
ভালো সিনেমা এলে দেখেন ডিভিডিতে। গান শুনতেও পছন্দ করেন লতিফুর রহমান। কিছুটা শাস্ত্রীয় ঘরানার গান বেশি পছন্দ। তবে অবসর সময়ের বড় সঙ্গী এখন চার নাতি। আর পুরো পরিবার চেষ্টা করে একসঙ্গে বাইরে থেকে কোথাও ঘুরে আসতে। সময় পেলেই সবাই এক হন, বাইরে কোথাও যান।
পারিবারিক মূল্যবোধকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন লতিফুর রহমান। আর আস্থা রাখেন দেশের ওপর। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবার একটাই পাসপোর্ট—বাংলাদেশের। আমরা কখনো অন্য দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করিনি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, এ দেশের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি মনে করি, অনেক সম্ভাবনা আছে এখানে। যদি রাজনৈতিক বিভেদ না থাকত, তাহলে আরও অনেক দূর এগোতে পারত বাংলাদেশ।’
লতিফুর রহমান বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক এই সংঘাত সব সময় থাকবে না। সময়ের পরিক্রমায় এসব চলে যাবে। কেননা তরুণেরা এগিয়ে আসছে। তাঁর সবচেয়ে বেশি আস্থা এই তরুণ প্রজন্মের প্রতিই। গভীর প্রত্যয় নিয়ে তিনি বললেন, ‘তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে যাবে, এটি আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
No comments