মানবাধিকার পরিস্থিতি
অবস্থার কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এমন প্রতিবেদন প্রতিবছরই প্রকাশ করছে। প্রতিবেদনের বিষয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার রিপোর্ট ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে, বর্তমান সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে যে অঙ্গীকার করেছিল, তা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলো হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতন, সামাজিক সহিংসতা ও নারীর প্রতি বৈষম্য, আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্য ও সামাজিক সহিংসতা থেকে তাদের রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতা। এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরাপত্তা বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতন। এর পরই রয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য। আদিবাসীদের রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতা এবং তাদের প্রতি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণও একটি বড় সমস্যা বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিষয়ে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিভিন্ন গুম, হেফাজতে মৃত্যু, অকারণে গ্রেপ্তার ও আটকের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কারাবন্দিত্ব মাঝেমধ্যেই জীবনের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে বিচারপূর্ব দীর্ঘ কারাবাসও বাংলাদেশের বড় মানবাধিকার সমস্যা। এসবের পাশাপাশি বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণ, গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, সাংবাদিক নির্যাতন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সহিংসতা ঘটানো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ জাতীয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সরকারি মহল থেকে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অ্যামনেস্টি ঢালাওভাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তিনি এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। এটাই সরকারপক্ষের স্বাভাবিক আচরণ। তবে এই প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে। কিন্তু প্রশ্ন তোলার আগে নিশ্চিত হতে হবে, অভিযোগগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন। প্রতিবেদনে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, সেসব ঘটনা এখানে ঘটেনি- এটা নিশ্চিত করে বলতে হবে। এমন হতে পারে, সরকারের তথ্যের সঙ্গে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যের গরমিল আছে। কিন্তু ঘটনা কি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? নারী-পরিস্থিতি নিয়েই যদি কথা বলা হয়, তাহলে বলা যাবে, নারী উন্নয়ন সরকারের অন্যতম প্রাধিকারভুক্ত কর্মসূচি। কিন্তু নারী নির্যাতন কি বন্ধ হয়েছে? সরকার অবশ্যই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি দায় এড়াতে পারছে?
এ অবস্থায় প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যের সত্যাসত্য নিয়ে আলোচনার চেয়ে সেগুলো পর্যালোচনা করা উচিত। দেশে তেমন পরিস্থিতি থাকলে তা নিরসনে সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের কল্যাণই হচ্ছে বড় কথা। কয়েক বছর আগেও যে অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ, সে অবস্থায় এখনো থাকবে কেন? দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কেন এখনো প্রশ্ন তোলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, সেদিকেই দৃষ্টি দিতে হবে।
No comments