লোকসানি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি

সেবামূলক ও লাভজনক হতে পারে কোটি কোটি টাকা সরকারের কোষাগার থেকে ব্যয় করেও রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি ঋণে জর্জরিত। একই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবাও নিশ্চিত করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। নিয়মিত গাড়ি আমদানি করার পরও কার্যক্ষম গাড়ির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে প্রতিবছর।


সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করার পরিবর্তে বাস-ট্রাক কেনার দিকে বেশি নজর দেওয়া হয়। রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার কারণে স্বল্পসময়ের মধ্যেই গাড়ি অকেজো হয়ে যাওয়ার সংবাদও প্রায়ই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও দুর্নীতি রোধ করার ব্যাপারে কোনো সরকারই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। বরং সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল রেখে যেন দুর্নীতির মাত্রাও বেড়ে যায়। দুর্নীতি আর অবহেলার কারণে প্রতিষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান ঋণ শোধ করতে হয় সরকারি কোষাগার থেকে। বিদেশি ঋণের এই টাকা শোধ করতে হয় দেশের সুনাম রক্ষার জন্য। দেশ যে ঋণখেলাপি নয়, তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সুনাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজ কর্মীদের বোধ জাগে না। তাঁরা কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করেন না যথাযথভাবে। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো দু-চারটি গাড়ি নিয়ে যাত্রা করে যেখানে বছর পার হলে গাড়ির বহর বাড়িয়ে নিতে পারছে, সেখানে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাটির চিত্র উল্টো হওয়ার কারণগুলো আমরা জানি। সংস্থাটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও কম কথা হয়নি। এমনকি এই সংস্থার চালক থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান- কেউই এই অভিযোগ থেকে মুক্ত নন।
এ প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য পরিবর্তন না হওয়ার পেছনে প্রতিষ্ঠানের বাইরের একটি চক্রের ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। এ সিন্ডিকেটটি অনেক প্রভাবশালী। প্রভাবশালী এ চক্রটি নিজেদের স্বার্থে বিআরটিসিকে অক্ষম করার সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। বিআরটিসির ভাড়া যৌক্তিক হওয়ার কারণে যাত্রীরা এই বাসে চড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বীদের অসাধু প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠানটির চলার পথকে সুগম করে না। রাজধানীতে যানজট নিরসনে ডাবল ডেকার বিশেষ ভূমিকা রাখার পরও বিআরটিসির ডাবল ডেকারগুলোর প্রতি অবহেলা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ মুহূর্তে গণপরিবহন খাতকে জনমুখী করার জন্য গাড়ির বহর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, সংগত কারণেই প্রতিষ্ঠানটিতে স্বচ্ছতা আনা জরুরি। জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারলে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। দক্ষ জনশক্তিকে অদক্ষভাবে পরিচালনা করার বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। সুষ্ঠু পরিচালনা, কর্মীদের আন্তরিকতা এবং বাইরের অবৈধ চাপ বন্ধ করার মাধ্যমে বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নিম্নমানের গাড়ি আমদানি না করার নীতি গ্রহণ করার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.