চারদিক-বীরশ্রেষ্ঠর জাদুঘরে একদিন by নুরুন্নবী চৌধুরী
দ্বীপজেলা ভোলার বুকে জন্ম নেওয়া শহীদ সিপাহি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন। তাঁরই স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখতে তাঁর পিতৃনিবাস ভোলা জেলার আলীনগর ইউনিয়নে ২০০৭ সালে সরকারি তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। জাদুঘরের কথা অনেক আগেই শুনেছিলাম কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠে না।
অবশেষে একদিন যাওয়ার জন্য মনস্থির করতেই নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না। রওনা দিতেই অন্য রকম এক অনুভূতিতে মন ভরে যাচ্ছিল। যেনতেন তো নয়, দেশসেরা সূর্যসন্তান এক বীরশ্রেষ্ঠর জাদুঘরে যাচ্ছি তখন। আলীনগর মাদ্রাসা রোড দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে দুই পাশে সবুজ গাছের সারি। চলন্ত অবস্থায় গাছগুলোকেও যেন এক চলন্ত যান মনে হচ্ছিল। অবশেষে পৌঁছে গেলাম জাদুঘরের সামনে। স্থানীয় আলীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীনগর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ—এই তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থিত সুবিন্যস্ত একতলা দালানে তৈরি এই জাদুঘর। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায়। জাদুঘরের সামনের মাঠে খেলছিল একদল শিশু-কিশোর। মূল গেট পার হয়ে জাদুঘরের গেট খুলে চত্বরে পা দিতেই আবারও এক গর্বভরা অনুভূতিতে মন ছেয়ে গেল। মূল দরজার দুপাশে সুন্দরভাবে বসার জায়গা আর নানা ধরনের গাছের সমারোহ। দেরি না করে গেলাম জাদুঘরের মূল আকর্ষণ পাঠাগারে। পা রাখতেই চারপাশে সারি সারি সাজানো বই চোখে পড়ল। পাঠাগার, মিলনায়তন আর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন চিত্রের সমারোহ নিমেষেই অন্য রকম এক অনুভূতিতে মন কেড়ে নেয় আগত দর্শকদের। এ ছাড়া জাদুঘরে রক্ষিত স্মৃতিচিহ্ন আর বই নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার কাজটি করে যাচ্ছে।
নানা ধরনের বইয়ের মধ্যে প্রতিটি বিষয়ের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা আলমারি। প্রতিটি আলমারিতে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক নাম, যা দেখে যে বই প্রয়োজন, তা পাওয়া যাবে। রয়েছে জীবনী, উপন্যাস, ধর্মীয়, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, রচনাবলি, মুক্তিযুদ্ধ, সাধারণ জ্ঞান, শিশুসাহিত্য, কবিতাসমগ্রসহ নানা ধরনের বই। বইয়ের পাশাপাশি পড়ার জন্য বড় মিলনায়তনকক্ষে ছোট ছোট টেবিল সাজানো আছে। সাজানো বইয়ের এক পাশে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠর ব্যবহূত সামগ্রী আর ছবি। বই ছাড়াও এই পাঠাগারে রয়েছে প্রতিদিনের জাতীয় দৈনিক পড়ার সুযোগ। প্রতিদিন শিক্ষার্থী ছাড়াও অনেকেই জাদুঘর দেখতে আসে। নিজের বাসায় কেউ বেড়াতে এলে এমনভাবে তাকেও জাদুঘর দেখাতে নিয়ে আসেন ব্যাংকার আবুল কালাম আজাদ। বীরশ্রেষ্ঠর জন্ম নিজ গ্রামের পাশেই বলে গর্বিত তিনি জানান, ‘সময় পেলেই পরিবার আর বাসায় আসা অতিথিদের এই জাদুঘর দেখাতে নিয়ে আসি।’ তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন তাঁর দুই মেয়ে আর ছোট ছেলে জাদুঘরের বই আর বীরশ্রেষ্ঠর ব্যবহূত সামগ্রী দেখতে ব্যস্ত। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া জাবের আজাদকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘বীরশ্রেষ্ঠর গল্প আমাদের বইতে আছে। ভালো লাগে, তাই বাবার সঙ্গে দেখতে আসি।’ একই অভিমত জানাল তার বড় দুই বোন নুসরাত জাহান ও ইসরাত জাহান। জাদুঘরের সবকিছু দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে সমস্যা নেই। রয়েছে সুন্দর বিশ্রামাগার আর বারান্দায় বসার ব্যবস্থা। পাঠাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ সেলিম জানান, শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই অনেকে আসে বীরশ্রেষ্ঠর এই জাদুঘর দেখতে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকলেও শুক্র ও শনিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে বলে জানান তিনি। জাদুঘরকে ঘিরে সব সময়ই এক ধরনের আগ্রহ থাকে সাধারণ মানুষের। পাশেই রাস্তা থাকায় পথ দিয়ে যেতে থাকা পথচারীরা কিছু সময় থমকে দাঁড়িয়ে যায় জাদুঘরের পাশে। জাদুঘরের পাশ ঘিরেই রয়েছে পুকুর। চারপাশে গাছঘেরা পুুকুরের স্বচ্ছ পানি মন জুড়িয়ে দেয় পথচারী আর জাদুঘর দেখতে আসা দর্শকদের। জাদুঘরের পেছনের দিকে রয়েছে ঈদগাহ। জাদুঘর দেখা শেষে ইচ্ছে হলো পাশেই থাকা বীরশ্রেষ্ঠর বাড়ি দেখার। জাদুঘর থেকে একটু দূরেই এই বাড়িতে বীরশ্রেষ্ঠর মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন। বাড়ির পাশেই বীরশ্রেষ্ঠর বাবা মো. হাবিবুর রহমানের কবর। যিনি নিজেও সেনাবাহিনীর একজন হাবিলদার ছিলেন। বাড়ির পাশের রাস্তা চলে গেছে একদিকে। গ্রামটির আগের নাম মৌটুপী হলেও বীরশ্রেষ্ঠর বাড়ি হওয়ায় গ্রামের নামকরণ করা হয় ‘মোস্তফা কামাল নগর’। জাদুঘর থেকে বের হয়ে আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতেই জানা গেল বীরশ্রেষ্ঠর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার বিষয়টি। দেশের গর্বিত এই সন্তানের জন্মস্থান আর নিজ এলাকায় জাদুঘর হওয়ায় নিজেরাও যে গর্বিত, সে কথাই জানালেন তাঁরা। পাশেই থাকা দোকান থেকে চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। সূর্য তখন ডোবার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। জাদুঘর থেকে যাওয়ার সময়ও হয়ে এল। যেতে যেতে চারপাশে থাকা ঘরবাড়ি আর মানুষও যেন বলছে, দেশের জন্য জীবন দেওয়া সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য গর্বিত দেশের মানুষ। গন্তব্যের দিকে গাড়ি এগিয়ে যেতে যেতে পেছনে তাকালাম। আবারও এক ভালো লাগায় মন পরিপূর্ণ হয়ে গেল। সালাম দেশসেরা সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। আর সব সময়ই স্মরণ করি বীরশ্রেষ্ঠদের। যাঁদের সাহসী আত্মত্যাগের বিনিময়ে মিলেছে আমাদের এই প্রিয় দেশ।
নানা ধরনের বইয়ের মধ্যে প্রতিটি বিষয়ের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা আলমারি। প্রতিটি আলমারিতে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক নাম, যা দেখে যে বই প্রয়োজন, তা পাওয়া যাবে। রয়েছে জীবনী, উপন্যাস, ধর্মীয়, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, রচনাবলি, মুক্তিযুদ্ধ, সাধারণ জ্ঞান, শিশুসাহিত্য, কবিতাসমগ্রসহ নানা ধরনের বই। বইয়ের পাশাপাশি পড়ার জন্য বড় মিলনায়তনকক্ষে ছোট ছোট টেবিল সাজানো আছে। সাজানো বইয়ের এক পাশে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠর ব্যবহূত সামগ্রী আর ছবি। বই ছাড়াও এই পাঠাগারে রয়েছে প্রতিদিনের জাতীয় দৈনিক পড়ার সুযোগ। প্রতিদিন শিক্ষার্থী ছাড়াও অনেকেই জাদুঘর দেখতে আসে। নিজের বাসায় কেউ বেড়াতে এলে এমনভাবে তাকেও জাদুঘর দেখাতে নিয়ে আসেন ব্যাংকার আবুল কালাম আজাদ। বীরশ্রেষ্ঠর জন্ম নিজ গ্রামের পাশেই বলে গর্বিত তিনি জানান, ‘সময় পেলেই পরিবার আর বাসায় আসা অতিথিদের এই জাদুঘর দেখাতে নিয়ে আসি।’ তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন তাঁর দুই মেয়ে আর ছোট ছেলে জাদুঘরের বই আর বীরশ্রেষ্ঠর ব্যবহূত সামগ্রী দেখতে ব্যস্ত। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া জাবের আজাদকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘বীরশ্রেষ্ঠর গল্প আমাদের বইতে আছে। ভালো লাগে, তাই বাবার সঙ্গে দেখতে আসি।’ একই অভিমত জানাল তার বড় দুই বোন নুসরাত জাহান ও ইসরাত জাহান। জাদুঘরের সবকিছু দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে সমস্যা নেই। রয়েছে সুন্দর বিশ্রামাগার আর বারান্দায় বসার ব্যবস্থা। পাঠাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ সেলিম জানান, শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই অনেকে আসে বীরশ্রেষ্ঠর এই জাদুঘর দেখতে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকলেও শুক্র ও শনিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে বলে জানান তিনি। জাদুঘরকে ঘিরে সব সময়ই এক ধরনের আগ্রহ থাকে সাধারণ মানুষের। পাশেই রাস্তা থাকায় পথ দিয়ে যেতে থাকা পথচারীরা কিছু সময় থমকে দাঁড়িয়ে যায় জাদুঘরের পাশে। জাদুঘরের পাশ ঘিরেই রয়েছে পুকুর। চারপাশে গাছঘেরা পুুকুরের স্বচ্ছ পানি মন জুড়িয়ে দেয় পথচারী আর জাদুঘর দেখতে আসা দর্শকদের। জাদুঘরের পেছনের দিকে রয়েছে ঈদগাহ। জাদুঘর দেখা শেষে ইচ্ছে হলো পাশেই থাকা বীরশ্রেষ্ঠর বাড়ি দেখার। জাদুঘর থেকে একটু দূরেই এই বাড়িতে বীরশ্রেষ্ঠর মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন। বাড়ির পাশেই বীরশ্রেষ্ঠর বাবা মো. হাবিবুর রহমানের কবর। যিনি নিজেও সেনাবাহিনীর একজন হাবিলদার ছিলেন। বাড়ির পাশের রাস্তা চলে গেছে একদিকে। গ্রামটির আগের নাম মৌটুপী হলেও বীরশ্রেষ্ঠর বাড়ি হওয়ায় গ্রামের নামকরণ করা হয় ‘মোস্তফা কামাল নগর’। জাদুঘর থেকে বের হয়ে আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতেই জানা গেল বীরশ্রেষ্ঠর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার বিষয়টি। দেশের গর্বিত এই সন্তানের জন্মস্থান আর নিজ এলাকায় জাদুঘর হওয়ায় নিজেরাও যে গর্বিত, সে কথাই জানালেন তাঁরা। পাশেই থাকা দোকান থেকে চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। সূর্য তখন ডোবার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। জাদুঘর থেকে যাওয়ার সময়ও হয়ে এল। যেতে যেতে চারপাশে থাকা ঘরবাড়ি আর মানুষও যেন বলছে, দেশের জন্য জীবন দেওয়া সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য গর্বিত দেশের মানুষ। গন্তব্যের দিকে গাড়ি এগিয়ে যেতে যেতে পেছনে তাকালাম। আবারও এক ভালো লাগায় মন পরিপূর্ণ হয়ে গেল। সালাম দেশসেরা সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। আর সব সময়ই স্মরণ করি বীরশ্রেষ্ঠদের। যাঁদের সাহসী আত্মত্যাগের বিনিময়ে মিলেছে আমাদের এই প্রিয় দেশ।
No comments