হাসপাতালে ভাংচুর-গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে আগত চিকিৎসার্থীর স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে ভাংচুর চালিয়েছেন এমন উদাহরণ কয়েকটি। সর্বশেষ ঘটনা উত্তরার আইসি হাসপাতালের।
চিকিৎসার্থী এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এ হাসপাতালে যে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। রোগীর মৃত্যুর পেছনে হাসপাতালটির দায় আছে কি-না সেটি বিবেচ্য বিষয় হতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই হাসপাতালের মতো সেবাদান কেন্দ্রে ভাংচুর চালানো উচিত নয়। সকলেই জানেন, হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন এবং রোগীদের অনেকেই মরণাপন্ন। অনেক রোগীর যেমন জরুরি শুশ্রূষা দরকার, তেমনি অনেকেরই দরকার নির্বিঘ্ন ও প্রশান্ত পরিবেশ। কিন্তু দেশের হাসপাতালগুলোর কতটিতে এমন পরিবেশ আছে সন্দেহ। আর হাসপাতালেই যদি ভাংচুর-লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটে তবে রোগীদের ওপর কতটা মানসিক চাপ পড়ে সেটি ভেবে দেখা দরকার। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে, হাসপাতালগুলোর উচিত রোগীর স্বজনদের কাছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া। আর ডাক্তার, নার্সদের সেবা ও সহমর্মিতার মাধ্যমেই সন্তোষজনক ব্যাখ্যার প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি, সরকারের তরফে এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত যাতে চিকিৎসার্থীরা ভুল চিকিৎসা বা অন্য ধরনের গাফিলতির শিকার হলে তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন এবং বিহিত চাইতে পারেন। শুধু হাসপাতালের বাইরের লোকেরাই নন, হাসপাতালের ভেতরের মানুষরাও হাসপাতালের নির্বিঘ্ন পরিবেশ ও সেবা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার প্রতি কতটা যত্নশীল সে প্রশ্নও উঠবে। কেননা, ছোট-বড় নানা অজুহাতে কর্মবিরতি ও ধর্মঘটের উদাহরণ অনেক। এগুলো করেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। আর এতে চিকিৎসার্থীরা নিদারুণ বিপন্নতা বোধ করেন। এবার তৈরি হলো আরও ন্যক্কারজনক এক উদাহরণ। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ছাত্রলীগ কর্মীদের একাংশ হাসপাতালেই ভাংচুর চালালেন। বহিরাগত সন্ত্রাসী ও অভ্যন্তরীণ ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের যুগপৎ আক্রমণে ব্যাপক ভাংচুরের শিকার হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ। জরুরি সেবা ছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগের সেবাদান প্রক্রিয়াও আপাতত বন্ধ। গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বহিরাগত বখাটে ও সন্ত্রাসীরা নানাভাবে হাসপাতালে বিচরণ করত। দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা টপকে তারা ছাত্রীনিবাসে ছাত্রীদের উত্যক্ত করত। তাদের বাধা দিয়েছিল ছাত্রলীগের একাংশ। এই বাধাদান বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিক্ষুব্ধ করেছে। তারা হামলা চালিয়েছে হাসপাতালে। আর ভেতরের সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য হামলা চালিয়েছে কলেজে। আর এই দুই হামলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়েছেন চিকিৎসার্থী মানুষরা। জরুরি প্রয়োজনে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের ভোগান্তি সেখানে বেড়ে চলেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করছেন ডাক্তাররা। প্রশ্ন হলো, হাসপাতালের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ সেবাদান প্রতিষ্ঠান কেন এতটা অরক্ষিত থাকবে? যে কেউ চাইলে যে কোনো সময় মেডিকেল কলেজে ঢুকে অপ্রীতিকর কাজ করবে আর সেটি দেখার কেউ থাকবে না? দলবদ্ধ সন্ত্রাসীরা জোট বেঁধে হাসপাতালে হামলা করতে এলে বাধা দেওয়ার কেউ থাকবে না? আর ছাত্রদের দায়িত্বশীলতাও কি এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে তারা এখন নিজেদের প্রতিষ্ঠানে এভাবে ভাংচুর চালাতে পারেন? আমরা মনে করি, অতিদ্রুত হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে ভাংচুরের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত হতে হবে। আর হাসপাতালের সেবা ও চিকিৎসাদান কার্যক্রমকেও দ্রুত স্বখাতে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য দায়িত্বশীলদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
No comments