আবার অশান্ত পাহাড়
আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। আবার পাহাড়ি ও স্থানীয় বাঙালিদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে তিনজন স্থানীয় বাঙালির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। স্থানীয় বাঙালিদের অবরোধের কারণে বন্ধ হয়ে যায় খাগড়াছড়ি-ফেনী-চট্টগ্রাম সড়কের যান চলাচল। এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
পাহাড়ি-বাঙালি সমস্যা পার্বত্য এলাকার নতুন সমস্যা নয়। দীর্ঘদিন থেকে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে স্থানীয় বাঙালিদের বিরোধ চলে আসছে। বিরোধ মূলত পাহাড়ের জমির মালিকানা নিয়ে। রবিবার সেখানে যে সংঘর্ষ হয়েছে, সেটাও জমি নিয়েই। প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, মাসখানেক আগে এক বাঙালি একটি বিরোধপূর্ণ জায়গায় ঘর তোলে। পাহাড়ি লোকজন তখন এতে বাধা দিয়েছিল। গত রবিবার কিছু শ্রমিক নিয়ে সেই জমিতে কাজ করতে গেলে পাহাড়িরা সেখানে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় আশপাশের কয়েকটি এলাকার পাহাড়িদের বাড়িঘর। অন্যদিকে বাঙালিদের দাবি, তাদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত এলাকা শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত বলে পুলিশ ও প্রশাসন জানিয়েছে।
পাহাড়ে বাঙালি ও পাহাড়িদের সমস্যা নতুন নয়। এলাকায় বসতি স্থাপনকারী বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে আস্থার সংকট প্রবল। একদিকে পাহাড়িরা বাঙালিদের তাদের আস্থায় নিতে পারে না, অন্যদিকে বাঙালিরাও পাহাড়িদের বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে না। পাহাড়িরা মনে করে পাহাড়ের জমিতে তাদেরই অধিকার। বাঙালিরা সেখানে জমি দখল করতে গেছে। পাহাড়ে গত বছরও সংঘর্ষ হয়েছিল। জমি নিয়েই সেখানে মূলত পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ হয়ে থাকে। পাহাড়ি ও বাঙালিদের এই পারস্পরিক বিশ্বাস-অবিশ্বাসকে পুঁজি করে রাজনীতিও কম হয়নি। রাজনীতি হয়েছে প্রচুর, রক্তক্ষরণ হয়েছে, কিন্তু থেমে থাকেনি পার্বত্য এলাকার সংঘাত। সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনা দুঃখজনক। অনেক সময় দেখা যায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের পেছনে কাজ করে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ। একটি স্বার্থান্বেষী মহল পাহাড়ি ও বাঙালিদের এই বিরোধ জিইয়ে রাখতে চায়। সেই হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই মাঝেমধ্যে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে গোলযোগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ খাগড়াছড়িতে হয়েছে, তার পেছনেও অপরাজনীতির কোনো হীন স্বার্থ কাজ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত আছে। কিন্তু শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আনতে হলে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। পাহাড়ে বসবাসকারী পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে হবে। পাহাড়ের জমি নিয়ে যে বিরোধ রয়েছে, তা অবিলম্বে মিটিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাহাড়ে শান্তির বিকল্প নেই। পাহাড়ের এই শান্তির জন্য সরকারকে এখনই সব ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পাহাড় আবারও যেকোনো সময় অশান্ত ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ফিরে আসুক_এটাই সবার কাম্য।
No comments