কালের পুরাণ-প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ: অর্ধেক গ্লাস খালি, অর্ধেক পূর্ণ by সোহরাব হাসান
সাধারণত সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথাগত আনুষ্ঠানিক ভাষণ নিয়ে মানুষ বেশি মাথা ঘামায় না। তারা ভাবে, এ ধরনের ভাষণ হলো নিজের ঢাক নিজেই পিটিয়ে যাওয়া। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণটি সেদিক থেকে কিছুটা ভিন্নতার দাবি রাখে।
দুই বছরে সরকার কী করতে পেরেছে, সেটি যেমন তিনি সবিস্তারে জানিয়ে দিয়েছেন, তেমনই কী করতে পারেনি, তা-ও স্বীকার করেছেন। জনগণ দেখছে, গ্লাসের অর্ধেক পানি ভর্তি, অর্ধেক খালি। তিন বছরে বাকি গ্লাস পূর্ণ হবে, নাকি ভরা পানিটুকুও দলীয় মাস্তানেরা খালি করে দেবে—সেই প্রশ্নই এখন সবার মনে।
গতকাল সকালে প্রথম আলো অনলাইনে চোখ রাখতেই দেখলাম, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি ব্যাপক এবং অবশ্যই মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
লেখার শুরুতে অনলাইনে দেওয়া কয়েকজন পাঠকের মন্তব্য তুলে ধরছি। তারপর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিশ্লেষণ করব।
এইচ এম রহমতউল্লাহ নামের এক পাঠক রাত দুইটা ৩৪ মিনিটে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার সন্দেহাতীতভাবে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর চেয়ে ভালো। কিন্তু সরকারকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর আরও মনোযোগী হতে হবে।
বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক নামের একজন পাঠক পাঁচটা চার মিনিটে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভবিষ্যৎ উত্তেজনা (রাজনৈতিক) এড়িয়ে চলুন এবং কী কী করব, তার চেয়ে কী কী করছি, তা-ই শুনতে চাই। অনুগ্রহ করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে থামান। তারা আপনার সব সাফল্যকে হত্যা করছে।’
এম এন নবী চৌধুরী পাঁচটা ৩১ মিনিটে লিখেছেন, ‘দয়া করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখুন, কৃষকের জন্য ভর্তুকি, রেশনিং-সুবিধা, যেকোনো মূল্যে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্যাস সরবরাহ বাড়ান।’
শামসুল হক ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘কিছু মন্ত্রী আর আমলা বড়লোক হয়েছেন, কিছু ব্যবসায়ী আরও বড় হয়েছেন, আর শিক্ষা বিভাগে কিছু মামুলি সাফল্য ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোনো সাফল্য নেই বললেই চলে।’
এটিই হলো জনগণের মনের কথা।
২.
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘একটু ধৈর্য ধরুন। আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করবই।’ তিনি স্বীকার করেছেন, ‘স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পার হতে চললেও জাতির পিতা শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।’ এই ব্যর্থতার জন্য নিশ্চয়ই দেশের কৃষক, শ্রমিক তথা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। দায়ী তারাই, যারা প্রায় চার দশক ধরে দেশ শাসন করে আসছে। আওয়ামী লীগ তিন দফায় সাড়ে ১০ বছর দেশ চালিয়েছে। ওই সময়ের দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সফলতা যেমন আছে, তেমনই বিফলতাও কম নয়। এই দলটিতে যেমন তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন, তেমনই ছিলেন খন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, শফিউল আলম প্রধানও। এখনকার আওয়ামী লীগেও যে সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী লোক নেই, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলে অনেকে বিএনপিতে লাইন দেবেন।
এরপরই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রীর এই প্রত্যয়ের সঙ্গে দ্বিমত না করেও যে কথাটি বলতে চাই, তা হলো, আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী কি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চান? বিএনপি-জামায়াত চায় না, সে কথা সত্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের কত জন চায়? নেত্রকোনায় মণি সিংহ মেলায় হামলা করেছে বিএনপির কেউ নন, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ, বিদেশে যাঁর চিকিৎসা করাতে সাহায্য করেছিলেন কমরেড মণি সিংহ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে এই সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জেও সাংসদ কবরীকে লক্ষ্য করে যে গুলি ছুড়েছেন, তিনি শ্রমিক লীগেরই স্থানীয় নেতা।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রথম দুই বছরের সঙ্গে বর্তমান সরকারের দুই বছরের তুলনা করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বতোভাবে ব্যর্থ সরকারের সঙ্গে তুলনা না করে গত দুই বছরে প্রতিবেশী ভারত ও চীন কতটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে তুলনা করলেই ভালো করতেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘গত দুই বছরে জনকল্যাণে আমরা যেসব কর্মসূচি নিয়েছি, তার সব কটির ফলাফল হয়তো এখনই পাওয়া যাবে না। সময়ের পরিক্রমায় দেশবাসী এসব কর্মসূচির ফল দেখতে পাবে।’ এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা একমত। সব কাজের ফল রাতারাতি পাওয়া যায় না। তবে সূচনাটা তো করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণের জন্য কাজ করেনি বলেই গত নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং বিদ্যুৎ খাত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কথায়ও যুক্তি আছে। কিন্তু মানুষ এত চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে যাবে না। তারা সোজাসুজি হিসাব করবে, দুই বছর আগে এক কেজি চালের দাম কী ছিল, এখন কত। চালের দাম অতীতে অনেক সরকারকে বিপদে ফেলেছে, আবার চালের দাম কম রেখেও কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। সুশাসনের বিষয়টি হলো সামগ্রিক। সেই বিচারে মহাজোট সরকার এখনো কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। অন্তত বিভিন্ন জরিপের ফলাফল তা-ই বলে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকটের মূলে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ব্যর্থতা; তারা খাম্বা বসালেও এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। কিন্তু বিএনপি সরকার বিদায় নিয়েছে চার বছর আগে। এখন আর তাদের ব্যর্থতার পুরোনো গল্প শুনিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা যাবে না। গত দুই বছরে কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে, আগামী এক বছরে কত মেগাওয়াট যোগ হবে, সেই পরিসংখ্যানও তাদের আশ্বস্ত করবে না। তারা দেখতে চাইবে লোডশেডিং নেই, ঘরে-অফিসে, শিল্পে-খামারে ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণের জন্য দুই বছর কম সময় নয়। সরকার প্রতি মাসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করছে, চাহিদা বাড়ছে তার কয়েক গুণ। অতএব, ২০০৬ সালে কী দুরবস্থা ছিল, সেটি আর জনগণ জানতে চায় না। তারা দেখতে চায়, ২০১১ সালে তাদের দুর্ভোগ কতটা কমেছে।
প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের দাবি করেছেন। কিন্তু ঢাকা মহানগরে যে অসহনীয় যানজট চলছে, তার প্রতিকারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। উড়াল রেল, পাতাল ট্রেনের গল্প শুনে আসছি বহু বছর ধরে। বিএনপি সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও শুনিয়েছিলেন। এখন শুধু মুখের কথায় চিঁড়ে ভিজবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি বিজ্ঞানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। খুবই খাঁটি কথা। কিন্তু তাঁর সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ নিরক্ষর মুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখনো শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করা যায়নি দারিদ্র্য ও অন্যান্য কারণে। একটি ভালো শিক্ষানীতি দেওয়ার জন্য সরকার প্রশংসা পেতে পারে। অসৎ আমলা এবং কোথাও চাকরি না পাওয়া শিক্ষক দিয়ে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রয়োজন নেই। প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করুন। মানসম্পন্ন হাইস্কুল করুন। কলেজ করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। জাতীয় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় মাথাপিছু আয়ও ৭৮০ ডলার হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৫ কোটি ডলার। এটি মুদ্রার এক পিঠ। অপর পিঠ হলো, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাচ্ছে, প্রবাসী শ্রমিকেরা দলে দলে ফিরে আসছেন। বর্তমান অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রপ্তানি-আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি হয়েছে বলে সরকার কৃতিত্ব দাবি করছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যাঁদের অবদান, সেই তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা কী? মাসে তিন হাজার টাকা বেতনও ঠিকমতো দেওয়া হয় না। বেতন চাইতে গেলে মালিকের নির্যাতন ভোগ করতে হয়। না-হয় আগুনে পুড়ে কিংবা পুলিশের গুলি খেয়ে মরতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আরেকটু ধৈর্য ধরতে বলেছেন। দেশবাসী ধৈর্য ধরতে রাজি আছে। কিন্তু তাঁর দলের নেতা-কর্মী, মন্ত্রী-এমপিরা ধৈর্য ধরতে রাজি আছেন কি না? তাঁদের অনেকের ভাবসাব দেখে মনে হয়, এই মেয়াদই শেষ। ভবিষ্যতে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাকি কাজ সম্পন্ন করবে, সেই ধৈর্য তাঁদের নেই। তাঁরা এখনই সবকিছু লুটেপুটে খেতে চান। সুশাসনের বড় অস্ত্র হলো আইন মেনে চলা এবং দুঃশাসনের বড় অস্ত্র হলো জবরদস্তি। এখনো জবরদস্তিতে আওয়ামী লীগ হয়তো বিএনপিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তবে আগামী তিন বছরে বোঝা যাবে, সূচক কোন দিকে যায়।
গত দুই বছর বিদ্যুৎ খাতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে কতটা সফল হয়েছে, কতটা বিনিয়োগ বেড়েছে, তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই জনগণের আছে। গত এক বছরে কী করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, কী করেছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়? ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময়ে শোনা গিয়েছিল, অথবা শোনানো হয়েছিল, শিগগিরই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে, কিন্তু হয়নি। ভারতকে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রানজিট-সুবিধা দিচ্ছি। কিন্তু বাণিজ্য-বৈষম্য কমানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ট্রানজিটের বিনিময়ে আমাদের কী আর্থিক লাভ হবে, তা-ও জানানো হচ্ছে না।
৩.
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের দিন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার দুটি মতামত জরিপ প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর জরিপ পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, এখনো অধিকাংশ মানুষ সরকারের প্রতি আস্থাশীল। এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে উত্তরদাতাদের শতকরা ৪৮ ভাগ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান, যেখানে খালেদার জিয়ার পক্ষে ৪০ জন। সরকারের জনপ্রিয়তা কমলেও বাড়েনি বিরোধী দলের প্রতি মানুষের আস্থা-সমর্থন। গত বছর বর্তমান সরকারের কৃষি, শিক্ষা, অর্থনৈতিক নীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংবিধান সংশোধন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অধিকাংশ মানুষ মত দিয়েছে। কিন্তু অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদ পরিচালনায়, দুর্নীতি দমন অভিযান এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে। প্রধানমন্ত্রী যেদিন দেশবাসীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে বললেন, সেদিনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা এক ছাত্রকে পিটিয়েছে ছাত্রী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায়। নেত্রীর প্রতি এটা কেমন সহযোগিতা? এরাই নাকি সোনার বাংলা গড়ার সোনার ছেলে। দুরবিন দিয়ে সবকিছুতে ষড়যন্ত্র আবিষ্কার না করে ছাত্রলীগের মাস্তানদের ঠেকান, ঠিকাদারি কাজ না পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর ওপর চড়াও হওয়া এমপিকে সামলান।
স্বীকার করি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হতে হলে কতগুলো প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। বিএনপি সেসব প্রশ্নের মীমাংসা করতে প্রস্তুত আছে কি না? তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় কি না? তারা জঙ্গিতোষণ নীতি পরিহার করবে কি না? ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপির নেতৃত্ব তথা তৎকালীন সরকারের ভূমিকা কী ছিল, সেটাও জানাতে হবে। অন্যদিকে সরকারকেও সবকিছুতে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার থেকে নিবৃত্ত থাকতে হবে। যেকোনো অছিলায় জিয়াকে পাকিস্তানি এজেন্ট বলা, কিংবা বিরোধী দলকে রাস্তায় বের হতে না দেওয়া গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র মানলে বিরোধী দলের সঙ্গে ন্যূনতম সমঝোতা থাকতে হবে। সংসদকে কার্যকর করতে সরকারি দলের ভূমিকাই প্রধান। সরকারকে এও বুঝতে হবে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দিনবদলের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে।
তার চেয়েও সরকারের জন্য যে কথাটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো, বিএনপি বিরোধী দলে থেকে খুব বেশি ক্ষতি করতে পারবে না; যে ক্ষতি করতে পারবে আওয়ামী লীগের মাস্তানেরা। অতএব ‘হইতে সাবধান’।
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net
গতকাল সকালে প্রথম আলো অনলাইনে চোখ রাখতেই দেখলাম, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি ব্যাপক এবং অবশ্যই মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
লেখার শুরুতে অনলাইনে দেওয়া কয়েকজন পাঠকের মন্তব্য তুলে ধরছি। তারপর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিশ্লেষণ করব।
এইচ এম রহমতউল্লাহ নামের এক পাঠক রাত দুইটা ৩৪ মিনিটে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার সন্দেহাতীতভাবে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর চেয়ে ভালো। কিন্তু সরকারকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর আরও মনোযোগী হতে হবে।
বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক নামের একজন পাঠক পাঁচটা চার মিনিটে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভবিষ্যৎ উত্তেজনা (রাজনৈতিক) এড়িয়ে চলুন এবং কী কী করব, তার চেয়ে কী কী করছি, তা-ই শুনতে চাই। অনুগ্রহ করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে থামান। তারা আপনার সব সাফল্যকে হত্যা করছে।’
এম এন নবী চৌধুরী পাঁচটা ৩১ মিনিটে লিখেছেন, ‘দয়া করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখুন, কৃষকের জন্য ভর্তুকি, রেশনিং-সুবিধা, যেকোনো মূল্যে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্যাস সরবরাহ বাড়ান।’
শামসুল হক ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘কিছু মন্ত্রী আর আমলা বড়লোক হয়েছেন, কিছু ব্যবসায়ী আরও বড় হয়েছেন, আর শিক্ষা বিভাগে কিছু মামুলি সাফল্য ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোনো সাফল্য নেই বললেই চলে।’
এটিই হলো জনগণের মনের কথা।
২.
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘একটু ধৈর্য ধরুন। আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করবই।’ তিনি স্বীকার করেছেন, ‘স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পার হতে চললেও জাতির পিতা শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।’ এই ব্যর্থতার জন্য নিশ্চয়ই দেশের কৃষক, শ্রমিক তথা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। দায়ী তারাই, যারা প্রায় চার দশক ধরে দেশ শাসন করে আসছে। আওয়ামী লীগ তিন দফায় সাড়ে ১০ বছর দেশ চালিয়েছে। ওই সময়ের দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সফলতা যেমন আছে, তেমনই বিফলতাও কম নয়। এই দলটিতে যেমন তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন, তেমনই ছিলেন খন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, শফিউল আলম প্রধানও। এখনকার আওয়ামী লীগেও যে সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী লোক নেই, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলে অনেকে বিএনপিতে লাইন দেবেন।
এরপরই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রীর এই প্রত্যয়ের সঙ্গে দ্বিমত না করেও যে কথাটি বলতে চাই, তা হলো, আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী কি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চান? বিএনপি-জামায়াত চায় না, সে কথা সত্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের কত জন চায়? নেত্রকোনায় মণি সিংহ মেলায় হামলা করেছে বিএনপির কেউ নন, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ, বিদেশে যাঁর চিকিৎসা করাতে সাহায্য করেছিলেন কমরেড মণি সিংহ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে এই সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জেও সাংসদ কবরীকে লক্ষ্য করে যে গুলি ছুড়েছেন, তিনি শ্রমিক লীগেরই স্থানীয় নেতা।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রথম দুই বছরের সঙ্গে বর্তমান সরকারের দুই বছরের তুলনা করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বতোভাবে ব্যর্থ সরকারের সঙ্গে তুলনা না করে গত দুই বছরে প্রতিবেশী ভারত ও চীন কতটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে তুলনা করলেই ভালো করতেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘গত দুই বছরে জনকল্যাণে আমরা যেসব কর্মসূচি নিয়েছি, তার সব কটির ফলাফল হয়তো এখনই পাওয়া যাবে না। সময়ের পরিক্রমায় দেশবাসী এসব কর্মসূচির ফল দেখতে পাবে।’ এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা একমত। সব কাজের ফল রাতারাতি পাওয়া যায় না। তবে সূচনাটা তো করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণের জন্য কাজ করেনি বলেই গত নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং বিদ্যুৎ খাত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কথায়ও যুক্তি আছে। কিন্তু মানুষ এত চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে যাবে না। তারা সোজাসুজি হিসাব করবে, দুই বছর আগে এক কেজি চালের দাম কী ছিল, এখন কত। চালের দাম অতীতে অনেক সরকারকে বিপদে ফেলেছে, আবার চালের দাম কম রেখেও কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। সুশাসনের বিষয়টি হলো সামগ্রিক। সেই বিচারে মহাজোট সরকার এখনো কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। অন্তত বিভিন্ন জরিপের ফলাফল তা-ই বলে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকটের মূলে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ব্যর্থতা; তারা খাম্বা বসালেও এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। কিন্তু বিএনপি সরকার বিদায় নিয়েছে চার বছর আগে। এখন আর তাদের ব্যর্থতার পুরোনো গল্প শুনিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা যাবে না। গত দুই বছরে কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে, আগামী এক বছরে কত মেগাওয়াট যোগ হবে, সেই পরিসংখ্যানও তাদের আশ্বস্ত করবে না। তারা দেখতে চাইবে লোডশেডিং নেই, ঘরে-অফিসে, শিল্পে-খামারে ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণের জন্য দুই বছর কম সময় নয়। সরকার প্রতি মাসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করছে, চাহিদা বাড়ছে তার কয়েক গুণ। অতএব, ২০০৬ সালে কী দুরবস্থা ছিল, সেটি আর জনগণ জানতে চায় না। তারা দেখতে চায়, ২০১১ সালে তাদের দুর্ভোগ কতটা কমেছে।
প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের দাবি করেছেন। কিন্তু ঢাকা মহানগরে যে অসহনীয় যানজট চলছে, তার প্রতিকারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। উড়াল রেল, পাতাল ট্রেনের গল্প শুনে আসছি বহু বছর ধরে। বিএনপি সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও শুনিয়েছিলেন। এখন শুধু মুখের কথায় চিঁড়ে ভিজবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি বিজ্ঞানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। খুবই খাঁটি কথা। কিন্তু তাঁর সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ নিরক্ষর মুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখনো শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করা যায়নি দারিদ্র্য ও অন্যান্য কারণে। একটি ভালো শিক্ষানীতি দেওয়ার জন্য সরকার প্রশংসা পেতে পারে। অসৎ আমলা এবং কোথাও চাকরি না পাওয়া শিক্ষক দিয়ে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রয়োজন নেই। প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করুন। মানসম্পন্ন হাইস্কুল করুন। কলেজ করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। জাতীয় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় মাথাপিছু আয়ও ৭৮০ ডলার হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৫ কোটি ডলার। এটি মুদ্রার এক পিঠ। অপর পিঠ হলো, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাচ্ছে, প্রবাসী শ্রমিকেরা দলে দলে ফিরে আসছেন। বর্তমান অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রপ্তানি-আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি হয়েছে বলে সরকার কৃতিত্ব দাবি করছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যাঁদের অবদান, সেই তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা কী? মাসে তিন হাজার টাকা বেতনও ঠিকমতো দেওয়া হয় না। বেতন চাইতে গেলে মালিকের নির্যাতন ভোগ করতে হয়। না-হয় আগুনে পুড়ে কিংবা পুলিশের গুলি খেয়ে মরতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আরেকটু ধৈর্য ধরতে বলেছেন। দেশবাসী ধৈর্য ধরতে রাজি আছে। কিন্তু তাঁর দলের নেতা-কর্মী, মন্ত্রী-এমপিরা ধৈর্য ধরতে রাজি আছেন কি না? তাঁদের অনেকের ভাবসাব দেখে মনে হয়, এই মেয়াদই শেষ। ভবিষ্যতে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাকি কাজ সম্পন্ন করবে, সেই ধৈর্য তাঁদের নেই। তাঁরা এখনই সবকিছু লুটেপুটে খেতে চান। সুশাসনের বড় অস্ত্র হলো আইন মেনে চলা এবং দুঃশাসনের বড় অস্ত্র হলো জবরদস্তি। এখনো জবরদস্তিতে আওয়ামী লীগ হয়তো বিএনপিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তবে আগামী তিন বছরে বোঝা যাবে, সূচক কোন দিকে যায়।
গত দুই বছর বিদ্যুৎ খাতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে কতটা সফল হয়েছে, কতটা বিনিয়োগ বেড়েছে, তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই জনগণের আছে। গত এক বছরে কী করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, কী করেছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়? ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময়ে শোনা গিয়েছিল, অথবা শোনানো হয়েছিল, শিগগিরই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে, কিন্তু হয়নি। ভারতকে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রানজিট-সুবিধা দিচ্ছি। কিন্তু বাণিজ্য-বৈষম্য কমানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ট্রানজিটের বিনিময়ে আমাদের কী আর্থিক লাভ হবে, তা-ও জানানো হচ্ছে না।
৩.
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের দিন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার দুটি মতামত জরিপ প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর জরিপ পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, এখনো অধিকাংশ মানুষ সরকারের প্রতি আস্থাশীল। এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে উত্তরদাতাদের শতকরা ৪৮ ভাগ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান, যেখানে খালেদার জিয়ার পক্ষে ৪০ জন। সরকারের জনপ্রিয়তা কমলেও বাড়েনি বিরোধী দলের প্রতি মানুষের আস্থা-সমর্থন। গত বছর বর্তমান সরকারের কৃষি, শিক্ষা, অর্থনৈতিক নীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংবিধান সংশোধন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অধিকাংশ মানুষ মত দিয়েছে। কিন্তু অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদ পরিচালনায়, দুর্নীতি দমন অভিযান এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে। প্রধানমন্ত্রী যেদিন দেশবাসীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে বললেন, সেদিনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা এক ছাত্রকে পিটিয়েছে ছাত্রী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায়। নেত্রীর প্রতি এটা কেমন সহযোগিতা? এরাই নাকি সোনার বাংলা গড়ার সোনার ছেলে। দুরবিন দিয়ে সবকিছুতে ষড়যন্ত্র আবিষ্কার না করে ছাত্রলীগের মাস্তানদের ঠেকান, ঠিকাদারি কাজ না পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর ওপর চড়াও হওয়া এমপিকে সামলান।
স্বীকার করি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হতে হলে কতগুলো প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। বিএনপি সেসব প্রশ্নের মীমাংসা করতে প্রস্তুত আছে কি না? তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় কি না? তারা জঙ্গিতোষণ নীতি পরিহার করবে কি না? ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপির নেতৃত্ব তথা তৎকালীন সরকারের ভূমিকা কী ছিল, সেটাও জানাতে হবে। অন্যদিকে সরকারকেও সবকিছুতে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার থেকে নিবৃত্ত থাকতে হবে। যেকোনো অছিলায় জিয়াকে পাকিস্তানি এজেন্ট বলা, কিংবা বিরোধী দলকে রাস্তায় বের হতে না দেওয়া গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র মানলে বিরোধী দলের সঙ্গে ন্যূনতম সমঝোতা থাকতে হবে। সংসদকে কার্যকর করতে সরকারি দলের ভূমিকাই প্রধান। সরকারকে এও বুঝতে হবে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দিনবদলের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে।
তার চেয়েও সরকারের জন্য যে কথাটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো, বিএনপি বিরোধী দলে থেকে খুব বেশি ক্ষতি করতে পারবে না; যে ক্ষতি করতে পারবে আওয়ামী লীগের মাস্তানেরা। অতএব ‘হইতে সাবধান’।
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net
No comments