কে কাকে ছুড়ে ফেলবে? by জাহিরুল ইসলাম
গত সপ্তাহে ঢাকায় বিএনপি আহূত গণঅনশনের সমাপনী ভাষণে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, ভবিষ্যতে জনগণের সরকার ক্ষমতায় এলে এ সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। কেননা, এটা কোনো সংবিধান নয়, এটা আওয়ামী লীগের দলীয় ইশতেহার। সন্দেহ নেই, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।
এটি 'ছুড়ে ফেলার' মতো কোনো জিনিস নয়। তাই নূ্যনতম বিবেচনাবোধ আছে, এমন যে কেউ স্বীকার করবে, 'ছুড়ে ফেলা হবে' শব্দগুলো দ্বারা বিরোধীদলীয় নেতা সংবিধান সম্পর্কে যে মনোভাব পোষণ করেছেন, তা বেঁফাস ও অসম্মানজনক। বিরোধীদলীয় নেতা সংশোধিত সংবিধানকে আওয়ামী লীগের দলীয় ইশতেহার বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সংশোধিত সংবিধান কেন আওয়ামী লীগের দলীয় ইশতেহার, তার স্বপক্ষে কোনো যুক্তি কিংবা ব্যাখ্যা তিনি দেননি। শুধু মোটা দাগে একটা মন্তব্য করে তিনি সাধারণ মানুষের মন ভোলানোর চেষ্টা করেছেন। তাহলে তিনি এ কথা বললেন কেন? অসত্য বক্তব্য দিয়ে তিনি জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করলেন, নাকি জনগণকে ধোঁকা দিতে গিয়ে প্রকারান্তরে সংবিধান ও আওয়ামী লীগের ইশতেহার সম্পর্কে নিজেরই অজ্ঞতা প্রকাশ করলেন?
নিয়ম অনুযায়ী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণই সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, জনগণই ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করে। তাই এ কথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য যে, ক্ষমতায় যেতে হলে বিএনপিকে জনগণের সমর্থন নিয়েই। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটাই একমাত্র এবং অদ্বিতীয় পথ। কিন্তু বিএনপি নেতাদের বোধোদয় না হলেও এ কথা সত্য যে, কৌশলগত কিছু ভুলের কারণে পথটিকে তারা নিজেরা ক্রমেই কণ্টকাকীর্ণ করে তুলছেন। মূলধারার জনগণের চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন তারা। এটা তারা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না যে, বিশ্বাসঘাতকদের মিত্রদেরও মানুষ বিশ্বাসঘাতকই মনে করে।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত বিএনপির প্রধান মিত্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার ফলে কার্যত জামায়াত এখন উপায়হীন। ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্ন পরে। রাজনীতিতে থাকতে হলে এখন অন্তত তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে। তাই জামায়াতের পক্ষ থেকে কয়েক দিন আগে বিএনপিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে 'মহাজাতীয় ঐক্য' গড়তে। কারা হবে সে জোটের শরিক? প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, জামায়াতের মতো ইসলামী ও সমমনা কয়েকটি দলই এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভরসা। সে ক্ষেত্রে একটি নিদারুণ বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ দলই নামসর্বস্ব। ব্যতিক্রম দু'একটি ছাড়া সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামানত খোয়ানোর দলে।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যতটুকু বুঝি তাতে মনে হয়, ঈদের পর জামায়াতের পরামর্শমতো সমমনা ও ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে মহাজাতীয় ঐক্য গড়বে বিএনপি। তাতে কার বেশি লাভ? জোটের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল জামায়াতের। বিএনপির পাশাপাশি বাকি দলগুলোর কাঁধে ভর করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করবে তারা। এসব দলের সঙ্গে জোট গঠনের ফলে মূলধারার জনগণের চেতনা থেকে বিএনপি সরে যাবে আরও এক ধাপ দূরে। ফলে তারা ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার সংবিধান 'ছুড়ে ফেলার' স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। বরং জনগণ আগামী নির্বাচনে বিএনপিকেই ছুড়ে ফেলবে রাজনীতির ময়দান থেকে।
zahirul.du@gmail.com
নিয়ম অনুযায়ী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণই সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, জনগণই ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করে। তাই এ কথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য যে, ক্ষমতায় যেতে হলে বিএনপিকে জনগণের সমর্থন নিয়েই। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটাই একমাত্র এবং অদ্বিতীয় পথ। কিন্তু বিএনপি নেতাদের বোধোদয় না হলেও এ কথা সত্য যে, কৌশলগত কিছু ভুলের কারণে পথটিকে তারা নিজেরা ক্রমেই কণ্টকাকীর্ণ করে তুলছেন। মূলধারার জনগণের চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন তারা। এটা তারা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না যে, বিশ্বাসঘাতকদের মিত্রদেরও মানুষ বিশ্বাসঘাতকই মনে করে।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত বিএনপির প্রধান মিত্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার ফলে কার্যত জামায়াত এখন উপায়হীন। ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্ন পরে। রাজনীতিতে থাকতে হলে এখন অন্তত তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে। তাই জামায়াতের পক্ষ থেকে কয়েক দিন আগে বিএনপিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে 'মহাজাতীয় ঐক্য' গড়তে। কারা হবে সে জোটের শরিক? প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, জামায়াতের মতো ইসলামী ও সমমনা কয়েকটি দলই এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভরসা। সে ক্ষেত্রে একটি নিদারুণ বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ দলই নামসর্বস্ব। ব্যতিক্রম দু'একটি ছাড়া সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামানত খোয়ানোর দলে।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যতটুকু বুঝি তাতে মনে হয়, ঈদের পর জামায়াতের পরামর্শমতো সমমনা ও ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে মহাজাতীয় ঐক্য গড়বে বিএনপি। তাতে কার বেশি লাভ? জোটের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল জামায়াতের। বিএনপির পাশাপাশি বাকি দলগুলোর কাঁধে ভর করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করবে তারা। এসব দলের সঙ্গে জোট গঠনের ফলে মূলধারার জনগণের চেতনা থেকে বিএনপি সরে যাবে আরও এক ধাপ দূরে। ফলে তারা ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার সংবিধান 'ছুড়ে ফেলার' স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। বরং জনগণ আগামী নির্বাচনে বিএনপিকেই ছুড়ে ফেলবে রাজনীতির ময়দান থেকে।
zahirul.du@gmail.com
No comments