কৃষি খাতে ব্যাংক ঋণ-অর্থনীতির দায় ভুললে চলবে না
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের গুরুত্ব অপরিসীম_ এটা কেতাবি কথা। কৃষি, কৃষক ও কৃষি মজুরদের অবস্থা যে খুব একটা ভালো নেই, এটাও আপ্তবাক্যের মতো। কিন্তু দিন বদলে যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশে চরম খাদ্য সংকটের মুখে বাংলাদেশ তার ১৬ কোটি মানুষের জন্য নিজের খাদ্য নিজে জোগাতে পারছে_ এ তথ্য চমৎকৃত করার মতো।
এর পেছনে কৃষকের অবদান সবাই স্বীকার করে। ব্যাংকিং খাত আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি করে কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখনও যে এসব ক্ষেত্রে অনেক কিছু করার রয়েছে তার নজির বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশনা। বৃহস্পতিবার সমকালে 'কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক' শিরোনামের খবরে বলা হয়, অর্থবছরের প্রায় ১০ মাস অতিক্রান্ত হলেও কোনো কোনো ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও নেই। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ব্যর্থ বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো। একই দিনে আরেকটি খবরও উদ্বেগজনক। সরকার কৃষি খাতে অপেক্ষাকৃত কম হার সুদে ঋণ প্রদানের নীতি গ্রহণ করেছে। পেঁয়াজ-আদা-রসুনের মতো কৃষিপণ্য উৎপাদন করায় ঋণ মেলে মাত্র ২ শতাংশ সুদে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। তারপরও কোনো কোনো ব্যাংক অধিক মুনাফার জন্য কৃষি ও অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রদানের পরিবর্তে বিলাসদ্রব্য ক্রয়সহ কয়েকটি খাতে অর্থ জোগান দিতে আগ্রহী। অর্থনীতির একটি তত্ত্ব হচ্ছে, যেখানে বেশি মুনাফা সেখানে পুঁজি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এটাও মনে রাখতে হবে, অর্থনীতি যত সমৃদ্ধ হবে তাদের ব্যবসার সুযোগ তত বাড়বে। কৃষি খাত শক্তিশালী হলে শুধু খাদ্যের জোগান নিশ্চিত হয় না, বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়ে যায়। ফলে শিল্পপণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়, যা দেশের শিল্প খাতের বিকাশের অপরিহার্য শর্ত। ব্যাংকের পরিচালকমণ্ডলী এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এটা বোঝে না, সেটা ভাবা কঠিন। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের নির্দেশনা প্রদান করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু এ তাগিদ তো তাদের ভেতর থেকেই আসা উচিত। তাদের নিজেদের শক্তি বাড়ানোর জন্যও কিন্তু কৃষি খাত দারুণ সহায়ক।
No comments