একজন মফিজ ও মোবাইল ফোন by আকরাম খান

একজন মফিজ আর একটি মুঠোফোন জাতিকে শোকের সাগরে নিমজ্জিত করে কয়েক দিনের জন্য সব মানুষকে বাকরুদ্ধ করে রাখল। তথাপি আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাব এই শোকাবহ দিনের কথা, অর্ধশতাধিক নিষ্পাপ তাজা প্রাণের মৃত্যুজনিত ব্যথার ক্ষত ঢেকে যাবে এর চেয়ে আরও বড় কোনো লাশের মিছিলে।


মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত এক শিশু এ দেশের রাষ্ট্রপতি হতে পারত, হতে পারত মানবতাবাদী বিশ্বনেতা। একজন হতো সেরা বিজ্ঞানী, জ্ঞানতাপস, গুণী শিল্পী অথবা মহাশূন্য বিজয়ী বাঙালি। না হলেও সুন্দর এ পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ তারা উপভোগ করতে পারত জীবনভর। ভুল নয়, দৈব-দুর্বিপাক নয়, অবহেলায় তাদের সেসব থেকে বঞ্চিত করা শুধু অপরাধ নয়_ জঘন্য।
দেশে চলন্ত যানবাহনের চালকের মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, অথচ ব্যবহার করলে কী শাস্তি হবে তার কোনো আইন নেই। এর চেয়ে প্রহসন আর কী হতে পারে? আধুনিক জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের এ দুটি মাধ্যম সড়ক ও মুঠোফোনকে এভাবে নিয়ন্ত্রণহীন রাখা উচিত নয়। যেখানে সড়কের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি আর প্রয়োজনের অধিক মুঠোফোন, সেখানে এর অপব্যবহার রোধ করা না গেলে অপরাধ বাড়বে, যানবাহনচালকদের বেপরোয়া মানসিকতা শিথিল হবে না। সড়কপথে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে। কোন প্রকৃতির সড়কে অর্থাৎ মহাসড়ক, সংযোগ সড়ক, শাখা সড়ক ইত্যাদিতে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী কোথায় কোন ধরনের যানবাহন চলতে পারবে, তা নির্ধারণ করতে হবে। গণপরিবহনচালকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি অথবা মধ্যমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে সনদ দেওয়ার বিধান করা উচিত। চালকদের ব্যবহারিক শিক্ষাকে ইন্টার্নি হিসেবে গণ্য করে অভিজ্ঞ ও লাইসেন্সধারী চালকদের অধীনে কমপক্ষে এক বছর কাজ করার বিধিসংবলিত মোটরযান চালনার লাইসেন্স দেওয়ার শর্ত আরোপ করা যেতে পারে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রথমে হালকা, পরে ভারী যান চালনার লাইসেন্স দিতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক কোড অনুযায়ী সড়কপথের মেরামত, পুনর্বাসন কিংবা সম্প্রসারণকাজে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। চলন্ত মোটরযানে কোনো চালক মুঠোফোন ব্যবহার করছে কি-না কিংবা চলন্ত অবস্থায় কোনো চালকের কাছে মুঠোফোন খোলা অবস্থায় পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। চালকের আসনে হেলপার পাওয়া গেলে ওই চালকের লাইসেন্স বাতিল করাসহ মুঠোফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। এ ব্যাপারে যাত্রীদের অভিযোগ আমলে নিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। গতিসীমা লঙ্ঘনকারীদের জন্যও অনুরূপ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সড়কপথে চাপ কমাতে দ্রুত রেল পরিবহন আধুনিকীকরণ, সময় নিয়ন্ত্রণ, যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন ও দেশের প্রতিটি অঞ্চলকে রেল পরিষেবার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। খুব দ্রুত সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত আইনের পরিবর্তন দরকার। ফৌজদারি দণ্ডবিধির পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কিংবা আহতদের জন্য দেওয়ানি আইনে অর্থাৎ অধিকার আইনে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আইনের সংশোধনী অথবা তদুপযুক্ত নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
হ মধুখালী, ফরিদপুর
akramkhan.mdk@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.