কোচিং সেন্টার-শিক্ষা-বাণিজ্য বন্ধ হোক

রাজধানী ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরাই মনে করছেন, কোচিংয়ের নামে শিক্ষা-বাণিজ্য চলছে। এগুলো শিক্ষকদের মধ্যে অর্থের পেছনে ছোটার অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকদের মতবিনিময়ের উপলক্ষ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক পরিবেশ উন্নয়ন এবং


বিশেষভাবে আলোচনায় আসে রাজধানীতে ছাত্রীদের নামি একটি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির সাম্প্রতিক ঘটনা। এতে অভিযুক্ত শিক্ষক নামধারী অমানুষ পরিমল জয়ধর, যার নিজের রয়েছে কোচিং সেন্টার এবং ঘৃণ্য ঘটনাটি সেখানেই সংঘটিত হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। সব কোচিং সেন্টার যৌন হয়রানির কেন্দ্র কিংবা সব শিক্ষকই পরিমলের মতো উৎপীড়ক, এমন সরলীকরণ করা ঠিক নয়। তবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের সম্ভ্রমহানির বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে বলেই শিক্ষকদের অভিমত এবং এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে। যৌন হয়রানির অভিযোগ এলে তা চাপা দেওয়া নয়, বরং দ্রুত আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে হবে। এ কাজে গোপনীয়তা বজায় রাখায় আপত্তির কিছু নেই, কিন্তু কোনোভাবেই যেন তা অভিযুক্তকে রক্ষার ঢালে পরিণত না হয়। কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের মূল কারণ অবশ্য শিক্ষা-বাণিজ্য। শিক্ষামন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, 'শ্রেণীকক্ষে শিশুদের ভালোভাবে বোঝানো হয় না, অথচ শিক্ষককে বাড়তি অর্থ দিলেই তিনি বুঝিয়ে দেন। এটা চরম অনৈতিক এবং তা গুটিয়ে নিতেই হবে।' তবে কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ জারি করে এ ধরনের নৈতিকতাবর্জিত ব্যবসায়ী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে কি-না তাতে সংশয় থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের প্রতি আরও মনোযোগ প্রদান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে। পাঠদান উন্নত করার জন্য প্রথমত দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে এবং তারা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি-না সে বিষয়ে চাই সার্বক্ষণিক মনিটরিং। সরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সরকারি ভাণ্ডার থেকেই দেওয়া হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকদের বেতনের প্রধান উৎস সরকার। কিন্তু উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকদের বেতনের যে স্কেল তাতে মেধাবীরা এ পেশায় তেমন আকৃষ্ট হয় না। কোচিং সেন্টারের নামে জমজমাট শিক্ষা-বাণিজ্য গড়ে ওঠার এটাও কারণ বৈকি। এ বিষয়ে সরকারের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। সন্তান যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে তার মানোন্নয়নে কমবেশি ভূমিকা রাখা অসম্ভব কিছু নয়। সরকারি তহবিল থেকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আসে, বিনামূল্যে বই দেওয়া হয় এবং অবকাঠামো নির্মিত হয় বলে তাদের উদাসীন থাকার সুযোগ নেই। অনেক অভিভাবকের মধ্যে এমন প্রবণতা রয়েছে যে, স্কুল-কলেজে সন্তানের জন্য প্রতি মাসে ২০-৩০ টাকা বাড়তি বেতন দিতে প্রবল আপত্তি; কিন্তু কোচিং সেন্টারে এর কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে দ্বিধা নেই। অথচ একটি প্রতিষ্ঠানের মাত্র জনাদশেক অভিভাবক কোচিং সেন্টারে প্রতি মাসে যে অর্থ ব্যয় করেন তা দিয়েই স্টু্কল বা কলেজে একজন দক্ষ শিক্ষক রাখা যায়। এর ফলে যেসব শিক্ষার্থীর কোচিং সেন্টারে পড়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই তারাও উপকৃত হবে পারে। এভাবে শিক্ষার মানোন্নয়নে সামাজিক দায়িত্ব পালন করাও সম্ভব হতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.