দাবি পূরণের আশ্বাস কর্তৃপক্ষের-ইউএসটিসিতে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ
বিভিন্ন দাবি আদায় নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। গত শনিবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের একদল প্রতিনিধিকে ছাত্ররা প্রায় এক ঘণ্টা ক্যাম্পাসে আটকে রাখেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেসব প্রতিশ্রুতি দেয় তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। ফলে এখানকার শিক্ষার্থীরা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। গত রোববার ঢাকা থেকে উপাচার্য, জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ক্যাম্পাসে এসে পুলিশ প্রহরায় সিন্ডিকেট সভা করেন।
ইউএসটিসির চিকিৎসা অনুষদ, ব্যবসায় অনুষদ ও অন্যান্য বিভাগের একাধিক ছাত্রের অভিযোগ, ভর্তির পর প্রতিটি স্তরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এক্সিকিউটিভ এমবিএ কোর্সের বই এবং অন্যান্য সামগ্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরবরাহের কথা থাকলেও তা হয় না। যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উঁচু স্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে এখানে পাঠদানের কথা থাকলেও ন্যূনতম শিক্ষকই নেই। এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগেও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর লেখাপড়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে না প্রশাসন।
এমবিবিএস কোর্সের একাধিক ছাত্র জানান, এ বছর থেকে সাধারণ ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। মাসিক ফি পাঁচ হাজার টাকা ছাড়াও তিনটি পেশাগত পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয় দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া ভিসেরা পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হয়। এর বাইরে তহবিল সংগ্রহের নামেও বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ করেন তাঁরা।
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, গত এক যুগেরও বেশি সময়ে এ প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী বের হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা নামের আগে প্রকৌশলী ব্যবহার করতে পারেন না। কারণ ইউএসটিসি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (আইইবি) সদস্য নয়। এ অবস্থায় তাঁরা প্রকৌশলী নামটি ব্যবহার করতে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা ডিগ্রি নিচ্ছেন বলে জানান মানজার হোসেন নামের এক ছাত্র। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বিভাগে অন্তত একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক, একাধিক সহকারী অধ্যাপক এবং সাতজন প্রভাষক থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখানে তা নেই। কোনো শিক্ষক যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই অধিক সুবিধা পেলে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যান। ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ও সিলেবাস নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন।
এসব বিভাগীয় সমস্যার পাশাপাশি কয়েকটি অভিন্ন দাবি রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এগুলো হচ্ছে দুই বছর ধরে বন্ধ থাকা কেন্টিন অবিলম্বে চালু, গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত বই রাখা এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক সাধারণ কক্ষের ব্যবস্থা করা।
শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ প্রসঙ্গে ইউএসটিসির সহউপাচার্য এ এইচ এম ইসহাক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোববার সিন্ডিকেট বৈঠক হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়াগুলো পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’ তিনি বলেন, ‘ইউএসটিসি একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষক নিয়োগের মতো দাবিগুলো পূরণ হতে একটু সময় লাগে। তবে আমরা তা পূরণ করব।’
No comments