৭ মার্চ উপলক্ষে ঢাকায় বিশাল শোভাযাত্রা-শক্তি দেখাল আওয়ামী লীগ

বিরোধী দলের মহাসমাবেশের আগে রাজনৈতিক শক্তি দেখাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত গণশোভাযাত্রায় ছিল মানুষের ঢল। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও রাজপথে দলীয় অবস্থান সুসংহত করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য।


শোভাযাত্রা শুরুর আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে বিশাল জমায়েতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিরোধীদলীয় নেতা আন্দোলনে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি তাদের বাঁচাতে পারবেন না। বাংলার মাটিতে তাদের বিচার হবেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএসআইয়ের (পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা) কাছ থেকে পাঁচ কোটি রুপি নিয়ে খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে নির্বাচন করেছেন। পরাজিত শক্তির কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছেন। এর জবাব জনগণকে দিতে হবে।
বিকেল সোয়া পাঁচটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে প্রধানমন্ত্রী গণশোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও কলাবাগান হয়ে শোভাযাত্রাটি ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হয়।
ঢাকা মহানগরের ১৫টি নির্বাচনী এলাকা, ৪১টি থানা ও ৯২টি ওয়ার্ড ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে মিছিলের স্রোত এসে মেশে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে।
সুবিশাল এই গণশোভাযাত্রায় আওয়ামী লীগের নেতাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার হবে। রায় কার্যকর হবে। একাত্তরের ঘাতকদের কোনো ক্ষমা নেই।’ নেতাদের এমন ঘোষণায় হাজার হাজার মানুষের উৎফুল্লতা ও হর্ষধ্বনি সবার দৃষ্টি কাড়ে।
দুপুর ১২টা থেকেই নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে মিছিল আসতে থাকে। বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যেই প্রেসক্লাব থেকে মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ মোড় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এ ছাড়া পশ্চিমে নিউমার্কেট, পূর্বে পল্টন মোড়, উত্তরে কাকরাইল ও দক্ষিণে বঙ্গবাজার পর্যন্ত মিছিল ছড়িয়ে যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কের ভেতরেও বিপুল মানুষ অবস্থান নেয়। শহরজুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
এই কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সকাল থেকেই শাহবাগ মোড় ও মৎস্য ভবন মোড়ে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। নেতা-কর্মীদের আর্চওয়ে (নিরাপত্তা ফটক) দিয়ে মূল মঞ্চে প্রবেশ করতে হয়।
গণশোভাযাত্রায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক ছাড়াও অসংখ্য সাধারণ মানুষকে অংশ নিতে দেখা যায়। ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের হাজার হাজার মানুষ নিয়ে মিছিল ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা মহানগর থেকে নির্বাচিত সাংসদেরাও মিছিল নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেন। রং-বেরঙের বেলুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ট্রাক, হাতি, ঘোড়ার গাড়ি, নৌকা, দলীয় ও জাতীয় পতাকা, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বিশাল প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে ব্যান্ডের তালে তালে শোভাযাত্রায় যোগ দেন নেতা-কর্মীরা।
ডামি রাইফেল, কামান, ট্যাংকসহ মুক্তযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের রণসজ্জা, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার-আলবদর-আলশামসের আত্মসমর্পণ, বিভিন্ন প্রতীকী প্রদর্শনী সাধারণ মানুষের বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণ করে। একটি প্ল্যাকার্ডে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক ব্যক্তিদের ব্যঙ্গচিত্রের নিচে লেখা ছিল, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, রাজাকারেরা পাকিস্তানে’। মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা পায়ে হেঁটে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
সমাবেশ: শোভাযাত্রা শুরুর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মার্চ স্বাধীনতার মাস। বিরোধী দল এই মাস বেছে নিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে। তবে জনগণ তা মেনে নেবে না।
বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান? উনি ভুলে গেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জেল-জুলুম ও নির্যাতনের কথা? তাঁর দুই ছেলেকে নির্যাতন করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা? উনি কি ভাবছেন, তত্ত্বাবধায়ক এলে তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে ক্ষমতায় বসাবে? এবার তত্ত্বাবধায়ক এলে তাঁর দুই ছেলেকে ধরে এনে জেলে ভরবে।’
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, বেগম জিয়ার কাছে প্রতি মাসে পাকিস্তান থেকে টাকা আসে।
আমির হোসেন আমু বলেন, আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। আন্দোলন কী, কত প্রকার তা আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেন, ‘সংসদে আসুন। আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিন। আলোচনায় যেকোনো সমস্যা সমাধান করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত আমাদের সমস্যা সমাধান করতে পারবে না।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘১২ মার্চ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুবিধা করতে পারবেন না।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লতিফ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ নাসিম, মাহবুব উল আলম হানিফ, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.