আন্তর্জাতিক নারী দিবস-দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিরসনে ক্ষমতায়ন
চিন্তা ও তৎপরতায় তৃতীয় বিশ্বের অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা দেশের নাগরিকরাও যে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠছে তার একটি বড় নির্দেশক আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আরও অনেক দিবস এখন বিপুল উদ্দীপনায় উদযাপিত হয়। একদিক থেকে এটি দেশ-কাল-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বনাগরিকদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের লক্ষণ; অন্যদিক থেকে অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে বৈশ্বিক মত সংগঠিত করার একেকটি প্রেক্ষাপটও তা তৈরি করে দেয়।
বাংলাদেশের মতো দেশে নারী দিবসের মতো দিনগুলোর কথা যত উচ্চারিত হয় ততই মঙ্গল। কেননা নারী অধিকার নিশ্চিত করা, নারীর বঞ্চনা রোধ, লিঙ্গীয় বৈষম্য রোধ করার ক্ষেত্রে অনেক কাজ যে এখনও বাকি। সত্যি বলতে, নারীর জন্য সমতাভিত্তিক সমাজ তৈরির ক্ষেত্রে এখানে বড় বড় বাধা রয়ে গেছে। জাতিসংঘ এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে_ 'গ্রামাঞ্চলের নারীদের ক্ষমতায়ন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অবসান।' বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ প্রতিপাদ্যের বিশেষ মূল্য আছে। এখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নিরসনের অনেক উদ্যোগই ক্রিয়াশীল। কিন্তু কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও বিশেষ সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়নের কর্মতৎপরতা বিশেষ সফলতা পায়নি। বিশেষত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। অথচ বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। এটি যে শুধু সামাজিক সমতা বা অর্থনৈতিক তৎপরতায় নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যই জরুরি তা নয়, পৃথিবীর নবযাত্রার জন্যও এটি অবশ্য প্রয়োজনীয় বলে গণ্য হচ্ছে। পুরুষশাসিত দৃষ্টিভঙ্গিগুলো প্রকৃতি ও প্রাণের যে বিপুল ধ্বংসসাধন করেছে, পৃথিবীকে হিংসা, দ্বেষ ও যুদ্ধের অবাধ ক্ষেত্রে পরিণত করেছে তা থেকে ভিন্নতর অভিযাত্রার জন্য নারীর চোখে বিশ্ব দেখার প্রস্তাব কয়েক দশক ধরেই আলোচিত। নারী যত্নশীলতা, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার দৃষ্টিভঙ্গি পৃথিবীকে আরও সহনীয় এবং বসবাসযোগ্য করতে পারে। এ অবস্থায় নারীর ক্ষমতায়ন আমাদের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে নতুন দিশা দেখাতে পারে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা থেকে নারীকে মুক্ত করতে হলে মূলধারার অর্থনৈতিক ও সামাজিক তৎপরতায় তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, সর্বস্তরের ক্ষমতা কাঠামোতে তার সমতাভিত্তিক অবস্থানও নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ ভূমিকা আছে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে যে তৎপরতা চলছে তাতে নতুন প্রাণসঞ্চারের প্রয়োজনও অনুভূত হচ্ছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও নারী দিবস পালন করছে। কিছু সংস্থা নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে_ 'মেয়েদের সংযোগ, ভবিষ্যতের প্রণোদনা।' এ প্রতিপাদ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ইঙ্গিত স্পষ্ট। অধিকারের প্রশ্নে, সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রশ্নে নারীদের ঐক্য ঘটাতে দরকার ধর্ম-বর্ণ-জাতি-দেশ নির্বিশেষে নারীদের সংযোগ। আমরা মনে করি, নতুন তথ্যপ্রযুক্তিতে এ প্রতিপাদ্যটিও বিশেষভাবে মূল্যবান। বস্তুত গ্রামাঞ্চলের নারীর পাশাপাশি শহরাঞ্চলের নারীদের বিষয়গুলো আলোচনায় থাকা উচিত। সবচেয়ে বেশি জরুরি তৎপরতা। অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়ে থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি কর্মতৎপরতার অভাবে সেগুলো সাফল্য পায় না। পশ্চাৎপদ সামাজিক ধারণাগুলোর পরিবর্তন ঘটাতে হলে দীর্ঘমেয়াদি তৎপরতা চাই। এবারের নারী দিবসে বাংলাদেশের নবযাত্রা সূচিত হোক। অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাক দেশ। পৃথিবী নারীদের জন্য অধিকতর বাসযোগ্য হোক।
No comments