‘আ সেপারেশন’-বিচ্ছেদ ভাবিয়া... by ইকবাল হোসাইন চৌধুরী
ইরানি চলচ্চিত্র কি আটকে গেল একটা জায়গায়? এই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। ফিকে হয়ে আসছিল, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, মুহসেন মাখমালবাফ, মাজিদ মাজিদি, জাফর পানাহির মতো নির্মাতাদের ছবির স্মৃতি। এমন সময় চোখে পড়ল আ সেপারেশন।
বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে স্বর্ণ ভালুক জিতেছিল আগেই। মার্কিন মুলুকেও আ সেপারেশন-এর আধিপত্য। সেরা বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে অস্কার আর গোল্ডেন গ্লোব দুটোই চলে গেছে আ সেপারেশন-এর ঝুড়িতে।
এমন দিগ্বিজয়ী ছবির জন্য দুটি ঘণ্টা বরাদ্দ ছাড়া উপায় কী?
আ সেপারেশন মূলত তেহরানের উচ্চমধ্যবিত্ত দম্পতি নাদের আর সিমিনের বিচ্ছেদের গল্প। ১৪ বছর সংসার করার পর এ মুহূর্তে যাঁদের ‘দুজনার দুটি পথ, দুটি দিকে গেছে বেঁকে।’ সিমিন চান ১১ বছর বয়সী মেয়ে তারমেহসহ উন্নত জীবনের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমাতে। আর নাদের তাঁর আলঝেইমারে আক্রান্ত বাবাকে ছেড়ে যেতে নারাজ। ঘটনা গড়ায় আদালত অবধি। কিন্তু আদালতে তাঁদের বিচ্ছেদ আবেদন মঞ্জুর হয় না। রেগেমেগে বাপের বাড়ি চলে যান সিমিন। মেয়ে তারমেহ বাবার সঙ্গেই থেকে যায়। গল্প ভিন্ন খাতে মোড় নেয় যখন নাদেরের অসুস্থ বাবাকে দেখাশোনার ভার পান দরিদ্র এবং সন্তানসম্ভবা নারী রাজিয়েহ।
পয়লা ধাক্কায় আ সেপারেশন-এর যে দিক মুগ্ধ করে, তা আশ্চর্য সারল্য। হলিউডি-বলিউডি ঘরানার রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা (পিলে চমকে দেওয়ার মতো বাদ্য-বাজনাসমেত), ঘুষোঘুষি, রহস্য এ ছবিতে অনুপস্থিত। তাই বলে ভাববেন না ছবিতে এসব ব্যাপার-স্যাপার নেই। পরিচালক আসগর ফরহাদি পারিবারিক সম্পর্কের এ গল্পে টানটান উত্তেজনা আর কৌতূহল ধরে রেখেছেন একদম শেষ অবধি। আর কাজটা করেছেন একান্ত নিজস্ব কায়দায়। তাঁর কায়দাটি একই সঙ্গে অতি সরল আর নিরেট বাস্তব। আ সেপারেশন স্রেফ ক্ষণিকের উত্তেজনা বা কৌতূহল তৈরি করে না। শত ভাগ বাস্তবসম্মত ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এগোতে এগোতে একটা সময় চূড়ান্ত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে গিয়ে পৌঁছায়। যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, কৌতূহল চট করে মিলিয়ে যায় না। এমনকি ছবি ফুরানোর পরও তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে দর্শক মনে।
অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে আ সেপারেশন আসলে সামাজিক শ্রেণীবিভেদেরও গল্প। সমাজের একতলার মানুষের প্রতি আরেক তলার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সংকট সবকিছুই এ ছবিতে হাজির। সর্বক্ষণ চোখে চোখে না রেখে নাদেরের অসুস্থ বাবাকে বিছানায় বেঁধে রেখে গিয়ে কী জঘন্য অন্যায় করলেন রাজিয়েহ? অথবা নাদেরই কি ঠিক কাজ করলেন রাগের মাথায় এক সন্তানসম্ভবা নারীকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়িতে ফেলে দিয়ে? চট করে উত্তর দেওয়া কঠিন হয়।
কারণ, নির্মাতা এখানে অত্যন্ত সুচতুরভাবে বস্তুনিষ্ঠ। নৈতিক সমর্থন এই নাদেরের দিকে ঝোঁকে তো পরমুহূর্তে সেটা রাজিয়েহর দিকে গড়ায়। সব মিলিয়ে আমাদের চিরকালীন নৈতিক সমর্থনের ধারণা এক অদ্ভুত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
এ ছবি আলগোছে অনেক প্রশ্ন তৈরি করে। এবং ছবির পর্দা ওঠার পরও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে না। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল আসগর ফরহাদিকে। ফরহাদির জবাব ছিল, ‘সমকালীন বিশ্বে উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করাটা বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মাতৃভূমি ইরানকে প্রথমবারের মতো অস্কার জয়ের স্বাদ পাইয়ে দিয়েছেন এই ভদ্রলোক। ফরহাদি এখন নিশ্চিতভাবেই ‘ইরানিয়ান গ্রেট’দের দলে। এর আগে মনোনয়ন মিললেও সেরা বিদেশি ছবির অস্কার ওঠেনি অন্য কোনো ইরানি নির্মাতার হাতে। ফরহাদির আ সেপারেশন ইরানের সেই অপ্রাপ্তি ঘোচাল। আর যেন নতুন করে জোড়া দিল ইরানি ছবির দুনিয়ার সঙ্গে প্রায় ভেঙে যেতে বসা সম্পর্কটাকে।
এমন দিগ্বিজয়ী ছবির জন্য দুটি ঘণ্টা বরাদ্দ ছাড়া উপায় কী?
আ সেপারেশন মূলত তেহরানের উচ্চমধ্যবিত্ত দম্পতি নাদের আর সিমিনের বিচ্ছেদের গল্প। ১৪ বছর সংসার করার পর এ মুহূর্তে যাঁদের ‘দুজনার দুটি পথ, দুটি দিকে গেছে বেঁকে।’ সিমিন চান ১১ বছর বয়সী মেয়ে তারমেহসহ উন্নত জীবনের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমাতে। আর নাদের তাঁর আলঝেইমারে আক্রান্ত বাবাকে ছেড়ে যেতে নারাজ। ঘটনা গড়ায় আদালত অবধি। কিন্তু আদালতে তাঁদের বিচ্ছেদ আবেদন মঞ্জুর হয় না। রেগেমেগে বাপের বাড়ি চলে যান সিমিন। মেয়ে তারমেহ বাবার সঙ্গেই থেকে যায়। গল্প ভিন্ন খাতে মোড় নেয় যখন নাদেরের অসুস্থ বাবাকে দেখাশোনার ভার পান দরিদ্র এবং সন্তানসম্ভবা নারী রাজিয়েহ।
পয়লা ধাক্কায় আ সেপারেশন-এর যে দিক মুগ্ধ করে, তা আশ্চর্য সারল্য। হলিউডি-বলিউডি ঘরানার রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা (পিলে চমকে দেওয়ার মতো বাদ্য-বাজনাসমেত), ঘুষোঘুষি, রহস্য এ ছবিতে অনুপস্থিত। তাই বলে ভাববেন না ছবিতে এসব ব্যাপার-স্যাপার নেই। পরিচালক আসগর ফরহাদি পারিবারিক সম্পর্কের এ গল্পে টানটান উত্তেজনা আর কৌতূহল ধরে রেখেছেন একদম শেষ অবধি। আর কাজটা করেছেন একান্ত নিজস্ব কায়দায়। তাঁর কায়দাটি একই সঙ্গে অতি সরল আর নিরেট বাস্তব। আ সেপারেশন স্রেফ ক্ষণিকের উত্তেজনা বা কৌতূহল তৈরি করে না। শত ভাগ বাস্তবসম্মত ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এগোতে এগোতে একটা সময় চূড়ান্ত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে গিয়ে পৌঁছায়। যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, কৌতূহল চট করে মিলিয়ে যায় না। এমনকি ছবি ফুরানোর পরও তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে দর্শক মনে।
অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে আ সেপারেশন আসলে সামাজিক শ্রেণীবিভেদেরও গল্প। সমাজের একতলার মানুষের প্রতি আরেক তলার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সংকট সবকিছুই এ ছবিতে হাজির। সর্বক্ষণ চোখে চোখে না রেখে নাদেরের অসুস্থ বাবাকে বিছানায় বেঁধে রেখে গিয়ে কী জঘন্য অন্যায় করলেন রাজিয়েহ? অথবা নাদেরই কি ঠিক কাজ করলেন রাগের মাথায় এক সন্তানসম্ভবা নারীকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়িতে ফেলে দিয়ে? চট করে উত্তর দেওয়া কঠিন হয়।
কারণ, নির্মাতা এখানে অত্যন্ত সুচতুরভাবে বস্তুনিষ্ঠ। নৈতিক সমর্থন এই নাদেরের দিকে ঝোঁকে তো পরমুহূর্তে সেটা রাজিয়েহর দিকে গড়ায়। সব মিলিয়ে আমাদের চিরকালীন নৈতিক সমর্থনের ধারণা এক অদ্ভুত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
এ ছবি আলগোছে অনেক প্রশ্ন তৈরি করে। এবং ছবির পর্দা ওঠার পরও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে না। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল আসগর ফরহাদিকে। ফরহাদির জবাব ছিল, ‘সমকালীন বিশ্বে উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করাটা বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মাতৃভূমি ইরানকে প্রথমবারের মতো অস্কার জয়ের স্বাদ পাইয়ে দিয়েছেন এই ভদ্রলোক। ফরহাদি এখন নিশ্চিতভাবেই ‘ইরানিয়ান গ্রেট’দের দলে। এর আগে মনোনয়ন মিললেও সেরা বিদেশি ছবির অস্কার ওঠেনি অন্য কোনো ইরানি নির্মাতার হাতে। ফরহাদির আ সেপারেশন ইরানের সেই অপ্রাপ্তি ঘোচাল। আর যেন নতুন করে জোড়া দিল ইরানি ছবির দুনিয়ার সঙ্গে প্রায় ভেঙে যেতে বসা সম্পর্কটাকে।
No comments