বলিউড-ওজন কমানোর দাওয়াই

উদরপূর্তি আর মনে ফুর্তি—কোনোটাই বলিউড তারকাদের জন্য নয়। কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয় করার পাশাপাশি মনের আনন্দে পেট পূজা করার সৌভাগ্য হয় না তাঁদের। তারকা হওয়ার আগে, এমনকি অভিনয়জীবন শুরু করার পরও বেশ কয়েকজনের ওজনের যা বহর ছিল,


তাতে ওয়েট মেশিনও লজ্জায় পড়ে যেত! দায়ে পড়েই বলিউড তারকারা ওজন কমাতে বাধ্য হন। স্থূলকায় থেকে ভোল বদলে একদম ‘স্টাইল আইকন’ কিংবা ‘সাইজ জিরো’! কেমন করে সম্ভব এই অসাধ্য সাধন? সোনাক্ষী সিনহা বলেন, ‘আন্তরিকতার সঙ্গে যেকোনো কাজ করলে সাফল্য আসবেই। বিশ্বাস করুন, ওজন নিয়ে একটা সময় এতটাই অস্বস্তিতে ছিলাম, চিকিত্সক পর্যন্ত বলেছিলেন—ওজন না কমালে আমার বিপদ অনিবার্য! তাই কোমর বেঁধে কড়া পরিশ্রম করে দুই বছরে ৯০ কিলোগ্রাম থেকে এক ধাক্কায় ৩০ কিলোগ্রাম কমিয়ে ফেলি। আর এখন তো আমার ওজন ৪৮ কিলোগ্রাম।’ সোনাক্ষীর সরল স্বীকারোক্তি, ‘মাত্রাতিরিক্ত ওজনের কারণেই বাবা-মা কখনো ভাবেননি, আমি বলিউডে কাজ করব। বাবারই বা দোষ কী! ৯০ কিলোগ্রাম ওজন নিয়ে তো আর যা-ই হোক, নায়কের কোমর ধরে নাচা যায় না!’ প্রমাণ সাইজের সোনাক্ষী কী করে এই ঈর্ষণীয় ফিগারের মালিক হলেন, তা জানার ইচ্ছা অনেকেরই। সোনাক্ষীর স্পষ্ট জবাব, ‘ওজন কমানোর জন্য কোনো সহজ পথে যাইনি। ওষুধ কিংবা ড্রাগ নিলে আখেরে শরীরেরই ক্ষতি হয়। চেহারার লাবণ্য কমে যায়। দিন-রাত রুটিন করে জিমে ঘাম ঝরিয়েছি, খাদ্যাভ্যাস ঠিক করেছি। নিয়ম করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমিয়েছি। টেনিস খেলেছি। সালমান খানের পরামর্শে ওয়েট ট্রেনিং এবং কার্ডিও করার পাশাপাশি প্রতিদিনই খেয়াল রেখেছি, শরীরের কতটা ক্যালরি গেল। রাস্তার খাবার-দাবার জীবন থেকে বিদায় করেছি। এখনো সন্ধ্যার পর কোনোরকম শর্করাযুক্ত খাবার খাই না। প্রতিদিন বেশ কয়েক কাপ গ্রিন টি এবং উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার আমার খাদ্য তালিকায় থাকবেই। সালমান পরামর্শ দিয়েছেন—এনার্জি লেভেল ধরে রাখার জন্য অল্প অল্প করে দিনে দু-তিন ঘণ্টা অন্তর কিছু খাওয়া উচিত।’
অনিল-কন্যা সোনম কাপুর। মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রতিদিন একটা করে দুই লিটার আইসক্রিম, দুটি বড় পিত্জা, দিনে ১০টি বড় খাবারের দরকার পড়ত তাঁর। বাবা-মা সিঙ্গাপুরে পড়াশোনা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। পরিবার ছেড়ে একা সোনম বিরহ ব্যথা ভুলতেই খাবারকে আপন করে নেন। ফলে চার মাসের মধ্যে ৫০ কিলোগ্রাম থেকে ওজন ৯০ কিলোগ্রাম। সোনমের শরীরের বেহাল অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন তাঁর মা সুনিতা। তিনি মেয়ের খাওয়া-দাওয়া এবং ব্যায়ামের ওপর এতটাই কড়াকড়ি করেন যে মাত্র কয়েক মাসে সোনম ৩৫ কিলোগ্রাম ওজন ঝরিয়ে ফেলেন। সোনম প্রথমেই প্রিয় আইসক্রিম এবং চকলেট ত্যাগ করেছিলেন। সকালে এক গ্লাস পানি, মধু এবং লেবুর রস দিয়ে দিন শুরু হয় তাঁর। সাদা ভাত, চিনি, লবণ, রুটিকেও বিদায় দিতে হয়েছে তাঁকে। তবে ডিমের সাদা অংশ, মৌসুমি ফল, সালাদ সোনমের টেবিলে থাকবেই। সাঁতার এবং কত্থক নাচ নিয়ম করে করেন। যোগব্যায়ামেও কখনো ফাঁকি দেন না।
হূতিক রোশন, আমিশা প্যাটেল, কারিনা কাপুর, কারিশমা কাপুররাও একটা সময় ওজনের কারণে হাসির খোরাক জুগিয়েছিলেন অনেকেরই। সবাইকে অবাক করে ওজন কমিয়েই তাঁরা অভিনয়ে এসেছেন। ওদিকে প্রায় ২১০ কিলোগ্রাম ওজনের আদনান সামি অনেকটা ভেল্কিবাজির মতো এক বছরে ১৩০ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়েছিলেন। আর এখন সামির ওজন ৭৪ কিলোগ্রাম। একটা সময় পাঁচ মিনিট টানা হাঁটতে পারতেন না তিনি, প্লেনে শুধু তাঁর জন্য সিট বেল্ট বাড়াতে হতো, বেশির ভাগ সময় হুইলচেয়ারে থাকতেন, এমনকি চিত হয়ে শুতেও পারতেন না। কিন্তু এখন? প্রতিদিনই গান, নতুন সংসার, স্কোয়াশ, টেনিস—এসব নিয়ে দিব্যি সুখে দিন কাটাচ্ছেন সামি। সামি বলেন, ‘আগে একটা সময় ২৪ ঘণ্টায় দুবার ভারী খাবার খেতাম। চিকিত্সকেরা আমাকে ভাত, চিনি, তেল, রুটির মুখই দেখতে দেননি অনেক দিন। শুধু সালাদ এবং তন্দুরি মাছের ওপর রেখেছিলেন।’ আসলে ফিট না থাকলে হিট হওয়া সম্ভব নয়। আর তাই পছন্দের ডিশটি ছলছল চোখে সরিয়ে রাখা থেকে শুরু করে সকাল-সন্ধ্যা জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা—কোনো কিছুতেই এখন তারকাদের ‘না’ নেই!
 রুম্মান রশীদ খান
বলিউড হাঙ্গামা, আইএমডিবি, বিজনেস অব সিনেমা, ফিল্মফেয়ার, বলিউড মান্ত্রা, হিন্দুস্থান টাইমস, এনডিটিভি ডট কম অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.