আইনে শাস্তি আছে তবু বাল্যবিবাহ থেমে নেই
বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন সত্ত্বেও মেয়েদের বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না। ১৮ বছরের আগে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এবং ১৫ বছর পূর্ণ না হতেই এক-চতুর্থাংশ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন (এফপিএবি) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) গত বছর প্রকাশিত 'প্রোগ্রেস ফর চিলড্রেন অ্যাচিভিং দ্য এমডিজিস উইথ ইক্যুইটি' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ে এবং একই বয়সের ৫ শতাংশ ছেলের বিয়ে হচ্ছে। অর্থাৎ বাল্যবিবাহের কুফল বেশি ভোগ করছে মেয়েরাই।
দেশের মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশই হচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। ২০০৮ সালের 'পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় যোগাযোগ কৌশলপত্র' অনুযায়ী কিশোরীদের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের প্রায় দ্বিগুণ এবং শিশুমৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের শতকরা ৩০ ভাগের বেশি।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০০৭-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারীর বিয়ের গড় বয়স ১৫ বছর তিন মাস। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে যাঁদের ১৮ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে হয়েছে তাঁদের শতকরা হার ৬৬, যা ২০০৪ সালে ছিল ৬৮ শতাংশ। রাজশাহীতে ৪০, ঢাকায় ৩৩, সিলেটে ২৩, চট্টগ্রামে ২৮, বরিশালে ২৯ এবং খুলনায় ৩৪ শতাংশ নারী ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে মা হয়েছেন বা প্রথমবার গর্ভবতী হয়েছেন। কিশোরী মাতৃত্বের হার ২০০৪ ও ২০০৭ সালের প্রতিবেদনে ৩৩ শতাংশে আটকে আছে। দুই দশক ধরে এ হার অপরিবর্তিত রয়েছে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৩০ শতাংশ মা এবং ৪১ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। ১৮ বছরের আগে সন্তান ধারণ করায় মাতৃত্বজনিত মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩ দশমিক ২।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মহিলাদের প্রথম সন্তান নেওয়ার গড় বয়স ১৬ বছর। কম বয়সী মেয়েরা সন্তান জন্মদানের সময় উচ্চ-ঝুঁকিতে থাকে। বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সমাজে ধারণাগত পরিবর্তন হলেও মহিলাদের মৃত্যুর হার নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। ২০০৮ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সন্তান প্রসবের সময় প্রতি এক লাখ মহিলার মধ্যে ৩৫০ জন মারা গেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ) 'মেয়েদের সিদ্ধান্ত' নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে, যেখানে সংগঠনের কর্মীরা বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করে মেয়েদের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়ে কথা বলেন এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ রোধ করে মেয়েদের স্কুলে যেতে উৎসাহিত করতে মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান করছে। অনেক বেসরকারি সংস্থাও বাংলাদেশে এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
ইউনিসেফ জানায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ইউনিসেফ ২০০৬ সাল থেকে কিশোরী অভিযান নামের একটি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। বর্তমানে ৫৯টি জেলায় এ কর্মসূচি চলছে। এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৪ হাজার কিশোর-কিশোরী এ কর্মসূচি থেকে বাল্যবিবাহের কুফলসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যকণিকায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কিশোরীদের মধ্যে প্রজননের হার প্রতি হাজারে ১২৬ জন। ইউনিসেফ দেশের ২৮ জেলায় দুই হাজার ৫০০টি কিশোর সহায়তা কেন্দ্র চালু করেছে। এসব কেন্দ্রে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নানা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইনও আছে। ১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস করা হয়েছে। এ আইন ১৯৮৪ সালে সংশোধন করা হয়। আইন অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ আইনে পুরুষের বিয়ের আইনসম্মত বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং নারীর ন্যূনতম ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়। বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত বর ও কনের অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন ও বিয়ে পড়ানোর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিসহ সবার শাস্তির বিধান আছে। আইন না মানার ক্ষেত্রে পুরুষদের এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে। তবে কোনো নারীর জরিমানা হলেও জেল হবে না। বর ও কনে দুজনই নাবালক হলে তাদের কোনো শাস্তি হবে না। ছেলে সাবালক ও মেয়ে নাবালক হলে ছেলের এক মাস পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
এর পরও বিশ্বের মধ্যে বাল্যবিবাহ বেশি সম্পন্ন হওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রথম দিকেই রয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের 'বিশ্বে মায়েদের অবস্থা ২০১০' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৬৯ শতাংশ নারীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। শিশু অধিকার সনদে যে ১২টি দেশ প্রথম সমর্থন করেছিল তার মধ্যে ছিল বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অল্প বয়সে বিয়ে হওয়াই কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। কেননা এই মেয়েদের জরায়ুমুখের কোষ পরিপক্ব হওয়ার আগেই স্বামীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে যেতে হয়। এতে কোষগুলোতে বিভিন্ন সংক্রমণ হয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আরো মারাত্মক হচ্ছে দেশের তিন-চতুর্থাংশ নারীর ক্যান্সার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।'
দেশের মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশই হচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। ২০০৮ সালের 'পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় যোগাযোগ কৌশলপত্র' অনুযায়ী কিশোরীদের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের প্রায় দ্বিগুণ এবং শিশুমৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের শতকরা ৩০ ভাগের বেশি।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০০৭-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারীর বিয়ের গড় বয়স ১৫ বছর তিন মাস। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে যাঁদের ১৮ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে হয়েছে তাঁদের শতকরা হার ৬৬, যা ২০০৪ সালে ছিল ৬৮ শতাংশ। রাজশাহীতে ৪০, ঢাকায় ৩৩, সিলেটে ২৩, চট্টগ্রামে ২৮, বরিশালে ২৯ এবং খুলনায় ৩৪ শতাংশ নারী ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে মা হয়েছেন বা প্রথমবার গর্ভবতী হয়েছেন। কিশোরী মাতৃত্বের হার ২০০৪ ও ২০০৭ সালের প্রতিবেদনে ৩৩ শতাংশে আটকে আছে। দুই দশক ধরে এ হার অপরিবর্তিত রয়েছে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৩০ শতাংশ মা এবং ৪১ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। ১৮ বছরের আগে সন্তান ধারণ করায় মাতৃত্বজনিত মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩ দশমিক ২।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মহিলাদের প্রথম সন্তান নেওয়ার গড় বয়স ১৬ বছর। কম বয়সী মেয়েরা সন্তান জন্মদানের সময় উচ্চ-ঝুঁকিতে থাকে। বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সমাজে ধারণাগত পরিবর্তন হলেও মহিলাদের মৃত্যুর হার নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। ২০০৮ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সন্তান প্রসবের সময় প্রতি এক লাখ মহিলার মধ্যে ৩৫০ জন মারা গেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ) 'মেয়েদের সিদ্ধান্ত' নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে, যেখানে সংগঠনের কর্মীরা বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করে মেয়েদের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়ে কথা বলেন এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ রোধ করে মেয়েদের স্কুলে যেতে উৎসাহিত করতে মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান করছে। অনেক বেসরকারি সংস্থাও বাংলাদেশে এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
ইউনিসেফ জানায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ইউনিসেফ ২০০৬ সাল থেকে কিশোরী অভিযান নামের একটি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। বর্তমানে ৫৯টি জেলায় এ কর্মসূচি চলছে। এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৪ হাজার কিশোর-কিশোরী এ কর্মসূচি থেকে বাল্যবিবাহের কুফলসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যকণিকায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কিশোরীদের মধ্যে প্রজননের হার প্রতি হাজারে ১২৬ জন। ইউনিসেফ দেশের ২৮ জেলায় দুই হাজার ৫০০টি কিশোর সহায়তা কেন্দ্র চালু করেছে। এসব কেন্দ্রে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নানা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইনও আছে। ১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস করা হয়েছে। এ আইন ১৯৮৪ সালে সংশোধন করা হয়। আইন অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ আইনে পুরুষের বিয়ের আইনসম্মত বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং নারীর ন্যূনতম ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়। বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত বর ও কনের অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন ও বিয়ে পড়ানোর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিসহ সবার শাস্তির বিধান আছে। আইন না মানার ক্ষেত্রে পুরুষদের এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে। তবে কোনো নারীর জরিমানা হলেও জেল হবে না। বর ও কনে দুজনই নাবালক হলে তাদের কোনো শাস্তি হবে না। ছেলে সাবালক ও মেয়ে নাবালক হলে ছেলের এক মাস পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
এর পরও বিশ্বের মধ্যে বাল্যবিবাহ বেশি সম্পন্ন হওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রথম দিকেই রয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের 'বিশ্বে মায়েদের অবস্থা ২০১০' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৬৯ শতাংশ নারীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। শিশু অধিকার সনদে যে ১২টি দেশ প্রথম সমর্থন করেছিল তার মধ্যে ছিল বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অল্প বয়সে বিয়ে হওয়াই কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। কেননা এই মেয়েদের জরায়ুমুখের কোষ পরিপক্ব হওয়ার আগেই স্বামীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে যেতে হয়। এতে কোষগুলোতে বিভিন্ন সংক্রমণ হয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আরো মারাত্মক হচ্ছে দেশের তিন-চতুর্থাংশ নারীর ক্যান্সার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।'
No comments