অর্থনীতি-ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক ঋণ ও খয়রাত-নির্ভরতা by মইনুল ইসলাম

কথিত দুর্নীতির অজুহাতে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বিশ্বব্যাংক কর্তৃক স্থগিত ঘোষণার ছয় মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। কানাডার একটি সংস্থা দুর্নীতির অভিযোগটির তদন্ত করছে বলা হয়েছে এবং ওই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে—বিশ্বব্যাংক এই অবস্থানে অনড় রয়েছে।


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিশ্বব্যাংকের কাছে এ সম্পর্কিত নথিপত্র দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানালেও সাড়া মেলেনি। বিশ্বব্যাংক বলছে, অর্থমন্ত্রীকে এ সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়েছে। দুদক অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে ওই সব তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে কি না কিংবা পেয়েছে কি না তা জানা যায়নি, কিন্তু তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানে দুদক কোনো ধরনের দুর্নীতির সন্ধান পায়নি বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার যে মহাবিপদে আছে, তা বলাই বাহুল্য। কারণ, সরকারের একাংশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বলে জনমনে যে ধারণা গড়ে উঠেছে, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের চলমান অবস্থান সেটাকে বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছে নিঃসন্দেহে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ পর্বের দুর্নীতির মহাযজ্ঞের স্মৃতি এর ফলে অনেকখানি ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়ার ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে জোয়ার লক্ষ করা গেছে। সেটি আজকের আলোচনার বিষয় নয়। আমার প্রয়াস থাকবে বৈদেশিক ঋণ ও খয়রাত (অনুদান) হ্রাস পাওয়ার যে প্রবণতা সম্প্রতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কেন ‘আল্লাহ্র রহমত’ এবং ‘শাপে বর’ বিবেচনা করছি তা ব্যাখ্যা করা।
দেশের বেশির ভাগ মানুষের মনে বদ্ধমূল ধারণা গেঁড়ে বসে রয়েছে যে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান (যেটাকে বৈদেশিক সাহায্য বা foreign aid হিসেবে ভুল নামে অভিহিত করা হয় সুচতুরভাবে) বাংলাদেশের অর্থনীতির অপরিহার্য চালিকাশক্তি এবং এই বৈদেশিক ঋণ/অনুদান বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা হঠাৎ করে হ্রাস পেলে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এটা সর্বাংশেই একটা ‘বোগাস আশঙ্কা’। অর্থনীতিতে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের ধরন-ধারণ, গতি-প্রকৃতি, প্রকৃত ভূমিকা এবং বৈদেশিক ঋণের রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ঋণের ফায়দাভোগীদের বিভ্রান্তিকর প্রচারণার কারণেই এহেন অপরিহার্যতার ভ্রান্ত বিশ্বাসটা গেঁড়ে বসে রয়েছে, যার আশু নিরসন প্রয়োজন। ওপরের বক্তব্যগুলোর ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
নিচের তথ্য-উপাত্তভিত্তিক বিশ্লেষণটা মনোযোগ দিয়ে বিবেচনা করা যাক:
১. ১৯৭১-৭২ অর্থবছর থেকে ২০০৮-৯ অর্থবছর পর্যন্ত প্রকৃত ছাড়কৃত ঋণ ও অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার, যার ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল ঋণ এবং ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল অনুদান। (ঋণ ও অনুদানের আশ্বাস ছিল প্রায় ৬১ বিলিয়ন ডলার।) ক্রমেই অনুদানের অনুপাত কমছে এবং বর্তমানে ওই অনুপাত এক-তৃতীয়াংশেরও কম, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ঋণ।
২. ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ/অনুদান বাংলাদেশের জিডিপির ১৩ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মানি ইজ নো প্রব্লেম পর্বে দেশের অর্থনীতির ওই সর্বনাশা পরনির্ভরতার ইতিহাস রচিত হয়েছিল—এটা মোটেও কাকতালীয় নয়। ১৯৭২-৭৫ পর্বের বঙ্গবন্ধু সরকারের চেয়ে ১৯৭৫-৮১ মেয়াদের জিয়া সরকার যে দাতা প্রভুদের কাছে বেশি পছন্দসই ছিল, তারই প্রতিফলন উল্লিখিত উপাত্তে পাওয়া যাচ্ছে। অথচ ১৯৭২-৭৫ পর্বের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশেরই বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল সর্বাধিক। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির মতো বড় বড় দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশকে ঋণ ও সাহায্য দেওয়ার প্রক্রিয়াটাকে ওই সময়ে কীভাবে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বরাজনীতির ব্ল্যাকমেইলিংয়ের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে, তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এত্দসম্পর্কীয় বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ যখন আবার পাকিস্তানি আদলের রাজনীতির দখলে চলে গেল, তখন পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো যে বিলক্ষণ প্রীত হয়েছিল, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বৈদেশিক ঋণের ও অনুদানের প্রবাহে বান ডাকার তথ্য-উপাত্তে। বর্তমান ২০১১-১২ সালে জিডিপির শতাংশ হিসাবে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ১ শতাংশের নিচে নেমে যাবে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যাচ্ছে। তার মানে গত ৩০ বছরে এ দেশের অর্থনীতি প্রায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অবস্থানে পৌঁছে গেছে। আমাদের অর্থনীতিকে আর খয়রাত-নির্ভর অর্থনীতি বলা যাবে না, এটা এখন বাণিজ্য-নির্ভর অর্থনীতি।
৩. স্বাধীনতার পরের বছরগুলোতে প্রাপ্ত বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের ৪১ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিল খাদ্য ঋণ/অনুদান, ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ ছিল পণ্য ঋণ আর মাত্র ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ ছিল প্রকল্প ঋণ/অনুদান। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রাপ্ত বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের ৯৭ শতাংশই ছিল প্রকল্প ঋণ/অনুদান আর বাকি ৩ শতাংশ ছিল খাদ্য ঋণ/অনুদান। এখন পণ্য আমদানির পুরোটাই আমরা নিজেদের অর্থে করে থাকি, কারও দয়ার ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা মোটা ধান-চাল উৎপাদনের স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছি। অথচ, ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে এ দেশের আমদানি বিলের মাত্র ৩১ শতাংশ আমরা আমাদের রপ্তানি আয় দিয়ে মেটাতে পেরেছি। এখনো আমাদের পণ্য আমদানি ব্যয় পণ্য রপ্তানি আয়ের চেয়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওই ১০ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতিটা এখন আমরা মেটাতে পারছি প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স দিয়ে। বর্তমান অর্থবছরের জ্বালানি আমদানির কয়েক গুণ স্ফীতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রবল টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। একই সঙ্গে পুঁজি পাচারের প্রবাহের প্রবল স্ফীতি বৈদেশিক মুদ্রা বাজারেও বড় ধরনের চাহিদার স্ফীতি ঘটিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানিকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে ডলারের তুলনায় টাকার মূল্যমানের ধসকে ইতিমধ্যেই থামানো সম্ভব হয়েছে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকানো গেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের ডামাডোলে শরিক হয়ে গত ২৫ বছর ধরে এ দেশে আমদানি উদারীকরণের যে গড্ডালিকা প্রবাহের সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য বড়ই বেমানান। পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী দেশগুলো এবং তাদের তল্পিবাহী আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন তাদের ঋণ/অনুদানের শর্ত হিসেবে আমাদের গেলানো হচ্ছে জিয়ার শাসনামল থেকেই। উইলিয়ামসন নামের একজন বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ১৯৭৯ সালের একটি গোপন সমঝোতার মাধ্যমে যেভাবে বিশ্বব্যাপী মুক্তবাজার অর্থনীতি চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কাঠামোগত বিন্যাস কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সে সমঝোতাকে ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’ নামে অভিহিত করেছেন। যেসব দেশ আশির দশক থেকেই আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও বিভিন্ন পুঁজিবাদী দেশ থেকে বৈদেশিক ঋণ/অনুদান নিতে গেছে, তাদেরই এসএপির প্রেসক্রিপশনগুলো শর্ত হিসেবে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হলো ওই প্রেসক্রিপশনগুলোর জবরদস্তিমূলক প্রয়োগের ক্লাসিক উদাহরণ। যখন আমাদের অর্থনীতির খয়রাত-নির্ভরতা প্রায় কেটে গেছে, তাহলে শর্ত-কণ্টকিত বৈদেশিক ঋণ/অনুদান নিতে অতি-উৎসাহ কাটানো যাচ্ছে না কেন? অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নীতি গ্রহণের সার্বভৌমত্ব অর্জন আর কত দূরে? মেরুদণ্ড শক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র-আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের জবরদস্তিমূলক খবরদারির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছি না কেন আমরা?
৪. ওপরের প্রশ্নগুলোর জবাব মিলবে ৯৭ শতাংশ প্রকল্প ঋণ/অনুদান এবং ৩ শতাংশ খাদ্য সাহায্যের ফায়দাভোগীদের পরিচয়টা খোলাসা করলে। প্রকল্প ঋণ/অনুদান হলো দুর্নীতির অর্থনীতির পুঁজি লুণ্ঠনের মৃগয়াক্ষেত্র। জনগণের দারিদ্র্যের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে, ‘উন্নয়নের’ কথা বলে বৈদেশিক ঋণ/অনুদান আকর্ষণের বিশাল একটি ‘সিস্টেম’ গড়ে তোলা হয়েছে এ দেশে—সেই পাকিস্তান আমল থেকেই। ১৯৭২ সালে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী ও ১৯৭১-এর নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কান্ডারি তাজউদ্দীন আহমদ মাথা কুটে মরেছেন বৈদেশিক ঋণ/অনুদান গ্রহণে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থাগুলোর ব্যাপারে সাবধান হওয়ার জন্য, কিন্তু তিনি নিজের দলের কাছেই এ ব্যাপারে পাত্তা পাননি। খোন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বাধীন মার্কিন লবি এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকে রাজি করিয়ে ফেলেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির সংকটজনক অবস্থাও হয়তো বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। বিশেষত, খাদ্যঘাটতি ওই সময়ে ৪০ লাখ টন অতিক্রম করে গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭২-৭৫ পর্বে বৈদেশিক ঋণ/অনুদান নিয়ে যে প্রাণঘাতী খেলা যুক্তরাষ্ট্র, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক চালিয়েছিল, তার বর্ণনা গত ৪০ বছরে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গবেষকদের প্রকাশিত পুস্তক ও গবেষণাকর্মে বিধৃত হয়েছে। কিউবার কাছে পাটজাত পণ্য রপ্তানির গোস্তাকির জবাব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ অভিমুখী পাঁচটি খাদ্যশস্যবাহী জাহাজকে মাঝপথে ঘুরিয়ে দিয়ে অন্য দেশে পাঠানোর মাধ্যমে। তার পরিনতি ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ। পাকিস্তানের বৈদেশিক দেনার দায়ভার গ্রহণ করতে বাংলাদেশের অস্বীকৃতির জবাব দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণ প্রায় দুবার আটকে রেখে। কিসিঞ্জারের ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ সফরের আগ মুহূর্তে তাজউদ্দীন আহমদকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
পঁচাত্তর পরবর্তী কিছু ঋণের শর্ত এতই অপমানজনক ছিল যে খোদ প্রেসিডেন্ট জিয়া আইএমএফের ৮০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণের শর্তাবলি পূরণ করতে না পারায় মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার পর ওই ঋণটা বাতিল করে দিয়েছিল আইএমএফ। স্বাধীন বাংলাদেশের ৪১ বছরের ইতিহাসে বৈদেশিক ঋণ লণ্ঠনের মহাযজ্ঞে শরিক হয়নি এমন একটি সরকারও ছিল না (তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ তালিকা থেকে বাদ যাবে না)। এরশাদ দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠনকে পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়েছেন, যার ফলে ১৯৯১-২০১২ পর্বের নির্বাচিত সরকারগুলো এই দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠনের ‘সিস্টেমে’ শরিক হওয়াকে এখন মহা বাহাদুরির পর্যায়ে উন্নীত করে ফেলেছে। ২০০৭-০৮ পর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজদের একটা ‘প্রকাণ্ড ঝাঁকুনি’ দিলেও সামরিক অফিসার ও বেসামরিক আমলাদের দুর্নীতিকে রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে গিয়েছিল। আর শেখ হাসিনার সরকার গত তিন বছরে দুদককে ঠুঁটো জগন্নাথে পর্যবসিত করে ফেলেছে, যার জন্য তাঁকে ইতিহাস একদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।
১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮-এর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভরাডুবির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে দুর্নীতি ও লুণ্ঠন। সামনের নির্বাচনটি আরও দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে যে তিন বছরের মধ্যেই মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে, এতে সন্দেহ নেই। অথচ এবারের মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী সততা ও দক্ষতার প্রশংসনীয় রেকর্ড বজায় রেখে চলেছেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতা-কর্মী দুর্নীতি, দখলদারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং মার্জিন শিকারের মচ্ছবে মাতোয়ারা হয়ে রয়েছেন। তথ্যবিপ্লবের এ যুগে এই লুটপাটের রাজনীতির খবর কি গোপন থাকবে? বিএনপি-জামায়াতের ২০০১-২০০৬ মেয়াদের লুটপাটের মহাযজ্ঞকে আওয়ামী লীগ গত তিন বছরে নিশ্চয়ই টপকে যেতে পারেনি, কিন্তু দুর্নীতির তরতাজা খবরগুলোর কাছে ছয় বছর থেকে এগারো বছরের পুরোনো লুটপাটের খবরগুলো জনগণের কাছে বাসি ঠেকছে স্বাভাবিকভাবেই। অতএব, বেগম জিয়া এবং বিএনপির নেতাদের গলার জোর বেড়েই চলেছে। হাওয়া ভবনের যুবরাজ নাকি এ দেশের ভবিষ্যতের নায়ক হতে যাচ্ছেন!!
এমতাবস্থায়, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত হওয়ার সুবাদে বৈদেশিক ঋণপ্রবাহে যে ভাটার টান জোরদার হয়েছে, তাকে আমি ‘শাপে বর’ মনে করি। আগামী জুন মাসের পর দেখা যাবে, বর্তমান অর্থবছরেও দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর থাকবে। অর্থনীতি ধসে পড়ার কোনো সুযোগ নেই, দেউলে হওয়ারও আশঙ্কা নেই। অতএব, বৈদেশিক ঋণ ও খয়রাত আর এ দেশের জনগণের জীবন-মরণের কোনো ইস্যু নয়, সেটা প্রমাণিত হয়ে যাবে। অন্যদিকে, এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায় যে দুর্নীতি ও লুটপাট, সেদিকেও জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ হবে।
মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

No comments

Powered by Blogger.