সরকার-নির্ধারিত দামে বিক্রি নিশ্চিত করুন-এলপি গ্যাসের দাম

গ্যাস-সংকটের কারণে সরকার দুই বছরের বেশি সময় ধরে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহরাঞ্চলের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাসের চাহিদা বেড়ে চলেছে।


কিন্তু এলপি গ্যাস বিপণনের ক্ষেত্রে কোনো নজরদারি নেই বলে এই জ্বালানির আমদানিকারকেরা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়েই চলেছেন।
শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এলপি গ্যাসের দাম এখন অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে গেছে। গত মাসে সিলিন্ডারপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়ার পর এ মাসে আবারও প্রায় ২০০ টাকা করে বাড়ছে। এমনিতেই সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে গ্রাহকেরা গ্যাস সিলিন্ডার পান না, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তা কিনতে হয়। স্থানভেদে এই অতিরিক্ত দামের কিছু হেরফের আছে, তবে সব স্থানেই বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা হয়। গ্রাহকেরা অসহায়, কারণ তাঁদের আর কোনো বিকল্প নেই। তাঁদের এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে নির্ধারিত দামে গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া নিশ্চিত করবে—এমন কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
এক বছর আগে ১২ কেজির এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের সরকার-নির্ধারিত দাম ছিল এক হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এই দামে কোনো গ্রাহকই তা পেতেন না, ৫০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম দিয়ে তা কিনতে হতো। আর আকস্মিক সরবরাহ-সংকটের কথা বলে কখনো কখনো আরও বেশি দাম নেওয়া হতো। সর্বশেষ খবর, এ মাস থেকে সরকারি হিসাবেই ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম পড়বে এক হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু এই দামেও গ্রাহকেরা তা পাবেন না, আরও বেশি পয়সা গুনতে হবে—এই আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের দাম বেড়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে এটা স্বাভাবিক, কারণ এলপি গ্যাস আমদানি করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই যেন আমাদের দেশে দাম বাড়ানো হয়, এটা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যান্য আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে দেশের আমদানিকারক ও বিপণনকারীদের দাম বাড়ানোর সামঞ্জস্য থাকে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিকে বাড়তি মুনাফা করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আরও দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের ভেতরেও দাম বাড়ানো হয় ঠিকই, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের ভেতরে দাম আর কমানো হয় না।
জ্বালানি গ্যাস কোনো বিলাসদ্রব্য নয়, অতিপ্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য। যেহেতু পাইপলাইনের গ্যাসের সংকট অনতিবিলম্বে কাটছে না এবং যেহেতু ক্রমশ বেশিসংখ্যক মানুষকে এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, তাই এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সরকারের একান্ত কর্তব্য। পাইপলাইনের গ্যাস ও এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের মধ্যে খরচের বৈষম্য ইতিমধ্যেই ব্যাপক, তা আরও ব্যাপক হলে যে অসন্তোষ দেখা দেবে, সেটা বিবেচনায় রাখা দরকার। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে গ্রাহকেরা যেন এলপি গ্যাস পান, তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.