বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত-আশা-নিরাশার দোলাচল আর কত?
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারভুক্ত হতে প্রত্যাশী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি খাতে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহে ঘাটতি থাকাই স্বাভাবিক। এ থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা এবং আরও বেশি বেশি মানুষের আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠার প্রমাণ। সরকারের কাজ হচ্ছে এ গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা।
এ কাজ সহজ নয়। কারণ, আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি ভাণ্ডার তেমন সমৃদ্ধ নয়_ আবিষ্কৃত ও উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ এখন পর্যন্ত সীমিত, মজুদ কয়লার উত্তোলন পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কের নিরসন করা যাচ্ছে না এবং পেট্রোল-কেরোসিন-ডিজেলের পুরোটাই আমদানিনির্ভর। জ্বালানি খাত বিপুলভাবে ভর্তুকিনির্ভর হওয়াও একটি বড় সমস্যা। সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠকে জানানো হয়, গত বছর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার চার হাজার পাঁচশ' কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করেছে। এই ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হলে চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব সঙ্গত। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে গিয়ে বারবার একই প্রশ্ন উঠছে_ সেবার মান বাড়াতে না পারলে চার্জ কেন বাড়ানো হবে? উৎপাদন বাড়লেও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা তেমন কমানো যাচ্ছে না। গ্যাস সংযোগের অভাবে অনেক কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। ঘরে ঘরে রান্নার কাজে ঘটছে বিঘ্ন। হাজার হাজার বাড়ি ও ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ প্রদান কার্যত বন্ধ রাখা হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে। সঙ্গত কারণেই জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ। এ বাস্তবতায় করণীয়গুলোও স্পষ্ট_ নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং সময়মতো তার বাস্তবায়ন। কিন্তু এ কাজে যথেষ্ট গাফিলতি ছিল এবং তা প্রধানমন্ত্রী সোমবারের পর্যালোচনা সভার বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের অগ্রগতিতে তার অসন্তোষ গোপন রাখেননি। কোনো কোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে এক বছরেরও বেশি আগে তিনি যে ধরনের নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছিলেন, এবারও তার পুনরাবৃত্তির ঘটনা থেকে অদক্ষতা-গাফিলতির মাত্রা উপলব্ধি করা যায়। বিদ্যুৎ ঘাটতি কমিয়ে আনতে সরকার জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয় এবং তাদের কাছ থেকে বেশ চড়া দামেই বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়। গ্যাস খাতের উন্নয়নেও পেট্রোবাংলা কয়েকটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই প্রত্যাশার তুলনায় কাজ পিছিয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ ব্যর্থতার দায় থেকে কি মুক্ত হতে পারবে, নাকি বছরখানেক পরে অনুষ্ঠিতব্য আরেকটি পর্যালোচনা বৈঠক থেকেও শুনতে হবে 'হচ্ছে...হবে' ধরনের প্রতিশ্রুতি? এ খাত সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায়। উন্নয়ন বাজেটে টানাটানির মধ্যেও এ খাতের জন্য উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ রাখা হয়। তাহলে কেন এ গড়িমসি? বিগত অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয় তাদের জন্য বরাদ্দ উন্নয়ন বাজেটের সবটাই কাজে লাগাতে পারেনি। তাদের সামনে করণীয় সুস্পষ্ট, অর্থ বরাদ্দও রয়েছে। কিন্তু কেন সে অর্থ পুরোপুরি ব্যয় করা সম্ভব হয়নি? কেন আলোর ঝলকানির সম্ভাবনার মধ্যেও অন্ধকার হুমকি হয়ে বিরাজ করতে পারে?
No comments