বাকৃবিতে তাণ্ডব-দুর্বৃত্তদের রেহাই দেবেন না
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের 'সহযোগী' সংগঠনের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার ও সোমবার ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী যেভাবে দফায় দফায় শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়েছে, তা অতীতের রেকর্ড ম্লান করেছে। প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের মিছিলে হামলা,
মারপিট কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন ও যানবাহন ভাংচুর দেখে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু রামদা ও লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষকদের তাড়া করার দুঃসাহস বাকৃবি ছাত্রলীগের আগে সম্ভবত কেউ দেখায়নি। হতে পারে ছিনতাইসহ কিছু অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রদের যেভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তা শিক্ষকসুলভ হয়নি। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া এমন অসভ্য হতে পারে না। ছাত্রলীগের একাংশের উচ্ছৃঙ্খলতা কেবল বাকৃবি নয়, গোটা দেশের শিক্ষক সমাজের মর্যাদায় চরম আঘাত। ওই ক্যাম্পাসে দু'দিনের তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি না দিলে এই ভাইরাস অন্যান্য বিদ্যায়তনেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আহত ও নির্যাতিত শিক্ষকদের প্রতি আমরা সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তারা যে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন, তা আমাদের জাতিগত লজ্জা। শিক্ষকদের প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতি বিবেকবান সবার পূর্ণ সংহতি থাকবে। দুর্বৃত্ত ছাত্ররা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের যোগ্য নয়। বাকৃবি প্রশাসনের উচিত হবে তাদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা। পবিত্র বিদ্যায়তনে অবস্থানের অধিকার তারা হারিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন হামলাকারীদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকেও ভাবমূর্তি বিনাশী নেতাকর্মীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। বিপথগামী কতিপয় ব্যক্তির কারণে ছয় দশকের গৌরব ও ঐতিহ্যের ধারক একটি সংগঠন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াবে কেন? বাকৃবি বোটানিক্যাল গার্ডেনে কয়েকটি জুটিকে 'আপত্তিকর' অবস্থায় বসে থাকার অজুহাতে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী যেভাবে প্রথমে চাঁদাবাজি ও পরে ছিনতাই করেছে, তা অন্যান্য ক্যাম্পাসেও বিরল নয়। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের উচিত হবে তাদের সংগঠনের কর্মীদের শিক্ষা দেওয়া যে অপরের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অধিকার তাদের কেউ দেয়নি। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির যে আদর্শ ছাত্রলীগ ধারণ করে, এসব তার সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
No comments