গভীর গভীরতর অসুখের’ নিরাময় দরকার-পুলিশের ‘বেআইনি হাত’

সংবাদটা এ রকমও হতে পারত: একদল সন্ত্রাসী বাড়িতে ঢুকে পরিবারকে জিম্মি করে এক লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশ এসে তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে এবং চিকিৎ সক দম্পতির পরিবারটি শারীরিক-মানসিক-আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু ব্যাপারটা সে রকম ঘটেনি।


রাজশাহী শহরে পুলিশের দুই উপপরিদর্শক পাঁচ কনস্টেবল ও এক সোর্সকে নিয়ে চিকিৎ সকের বাড়িতে কার্যত ডাকাতিই করেন। তাহলে কি পোশাক ছাড়া পুলিশ এবং ডাকাত-ছিনতাইকারীর মধ্যে আর সব পার্থক্য লোপ পাচ্ছে?
ঘটনার পর হলেও পুলিশ বিভাগের কিছুটা চৈতন্যোদয় ঘটেছে। অন্যান্য ঘটনার মতো এ ক্ষেত্রে অন্তত অপরাধ অস্বীকার ও অপরাধীদের তারা আড়াল করেনি। চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজশাহী পুলিশের সহকারী কমিশনারসহ (এসি) আট পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে প্রথম আলোর সংবাদ প্রকাশের পর তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। পুলিশ কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপ শুভবুদ্ধির পরিচায়ক। এখন আসামিদের বিচারটা সুষ্ঠুভাবে হলেই হয়।
সমাজে অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে গেলে যত না বিপদ, তার চেয়ে বেশি বিপদ অপরাধ দমনকারী সংস্থাগুলোর সদস্যরা অপরাধে জড়িয়ে পড়লে। সম্প্রতি এ রকম ঘটনায় তাঁরা গণপিটুনির শিকারও হয়েছেন। রাজশাহীর ঘটনাটিকে তাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দেখার উপায় নেই।
পুলিশের হাত অনেক ক্ষেত্রেই আইনের হাত হয়ে কাজ করছে না, বরং পুলিশ বাহিনীতে অপরাধ ও দুর্নীতি গেড়ে বসেছে। পাশাপাশি সব সরকারের আমলে দলীয় কোটায় অযোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পাওয়ায় এই বাহিনীর পেশাগত দক্ষতাও কমেছে। পুলিশ বাহিনীতে দলীয় কোটায় নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ হওয়া জরুরি। সরকারি কমিশন করে অথবা মানবাধিকার সংস্থাকে দিয়ে পুলিশের আইন অমান্যের রেকর্ড তৈরি করে ভূক্তভোগীদের সুবিচার দিতে হবে। সর্বোপরি, তদন্ত-পর্যালোচনার ভিত্তিতে পুলিশের সার্বিক সংস্কারে হাত দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরে যে ‘গভীর গভীরতর অসুখ’ দেখা দিয়েছে, গভীর সংস্কার ছাড়া তার নিরাময় সম্ভব নয়। রাজশাহীতে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যরা শাস্তি পেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনীর প্রতি যেমন জনগণের আস্থা বাড়বে, তেমনি পুলিশ বিভাগও ‘গভীর গভীরতর অসুখ’ থেকে নিরাময়ের উপায় খুঁজে পাবে।

No comments

Powered by Blogger.