পুলিশের ফেনসিডিল বাণিজ্য-সবার আগে সর্ষের ভূত ছাড়াতে হবে

১ মার্চ, ২০১২ রাতে রাজশাহী মহানগরী পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে প্রচুর পরিমাণ ফেনসিডিলসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছিল যে, রাজশাহী মহানগরী পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় একদল গোয়েন্দা পুলিশ সদস্য সরাসরি ফেনসিডিল


ব্যবসা করে আসছে। শেষ পর্যন্ত অভিযোগের সত্যতা মিলল ফেনসিডিলসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। সমাজ ও প্রশাসনের কোনো কোনো স্তরে মূল্যবোধ আর নৈতিকতার অবক্ষয় কোন উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে চরম নিন্দনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত এই ঘটনাটি এরই সাক্ষ্যবহ।
১ মার্চ রাতে রাজশাহীতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই অভিযান পরিচালিত হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও ওই অভিযানে যুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে মাদক কিংবা মাদক জাতীয় সব কিছুর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিকারের নির্দেশ যেখানে বারবার গুরুত্বের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে যখন এর প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে, তখন আইনি সংস্থার সদস্যদের এমন ন্যক্কারজনক কাণ্ডর্কীতি সমাজের বিবর্ণ চিত্রকেই পুনর্বার উন্মোচিত কমর দিয়েছে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে এবং বলা যায়, ওই সব ঘটনার দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার হয়নি বলেই আইনি সংস্থার সদস্যদের বেআইনি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ফেনসিডিল কিংবা মাদক সমাজের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদির পেছনেও এর নেতিবাচক প্রভাব উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। একটি বৈধ সংস্থা কিংবা বাহিনীর কোনো সদস্য যদি অপকর্মে লিপ্ত থাকে, তাহলে এর দায় গোটা বাহিনীর ওপর বর্তায়, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে তাদের ওপর থেকে জনআস্থা হ্রাস পায় এবং সমাজবিরোধী শক্তি আসকারা পায়। এর প্রতিটিই চরম অশুভ চিহ্ন। এ ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। ইতিমধ্যে ফেনসিডিল কিংবা মাদকের ছোবলে কত জীবন, পরিবার ধ্বংস কিংবা তছনছ হয়ে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। এ দেশে আইনি সংস্থার কোনো কোনো সদস্যের বেআইনি তৎপরতা বড় বেশি ভাবনার উদ্রেক ঘটিয়েছে সমাজের শুভবোধসম্পন্ন মানুষদের মধ্যে। অভিযোগ আছে, রাজশাহীতে ফেনসিডিল ব্যবসার সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি আরো অনেক রাঘব-বোয়ালের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমরা আশা করব, এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার নিশ্চিত করা হবে।
রাজশাহীর ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সারা দেশেই এমন অপকীর্তি ঘটে চলেছে- এ অভিযোগও নতুন কিছু নয়। সর্ষের ভেতর যে ভূত লুকিয়ে আছে, সে ভূত সর্বাগ্রে তাড়াতে হবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে। সবক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিকারের দৃষ্টান্ত হতে হবে উল্লেখযোগ্য। একটি সমাজ আলোকিত হয় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আর ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয় কতিপয়ের অপক্রিয়ায়। এই কতিপয়ের শেকড় যাদের ছত্রছায়ায় বিস্তৃত হচ্ছে, তারা সবাই নিঃসন্দেহে জনশত্রু। এদের প্রতি কোনো রকম অনুকম্পা নয়। ফেনসিডিল ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আজ এত সহজলভ্য হয়ে গেছে যে, এর কালোছায়া সমাজকে ক্রমেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিভাবে, কাদের ছায়ায় সমাজবিরোধীরা সব সম্ভাবনার গলা টিপে ধরছে, সর্বাগ্রে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো রকম কালক্ষেপণ নয়।

No comments

Powered by Blogger.