তবুও অনুতাপ নেই by আনোয়ার হোসেন

বিএনপি এরশাদ উল্লাহ নামে চট্টগ্রামের এক নেতাকে ২৮ ফেব্রুয়ারি বহিষ্কার করেছে। সাংবাদিকদের কাছে এ খবরটি প্রকাশ করেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দলের সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কারের কারণ হিসেবে শৃৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপ পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়।


সংবাদপত্রের পাতায় নিয়মিত যারা চোখ রাখেন, তারা অবশ্য নেপথ্য ঘটনা সহজেই বলতে পারেন। বিএনপির প্রবীণ নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের গাড়িবহরে হামলা হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। বোয়ালখালীর ফুলতলা এলাকায় সংঘটিত এ হামলায় তার গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তিনি ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং গাড়ির ব্যবসাও আছে। একটি গাড়ির কাচ ভাঙলে সেটা নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকার লোক তিনি নন। তবে এতে মান-সম্মানের ক্ষতি হয়। যেহেতু রাজনীতি করেন, সে অঙ্গনেও প্রভাব পড়ে। কারা তার গাড়িতে হামলা করেছিল, তা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রথমেই ধারণা হবে যে, এ কাজ অবশ্যই মোরশেদ খানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অর্থাৎ আওয়ামী লীগের। ঘটনার পরদিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ ধরনের অভিমত দেখা গেছে। যেমন প্রথম আলো ২৪ ফেব্রুয়ারি লিখেছে : গাড়িবহরে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, 'এটা আওয়ামী লীগের কাজ। বোয়ালখালীর পথসভা শেষ করে পটিয়ার দিকে যাওয়ার মুহূর্তে আমাদের গাড়িতে আকস্মিক হামলা হয়। এতে গাড়ির কাচ ভেঙেছে।' প্রথম আলো এবং আরও কয়েকটি সংবাদপত্র একই সঙ্গে অবশ্য পাঠকদের জানিয়েছিল যে, বিএনপির নেতা এরশাদ উল্লাহর অনুসারীরাই গাড়িবহরে হামলা চালায়। মোরশেদ খানের নির্বাচনী এলাকায় তিনি নিজের স্থান করে নিতে চান এবং সেজন্য পেশিশক্তির ওপর নির্ভর করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে দলীয় কোন্দলের পরিণতি ছিল এ ঘটনা এবং সেটা বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কর্তৃক এরশাদ উল্লাহকে বহিষ্কারের ঘটনায় স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এই নেতৃত্বের অংশ কিন্তু সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ারও। তিনি প্রশাসনে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন। পাকিস্তানের মোনায়েম খানের জমানায় ছিলেন ঢাকার ডিসি। সচিব পদ থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সজ্জন, বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। বর্তমান জাতীয় সংসদে তার দলের সদস্যরা অনেক দিন ধরে যোগ দিচ্ছেন না। এ কারণে তার বক্তব্য শোনার অবকাশ থাকে কম। কিন্তু যখন বলেছেন, নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন যথার্থভাবেই। অন্যরা তা থেকে সু-শিক্ষা নিতেই পারে। কিন্তু মোরশেদ খানের গাড়িবহরে হামলা সম্পর্কে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এর ঠিক প্রতিফলন দেখা যায় না। তিনি ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। কিন্তু প্রকৃত চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। এমন ঘটনায় যুক্ত থাকার দায়ে বিএনপি যখন এরশাদ উল্লাহকে বহিষ্কার করে সংবাদপত্র এবং বেতার-টেলিভিশনে বিজ্ঞপ্তি পাঠাল তখন কিন্তু তিনি দুঃখ প্রকাশ করে একটি নোট পাঠাতে পারতেন এভাবে :'আমি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে যা বলেছিলাম সেটা ঠিক ছিল না।'
তার এবং আরও অনেক নেতার কেবল এটা সান্ত্বনা হতে পারে এই ভেবে যে, আওয়ামী লীগও এমন অবাস্তব ও বানোয়াট অভিযোগ করে। প্রকৃত কী ঘটেছে সেটা দলের নেতাকর্মীরা জানে। মানুষও তা সহজেই বুঝতে পারে। কিন্তু দল থেকে পাবলিকের কাছে দেওয়া হয় ভিন্ন ব্যাখ্যা।
রাজনীতির এ দৈন্যদশা কবে বদলাবে_ কেউ জানে না। এটাও এখন পর্যন্ত আমাদের জানা নেই যে, এরশাদ উল্লাহকে বিএনপিতে ফের সাদরে বরণ করে নেওয়া হবে কি-না। অভিজ্ঞতা যদি আমাদের কিছু শেখায় তাহলে বলব, এমনটি হতেই পারে।

No comments

Powered by Blogger.