আকস্মিক নয়, অনিবার্যই ছিল মুক্তিযুদ্ধ by আহমাদ মোস্তফা কামাল

মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নয়, একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের জন্য এ দেশের মানুষের প্রতীক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা দীর্ঘকালের; মুক্তিযুদ্ধ তাদের সুযোগ করে দিয়েছিল যুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রটি নির্মাণের। নিজস্ব জাতিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের লক্ষ্যে এটিই ছিল বাঙালির ইতিহাসে প্রথম সশস্ত্র পদক্ষেপ এবং এতে অংশগ্রহণ ছিল এ দেশের আপামর জনসাধারণের।


এদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষা ছিল এর জন্য, পাকিস্তানি শোষণ কেবল এক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল। একটি জনগোষ্ঠী যখন নিজেদের একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং
একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এ রকম ব্যাপক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন তার অর্থও হয়ে ওঠে ব্যাপক, ঘটনাটি হয়ে
ওঠে মহান



একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকে আমার কাছে বেশ অদ্ভুত বলেই মনে হয়। বাঙালি তো কোনোদিনই যোদ্ধা জাতি ছিল না। চিরকাল সে নির্ঝঞ্ঝাট থাকতে চেয়েছে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সময় সবাই মিলে এমন মরণপণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল কেন? এটা কি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা? এ রকম মনে করার কোনো কারণও তো দেখি না। হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনায় এত দ্রুত একটি জাতি সংঘবদ্ধ হতে পারে না। তাহলে কি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আগে থেকেই এমন একটি প্রস্তুতি ছিল? কতদিনের প্রস্তুতি সেটা? দু-চার-দশ বছর? নাকি তার চেয়েও অনেক বেশি সময় ধরে এ প্রস্তুতি চলছিল? প্রকাশ্যে না হলেও বুকের গভীরে লালিত হচ্ছিল একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন? ব্যাপারগুলো বুঝে ওঠা কঠিন। এ জাতির ভেতরে এক অদ্ভুত নিরাসক্তি, নিস্পৃৃহতা এবং ঔদাসীন্য আছে। ঘটমান ঘটনাগুলোতে তারা এমনভাবে অংশগ্রহণ করে, মনে হয় এসবে তাদের কিছুই যায়-আসে না। অনেক সময় তারা অংশগ্রহণ পর্যন্ত করে না, কেবল দেখে যায়। এ রকম একটা কথা বলা হয়, পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব যখন ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত তখন আশপাশের কৃষকরা হয়তো তাদের দৈনন্দিন জীবনের ধারাবাহিকতায় মাঠে কাজ করছিল। যুদ্ধ শেষ হলে হয়তো একজন আরেকজনের কাছে জানতেও চেয়েছিল_ কে হারল, কে জিতল! কিন্তু নবাব হেরে গেছেন শুনে তাদের বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া হয়েছিল বলে মনে হয় না। ঘটনাটি তাদের জন্য কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে সেটিও তারা হয়তো ভেবে দেখেনি। এ রকম নিরাসক্তির আরও উদাহরণ দেওয়া যাবে। অথচ বড়মাপের পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেখানে তারা এমন নিরাসক্ত ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের কথাই বলছি_ বরং তাদের তুমুল অংশগ্রহণই আমাদের বিজয়কে অনিবার্য করে তুলেছিল। একটু পরে এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত বলব।
২. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন ধরে_ এ কথা সবাই জানেন। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, বিতর্কটা আসলে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে নয়_ ঘোষণা নিয়ে। স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছিলেন_ এ নিয়ে বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আর তাদের অনুগত বুদ্ধিজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে বাদানুবাদ চালিয়ে আসছেন। কোনো দেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেবল স্বাধীনতার ঘোষণা-বিতর্কের পর্যায়ে নামিয়ে আনার মতো এমন বিরল প্রতিভা সম্ভবত শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমনটি ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। যেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কিংবা জিয়াউর রহমানের ২৭ মার্চের ঘোষণাই এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে! স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এসব দলের বারবার ক্ষমতায় আরোহণ এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় যুদ্ধাপরাধীদের অংশগ্রহণের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম ও স্কুল-কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে তাদের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনার প্রবণতা দেখা গেছে। এ এমন এক ইতিহাস, যেখানে সারাদেশের কোটি কোটি মানুষের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করা হয় না। যে বিপুল দুর্ভোগের ভেতর দিয়ে দেশের মানুষকে যেতে হয়েছে, যে অপরিসীম নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে, যে অকল্পনীয় আত্মত্যাগের ফলে এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে_ সেগুলোও বলা হয় না। বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, পাকিস্তানিদের নির্মম নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট, রাজাকারদের কুকীর্তি ইত্যাদি নিয়েই বা কতটুকু আলোচনা হয়? অগণিত মানুষের জীবনদান, লাখ-লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি, অসংখ্য যুদ্ধশিশুর জন্ম, কোটি মানুষের দুঃসহ শরণার্থী জীবন_ এ সবকিছুর বিবরণ যদি থাকত ইতিহাসে, তাহলে কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ওই ধরনের তুচ্ছ বিতর্কে নামিয়ে আনা যেত না। স্বাধীনতা অর্জনের সব কৃতিত্ব রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা নিতে চায়। এমনকি অন্য কোনো দলের নেতাকর্মী হলে তার অবদানটুকুও স্বীকার করতে চায় না। আর সে কারণেই যুদ্ধে জয়লাভের মূল নায়ক যারা, সেই নাম না-জানা জনগণও উপেক্ষিত থাকে। ঘোষণা-বিতর্কের নামে ইতিহাস বিকৃতির আরেক নাম তাই ইতিহাসের কারচুপি! পরিকল্পিতভাবে এবং সুকৌশলে জনগণের অংশগ্রহণ ও ত্যাগ-তিতিক্ষা, তাদের বিপুল দুর্ভোগ ও দুর্যোগ মোকাবেলা করা, ঘরে ঘরে আক্ষরিক অর্থেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা, নিরস্ত্র জনগণের সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়ক শক্তিতে পরিণত হওয়া_ এসব বিষয়কে কম গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে গুটিকয় নেতার গুণগান গেয়েই ইতিহাস রচনা সমাপ্ত হয়! এবং এ জন্যই তরুণ প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে একটি বিমূর্ত ধারণার জন্ম হয়েছে। শুধু জনগণের অংশগ্রহণের ব্যাপারটিই নয়, এমনকি যুদ্ধকালীন প্রবাসীরা কীভাবে কাজ করেছেন, কী কাজ করেছেন, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে_ এসবও উপেক্ষিতই থাকে! যে কোনো যুদ্ধের ইতিহাসই নানা রকম জটিল উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠার কথা। ওঠেও, আমাদের মুক্তিযুদ্ধও সে রকমই একটি বিষয়। শুধু তাই নয়, এ যুগের যুদ্ধগুলো শুধু অঞ্চলভিত্তিক যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তার এক বা একাধিক আন্তর্জাতিক প্রভাব ও পরিপ্রেক্ষিতও থাকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরও তা-ই ছিল! ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর বঙ্গবন্ধুর স্ব্বেচ্ছা-গ্রেফতারবরণ জাতিকে যে নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় ঠেলে দিয়েছিল, সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটল, কার বা কাদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হলো_ সে সব বিষয়ে খুব সামান্যই ধারণা আছে আমাদের নতুন প্রজন্মের। যেসব দল/সংগঠন/ব্যক্তি যুগ যুগ ধরে তথাকথিত ঘোষণা-বিতর্ক চালিয়ে আসছেন, তাদের কণ্ঠে কখনোই মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে কিছু শোনা যায়নি! অথচ সত্য এই যে, মুজিবনগর সরকারের দৃঢ়চিত্ত ভূমিকা ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন করা প্রায় অসম্ভব হতো! আর এই সুযোগটি নিয়েই একটি গোষ্ঠী জিয়াউর রহমানকে জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। তার বেতার ঘোষণাটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এবং তার দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও বীরত্ব ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও যুদ্ধের সময় তিনি যে একজন সেক্টর কমান্ডারের অধিক কিছু ছিলেন না এবং একজন সেক্টর কমান্ডারের পক্ষে যে এত বড় একটি যুদ্ধ পরিচালনা করা সঙ্গত কারণেই সম্ভব ছিল না_ এটা সামান্যতম কমন সেন্স থাকলেও যে কেউ বুঝতে পারবেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসও চাপা পড়ে যাচ্ছে এই দুই দলের ফালতু ঘোষণা-বিতর্কের কারণে। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবাভাবির সময় কোথায়? ঘোষণাই তো শেষ কথা। কীভাবে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, সারাদেশের মানুষ কী অপরিসীম বেদনা ও ভোগান্তির ভেতর দিয়ে সময় পার করেছে, কী বিপুল আত্মত্যাগের ফলে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় এই স্বাধীনতা_ এসব নিয়েই বা কথা বলার দরকার কী? এই ইতিহাস যে রাষ্ট্রযন্ত্র অবহেলা করে, সে যে জনগণের দিকে ফিরেও তাকাবে না_ সেটি আর অস্বাভাবিক কী? তবু আমাদের কথা বলে যেতে হবে। কারণ, শুধু নেতৃত্বের ইতিহাস জেনে মুক্তিযুদ্ধের মর্মার্থ উপলব্ধি করা সম্ভব নয়! ইতিহাস নিয়ে রাষ্ট্রীয় তরফের আলোচনায় নির্যাতিত নারীরা উপেক্ষিত থাকে কেন, যুদ্ধশিশুরা উপেক্ষিত থাকে কেন, বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধারা উপেক্ষিত থাকে কেন, জনগণ উপেক্ষিত থাকে কেন_ সে প্রশ্ন অতি অবশ্যই আমাদের উত্থাপন করতে হবে। রাষ্ট্র কি তাদের দিক থেকে স্থায়ীভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? রাষ্ট্র কি তাদের কথা বলতে লজ্জা পায়? রাষ্ট্র কি তাদের অবদানের কথা অস্বীকার করতে চায়? শুধু নিজেদের নিয়ে আলোচনা করে তারা কি স্থায়ীভাবে ইতিহাস কারচুপি করতে চায়? এসব প্রশ্ন না তুললে প্রকৃত ইতিহাস চাপা পড়ে যাবে চিরদিনের জন্য। প্রকৃত সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা তখন অধিকতর কঠিন হয়ে পড়বে।
৩. কেন মুক্তিযুদ্ধ এদেশের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠেছিল_ এ প্রশ্ন করলে যেসব উত্তর বিভিন্ন তরফ থেকে পাওয়া যায় তাতে অনেক সময় মনে হয়, এটি নিতান্তই হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা! এ প্রসঙ্গে প্রায় সবাই-ই পাকিস্তানি শাসন-শোষণের কথা বলেন। এসব কথা শুনলে মনে হয়, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যদি আমাদের ওপর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক নিপীড়ন-নির্যাতন না চালাত কিংবা কেন্দ্রে যদি বাঙালি শাসক থাকত, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না! এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, আমাদের যুদ্ধটি হয়েছিল পাকিস্তান কনসেপ্টের বিরুদ্ধে নয়, পাকিস্তানি শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে। বলাবাহুল্য, পাকিস্তানি শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা একটা কারণ বটে, তবে একমাত্র কারণ নয় মোটেই। আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য ছিল। কারণ এই দেশের মানুষ নিজেদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি চেয়েছিল (আমি এও মনে করি, পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ হতো। হয়তো সেটা '৭১-এ নয়, তবে হতোই)। ফলে একটি যুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্র নির্মাণ করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। নিরস্ত্র বাঙালির যোদ্ধা হয়ে ওঠার অভূতপূর্ব ঘটনা, কৃষক ও শ্রমিকদের লাঙ্গল ও কাস্তে ফেলে অস্ত্র তুলে নেওয়া এবং দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন করতে প্রস্তুত হয়ে ওঠা, পলায়নপর মধ্যবিত্তের পলায়নবৃত্তি ত্যাগ করে যুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহণ, সামরিক-বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য বীরত্ব, বিপুল স্বপ্ন ও ত্যাগ-তিতিক্ষা_ এগুলোর কোনোকিছুই হঠাৎ স্বপ্নে পাওয়া বিষয় নয়। মনোজগতে দীর্ঘকাল ধরে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত না হলে এমন বিপুল বিদ্রোহ অসম্ভব ব্যাপার। শুধু তাই নয়; অপরিমেয় রক্তপাত, নারীর সম্ভ্রমহানি, পাকিস্তানিদের নির্মম নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট, অগি্নসংযোগ, রাজাকারদের কুকীর্তি ইত্যাদি সত্ত্বেও বাঙালির অনমনীয় জয়ের আকাঙ্ক্ষাও ইঙ্গিত করে_ এতসব ত্যাগের পেছনে ছিল একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নয়, একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের জন্য এ দেশের মানুষের প্রতীক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা দীর্ঘকালের। (মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানে শুধু '৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বরের ইতিহাস নয়। এমনকি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১-এর ইতিহাসও নয়। এই ইতিহাসের মূল খুঁজতে গেলে আরও সুদূর অতীতে যেতে হবে।) মুক্তিযুদ্ধ তাদের সুযোগ করে দিয়েছিল যুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রটি নির্মাণের। নিজস্ব জাতিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের লক্ষ্যে এটিই ছিল বাঙালির ইতিহাসে প্রথম সশস্ত্র পদক্ষেপ এবং এতে অংশগ্রহণ ছিল এ দেশের আপামর জনসাধারণের। এদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষা ছিল এর জন্য। পাকিস্তানি শোষণ কেবল এক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল। একটি জনগোষ্ঠী যখন নিজেদের একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এ রকম ব্যাপক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন তার অর্থও হয়ে ওঠে ব্যাপক। ঘটনাটি হয়ে ওঠে মহান। প্রকৃতপক্ষে আমাদের মুক্তিযুদ্ধও ছিল তেমনই একটা মহান বিষয়। বড়মাপের পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে জনগণের তুমুল অংশগ্রহণই আমাদের বিজয়কে অনিবার্য করে তুলেছিল।

সআহমাদ মোস্তফা কামাল :কথাসাহিত্যিক

No comments

Powered by Blogger.