সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ-নির্বাচনী সংস্কার প্রক্রিয়ার উপাদান by এম সাখাওয়াত হোসেন
যে কোনো নির্বাচনকে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ করতে এবং ভোটারদের প্রদত্ত ভোটকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এসবের মধ্যে প্রথম হচ্ছে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা। ভোটার তালিকা প্রণয়নে জনগণের সম্পৃক্ততা একে সর্বতোভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে এর প্রস্তুতকালেই প্রত্যেক ভোটারের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন এবং হালের কারিগরি সাহায্য
নেওয়াই উত্তম
অনেকদিন পর লিখতে বসেছি। এমন নয় যে, গত পাঁচ বছরে আমি কিছুই লিখিনি, কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। হয়তো সেগুলো আগের মতো নিয়মিত ছিল না। আমার ধারণা ছিল না যে, আমার এত পাঠক রয়েছে দেশের সর্বত্র। জেনেছি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি-বেসরকারি সফরকালে। এখনও প্রচুর পাঠক আমাকে পুনরায় লেখা শুরু করতে অনুরোধ করেন। পাঠকদের অনুরোধ আর আমার নিজের তাগিদে বহুদিন পর কলম হাতে নিলাম। এমনও নয় যে, পাঁচ বছর নির্বাচন কমিশন নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে লেখার তাগিদ অনুধাবন করিনি। এরই মধ্যে তিনটি ভ্রমণকাহিনী লিখেছিলাম। এ তিনটি বই বিগত তিনটি বইমেলায় প্রকাশিত হয় এবং ব্যাপক সমাদৃতও হয়। এ পাঁচ বছরে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ছাড়াও আরেকটি কাজ করেছি, সেটি হলো ১৯৭২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার নিয়ে Electoral Reform in Bangladesh 1972-2008 নামক একটি গবেষণাধর্মী বই লিখেছি, যা মুদ্রণের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর বাংলাদেশে হয়তো এটাই প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার নিয়ে আমি আজকে এ প্রবন্ধকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
বিগত পাঁচ বছরের নির্বাচন কমিশনে আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন বিষয়টি যেমন রয়েছে, তেমনি অনেকাংশজুড়ে ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার। প্রথমে জাতীয় নির্বাচন এবং তারই আলোকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার। এই সংস্কার প্রক্রিয়া আমাদের জন্য ছিল চলমান বিষয়। আমার মতে, বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের জন্ম দেয়। আবার প্রতিটি নির্বাচনে বিভিন্ন প্রান্তের নির্বাচনী এলাকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ভিন্নতর প্রেক্ষাপট তৈরি করে। যেমন উত্তর বাংলাদেশের নির্বাচন পরিবেশ এবং মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের নির্বাচনী এলাকার প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ কখনই এক রকম নয়। কাজেই একই ধরনের আইন প্রয়োগ করতে হলেও ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এ সবই পর্যায়ক্রমে সংস্কারের প্রক্রিয়ায় স্থান পেয়েছে।
নির্বাচনই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র বৈধ পন্থা। আর পন্থা যদি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ না হয় তবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়তে বাধ্য। কাজেই গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে হলে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা নির্বাচনী সংস্কার এবং এর প্রয়োগের মধ্যেই নিহিত।
নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে বলতে হয় যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিজয়ী প্রার্থীর নাম গেজেটে প্রকাশের সময়কাল পর্যন্ত। কাজেই এ সময়ের কর্মকাণ্ড এবং সমগ্র পূর্বকালের কর্মকাণ্ডের ওপর গুরুত্ব দিয়েও সংস্কার করতে হয়।
যে কোনো নির্বাচনকে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ করতে এবং ভোটারদের প্রদত্ত ভোটকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এসবের মধ্যে প্রথম হচ্ছে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা। ভোটার তালিকা প্রণয়নে জনগণের সম্পৃক্ততা একে সর্বতোভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে এর প্রস্তুতকালেই প্রত্যেক ভোটারের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন এবং হালের কারিগরি সাহায্য নেওয়াই উত্তম।
দ্বিতীয়ত, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা। যেগুলো সহজেই প্রয়োগযোগ্য এবং প্রয়োগে শিথিলতা গ্রহণযোগ্য হবে না। আইন যদি প্রয়োগ না হয় বা না করা যায় সে ধরনের আইন থাকা না থাকার সমান। কাজেই আইনের সঠিক প্রয়োগ না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়। নির্বাচনী আইনের সংস্কার নির্বাচনী সংস্কারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তৃতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকারী সংস্থা, যা আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন নামে পরিচিত। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন, অনুষ্ঠান ও তদারক করা। ভোটার তালিকা প্রণয়নও নির্বাচন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব। যেহেতু ভোটার তালিকা প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, সেহেতু নির্বাচন কমিশনের ওপরে জনগণের আস্থা অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা না থাকলে সে সংস্থা দ্বারা পরিচালিত নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ তাদের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনভাবে কার্যসম্পাদন করার ক্ষমতা প্রয়োগ এবং নির্বাচন পরিচালনার দক্ষতার মধ্য দিয়েই নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারে। এসব অর্জনের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের প্রয়োজন।
সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও সর্বতোভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপরোক্ত তিনটি প্রধান উপাদানের ওপর ভিত্তি করলেও এর বাইরেও প্রয়োজন সার্বিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন। যদিও বিষয়টি শুধু নির্বাচনের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে সার্বিকভাবে দেশে মজবুত গণতন্ত্র কায়েমের জন্যও প্রয়োজন। এখানে সংস্কারের প্রয়োজন। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন রাজনীতিবিদদের করণীয় গণ্ডির মধ্যে থাকলেও নির্বাচন কমিশনের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের বিষয়টি পরোক্ষভাবে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারকে আরও প্রায়োগিক করে তুলতে পারে।
আমরা সদ্যবিদায়ী কমিশন, বিগত বছরগুলোতে (২০০৭-২০১২) নির্বাচনী প্রক্রিয়ার যে কাজগুলো করেছি সেগুলো মূলত উপরোক্ত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই সম্পাদিত হয়েছে। আমার বিশ্লেষণে বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে দৃশ্যমান গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এসব পরিবর্তনের পুরোধায় নির্বাচন কমিশন থাকলেও পরিবর্তনের নিয়ামক (foctors) হিসেবে ওই সময়কার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং উদ্যোগীদের সে ভূমিকা ছিল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগেও বেশ কয়েকবার পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা সফল হয়নি। কারণ কখনোই সে রকম পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং উদ্যোগীদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে অন্যদের উদ্যোগকে সম্পৃক্ত করা হয়নি।
যে কোনো দেশে তৃণমূল পর্যায়ে থেকে পরিবর্তনের দাবি ওঠে এবং সে দাবির সঙ্গে অনুকূল পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়েই সূচিত সংস্কার স্থায়িত্ব পায়। তেমনি অবস্থা ছিল বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০০৬-০৮ সালে।
দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশের ক্ষয়িষ্ণু নির্বাচন সংস্কৃতির পরিবর্তনের। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের উত্তপ্ত রাজনীতি, নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ১৯৯৪ সালের মাগুরা-২-এর উপনির্বাচন এবং নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা এ দেশের রাজনীতিতে অবিশ্বাসের ধারাকে পাকাপোক্ত করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জন্ম নেয় নির্দলীয় সরকারের ধারণা। তারপরও বিতর্ক থেমে থাকেনি, যা চরমে ওঠে ২০০৬ সালের বিতর্কিত ভোটার লিস্ট তৈরি করা নিয়ে। এসবের প্রেক্ষাপটে তৃণমূল থেকে এ দেশের জনগণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারের জন্য ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রাখে।
জনগণের প্রত্যাশার চাপের পাশাপাশি এ দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষের মধ্যে জাগ্রত ছিল একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার, যার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত রচিত হবে। প্রতি নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিয়েছে। কিন্তু তেমন পরিবর্তন সূচিত হয়নি। ভোটার লিস্টের অস্বচ্ছতার কারণে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের দাবি জোরালো হয়। ভোটাররা এমন পদ্ধতির অপেক্ষায় ছিলেন, যার মাধ্যমে তাদের ভোট সুরক্ষিত এবং নিশ্চিত থাকবে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের যে সূচনা হয়েছিল তার পেছনে আরেকটি বিশেষ উপাদান যুক্ত হয়েছিল, সেটি ছিল সময়। সময়টি ছিল দীর্ঘায়িত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যদিও এ কথা অনস্বীকার্য যে, সেটি ছিল দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি বিতর্কিত সরকার তবুও জাতীয় নির্বাচনের মতো বৃহৎ কর্মকাণ্ডের আগে এবং পরিবর্তনের ব্যাপক চাপের মুখে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার ছিল অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশন ওই সময়টুকুর সদ্ব্যবহার অবশ্যই করেছিল। অন্যদিকে এতখানি সময় থাকাতে জাতীয় নির্বাচন সংস্কার সমাপনের পরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সর্বশেষ উপাদান ছিল নির্বাচন কমিশনের (২০০৭-২০১২) দৃঢ় মনোবল। দৃঢ়তার কারণেই ব্যাপক সংস্কার সম্ভব হয়েছিল। অনেক কঠিন এবং জটিল সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। সময়টি ছিল জাতীয় ক্রান্তিলগ্ন আর কঠিন সময়। প্রয়োজন ছিল দৃঢ়তার। যথেষ্ট ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। ঝুঁকি ছিল মুখ থুবড়ে পড়ার। বিশেষ করে ব্যাপক ঝুঁকি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের। অনেকটা অজানা পথে চলার মতো। ব্যর্থতা জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারত। ঝুঁকি নেওয়াটা ছিল দুর্দান্ত সাহসের বিষয়।
দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই নির্বাচনী সংস্কার শুধু পরিবেশ দ্বারা নিশ্চিত হয় না। পরিবেশের সঙ্গে প্রয়োজন অনুঘটকদের (Actors), যাদের আকাঙ্ক্ষা আর ইচ্ছার সনি্নবেশ ঘটাতে হয় পরিবেশের সঙ্গে। অনুঘটকদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং তাদের ভেতরে পরিবর্তনের তাগিদ না থাকলে কোনো সংস্কারই টেকসই হতে পারে না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী সংস্কৃতিই এর সাক্ষী। ২০০৭-০৮ সালের ব্যাপক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারের সঙ্গে অনেক সংগঠনই অনুঘটক হিসেবে সহযোগিতা করেছিল। এদের অন্যতম ছিল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। তারা ব্যাপক সহযোগিতা করেছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার সাধনে। এসব অনুঘটকের মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল রাজনৈতিক দলগুলো, যারা নিজেরাই ছিল পরিবর্তনের পক্ষে। মিডিয়া এবং দেশের সুশীল সমাজ ছিল নির্বাচনী সংস্কৃতির পরিবর্তনের পক্ষে সোচ্চার। অবশ্যই এসব সংগঠনের ওপর জনগণের প্রত্যাশা আর চাপ দুটোই নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
উপরে যত বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি, এসবই ছিল ব্যাপক পরিবর্তন সূচনার সহায়ক। তবে এর মধ্যে সবচাইতে মুখ্য ভূমিকা ছিল এ দেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ, বিশেষ করে ভোটাররা_ যারা সব সময়ই চেয়েছিলেন সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা এবং এ ধারাকে বহাল রাখতে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নির্দলীয় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। শুধু নির্বাচনই নয়, জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বস্ত নির্বাচন কমিশন। বিগত বছরগুলোতে সে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়েই বিদায়ী কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম পরিবর্তনের সূচনায়। ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, যা জনগণ দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে। আমরা আশা করব, এ দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে যে গতি এবং আশার আলোর সূচনা হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। এ দেশের কোটি কোটি ভোটারকেই নিয়ামক এবং অনুঘটক হিসেবে এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। যতটুকু অর্জন হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে এ দেশের সাড়ে আট কোটি ভোটারের সক্রিয় সহযোগিতায়। আশা করব, এ ধারা ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে। দেশে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ধারা স্থায়িত্ব পাবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন :সাবেক
নির্বাচন কমিশনার
hhmtlbd@yahoo.com
নেওয়াই উত্তম
অনেকদিন পর লিখতে বসেছি। এমন নয় যে, গত পাঁচ বছরে আমি কিছুই লিখিনি, কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। হয়তো সেগুলো আগের মতো নিয়মিত ছিল না। আমার ধারণা ছিল না যে, আমার এত পাঠক রয়েছে দেশের সর্বত্র। জেনেছি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি-বেসরকারি সফরকালে। এখনও প্রচুর পাঠক আমাকে পুনরায় লেখা শুরু করতে অনুরোধ করেন। পাঠকদের অনুরোধ আর আমার নিজের তাগিদে বহুদিন পর কলম হাতে নিলাম। এমনও নয় যে, পাঁচ বছর নির্বাচন কমিশন নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে লেখার তাগিদ অনুধাবন করিনি। এরই মধ্যে তিনটি ভ্রমণকাহিনী লিখেছিলাম। এ তিনটি বই বিগত তিনটি বইমেলায় প্রকাশিত হয় এবং ব্যাপক সমাদৃতও হয়। এ পাঁচ বছরে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ছাড়াও আরেকটি কাজ করেছি, সেটি হলো ১৯৭২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার নিয়ে Electoral Reform in Bangladesh 1972-2008 নামক একটি গবেষণাধর্মী বই লিখেছি, যা মুদ্রণের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর বাংলাদেশে হয়তো এটাই প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার নিয়ে আমি আজকে এ প্রবন্ধকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
বিগত পাঁচ বছরের নির্বাচন কমিশনে আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন বিষয়টি যেমন রয়েছে, তেমনি অনেকাংশজুড়ে ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার। প্রথমে জাতীয় নির্বাচন এবং তারই আলোকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার। এই সংস্কার প্রক্রিয়া আমাদের জন্য ছিল চলমান বিষয়। আমার মতে, বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের জন্ম দেয়। আবার প্রতিটি নির্বাচনে বিভিন্ন প্রান্তের নির্বাচনী এলাকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ভিন্নতর প্রেক্ষাপট তৈরি করে। যেমন উত্তর বাংলাদেশের নির্বাচন পরিবেশ এবং মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের নির্বাচনী এলাকার প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ কখনই এক রকম নয়। কাজেই একই ধরনের আইন প্রয়োগ করতে হলেও ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এ সবই পর্যায়ক্রমে সংস্কারের প্রক্রিয়ায় স্থান পেয়েছে।
নির্বাচনই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র বৈধ পন্থা। আর পন্থা যদি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ না হয় তবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়তে বাধ্য। কাজেই গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে হলে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা নির্বাচনী সংস্কার এবং এর প্রয়োগের মধ্যেই নিহিত।
নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে বলতে হয় যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিজয়ী প্রার্থীর নাম গেজেটে প্রকাশের সময়কাল পর্যন্ত। কাজেই এ সময়ের কর্মকাণ্ড এবং সমগ্র পূর্বকালের কর্মকাণ্ডের ওপর গুরুত্ব দিয়েও সংস্কার করতে হয়।
যে কোনো নির্বাচনকে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ করতে এবং ভোটারদের প্রদত্ত ভোটকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এসবের মধ্যে প্রথম হচ্ছে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা। ভোটার তালিকা প্রণয়নে জনগণের সম্পৃক্ততা একে সর্বতোভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে এর প্রস্তুতকালেই প্রত্যেক ভোটারের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন এবং হালের কারিগরি সাহায্য নেওয়াই উত্তম।
দ্বিতীয়ত, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা। যেগুলো সহজেই প্রয়োগযোগ্য এবং প্রয়োগে শিথিলতা গ্রহণযোগ্য হবে না। আইন যদি প্রয়োগ না হয় বা না করা যায় সে ধরনের আইন থাকা না থাকার সমান। কাজেই আইনের সঠিক প্রয়োগ না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়। নির্বাচনী আইনের সংস্কার নির্বাচনী সংস্কারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তৃতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকারী সংস্থা, যা আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন নামে পরিচিত। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন আয়োজন, অনুষ্ঠান ও তদারক করা। ভোটার তালিকা প্রণয়নও নির্বাচন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব। যেহেতু ভোটার তালিকা প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, সেহেতু নির্বাচন কমিশনের ওপরে জনগণের আস্থা অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা না থাকলে সে সংস্থা দ্বারা পরিচালিত নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ তাদের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনভাবে কার্যসম্পাদন করার ক্ষমতা প্রয়োগ এবং নির্বাচন পরিচালনার দক্ষতার মধ্য দিয়েই নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারে। এসব অর্জনের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের প্রয়োজন।
সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও সর্বতোভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপরোক্ত তিনটি প্রধান উপাদানের ওপর ভিত্তি করলেও এর বাইরেও প্রয়োজন সার্বিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন। যদিও বিষয়টি শুধু নির্বাচনের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে সার্বিকভাবে দেশে মজবুত গণতন্ত্র কায়েমের জন্যও প্রয়োজন। এখানে সংস্কারের প্রয়োজন। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন রাজনীতিবিদদের করণীয় গণ্ডির মধ্যে থাকলেও নির্বাচন কমিশনের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের বিষয়টি পরোক্ষভাবে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারকে আরও প্রায়োগিক করে তুলতে পারে।
আমরা সদ্যবিদায়ী কমিশন, বিগত বছরগুলোতে (২০০৭-২০১২) নির্বাচনী প্রক্রিয়ার যে কাজগুলো করেছি সেগুলো মূলত উপরোক্ত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই সম্পাদিত হয়েছে। আমার বিশ্লেষণে বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে দৃশ্যমান গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এসব পরিবর্তনের পুরোধায় নির্বাচন কমিশন থাকলেও পরিবর্তনের নিয়ামক (foctors) হিসেবে ওই সময়কার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং উদ্যোগীদের সে ভূমিকা ছিল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগেও বেশ কয়েকবার পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা সফল হয়নি। কারণ কখনোই সে রকম পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং উদ্যোগীদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে অন্যদের উদ্যোগকে সম্পৃক্ত করা হয়নি।
যে কোনো দেশে তৃণমূল পর্যায়ে থেকে পরিবর্তনের দাবি ওঠে এবং সে দাবির সঙ্গে অনুকূল পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়েই সূচিত সংস্কার স্থায়িত্ব পায়। তেমনি অবস্থা ছিল বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০০৬-০৮ সালে।
দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশের ক্ষয়িষ্ণু নির্বাচন সংস্কৃতির পরিবর্তনের। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের উত্তপ্ত রাজনীতি, নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ১৯৯৪ সালের মাগুরা-২-এর উপনির্বাচন এবং নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা এ দেশের রাজনীতিতে অবিশ্বাসের ধারাকে পাকাপোক্ত করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জন্ম নেয় নির্দলীয় সরকারের ধারণা। তারপরও বিতর্ক থেমে থাকেনি, যা চরমে ওঠে ২০০৬ সালের বিতর্কিত ভোটার লিস্ট তৈরি করা নিয়ে। এসবের প্রেক্ষাপটে তৃণমূল থেকে এ দেশের জনগণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারের জন্য ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রাখে।
জনগণের প্রত্যাশার চাপের পাশাপাশি এ দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষের মধ্যে জাগ্রত ছিল একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার, যার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত রচিত হবে। প্রতি নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিয়েছে। কিন্তু তেমন পরিবর্তন সূচিত হয়নি। ভোটার লিস্টের অস্বচ্ছতার কারণে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের দাবি জোরালো হয়। ভোটাররা এমন পদ্ধতির অপেক্ষায় ছিলেন, যার মাধ্যমে তাদের ভোট সুরক্ষিত এবং নিশ্চিত থাকবে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের যে সূচনা হয়েছিল তার পেছনে আরেকটি বিশেষ উপাদান যুক্ত হয়েছিল, সেটি ছিল সময়। সময়টি ছিল দীর্ঘায়িত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যদিও এ কথা অনস্বীকার্য যে, সেটি ছিল দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি বিতর্কিত সরকার তবুও জাতীয় নির্বাচনের মতো বৃহৎ কর্মকাণ্ডের আগে এবং পরিবর্তনের ব্যাপক চাপের মুখে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার ছিল অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশন ওই সময়টুকুর সদ্ব্যবহার অবশ্যই করেছিল। অন্যদিকে এতখানি সময় থাকাতে জাতীয় নির্বাচন সংস্কার সমাপনের পরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সর্বশেষ উপাদান ছিল নির্বাচন কমিশনের (২০০৭-২০১২) দৃঢ় মনোবল। দৃঢ়তার কারণেই ব্যাপক সংস্কার সম্ভব হয়েছিল। অনেক কঠিন এবং জটিল সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। সময়টি ছিল জাতীয় ক্রান্তিলগ্ন আর কঠিন সময়। প্রয়োজন ছিল দৃঢ়তার। যথেষ্ট ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। ঝুঁকি ছিল মুখ থুবড়ে পড়ার। বিশেষ করে ব্যাপক ঝুঁকি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের। অনেকটা অজানা পথে চলার মতো। ব্যর্থতা জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারত। ঝুঁকি নেওয়াটা ছিল দুর্দান্ত সাহসের বিষয়।
দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই নির্বাচনী সংস্কার শুধু পরিবেশ দ্বারা নিশ্চিত হয় না। পরিবেশের সঙ্গে প্রয়োজন অনুঘটকদের (Actors), যাদের আকাঙ্ক্ষা আর ইচ্ছার সনি্নবেশ ঘটাতে হয় পরিবেশের সঙ্গে। অনুঘটকদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং তাদের ভেতরে পরিবর্তনের তাগিদ না থাকলে কোনো সংস্কারই টেকসই হতে পারে না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী সংস্কৃতিই এর সাক্ষী। ২০০৭-০৮ সালের ব্যাপক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কারের সঙ্গে অনেক সংগঠনই অনুঘটক হিসেবে সহযোগিতা করেছিল। এদের অন্যতম ছিল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। তারা ব্যাপক সহযোগিতা করেছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার সাধনে। এসব অনুঘটকের মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল রাজনৈতিক দলগুলো, যারা নিজেরাই ছিল পরিবর্তনের পক্ষে। মিডিয়া এবং দেশের সুশীল সমাজ ছিল নির্বাচনী সংস্কৃতির পরিবর্তনের পক্ষে সোচ্চার। অবশ্যই এসব সংগঠনের ওপর জনগণের প্রত্যাশা আর চাপ দুটোই নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
উপরে যত বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি, এসবই ছিল ব্যাপক পরিবর্তন সূচনার সহায়ক। তবে এর মধ্যে সবচাইতে মুখ্য ভূমিকা ছিল এ দেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ, বিশেষ করে ভোটাররা_ যারা সব সময়ই চেয়েছিলেন সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা এবং এ ধারাকে বহাল রাখতে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নির্দলীয় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। শুধু নির্বাচনই নয়, জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বস্ত নির্বাচন কমিশন। বিগত বছরগুলোতে সে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়েই বিদায়ী কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম পরিবর্তনের সূচনায়। ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, যা জনগণ দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে। আমরা আশা করব, এ দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে যে গতি এবং আশার আলোর সূচনা হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। এ দেশের কোটি কোটি ভোটারকেই নিয়ামক এবং অনুঘটক হিসেবে এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। যতটুকু অর্জন হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে এ দেশের সাড়ে আট কোটি ভোটারের সক্রিয় সহযোগিতায়। আশা করব, এ ধারা ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে। দেশে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ধারা স্থায়িত্ব পাবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন :সাবেক
নির্বাচন কমিশনার
hhmtlbd@yahoo.com
No comments