সংশোধিত এডিপিতেও রাজনৈতিক প্রকল্পঃ সাংসদেরা আরও বরাদ্দ চান by জাহাঙ্গীর শাহ
সাংসদদের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের জন্য চার হাজার ৬৯১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল দুই বছর আগে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন নামের এই প্রকল্পের আওতায় ২৮৬টি নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল-কলেজ নির্মাণে অর্থ ব্যয় করার কথা।
প্রকল্পগুলো বাছাই করে দেন স্থানীয় সাংসদেরা। ঢাকার বাইরের সাংসদদের জন্য এই বিশেষ সুবিধার প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। গত অর্থবছরে এই প্রকল্পে ব্যয় হয় ৩১৪ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দ আছে ৩২২ কোটি টাকা। কিন্তু এই বরাদ্দ মানছেন না সাংসদেরা। ক্ষমতার শেষ দুই বছরের জন্য তাঁরা বিপুলসংখ্যক প্রকল্পের তালিকা জমা দিয়েছেন। আর এই তালিকা পেয়ে আরও দুই হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
এর বাইরেও এডিপিতে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আরও অনেক রাজনৈতিক পছন্দের প্রকল্প। এ রকমই এক প্রকল্প কিশোরগঞ্জের ইটনা-বড়ুইবাড়ী-চামড়াঘাট সড়ক মেরামত। এর জন্য ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এটি কোনো জাতীয় মহাসড়ক নয়, পথটি কোনো জেলা শহরেও যায়নি; তবু সড়কটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। গত জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর—এই দুই বছরজুড়ে এই সড়কটি মেরামত করা হবে। আর এ জন্য এটি নতুন প্রকল্প হিসেবে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ঢুকে পড়েছে।
এমনিতেই এডিপি বাস্তবায়নের বেহাল দশা। বৈদেশিক সাহায্য না পাওয়ায় এডিপি সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। এডিপি কমলেও প্রকল্প কমেনি; বরং বেড়েই চলছে। এ বছরই ১৩৯টি প্রকল্প নতুন করে এডিপিতে ঢুকেছে। এর মধ্যে রাস্তাঘাট মেরামত, ভবন নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্পই বেশি। এসব পূর্তকাজে কমবেশি ৮০ শতাংশ কেনাকাটা করতে হয়। আর স্থানীয় ঠিকাদারেরাই এসব কাজ করে থাকেন। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এতে লাভবান হন।
রাজনৈতিক চাপে বছরের মাঝে নতুন প্রকল্প নেওয়া সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের পর বছর এটা হয়ে আসছে। উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে হবে। পুরোনো পদ্ধতি ঠিকমতো কাজ করছে না।’
আরও উদাহরণ: বরগুনা-বেতাগী-নিয়ামতি-বাকেরগঞ্জ এবং আমতলী-তালতলী-সোনাকাটা সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের জন্য ১০৭ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আবার ‘সেকেন্ড লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট’ (এলজিএসডি-২) নামে আরেকটি প্রকল্পে ব্যয় হবে তিন হাজার ৯১২ কোটি টাকা। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে এই প্রকল্প থেকে থোক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পগুলোর কোনোটিই এই অর্থবছরের মূল এডিপিতে ছিল না। এগুলোও প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক চাপে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে যেসব প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে ঢুকেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই রাজনৈতিক চাপে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ঠিকাদারি কাজও পাবেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাঁর মতে, রাজনৈতিক চাপে এসব প্রকল্প নেওয়ার কারণে সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পসংখ্যা বেড়েছে। এতে সব প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাড়বে, অর্থের অপচয় হবে।
তবে বিষয়টিতে দ্বিমত প্রকাশ করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নিতে হবে। জনপ্রতিনিধিরাই জানেন, কোথায় কোন প্রকল্প নিতে হবে। আর তাঁদের সুপারিশে নতুন প্রকল্প নেওয়া দোষের কিছু নয়।’ তাঁর মতে, আর্থিক ও সামাজিক বিবেচনায় প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ কি না, সেটা বিবেচনায় আনতে হবে। পরিকল্পনা কমিশন সেই কাজটি যথাযথভাবে করেছে বলে তিনি মনে করেন।
১৩৯টি নতুন প্রকল্প: চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়। আর এই টাকায় খরচ করার জন্য এক হাজার ৩৯টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়। সম্প্রতি এডিপির আকার সংশোধন করে সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।
মূলত প্রকল্প বাস্তবায়ন বা টাকা খরচ করতে না পারার কারণেই প্রতিবারের মতো এবার এডিপির আকার ছোট করা হয়েছে। কিন্তু পুরোনো প্রকল্পগুলোর সঙ্গে আরও ১৩৯টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই পূর্তসংক্রান্ত। এর মধ্যে আবার ৭৫টি প্রকল্পই অবকাঠামো উন্নয়নসংক্রান্ত। ১০ বছর আগে করা বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ হয় বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প থেকে।
১১১ প্রকল্পে নামমাত্র বরাদ্দ: রাজনৈতিক চাপে নতুন প্রকল্প নেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চলা আরেক প্রবণতা হচ্ছে এসব প্রকল্পে অল্প অল্প বরাদ্দ দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা। সংশোধিত এডিপিতেও ১১১টি প্রকল্পে সামান্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এসব প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখা হবে, কিন্তু বাস্তবায়ন করা হবে না। এসব প্রকল্পের বেশির ভাগই বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের।
এর বাইরেও এডিপিতে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আরও অনেক রাজনৈতিক পছন্দের প্রকল্প। এ রকমই এক প্রকল্প কিশোরগঞ্জের ইটনা-বড়ুইবাড়ী-চামড়াঘাট সড়ক মেরামত। এর জন্য ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এটি কোনো জাতীয় মহাসড়ক নয়, পথটি কোনো জেলা শহরেও যায়নি; তবু সড়কটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। গত জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর—এই দুই বছরজুড়ে এই সড়কটি মেরামত করা হবে। আর এ জন্য এটি নতুন প্রকল্প হিসেবে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ঢুকে পড়েছে।
এমনিতেই এডিপি বাস্তবায়নের বেহাল দশা। বৈদেশিক সাহায্য না পাওয়ায় এডিপি সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। এডিপি কমলেও প্রকল্প কমেনি; বরং বেড়েই চলছে। এ বছরই ১৩৯টি প্রকল্প নতুন করে এডিপিতে ঢুকেছে। এর মধ্যে রাস্তাঘাট মেরামত, ভবন নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্পই বেশি। এসব পূর্তকাজে কমবেশি ৮০ শতাংশ কেনাকাটা করতে হয়। আর স্থানীয় ঠিকাদারেরাই এসব কাজ করে থাকেন। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এতে লাভবান হন।
রাজনৈতিক চাপে বছরের মাঝে নতুন প্রকল্প নেওয়া সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের পর বছর এটা হয়ে আসছে। উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে হবে। পুরোনো পদ্ধতি ঠিকমতো কাজ করছে না।’
আরও উদাহরণ: বরগুনা-বেতাগী-নিয়ামতি-বাকেরগঞ্জ এবং আমতলী-তালতলী-সোনাকাটা সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের জন্য ১০৭ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আবার ‘সেকেন্ড লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট’ (এলজিএসডি-২) নামে আরেকটি প্রকল্পে ব্যয় হবে তিন হাজার ৯১২ কোটি টাকা। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে এই প্রকল্প থেকে থোক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পগুলোর কোনোটিই এই অর্থবছরের মূল এডিপিতে ছিল না। এগুলোও প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক চাপে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে যেসব প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে ঢুকেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই রাজনৈতিক চাপে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ঠিকাদারি কাজও পাবেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাঁর মতে, রাজনৈতিক চাপে এসব প্রকল্প নেওয়ার কারণে সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পসংখ্যা বেড়েছে। এতে সব প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাড়বে, অর্থের অপচয় হবে।
তবে বিষয়টিতে দ্বিমত প্রকাশ করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নিতে হবে। জনপ্রতিনিধিরাই জানেন, কোথায় কোন প্রকল্প নিতে হবে। আর তাঁদের সুপারিশে নতুন প্রকল্প নেওয়া দোষের কিছু নয়।’ তাঁর মতে, আর্থিক ও সামাজিক বিবেচনায় প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ কি না, সেটা বিবেচনায় আনতে হবে। পরিকল্পনা কমিশন সেই কাজটি যথাযথভাবে করেছে বলে তিনি মনে করেন।
১৩৯টি নতুন প্রকল্প: চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়। আর এই টাকায় খরচ করার জন্য এক হাজার ৩৯টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়। সম্প্রতি এডিপির আকার সংশোধন করে সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।
মূলত প্রকল্প বাস্তবায়ন বা টাকা খরচ করতে না পারার কারণেই প্রতিবারের মতো এবার এডিপির আকার ছোট করা হয়েছে। কিন্তু পুরোনো প্রকল্পগুলোর সঙ্গে আরও ১৩৯টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই পূর্তসংক্রান্ত। এর মধ্যে আবার ৭৫টি প্রকল্পই অবকাঠামো উন্নয়নসংক্রান্ত। ১০ বছর আগে করা বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ হয় বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প থেকে।
১১১ প্রকল্পে নামমাত্র বরাদ্দ: রাজনৈতিক চাপে নতুন প্রকল্প নেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চলা আরেক প্রবণতা হচ্ছে এসব প্রকল্পে অল্প অল্প বরাদ্দ দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট রাখা। সংশোধিত এডিপিতেও ১১১টি প্রকল্পে সামান্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এসব প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখা হবে, কিন্তু বাস্তবায়ন করা হবে না। এসব প্রকল্পের বেশির ভাগই বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের।
No comments