মেয়র হত্যাঃ মন্ত্রীদের দায় এবং খেদাও কমিউনিস্ট by ফারুক যোশী
নরসিংদির জনপ্রিয় তরুণ মেয়র লোকমানকে হত্যা করা হয়েছে তারই সংগঠনের কার্যালয়ে। সে-তো মাস অতিক্রম করতে যাচ্ছে। মেয়র হত্যাকান্ডের পর খুবই স্বাভাবিকভাবে সারাদেশব্যাপী এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে ব্যাপক, হচ্ছে এখনও। এই হত্যাকান্ডের পর বেরিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলোর হিংস্রতার উপাখ্যান। একজন তরুণ ছাত্র লোকমান হোসেন তার জনপ্রিয়তা দিয়ে এলাকায় হয়ে উঠেছিলেন অবিসংবাদিত নেতা।
বলতে গেলে ঈর্ষা করার মতো নেতা তিনি হতে পেরেছিলেন। তার হত্যার পরই হয়ত দেশবাসী জেনেছে লোকমানের জনপ্রিয়তার কথা। বাংলাদেশের ছাত্র-যুব রাজনীতি যখন টেন্ডার আর চাদাবাজির অন্ধ চোরাগলিতে প্রতিদিন মাথা ঢুকিয়ে গোটা যুবসমাজটাকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে কলুষিত করছে, ঠিক তখন লোকমান মরে গিয়েই যেন প্রমাণ করে গেলেন বাংলাদেশেরও একজন তরুণ নেতা সত্যিকার অর্থে জনপ্রিয় হতে পারেন। হয়ত এই জনপ্রিয়তাই তাকে পৃথিবীতে থাকতে দিলো না। রাজনৈতিক হিংস্রতা তাকে প্রতিনিয়ত ধাওয়া করেছে। একজন লোকমানকে হত্যা করতে দীর্ঘ পরিকল্পনা করতে হয়েছে। এবং এই পরিকল্পনা অন্তত চলেছে এক বছর থেকে।
লোকমান হত্যার পর বেরিয়ে আসছে নরসিংদীর রাজনীতির অনেক চিত্র। লোকমানের ভাই নরসিংদীর আরেক ছাত্রনেতা শুধু আঙ্গুল তুলে দেখাননি, প্রকাশ্যে বলছেন এই হত্যাকাণ্ডের সাথে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুর সংশ্লিষ্টতার কথা। প্রধান আসামির মাঝে আছেন মন্ত্রীর ভাই এবং তার পিএস।
এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে কয়েকজনকে। তাদের বেশিরভাগই নরসিংদির আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী। জেরা-ভাষ্যে তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের নোংরামীর কথা, এমনকি মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতার কথা। কি আশ্চর্য... আওয়ামীলীগ বিএনপি‘র বাংলাদেশের রাজনীতির সতীনি-দ্বন্দ্ব এখানে এসে এক অদ্ভুত সন্ধিতে মিলিত হয়েছে। ভোট রাজনীতির মাঠে তাই জয়ী হবার অলীক আশায় দুটো পার্টিই চেয়েছে লোকমানকে সরিয়ে দিতে। তাইতো আটককৃত নেতাকর্মীরাই জানাচ্ছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা হত্যার জাল বুনেছে আর বিএনপি’র নেতা অর্থ জুগিয়েছে। কী নৃশংস গণতান্ত্রিক (?) চর্চা আমাদের বাংলাদেশে।
২) বর্তমান সরকারের বয়স তিন বছরের কাছাকাছি। এই বয়স সীমায় সরকারের আশার বাণী শুনেছে বাংলাদেশ। আশায় আশায় বাংলাদেশের মানুষ যেন নির্ভরতার ভেলায় ভেসেছে। সরকারের বড় বড় মন্ত্রীরা সে আশা দেখিয়েছেন দেশের মানুষকে। কিন্তু মন্ত্রীদের সেই আশার বাণীগুলো কি কোনও রশ্মি দেখাতে পেরেছে দেশের মানুষকে। কিছু কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু, সংবিধান সংশোধন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া হয়ত রাজনীতিকদের জন্যে কিংবা দলের জন্যে আশার আলো নিয়ে এসেছে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে হানাহানি কিংবা ব্যর্থতার রাজনীতি বন্ধ করতে কি সরকারি ভালো কোন উদ্যেগ পরিলক্ষিত হচ্ছে, এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর সেজন্যেই মন্ত্রীপরিষদের মন্ত্রীদের ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে মানুষের মুখে মুখে। দীপু মনি বিদেশ সফরের সেঞ্চুরি করলেও পররাষ্ট্রনীতির হিসেবের খাতায় কি যোগ হয়েছে , তা-তো প্রশ্নসাপেক্ষ। এমনকি অত্যন্ত আস্থাভাজন ভারতের কাছ থেকেও যেন ন্যায্য পাওনা পেতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ কোটি-কোটি টাকা ব্যয়ের পর। শুধুমাত্র কূটনৈতিক ব্যর্থতা প্রকারান্তরে পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার কারণেই।
আসা যেতে পারে সাহারা খাতুনের কথায়। ‘দোষী যে-ই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না,’ ছাড়া আর কোন গতি আছে কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর খাতায়। সোহেল তাজের মন্ত্রিত্বের কি হচ্ছে, তা নিয়ে রহস্যের জট খোলে নি এখনও সরকার। শেয়ার মার্কেটের ধস যতটুকু সরকারকে সমালোচিত করেছে তার চেয়ে বেশী বিতর্কিত করেছে অর্থমন্ত্রীর প্রগলভ কথাবার্তায়।
যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রণালয় যেন বালির মাঝে মুখ লুকিয়ে উঠ পাখি সেজেছে। মানুষ মরছে প্রতিদিন। রাস্তাঘাট বেহাল। পদ্মাসেতু নিয়েও সেই একই অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী বলেন সেতু হবেই। আর বিশ্বব্যাংক বলে সৈয়দ সাহেব থাকলে তারা ছাড় দেবে না। কারণ সৈয়দ সাহেবেরই প্রতিষ্ঠান সাঁকো ইন্টারন্যাশনাল এর আগে বড় ধরনের কমিশন দাবি করেছে সম্ভ্যাব্য ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে। এসব কিছুইতো কোনও লুকানো ব্যাপার নয়।
লোকমান হত্যাকান্ড নিয়ে মন্ত্রী রাজুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই হত্যাকাণ্ডের পর রাজুর এমনকি ব্যক্তিগত নৈতিকতা নিয়েও প্রকাশিত হচ্ছে অনেক কিছু। যা একজন মন্ত্রীকে অবশ্যই জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। কিন্ত রাজু প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এখানে আবার কিসের অবস্থান। একজন মন্ত্রী খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট একথা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু বাতাসে যা রটেছে তা দেশের মানুষ অবিশ্বাসই করবে কীভাবে! দেশের মানুষের বিশ্বাসই হলো একটি রাষ্ট্রের আস্থার জায়গা। এই জায়গাটুকুতে রাজু- আবুল হোসেন-ফারুক খানরা ধাক্কা দিয়েছেন। বলা যায়, এভাবেই অনেক মন্ত্রীর কথা। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রীও যেন সেই উঠ পাখির মতো। বালিতে মাথা গুঁজে আছেন।
মন্ত্রি বদলালে সরকারের তো কোন ব্যতয় ঘটার কথা নয়। নিকটবর্তী দেশ ভারতেও মাত্র এই তিন বছরে মনমোহন অনেক রদবদল করেছেন। ব্যর্থতা কিংবা অভিযোগের দায় নিয়ে অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু কী এমন এক দায়বদ্ধতা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যেখান থেকে তিনি নিজে একটুও নড়ছেন না। আমরা জানি প্রধানমন্ত্রীর সরকারেও মতিয়া চৌধুরীর মতো মন্ত্রী আছেন কিংবা আছেন নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো শিক্ষামন্ত্রী। যে নাহিদের মুখে একসময় কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশনের কথা বার বার উচ্চাতি হতে শুনতাম, সেই নাহিদ আজ ব্যস্ত তার নাহিদ কমিশন নিয়ে। যেন বৈপ্লবিক এক শিক্ষা সংস্কার বাংলাদেশে ইতিহাসে। তাদের বিরুদ্ধে জনগণতো কিছু বলে না। বলে শুধু আওয়ামীলীগেরই কিছু মানুষ।
ব্যারিস্টার শফিক, আব্দুর রাজ্জাক, মতিয়া চৌধুরী, নাহিদ তাদের চোখে এখনও আওয়ামীলিগের মানুষ নন কিংবা নন এরা সরকারের জন্যে আশা জাগানিয়া নেতা। এরা সাধারণ মানুষের কাছে সৎ এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতা হিসেবেই পরিচিত। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ডের দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের ব্যাপারে তারা নীরব। নাহিদেরা তাদের কাছে শুধুই ‘কমিউনিস্ট’। যদিও এই উচ্চারিত মানুষগুলো অনেক আগেই কমিউনিস্ট রাজনীতির সাথে সম্পর্ক ছেদ করেছেন। এবং সত্যিকার অর্থে কি, এদের দিয়ে কমিউনিস্টদের বিপ্লব (যদিও স্বপ্ন) চোরাগলিতেই পথ দেখবে। তবে হ্যাঁ, একসময়ের কমিউনিস্ট হবার কারণে হোক কিংবা ব্যক্তিগত কারণেই হোক, এরা সৎ রাজনীতিবিদদের কাতারে পড়ে গেলে এটাতো আওয়ামীলীগের জন্যেই একটা প্লাস পয়েন্ট। অথচ যেহেতু এরা দুর্নীতির সাথে জড়িত নেই,অতএব এরা এখন কমিউনিস্ট এবং আওয়ামীলীগ থেকে "খেদাও কমিউনিস্ট" গোষ্ঠির উদ্ভব।
বর্তমান সরকারের বোঝা হলো কতিপয় মন্ত্রী। দীর্ঘ তিন বছরের মাথায় এসেও এদের দুর্নাম কমে নি বরং বেড়েছে। কিছু মন্ত্রীর সার্থকতা শূন্যের কোঠায়। সার্থকতা-ব্যর্থতা দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ এমনকি ঐ সার্থকতা-ব্যর্থতা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশের জনগণ বিভিন্নভাবে। আমরা বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা ভালোভাবেই জানেন কার কি দায়, কোথায় কার দুর্বলতা কিংবা ব্যর্থতা। প্রধানমন্ত্রীর হাতেই এখন বিচারের ভার। কারণ শুধু তিনিই পারেন মন্ত্রীপরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন আনতে। বদলে দেবার অঙ্গীকার নিয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছিলেন। জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন দু‘তিন বছরে হবার নয়, আমরা তা মনেও করি না। কিন্তু জনগণ পরিবর্তনের ধারা দেখতে চায়, তাতো বিবেচনায় নিতে হবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার বিশ্বস্ত মানুষদের।
ম্যানচেস্টার,যুক্তরাজ্য
faruk.joshi@gmail.com
লোকমান হত্যার পর বেরিয়ে আসছে নরসিংদীর রাজনীতির অনেক চিত্র। লোকমানের ভাই নরসিংদীর আরেক ছাত্রনেতা শুধু আঙ্গুল তুলে দেখাননি, প্রকাশ্যে বলছেন এই হত্যাকাণ্ডের সাথে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুর সংশ্লিষ্টতার কথা। প্রধান আসামির মাঝে আছেন মন্ত্রীর ভাই এবং তার পিএস।
এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে কয়েকজনকে। তাদের বেশিরভাগই নরসিংদির আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী। জেরা-ভাষ্যে তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের নোংরামীর কথা, এমনকি মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতার কথা। কি আশ্চর্য... আওয়ামীলীগ বিএনপি‘র বাংলাদেশের রাজনীতির সতীনি-দ্বন্দ্ব এখানে এসে এক অদ্ভুত সন্ধিতে মিলিত হয়েছে। ভোট রাজনীতির মাঠে তাই জয়ী হবার অলীক আশায় দুটো পার্টিই চেয়েছে লোকমানকে সরিয়ে দিতে। তাইতো আটককৃত নেতাকর্মীরাই জানাচ্ছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা হত্যার জাল বুনেছে আর বিএনপি’র নেতা অর্থ জুগিয়েছে। কী নৃশংস গণতান্ত্রিক (?) চর্চা আমাদের বাংলাদেশে।
২) বর্তমান সরকারের বয়স তিন বছরের কাছাকাছি। এই বয়স সীমায় সরকারের আশার বাণী শুনেছে বাংলাদেশ। আশায় আশায় বাংলাদেশের মানুষ যেন নির্ভরতার ভেলায় ভেসেছে। সরকারের বড় বড় মন্ত্রীরা সে আশা দেখিয়েছেন দেশের মানুষকে। কিন্তু মন্ত্রীদের সেই আশার বাণীগুলো কি কোনও রশ্মি দেখাতে পেরেছে দেশের মানুষকে। কিছু কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু, সংবিধান সংশোধন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া হয়ত রাজনীতিকদের জন্যে কিংবা দলের জন্যে আশার আলো নিয়ে এসেছে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে হানাহানি কিংবা ব্যর্থতার রাজনীতি বন্ধ করতে কি সরকারি ভালো কোন উদ্যেগ পরিলক্ষিত হচ্ছে, এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর সেজন্যেই মন্ত্রীপরিষদের মন্ত্রীদের ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে মানুষের মুখে মুখে। দীপু মনি বিদেশ সফরের সেঞ্চুরি করলেও পররাষ্ট্রনীতির হিসেবের খাতায় কি যোগ হয়েছে , তা-তো প্রশ্নসাপেক্ষ। এমনকি অত্যন্ত আস্থাভাজন ভারতের কাছ থেকেও যেন ন্যায্য পাওনা পেতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ কোটি-কোটি টাকা ব্যয়ের পর। শুধুমাত্র কূটনৈতিক ব্যর্থতা প্রকারান্তরে পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার কারণেই।
আসা যেতে পারে সাহারা খাতুনের কথায়। ‘দোষী যে-ই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না,’ ছাড়া আর কোন গতি আছে কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর খাতায়। সোহেল তাজের মন্ত্রিত্বের কি হচ্ছে, তা নিয়ে রহস্যের জট খোলে নি এখনও সরকার। শেয়ার মার্কেটের ধস যতটুকু সরকারকে সমালোচিত করেছে তার চেয়ে বেশী বিতর্কিত করেছে অর্থমন্ত্রীর প্রগলভ কথাবার্তায়।
যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রণালয় যেন বালির মাঝে মুখ লুকিয়ে উঠ পাখি সেজেছে। মানুষ মরছে প্রতিদিন। রাস্তাঘাট বেহাল। পদ্মাসেতু নিয়েও সেই একই অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী বলেন সেতু হবেই। আর বিশ্বব্যাংক বলে সৈয়দ সাহেব থাকলে তারা ছাড় দেবে না। কারণ সৈয়দ সাহেবেরই প্রতিষ্ঠান সাঁকো ইন্টারন্যাশনাল এর আগে বড় ধরনের কমিশন দাবি করেছে সম্ভ্যাব্য ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে। এসব কিছুইতো কোনও লুকানো ব্যাপার নয়।
লোকমান হত্যাকান্ড নিয়ে মন্ত্রী রাজুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই হত্যাকাণ্ডের পর রাজুর এমনকি ব্যক্তিগত নৈতিকতা নিয়েও প্রকাশিত হচ্ছে অনেক কিছু। যা একজন মন্ত্রীকে অবশ্যই জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। কিন্ত রাজু প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এখানে আবার কিসের অবস্থান। একজন মন্ত্রী খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট একথা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু বাতাসে যা রটেছে তা দেশের মানুষ অবিশ্বাসই করবে কীভাবে! দেশের মানুষের বিশ্বাসই হলো একটি রাষ্ট্রের আস্থার জায়গা। এই জায়গাটুকুতে রাজু- আবুল হোসেন-ফারুক খানরা ধাক্কা দিয়েছেন। বলা যায়, এভাবেই অনেক মন্ত্রীর কথা। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রীও যেন সেই উঠ পাখির মতো। বালিতে মাথা গুঁজে আছেন।
মন্ত্রি বদলালে সরকারের তো কোন ব্যতয় ঘটার কথা নয়। নিকটবর্তী দেশ ভারতেও মাত্র এই তিন বছরে মনমোহন অনেক রদবদল করেছেন। ব্যর্থতা কিংবা অভিযোগের দায় নিয়ে অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু কী এমন এক দায়বদ্ধতা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যেখান থেকে তিনি নিজে একটুও নড়ছেন না। আমরা জানি প্রধানমন্ত্রীর সরকারেও মতিয়া চৌধুরীর মতো মন্ত্রী আছেন কিংবা আছেন নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো শিক্ষামন্ত্রী। যে নাহিদের মুখে একসময় কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশনের কথা বার বার উচ্চাতি হতে শুনতাম, সেই নাহিদ আজ ব্যস্ত তার নাহিদ কমিশন নিয়ে। যেন বৈপ্লবিক এক শিক্ষা সংস্কার বাংলাদেশে ইতিহাসে। তাদের বিরুদ্ধে জনগণতো কিছু বলে না। বলে শুধু আওয়ামীলীগেরই কিছু মানুষ।
ব্যারিস্টার শফিক, আব্দুর রাজ্জাক, মতিয়া চৌধুরী, নাহিদ তাদের চোখে এখনও আওয়ামীলিগের মানুষ নন কিংবা নন এরা সরকারের জন্যে আশা জাগানিয়া নেতা। এরা সাধারণ মানুষের কাছে সৎ এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতা হিসেবেই পরিচিত। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ডের দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের ব্যাপারে তারা নীরব। নাহিদেরা তাদের কাছে শুধুই ‘কমিউনিস্ট’। যদিও এই উচ্চারিত মানুষগুলো অনেক আগেই কমিউনিস্ট রাজনীতির সাথে সম্পর্ক ছেদ করেছেন। এবং সত্যিকার অর্থে কি, এদের দিয়ে কমিউনিস্টদের বিপ্লব (যদিও স্বপ্ন) চোরাগলিতেই পথ দেখবে। তবে হ্যাঁ, একসময়ের কমিউনিস্ট হবার কারণে হোক কিংবা ব্যক্তিগত কারণেই হোক, এরা সৎ রাজনীতিবিদদের কাতারে পড়ে গেলে এটাতো আওয়ামীলীগের জন্যেই একটা প্লাস পয়েন্ট। অথচ যেহেতু এরা দুর্নীতির সাথে জড়িত নেই,অতএব এরা এখন কমিউনিস্ট এবং আওয়ামীলীগ থেকে "খেদাও কমিউনিস্ট" গোষ্ঠির উদ্ভব।
বর্তমান সরকারের বোঝা হলো কতিপয় মন্ত্রী। দীর্ঘ তিন বছরের মাথায় এসেও এদের দুর্নাম কমে নি বরং বেড়েছে। কিছু মন্ত্রীর সার্থকতা শূন্যের কোঠায়। সার্থকতা-ব্যর্থতা দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ এমনকি ঐ সার্থকতা-ব্যর্থতা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশের জনগণ বিভিন্নভাবে। আমরা বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা ভালোভাবেই জানেন কার কি দায়, কোথায় কার দুর্বলতা কিংবা ব্যর্থতা। প্রধানমন্ত্রীর হাতেই এখন বিচারের ভার। কারণ শুধু তিনিই পারেন মন্ত্রীপরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন আনতে। বদলে দেবার অঙ্গীকার নিয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছিলেন। জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন দু‘তিন বছরে হবার নয়, আমরা তা মনেও করি না। কিন্তু জনগণ পরিবর্তনের ধারা দেখতে চায়, তাতো বিবেচনায় নিতে হবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার বিশ্বস্ত মানুষদের।
ম্যানচেস্টার,যুক্তরাজ্য
faruk.joshi@gmail.com
No comments