সংবর্ধনার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিও পেলেন ক্রিকেট-কন্যারা

ঞ্জিকা বলছে, এখন হেমন্ত। হিম হিম শীতলতায় প্রকৃতিও সাড়া দিচ্ছে মায়াবী এই ঋতুর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। কিন্তু কাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে গেলে যে কেউ ধন্দে পড়ে যেতেন। সেখানে যে বসন্তের মৌ মৌ সৌরভ! আনন্দের রঙিন বার্তায় দশ দিকে খুশির আমেজ, উল্লাসের নাগরদোলায় চড়ে প্রাপ্তির উচ্ছ্বাস, বিস্ময়কর অর্জনের তৃপ্তিতে ফুর্তির তরঙ্গ আছড়ে পড়ছে কংক্রিটের চার দেয়াল ছাপিয়ে সর্বত্র। পঞ্জিকার নির্দেশনা যা-ই থাক, বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের জন্য কাল ছিল বসন্ত!


হবে না? আগের দিন নিশ্চিত হয়েছে ওয়ানডে স্ট্যাটাস। কত কাঠখড় পুড়িয়ে, কত বন্ধুর পথ পেরিয়ে এই অর্জন। বাঁধনহারা আবেগে তো ভেসে যাবেনই সালমা খাতুন, খাদিজাতুল কুবরা, শুকতারা রহমানরা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় তাই প্রাণ খুলে হেসেছেন তাঁরা। অর্জনের আনন্দে।
অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দেশের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড। তাদের সাফল্যে যেমন উচ্ছ্বাসের ঢেউ বয়ে যায় ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে, ব্যর্থতায় তেমনি বিষাদের চাদরে ঢাকা পড়ে গোটা ব-দ্বীপ। এত দিন পর্যন্ত সেটি পুরুষ না মহিলা দলকে ঘিরে_এ প্রশ্ন ওঠেনি। মহিলা ক্রিকেটের অস্তিত্বটা ছিল প্রায় না থাকার মতোই। এবার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল প্রবল বিক্রমে। বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন অধরা রয়ে গেলেও ওয়ানডে মর্যাদা ঠিকই করেছে মুঠোবন্দি। আগামীর এগিয়ে চলার পথে এটি যে বিশাল এক মাইলফলক, সেটি একবাক্যে মানছেন সবাই।
কিন্তু সেই আগামীর পথের কাঁটাগুলো দূর করার দায়িত্ব যে বিসিবির, সেটি মানতেও দ্বিধা নেই কারো। সালমা, শুকতারা, কুবরাদের সঙ্গে কথা বললেই ভালো প্র্যাকটিসের জন্য হাহাকার শোনা যায়। সেই হাহাকার দূর করার প্রতিশ্রুতি কাল দিলেন ক্রিকেট কর্তারা। পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩০ জন ক্রিকেটার বিসিবির চুক্তির আওতায় আসবেন বলেও জানালেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট। আ হ ম মোস্তফা কামাল নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে ভবিষ্যতে মহিলা ক্রিকেটে নজর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন, 'আমরা ওদের জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারিনি। কিন্তু নিজেদের চেষ্টা, শ্রম, মেধা দিয়ে ওরা আমাদের এমন সাফল্য এনে দিল। এই শেরেবাংলা স্টেডিয়াম কদিনই-বা ওরা ব্যবহার করতে পেরেছে! সেই মোহাম্মদপুর, গুলশানের অগোছালো মাঠে প্র্যাকটিস করেছে ওরা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা মহিলাদের জন্য আলাদা একটা একাডেমী করব।' প্রবল করতালিতে তাঁর এ ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ক্রিকেট-কন্যারা। বিসিবি পরিচালক গাজী আশরাফ হোসেন প্রয়োজনীয়তা দেখছেন অবকাঠামো নির্মাণের, 'আমরা ওদের সত্যিকারের প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটি দিতে চাই। আলাদা মাঠ, আলাদা একাডেমী, ভালো কোচ। তাহলেই না ওরা আরো এগিয়ে যেতে পারবে।'
এমন অর্জনের জন্য শুধু অভিনন্দনই জোটেনি মহিলা ক্রিকেটারদের, পেয়েছেন আর্থিক প্রণোদনাও। টুর্নামেন্ট-জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করার জন্য অফ স্পিনার খাদিজাতুল কুবরাকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে বিসিবি। কোচ মমতা মাবেন, অধিনায়ক সালমা খাতুন ও শুকতারা রহমান ৫০ হাজার করে এবং বাকি সবাই ২৫ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। এ ছাড়া বিসিবি প্রেসিডেন্ট নিজে পাঁচ লাখ আর প্রিমিয়ার ব্যাংক দিয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। স্পন্সর ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড প্রত্যেক খেলোয়াড়কে দিয়েছে ১০ হাজার টাকা করে।
আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মানেই বড় বড় বুলি, গালভরা প্রতিশ্রুতি। এবং যথারীতি এরপর সব ভুলে যাওয়া। মহিলা ক্রিকেট নিয়ে কাল অনুমিতভাবেই ছিল প্রথম অংশের উপস্থিতি। এখন দ্বিতীয়টি প্রথা ভাঙলেই হয়। বাংলাদেশের মেয়েরা ঘরের ঘেরাটোপ ছেড়ে পুরো জাতিকে মাতিয়ে দিয়ে জানান দিল, প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ হলে অনেক দূরই যেতে পারে তাঁরা। অনেক দূর!

No comments

Powered by Blogger.