সেঞ্চুরি হয়েছে, তবে অশ্বিনের

ঞ্চটা সাজানো ছিল শচীন টেন্ডুলকারের জন্য। কী দারুণভাবেই না ছিল! ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের মরা উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের রানপাহাড় গড়া দেখতে মুম্বাই টেস্টের প্রথম দুই দিনে গ্যালারিতে ছিল না কোনো ভিড়, অথচ কাল সেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম খেলা শুরুর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ। যে ম্যাচের প্রথম তিন দিনে শেষ হয়েছে মাত্র দেড় ইনিংস, সেই টেস্টের চতুর্থ দিনকে ঘিরে এমন আগ্রহের কোনো কারণ নেই, দর্শকদের আগ্রহ ছিল একটা


সেঞ্চুরিকে ঘিরে। সেঞ্চুরি একটা দেখেছেন বটে তাঁরা, কিন্তু যেটা দেখতে চেয়েছিলেন সেটা নয়। শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি হয়নি এবারও, ক্ষণিকের ভুলে মাত্র ৬ রানের জন্য তিনি সেটা মিস করার পর সেঞ্চুরি করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে এ তরুণের প্রথম সেঞ্চুরি ভারতকে বাঁচিয়েছে লজ্জার হাত থেকে, কারণ ৯৪ রান করে টেন্ডুলকারের বিদায়ের পর একসময় ফলোঅনের শঙ্কাও চেপে ধরেছিল তাদের! ৮ নম্বরে নেমে অশ্বিনের ওই সেঞ্চুরিতে ভারত শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়েছে ৪৮২ রান তুলে, এরপর ১০৮ রানে এগিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিনশেষে ২ উইকেটে ৮১ রান তুলে লিডটাকে নিয়ে গেছে ১৮৯ পর্যন্ত। গতকালের দিনটাকে যে টেন্ডুলকার ব্যাট হাতে দুর্ভাগ্যের জন্যই মনে রাখবেন তা কিন্তু নয়। শেষ বিকেলে তাঁকে একটি ওভার বল করার সুযোগ দিয়েছিলেন ধোনি। তৃতীয় বলেই উইকেট প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। অফস্টাম্পের বাইরে থেকে বল টার্ন নিয়ে ব্রাভোর ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় ফার্স্ট স্লিপে, সেখানে দাঁড়ানো বিরাট কোহলি সহজ ক্যাচটাও ধরতে পারেননি!
অথচ টেস্ট ও ওয়ানডের সবচেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরিসহ অনেক রেকর্ডের মালিকের জন্য কী দারুণভাবেই না শুরু হয়েছিল দিনটা। গোটা ভারতের একশ কোটিরও বেশি মানুষের চোখ ছিল তাঁর প্রতিটি রানে, ৬৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা টেন্ডুলকার সেই রানগুলোও করছিলেন আশাজাগানিয়া ভঙ্গিতে। ফ্লিক, স্ট্রেট ড্রাইভ আর কভার ড্রাইভ থেকে তিনটি বাউন্ডারি তুলে নেন তিনি, ফিদেল এডওয়ার্ডসের পেস কাজে লাগিয়ে আপার কাট করে একবার বলকে সীমানার ওপারে পাঠিয়েছেন হাওয়ায় ভাসিয়েও। কিন্তু নড়বড়ে নব্বইতে এসে ক্ষণিকের একটা ভুল শেষ করে দিয়েছে সব কিছু। রবি রামপালের বল তাঁর ব্যাটে চুমু খেয়ে যখন জমা পড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির হাতে, তখন শুধু টেন্ডুলকার একাই নন, হতচকিত হয়ে গেছে পুরো ভারত। সকাল থেকে উৎসবমুখর গ্যালারিতেও নেমে এসেছে শ্মশানের নীরবতা। বেচারা অশ্বিনের অসাধারণ ইনিংসটাও আর ফিরিয়ে আনতে পারেনি সেই উৎসব। বিরাট কোহলির (৫২) সঙ্গে ৯৭ রানের জুটিটা অবশ্য ভারতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছে আত্মবিশ্বাস, উড়িয়ে দিয়েছে ফলোঅনের শঙ্কা। ১১৮ বলে ১০৩ রানের ইনিংসে ১৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে দুটি ছক্কাও মেরেছেন এই অলরাউন্ডার। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ায় একই টেস্টে সেঞ্চুরি আর পাঁচ উইকেট পাওয়া অলরাউন্ডারদের এক এলিট গ্রুপে ঢুকে পড়েছেন এ সিরিজেই অভিষিক্ত এ তরুণ। হরভজন সিংয়ের ফর্মহীনতার দুশ্চিন্তা কাটাতে এমন একজনকেই তো দরকার ভারতের!
তবে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল সিরিজটা আগেই জিতে যাওয়ায় দর্শকদের মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহ নেই তেমন। তাঁদের সমস্ত আগ্রহ টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরিকে ঘিরে, অন্তত এই টেস্টে সেই আগ্রহ আর মিটবে বলে মনে হয় না। মার্চে ৯৯তম সেঞ্চুরি করার পর থেকে ২২২ দিনের অপেক্ষা আর কত দীর্ঘায়িত হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
টেন্ডুলকারের একসময়ের সতীর্থ সঞ্জয় মাঞ্জরেকার কিন্তু মনে করেন, সেটা হয়ে যাওয়া উচিত অস্ট্রেলিয়া সফরের আগেই। সে জন্য টেন্ডুলকারকে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজে খেলানোর পরামর্শ তাঁর, 'টেন্ডুলকারকে নির্ভার দেখতে চায় ভারত। তাই ওর উচিত ওয়ানডে সিরিজটা খেলা আর অস্ট্রেলিয়া সফরের আগেই কাঁধ থেকে ভূতটাকে নামিয়ে ফেলা।'
ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি অবশ্য এ চাপের তত্ত্বটাই মানছেন না, 'কিসের চাপ? যে ভদ্রলোকের কথা বলছেন তিনি খেলা শুরু করার দ্বিতীয় বছর থেকেই কাঁধে বহন করে আসছেন এভারেস্ট সমান চাপ। মাঠে নেমে তিনি পঞ্চাশ পেরোতে না পারলেই লোকে মনে করে তিনি রান পাচ্ছেন না।' তবে মাইলফলকের সামনে আছেন বলেই টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরি পাওয়াটা যে দীর্ঘায়িত হচ্ছে সেটা মানছেন তিনিও, 'আসলে কোনো একটা মাইলফলকের সামনে থাকলে এমনিতেই স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।'
অপেক্ষায় তো আছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বই! ক্রিকইনফো

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫৯০ ও ৮১/২ (বারাথ ২, এডওয়ার্ডস ১৭, ব্র্যাথওয়েট ৩৪*, ব্রাভো ২৭*; ওঝা ২/২৭)
ভারত প্রথম ইনিংস ৪৮২ (অশ্বিন ১০৩, টেন্ডুলকার ৯৪, কোহলি ৫২, লক্ষ্মণ ৩২; স্যামুয়েলস ৩/৭৪, রামপাল ৩/৯৫, স্যামি ২/৯০)

No comments

Powered by Blogger.