কল রেকর্ড মুছে দিয়ে বিটিসিএলে কোটি কোটি টাকা লুটপাট
আন্তর্জাতিক কলের রেকর্ডস (সিডিআর) মুছে দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ল্যান্ডফোন কোম্পানিতে (বিটিসিএল) কোটি কোটি টাকার লুটপাট হচ্ছে। তা ছাড়া সরকারি অফিসের টেলিফোন ব্যবহারেও ভিওআইপি করার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে এক সময় ভিওআইপির ব্যবসায় আধিপত্য খাটানো বিটিসিএল আবারও স্বদর্পে ফিরে এসেছে।
খোদ সংসদীয় কমিটিতেই বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সাইদ খান অভিযোগ করেছেন, অবৈধ কল টার্মিনেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের হোতারা সব রাষ্ট্রায়ত্ত ল্যান্ডফোন কোম্পানিতে ঘাপটি মেরে আছেন। তারা অনেক ক্ষমতাধর হওয়ায় তার তেমন কিছু করার নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি। তবে সংসদীয় কমিটি তাকে বলে দিয়েছে, এমন বক্তব্য দিয়ে দায়মুক্তির সুযোগ নেই। এদিকে বিটিসিএল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে কোম্পানিটির দৈনিক ইনকামিং আন্তর্জাতিক কল প্রায় এক কোটি মিনিট কমে গেছে। অক্টোবরেও দিনে গড়ে তাদের আড়াই কোটি মিনিটের ইনকামিং কল ছিল। দেড় মাসের ব্যবধানে আবার তা এক কোটি মিনিটে নেমে আসে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সেটি এক কোটি ৭০ লাখ মিনিটে এসে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বিটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, একদিনে আটজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বদলি করায় এখন বিটিসিএল আবার ভিওআইপির গডফাদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। মঙ্গলবার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিযোগ করেন, জীবনের হুমকিও আসছে তার ওপর। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ব্লুবেরি নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অবৈধ কল টার্মিনেশন হচ্ছে। জোট সরকারের সময় থেকেই এই কোম্পানি ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা করে আসছে। তবে বিটিসিএলে আলোচিত আটজন বদলির পর কোম্পানিটি আরও সুবিধাজনক অবস্থায় চলে আসেছে। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তাই ওই কোম্পানির শ্রমিক সংগঠনের নেতা কাজী কামালের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে নিশ্চিত করেছে বিটিসিএল সূত্র। কল ডেটা রেকর্ডস গায়েব : বিটিসিএলের মগবাজার এক্সচেঞ্জে সিডিআর মুছে ফেলে প্রতিদিন কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটছে। কোম্পানিটির শীর্ষ থেকে নিম্ন পর্যায়ের সবার মুখে এই খবর। সম্প্রতি একটি মোবাইল অপারেটর আইএসডি কলের রেভিনিউ শেয়ারিং হিসেবে ১২ কোটি টাকা দাবি করে চিঠি দিলে বিষয়টি সামনে আসে। তবে অনেক দিন থেকেই মগবাজার এক্সচেঞ্জে এই কাজ হচ্ছিল বলেও জানিয়েছে কয়েকজন। সরকারি অফিসের লাইনে রাতে ভিওআইপি :রাতের আঁধারে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি সরকারি অফিসে অবৈধ কল টার্মিনেশনের উৎসব বসে। অফিসের কাজ শেষে রাতে ভিওআইপির এ আয়োজন চলছিল অনেকদিন থেকে। পরে বিটিআরসির কাছ থেকে খবর পেয়ে বিটিসিএল এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়। বিটিসিএলের সংশ্লিষ্ট শাখার কয়েকজন জানিয়েছেন, এখনও বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসের কয়েকশ' টেলিফোন এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে টেলিযোগাযোগ সচিব এবং বিটিসিএলের বোর্ড চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস সমকালকে বলেন, তিনি বিষয়টি জেনেছেন। তার পরেই বোর্ড থেকে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দিয়ে ভিওআইপি বিষয়ে বিটিসিএলের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন। মন্ত্রণালয় থেকে ভিওআইপির গডফাদাররা প্রশ্রয় পেয়ে থাকেন এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, সরকার টেলিযোগাযোগ খাতের এ সংক্রান্ত দিককে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনার কাজ করছে। তা ছাড়া তাদের দিক থেকে এখানে অভিযান চালানোর বিষয়ে বিটিআরসির ওপর কোনো বাধানিষেধ নেই বলেও জানান তিনি।
No comments