পাহাড়ের কোলে-সাজেক, কাছে থেকেও দূরে by বিপ্রদাশ বড়ুয়া
সন্ধে থেকে দেবাশীষের সদ্য নির্মিত গন্ধমাখা ঘরটিই ঢুকে যাচ্ছে কার্তিকের কুয়াশার বাড়িতে। নতুন ঘরের দরজা-জানালার কপাট না হওয়ায় কুয়াশার আক্রমণ হয়েছে অবাধ। চাকমাপাড়া বলে চোর নেই। দূরে একটা তক্ষক ডাকল কি! ভিটের সীমানায় আদাপাতায় শিশির গলে জল। চুকোর বা চৈ-খাট্টা (হিবিসকাস সাবদারিফা) গাছটি স্নানের ড্রামের পাশে ব্যাপক সতেজ। তিনটি ফুল। তিন শাখায় বিভক্ত পাতা। দুর্দান্ত টকটকে লাল ফলের ওপরও হিম।
হিম গলে বৃষ্টিভেজার মতো হয়ে গেছে বলে হাসানের ছবি তোলা হলো না। চারদিকে থিকথিকে অন্ধকার। গত রাত অমাবস্যা গেছে। ঝিঁঝি ডাকছে। জোনাকির জ্বলা ও নেভায় কি শব্দ হয় না! দেবাশীষের ধন্যা মা ছড়ার বাগানের দুরন্ত সুপুষ্ট কবরি কলা একে একে চারটি উদরসাৎ। এল বিনি চালের পিঠে। বরকে (কলাপাতায়) মোড়া। ভাপে রাঁধা। কুচি কুচি করে তাতে নারকোল। কী তার সুগন্ধি! নতুন ঘরের সুরভি কি মনে পড়ে? জানালা ও দরজায় তক্তা খাড়া করে দিয়ে রাত কাটল চমৎকার ঘুমে। শিশিরের শব্দ। স্বপ্নে কি পেঁচা বা ধুধুকাং পাখির ডাক শুনেছিলাম! কুয়াশার জন্য রাতের আকাশের তারা দেখা হলো না। বৃহস্পতিও দেখতে পেলাম না।
কী-করে কী-করে সকাল আটটা হয়ে গেল। কুয়াশা উধাও ভোরেই, প্রথম প্রেমের মতো। দেবাশীষ হাসান, দাউদ, প্রদীপ, জাকির, চালক ধীমান ও তার খুদে সহকারী মিলে আটজন। উইলিস জিপের বর্ণনা দিতে যাব না। যাচ্ছেতাই এর বসার ব্যবস্থা, রং থেকে গাড়ির গর্জন_সবই প্রত্নপুরাণ। ছুটল সেই গাড়ি। বাঁয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার দীঘিনালা উপত্যকা। পাকতে বসা ধান নিশ্চয়ই এখন দুলছে ওখানে। ওকি! আকাশের শস্য নামল! বৃষ্টি হলো আকাশের শস্য, মেঘ শস্যক্ষেত_আমি বলি। ছিচকাঁদুনে বৃষ্টি, হ্যাংলা হাওয়া। এমন বৃষ্টিকে বুলবুলিও তোয়াক্কা করে না। তবে ছাগল করে। এ বছর সুবর্ষা হয়েছে, বড় বান হয়নি। খরাও হয়নি। জম্পেশ শীতও নামবে এ বছর। ভালো আমন হবে। শীতকালীন তরকারি হবে অঢেল।
দীঘিনালা সামরিক ছাউনি বৃষ্টির বাড়ির ভেতর দিয়ে পেরিয়ে গেলাম। ধীমান বসেছে কোমরটা আসনের গোড়ায় ঠেসে, ঝুঁকে স্টিয়ারিং ধরে চালাচ্ছে। খাড়া বসে চালানোর উপায় নেই। আমিও ওর মতো করে বসেছি, নয়তো হাঁটু দুটো সামনে ধাক্কা খেয়ে শেষ হবে। এ ছাড়া উইন্ডশিল্ড গাড়ির ছাদের দিকে বেশ নিচু। ধীমান বোধ হয় আঁচ করে বলে বসল, 'প্রাচীনকালের জিপ, নিলামে কিনে ঠিকঠাক করে এখানে চলছে। পাহাড়ে চড়তে ওস্তাদ। ভয় পাবেন না স্যার।' আমিও ভাবছি, ভয় কী! সকালে দেবাশীষের ঘরে জুমের সুরভি চালের এক পেট গরম ভাত খেয়েছি। তেল-মসলাহীন মাছ-মাংস-সবজির কিংবদন্তিতুল্য সুস্বাদু রান্না।
বাঘাইহাট সামরিক ক্যাম্পে এসে অপেক্ষা একুনে ৪৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড। সে সময়টায় চা পান চলল। আমি বসে উইলিস সাহেবের জিপে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ফোনে জানানো হলো, আমরা সাজেক যাচ্ছি ফুল-পাখি-নিসর্গ করতে। ছাড়া পেয়ে ফের যাত্রা। একটা বিষয় লক্ষণীয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক জায়গার নাম বদলে দেওয়া হচ্ছে। বাঘাইহাট হয়ে যাচ্ছে বাগেরহাট।
পথে পথে দোকানের সামনে, গাছতলায় কলা স্তূপ হচ্ছে। মাঝেমধ্যে সুপুষ্ট চিনিচাঁপা ও কবরি। এখানে কবরিকে বাঙালি কলা ও কাঁঠালি কলা বলে। চট্টগ্রামেও। যেন অন্য সব অবাঙালি কলা। পাহাড়ের খাঁজে ঝোপঝাড়ে বুনো কলাগাছ। এগুলো বীজে ঠাসা, শাঁস নেই। এর মোচা খাওয়া যায়। একাত্তরের মানিকছড়ির লক্ষ্মীছড়ি বাজার-চৌধুরীর ঘরে কলাগাছের কচি বাকলের মসলাহীন রান্না খেয়েছি। দুর্দান্ত খেতে।
কাচলং নদীর ধারে ধারে বেশ কিছু পথে মাচলং পেরিয়ে চললাম। সাহিত্য প্রকাশ প্রকাশিত আমার 'ভূস্বর্গ ভ্রমণ বাংলাদেশ' বইতে এখানকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণের বিশদ বর্ণনা পাবেন। কর্ণফুলী উজানে থেগা, যেখানে স্থলবন্দর স্থাপনের কথা হচ্ছে। ছোট হরিণা, বড় হরিণা, কুকি ছড়ার নিভৃত গ্রামে দিনে-রাতে ভ্রমণ, ইঁদুর বন্যাকবলিত গ্রাম, শুভলং, বন্দুকভাঙা_বহু জায়গা ঘুরেছি আমি।
মাচলং থেকে সাজেকের রাস্তা ইট বিছানো। শুধু পাহাড় বেয়ে ওঠা আর ওঠা। চারদিকে অরণ্যহীন পাহাড়। লতাপাতা ও ঝোপঝাড়ে ভরা সবুজ সবুজে ঢাকা। এখানে আশ্চর্যজনকভাবে পাখি নেই। বুনো জীবজন্তু শেষ। দুটো মেঠো চড়ুই, নিঃসঙ্গ একটি খঞ্জনা, একা এক ফিঙে ছাড়া কাউকে পেলাম না। নলখাগড়া, কাশ, খুড়ি ঘাস (স্কেলারোস্টাসিয়া ফুসকা) পেয়েছি। ছড়ার পাশে হাতির খাদ্য মাথাসমান উঁচু ঘাস। রাস্তার ধারের ঝোপে রক্তসুন্দর কেও (কোস্টাস স্পেসিওসা) ইশারা দিল। মাথার ওপর একটি মাত্র সাদা ফুল ধবধব করে অদৃশ্য হয়ে গেল। অর্থাৎ গাড়ি তাকে অতিক্রম করে গেল। দূরে সাজেক দেখা যাচ্ছে। ওই তো।
উরে! বুনো ঝোপ থেকে এসে নাকে আছড়ে পড়ল তোকমার পাতার ঝাঁঝালো গন্ধ। ডান দিকে একটি বুনো শিমলতা, তার নীল ফুল উদভ্রান্ত করে দিল। ভূবিশ্বে নীল ফুল একটু কম, জানেন তো! জগতে সবার শেষে এসেছে নীল রং। মানুষ এখন নীল গোলাপ, নীল চন্দ্রমলি্লকা, নীল জবা উদ্ভাবনে ব্যস্ত। পথে পথে খুব কম মানুষ। আমার মতো কালো নেই-ই। অচেনা দু-একটি ফুল। যাত্রী গাড়ি হ্নায় এক দিন সাজেকে যাওয়া-আসা করে। কাসলং-এর কূলে একটি শোনা বা শোন্যাক (ওরোঙ্লিাম ইন্ডিকা) দেখেছিলাম। ফল নেই। কৃষ্ণচূড়ার ফলের মতো। ছবি তোলা হলো না। হাসান ছবি তুলছে কাসলংকে সোজা টেক-বাঁকহীন পেয়ে। গাড়ি থামিয়ে। আমিও, আবার কবে যে আসা হয়।
পাহাড়ের স্তূপের পর স্তূপ। কবি কালিদাস বলেছেন 'ধরার স্তন' এদের। কাসলং-এর বিখ্যাত সংরক্ষিত বন এটি। তার বিখ্যাত বাঁশবন উধাও! কর্ণফুলী কাগজকল তাই বন্ধ্যা এখন। এখানে-ওখানে প্রহরীর মতো নাতি-তরুণ মূল্যবান চিভিট (সুইনটোনিয়া ফ্লোরিবান্ডা) ডালপালা মাথায় নিঃসঙ্গ উদাসীন। কোথায় গেল বাটনা, চালমুগরা, চাপালিশ, চিকরাশি, ঢাকি জাম, উরি আম, কামদেব, নাগেশ্বর, নারিকেলি, পিটুলি প্রভৃতি বিখ্যাত সব বৃক্ষসম্পদ! কোথাও আমার বয়সী বৃক্ষসখা নেই!
টুপিপরা বানর, পাতা বানর, এশিয়ার শেয়াল, রাম কুত্তারা কোথায় তোমরা? মার্টিন বেজি, তীক্ষ্নমুখো বেজি, মেছো বেড়ালদের শেষ করে দিল! বার্কিং হরিণ, চিত্রল হরিণগুলো কোথায়? শজারুগুলো, মেঘলা চিতা, গুলবাঘ ও হনুমানরা শেষ? ও-হো-হো...! ভালুকেরা নেই? আ-হা-হা!
উড়ন্ত কাঠবেড়ালি, কালো কাঠবেড়ালি আপনি দেখেছেন? আমি দেখেছি। এখন দেখি না।
দুর্দান্ত সুন্দর ভীমরাজ ও নীলকণ্ঠ এবং কল্পনা চাকমার কথা মনে পড়ে?
দশ বছর আগেও বড় বড় ভোঁদর ও বড় পানকৌড়ি ছিল, আমি দেখেছি। কোথায় গেলে তোমরা? গয়ালগুলো নেই। পাহাড়ি ময়না লুপ্তপ্রায়। ময়ূর বিলুপ্ত। আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সাজেকে কমলা সুন্দরী আছে তো? তাইন্যাভির যৌবন উদ্দীপক লোকসংগীত? চান্দবি নামের কন্যার বারোমাইস্যা গান! রাধামুন-ধনপুদির প্রেম উপাখ্যান আপনারা শুনেছেন? ও সাজেক, তুমি আর কতদূর! সামনে ইটের ট্রাক, সামরিক কর্তৃপক্ষ রাস্তা মেরামত করছে। আমরা আটকে পড়লাম। ও সাজেক, তুমি কাছে থেকেও কত দূরে!
কী-করে কী-করে সকাল আটটা হয়ে গেল। কুয়াশা উধাও ভোরেই, প্রথম প্রেমের মতো। দেবাশীষ হাসান, দাউদ, প্রদীপ, জাকির, চালক ধীমান ও তার খুদে সহকারী মিলে আটজন। উইলিস জিপের বর্ণনা দিতে যাব না। যাচ্ছেতাই এর বসার ব্যবস্থা, রং থেকে গাড়ির গর্জন_সবই প্রত্নপুরাণ। ছুটল সেই গাড়ি। বাঁয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার দীঘিনালা উপত্যকা। পাকতে বসা ধান নিশ্চয়ই এখন দুলছে ওখানে। ওকি! আকাশের শস্য নামল! বৃষ্টি হলো আকাশের শস্য, মেঘ শস্যক্ষেত_আমি বলি। ছিচকাঁদুনে বৃষ্টি, হ্যাংলা হাওয়া। এমন বৃষ্টিকে বুলবুলিও তোয়াক্কা করে না। তবে ছাগল করে। এ বছর সুবর্ষা হয়েছে, বড় বান হয়নি। খরাও হয়নি। জম্পেশ শীতও নামবে এ বছর। ভালো আমন হবে। শীতকালীন তরকারি হবে অঢেল।
দীঘিনালা সামরিক ছাউনি বৃষ্টির বাড়ির ভেতর দিয়ে পেরিয়ে গেলাম। ধীমান বসেছে কোমরটা আসনের গোড়ায় ঠেসে, ঝুঁকে স্টিয়ারিং ধরে চালাচ্ছে। খাড়া বসে চালানোর উপায় নেই। আমিও ওর মতো করে বসেছি, নয়তো হাঁটু দুটো সামনে ধাক্কা খেয়ে শেষ হবে। এ ছাড়া উইন্ডশিল্ড গাড়ির ছাদের দিকে বেশ নিচু। ধীমান বোধ হয় আঁচ করে বলে বসল, 'প্রাচীনকালের জিপ, নিলামে কিনে ঠিকঠাক করে এখানে চলছে। পাহাড়ে চড়তে ওস্তাদ। ভয় পাবেন না স্যার।' আমিও ভাবছি, ভয় কী! সকালে দেবাশীষের ঘরে জুমের সুরভি চালের এক পেট গরম ভাত খেয়েছি। তেল-মসলাহীন মাছ-মাংস-সবজির কিংবদন্তিতুল্য সুস্বাদু রান্না।
বাঘাইহাট সামরিক ক্যাম্পে এসে অপেক্ষা একুনে ৪৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড। সে সময়টায় চা পান চলল। আমি বসে উইলিস সাহেবের জিপে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ফোনে জানানো হলো, আমরা সাজেক যাচ্ছি ফুল-পাখি-নিসর্গ করতে। ছাড়া পেয়ে ফের যাত্রা। একটা বিষয় লক্ষণীয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক জায়গার নাম বদলে দেওয়া হচ্ছে। বাঘাইহাট হয়ে যাচ্ছে বাগেরহাট।
পথে পথে দোকানের সামনে, গাছতলায় কলা স্তূপ হচ্ছে। মাঝেমধ্যে সুপুষ্ট চিনিচাঁপা ও কবরি। এখানে কবরিকে বাঙালি কলা ও কাঁঠালি কলা বলে। চট্টগ্রামেও। যেন অন্য সব অবাঙালি কলা। পাহাড়ের খাঁজে ঝোপঝাড়ে বুনো কলাগাছ। এগুলো বীজে ঠাসা, শাঁস নেই। এর মোচা খাওয়া যায়। একাত্তরের মানিকছড়ির লক্ষ্মীছড়ি বাজার-চৌধুরীর ঘরে কলাগাছের কচি বাকলের মসলাহীন রান্না খেয়েছি। দুর্দান্ত খেতে।
কাচলং নদীর ধারে ধারে বেশ কিছু পথে মাচলং পেরিয়ে চললাম। সাহিত্য প্রকাশ প্রকাশিত আমার 'ভূস্বর্গ ভ্রমণ বাংলাদেশ' বইতে এখানকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণের বিশদ বর্ণনা পাবেন। কর্ণফুলী উজানে থেগা, যেখানে স্থলবন্দর স্থাপনের কথা হচ্ছে। ছোট হরিণা, বড় হরিণা, কুকি ছড়ার নিভৃত গ্রামে দিনে-রাতে ভ্রমণ, ইঁদুর বন্যাকবলিত গ্রাম, শুভলং, বন্দুকভাঙা_বহু জায়গা ঘুরেছি আমি।
মাচলং থেকে সাজেকের রাস্তা ইট বিছানো। শুধু পাহাড় বেয়ে ওঠা আর ওঠা। চারদিকে অরণ্যহীন পাহাড়। লতাপাতা ও ঝোপঝাড়ে ভরা সবুজ সবুজে ঢাকা। এখানে আশ্চর্যজনকভাবে পাখি নেই। বুনো জীবজন্তু শেষ। দুটো মেঠো চড়ুই, নিঃসঙ্গ একটি খঞ্জনা, একা এক ফিঙে ছাড়া কাউকে পেলাম না। নলখাগড়া, কাশ, খুড়ি ঘাস (স্কেলারোস্টাসিয়া ফুসকা) পেয়েছি। ছড়ার পাশে হাতির খাদ্য মাথাসমান উঁচু ঘাস। রাস্তার ধারের ঝোপে রক্তসুন্দর কেও (কোস্টাস স্পেসিওসা) ইশারা দিল। মাথার ওপর একটি মাত্র সাদা ফুল ধবধব করে অদৃশ্য হয়ে গেল। অর্থাৎ গাড়ি তাকে অতিক্রম করে গেল। দূরে সাজেক দেখা যাচ্ছে। ওই তো।
উরে! বুনো ঝোপ থেকে এসে নাকে আছড়ে পড়ল তোকমার পাতার ঝাঁঝালো গন্ধ। ডান দিকে একটি বুনো শিমলতা, তার নীল ফুল উদভ্রান্ত করে দিল। ভূবিশ্বে নীল ফুল একটু কম, জানেন তো! জগতে সবার শেষে এসেছে নীল রং। মানুষ এখন নীল গোলাপ, নীল চন্দ্রমলি্লকা, নীল জবা উদ্ভাবনে ব্যস্ত। পথে পথে খুব কম মানুষ। আমার মতো কালো নেই-ই। অচেনা দু-একটি ফুল। যাত্রী গাড়ি হ্নায় এক দিন সাজেকে যাওয়া-আসা করে। কাসলং-এর কূলে একটি শোনা বা শোন্যাক (ওরোঙ্লিাম ইন্ডিকা) দেখেছিলাম। ফল নেই। কৃষ্ণচূড়ার ফলের মতো। ছবি তোলা হলো না। হাসান ছবি তুলছে কাসলংকে সোজা টেক-বাঁকহীন পেয়ে। গাড়ি থামিয়ে। আমিও, আবার কবে যে আসা হয়।
পাহাড়ের স্তূপের পর স্তূপ। কবি কালিদাস বলেছেন 'ধরার স্তন' এদের। কাসলং-এর বিখ্যাত সংরক্ষিত বন এটি। তার বিখ্যাত বাঁশবন উধাও! কর্ণফুলী কাগজকল তাই বন্ধ্যা এখন। এখানে-ওখানে প্রহরীর মতো নাতি-তরুণ মূল্যবান চিভিট (সুইনটোনিয়া ফ্লোরিবান্ডা) ডালপালা মাথায় নিঃসঙ্গ উদাসীন। কোথায় গেল বাটনা, চালমুগরা, চাপালিশ, চিকরাশি, ঢাকি জাম, উরি আম, কামদেব, নাগেশ্বর, নারিকেলি, পিটুলি প্রভৃতি বিখ্যাত সব বৃক্ষসম্পদ! কোথাও আমার বয়সী বৃক্ষসখা নেই!
টুপিপরা বানর, পাতা বানর, এশিয়ার শেয়াল, রাম কুত্তারা কোথায় তোমরা? মার্টিন বেজি, তীক্ষ্নমুখো বেজি, মেছো বেড়ালদের শেষ করে দিল! বার্কিং হরিণ, চিত্রল হরিণগুলো কোথায়? শজারুগুলো, মেঘলা চিতা, গুলবাঘ ও হনুমানরা শেষ? ও-হো-হো...! ভালুকেরা নেই? আ-হা-হা!
উড়ন্ত কাঠবেড়ালি, কালো কাঠবেড়ালি আপনি দেখেছেন? আমি দেখেছি। এখন দেখি না।
দুর্দান্ত সুন্দর ভীমরাজ ও নীলকণ্ঠ এবং কল্পনা চাকমার কথা মনে পড়ে?
দশ বছর আগেও বড় বড় ভোঁদর ও বড় পানকৌড়ি ছিল, আমি দেখেছি। কোথায় গেলে তোমরা? গয়ালগুলো নেই। পাহাড়ি ময়না লুপ্তপ্রায়। ময়ূর বিলুপ্ত। আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সাজেকে কমলা সুন্দরী আছে তো? তাইন্যাভির যৌবন উদ্দীপক লোকসংগীত? চান্দবি নামের কন্যার বারোমাইস্যা গান! রাধামুন-ধনপুদির প্রেম উপাখ্যান আপনারা শুনেছেন? ও সাজেক, তুমি আর কতদূর! সামনে ইটের ট্রাক, সামরিক কর্তৃপক্ষ রাস্তা মেরামত করছে। আমরা আটকে পড়লাম। ও সাজেক, তুমি কাছে থেকেও কত দূরে!
No comments