চট্টগ্রামে মাদকঃ ১৮০ স্থানে মাদকের বেচাকেনা by একরামুল হক ও প্রণব বল
চট্টগ্রাম নগরের ছয়টি এলাকায় (সার্কেল) ছোট-বড় ১৮০টি স্থানে মাদক বেচাকেনা হয়। প্রতি দুই থানার এলাকা নিয়ে একটি সার্কেল। কোতোয়ালি সার্কেলে সর্বোচ্চ ৩৫টি স্থানে মাদক বেচাকেনা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁরা কোতোয়ালির ৩৫টি স্পটেই নিয়মিত অভিযান চালান।
আরেক পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বন্দর সার্কেলে নগরের সবচেয়ে কম ১৮টি স্থানে মাদক বেচাকেনা হয়। এই কর্মকর্তার দাবি, মাদকের চাহিদা ও মাদকাসক্তর সংখ্যা এ এলাকায় কম। পুলিশ ও অন্যান্য সূত্র জানায়, নগরীর কেন্দ্রস্থল টাইগার পাস এলাকায় রয়েছে মাদকের বেশ কয়েকটি বড় আস্তানা। এর মধ্যে লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, বাটালি পাহাড়, রেল স্টেশন এলাকা ও বরিশাল কলোনী মাদকের সবচেয়ে বড় আস্তানা।
মতিঝর্না: ২০০৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে পেশা ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন স্থানীয় ২৫ মাদক বিক্রেতা। ফুল দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবণে স্বাগত জানান পুলিশ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এফ আই কবির। কিন্তু স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক ও মহল্লার নেতার ছায়ায় কিছুদিন পর তারা আবার আগের পেশায় ফিরে যান বলে অভিযোগ আছে।
তাঁদের একজন ফেরদৌসী বেগম। অঙ্গিকার করা সময় তিনি বলেছিলেন, ‘লাভ ভালো তাই লোভ সামলাতে পারি না। কিন্তু এখন থেকে আর এই ব্যবসা করব না।’ এই ফেরদৌসী এখন মদ, ফেনসিডিল ও হেরোইন বিক্রি করছেন মতিঝর্না এলাকায়। একইভাবে ‘অঙ্গীকার ভঙ্গ’ করেন এলাকার মো. রফিক। এছাড়া মতিঝর্না পাঁচ নম্বর গলির কলি, রোখসানা, জালালের বউ, সেলিম, এক নম্বর গলির সাবিনা, বিবি জয়নাব, দুই নম্বর গলির সুমন, চার নম্বর গলির রকি, মায়া বেগম মাদকের খুচরা ব্যবসা করছেন। এদের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে।
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় মতিঝর্না এলাকা গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নারী-পুরুষ (মাদক বিক্রেতা) বাড়ির পাশের রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপরিচিত লোকের আনাগোনা বাড়ছে। হাটাচলার মধ্যে বিক্রেতারা টাকা নিয়ে গাঁজা কিংবা হেরোইনের পুড়িয়া তুলে দিচ্ছে সে সব লোকদের হাতে। মাদকসেবীদের কেউ রিকশায়, কেউ পায়ে হেঁটে আসে। জানা গেল, ২০ টাকায় গাঁজা এবং ৩০-৪০ টাকায় হেরোইনের পুড়িয়া কিনে নেয়য় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মাদক বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা এটা ছাড়া সংসার চালাতে পারি না। তাই এই ব্যবসা করি। এরজন্য কয়েকজনকে মাসোহারা দিতে হয়।’ কাদের মাসোহারা দিচ্ছেন—জানতে চাইলে ওইসব নেতার নাম বলতে রাজি হননি তাঁরা।
লালখান বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ তৌহিদ বলেন, ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চলে, এটা সত্য। তবে যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেউ এখান থেকে টাকা নেয় না।’ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে মাদক বিক্রেতাদের যোগাযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
লালখান বাজারের মতিঝর্না ছাড়াও ডেবার পাড়, তুলা পুকুর পাড়, উত্তর পাড়া এলাকায় আরও অন্তত ২০-৩০ জন মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
বাটালি পাহাড় ও টাইগার পাস: নগরের বাটালি পাহাড়ের ওপরে প্রতিরোধ দেয়ালের পাশে প্রতিদিন মাদক বিক্রি হয়। এখানকার মূল বিক্রেতা ফুল মিয়া, নূর মিয়া ও বেগমী। এঁরাও হেরোইন, গাঁজা ফেনসিডিল বিক্রি করেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর এক-দুইজন করে তরুণ-যুবক আসতে থাকে এবং যে যার মতো করে কিনে নিয়ে চলে যায়। কেউ কেউ পাহাড়ের কোলে একটু আড়ালে বসেই মাদক সেবন করে।
বাটালি পাহাড়ের পাশে টাইগার পাসের দুই পাশে আলী ও মুরাদ নামে দুইজন গাঁজা ও হেরোইনের ব্যবসা করেন।
রেল স্টেশন: চট্টগ্রামের পুরনো রেল স্টেশনের একটি পরিত্যক্ত বগির ভেতর সন্ধ্যার পর মাদক সেবন করে বেশ কিছু লোক। সরজমিনে দেখা যায়, তরুণ থেকে শুরু করে চল্লিশোর্ধ্ব লোকজনও এই বগিতে বসে মাদক সেবন করছে। সেবনের পর অনেকেই বাইরে এসে ঘাসের ওপর কিংবা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে বসে ঝিমায়।
খোদ বটতলী রেল স্টেশনের সামনে রাস্তার ওপর গাঁজা বিক্রি করে অন্তত দশজন নারী-পুরুষ। রিকশা সিএনজি অটোরিকশাযোগে ক্রেতারা এসে কিনে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নগরের ডবলমুরিং অঞ্চলে অন্তত ২৫টি স্থানে মাদক বেচাকেনা চলে। এ এলাকার ৪০ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম-ঠিকানা পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে জানান ডবলমুরিং অঞ্চলের সহকারি কমিশনার তানভীর আরাফাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালিকা ধরে আমরা কয়েকজন গ্রেপ্তারও করেছি। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা আবার মাদক ব্যবসা শুরু করে।’
বরিশাল কলোনি: এ কেলানিটি নগরের মাদক ব্যবসার অন্যতম আখাড়া হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ তিন দশক ধরে এখানে এই ব্যবসা চলে আসছে বলে জানায় পুলিশ। এখানে সব ধরনের মাদক পাওয়া যায়। এখানে মাদক সেবনেরও ব্যবস্থা আছে। রেল স্টেশনের ওভারব্রিজ হয়ে কিংবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড বা আইস ফ্যাক্টরি রোড দিয়ে এই কলোনিতে ঢোকা যায়।
এখানে প্রায় ৫০ জন ছোট বড় মাদক বিক্রেতা রয়েছে। পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ফারুক, মনির, ইউসুফ, মতিন ও নাছির বরিশাল কলোনির মূল মাদক বিক্রেতা। তারা পাইকারি হিসেবে কিনে কলোনীতে নিয়ে আসে এবং খুচরা বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়। সম্প্রতি হাটহাজারী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যতম বড় মাদক ব্যবসায়ী মো. আলম বরিশাল কলোনিসহ নগরের বিভিন্নস্থানে মাদক সরবরাহের কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানায়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলম পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মূলত ভারত থেকে ফেনসিডিল এনে বরিশাল কলোনিতে ফারুক, মনির, মতিন, ইউসুফ, নাছিরদের দিই। সেখানে একটি বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও আছে। তাকে আমরা ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করি। আমার মতো আরও কয়েকজন বরিশাল কলোনিতে ফেনসিডিল ও গাঁজা সরবরাহ করে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে আলম প্রথমে হাটহাজারী এলাকায় মাদক ব্যবসা শুরু করেন। দুই তিন বছর খুচরা বিক্রির পর ২০০৭ সালের দিকে পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
হাটহাজারী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মো. বাবুল আক্তার বলেন, ‘আলমকে ২০০৮ সালে যখন গ্রেপ্তার করি তখন তাঁর একটি মোটর সাইকেল ছিল। সম্প্রতি তিনি টয়োটা প্রিমিও গাড়ি কিনেছে। বরিশাল কলোনি ও হাটাহাজারীর বিভিন্নস্থানে পাইকারি হারে ফেনসিডিল সরবরাহ করেন তিনি। তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জনক আলম মদনহাটে একটি পাকা একতলা বাড়িও করেছেন।
গ্রেপ্তারের পর আলম থানায় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা পাঠাই। পরে কুমিল্লার ভাতিসা সীমান্ত থেকে ডাইল (ফেনসিডিল) সংগ্রহ করি। সেখান থেকে কাভার্ড ভ্যানে তা চট্টগ্রামে এনে বরিশাল কলোনির ফারুক ও মতিনদের কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করি।’
ফেনসিডিল ব্যবসা করতে গিয়ে এ পর্যন্ত আলমের অন্তত ৫০টি চালান পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টির মতো মামলা হয়েছে।
বরিশাল কলোনী এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, মাদক বেপারিদের দৌরাত্ম্যে এখানকার সাধারণ মানুষ অসহায় থাকে। মাদক বিক্রেতারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর নজর রাখতে এলাকায় পাহারাদারও নিয়োগ করেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এখানে অভিযান চালাতে গিয়ে ডবলমুরিং থানার এক উপ-পরিদর্শকসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। বছর খানেক আগে সহকারি কমিশনারের নেতৃত্বে অভিযান চালাতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় তিন গোয়েন্দা পুলিশ আহত হন।
সম্পতি একজন মাদক সেবীর সঙ্গে গেলে দেখা যায়, বরিশাল কলোনির পুরনো একটি ভবনের পাশে বসে অনেকে মাদক সেবন করছে। নারী মাদকসেবীও এখানে মাদক নেন। কেউ আসক্তিতে বুঁদ হয়ে আছে, কেউবা বসে বসে ঝিমুচ্ছে। কয়েকজনকে ইনজেকশন নিতেও দেখা যায়। (শেষ)।
মতিঝর্না: ২০০৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে পেশা ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন স্থানীয় ২৫ মাদক বিক্রেতা। ফুল দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবণে স্বাগত জানান পুলিশ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এফ আই কবির। কিন্তু স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক ও মহল্লার নেতার ছায়ায় কিছুদিন পর তারা আবার আগের পেশায় ফিরে যান বলে অভিযোগ আছে।
তাঁদের একজন ফেরদৌসী বেগম। অঙ্গিকার করা সময় তিনি বলেছিলেন, ‘লাভ ভালো তাই লোভ সামলাতে পারি না। কিন্তু এখন থেকে আর এই ব্যবসা করব না।’ এই ফেরদৌসী এখন মদ, ফেনসিডিল ও হেরোইন বিক্রি করছেন মতিঝর্না এলাকায়। একইভাবে ‘অঙ্গীকার ভঙ্গ’ করেন এলাকার মো. রফিক। এছাড়া মতিঝর্না পাঁচ নম্বর গলির কলি, রোখসানা, জালালের বউ, সেলিম, এক নম্বর গলির সাবিনা, বিবি জয়নাব, দুই নম্বর গলির সুমন, চার নম্বর গলির রকি, মায়া বেগম মাদকের খুচরা ব্যবসা করছেন। এদের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে।
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় মতিঝর্না এলাকা গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নারী-পুরুষ (মাদক বিক্রেতা) বাড়ির পাশের রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপরিচিত লোকের আনাগোনা বাড়ছে। হাটাচলার মধ্যে বিক্রেতারা টাকা নিয়ে গাঁজা কিংবা হেরোইনের পুড়িয়া তুলে দিচ্ছে সে সব লোকদের হাতে। মাদকসেবীদের কেউ রিকশায়, কেউ পায়ে হেঁটে আসে। জানা গেল, ২০ টাকায় গাঁজা এবং ৩০-৪০ টাকায় হেরোইনের পুড়িয়া কিনে নেয়য় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মাদক বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা এটা ছাড়া সংসার চালাতে পারি না। তাই এই ব্যবসা করি। এরজন্য কয়েকজনকে মাসোহারা দিতে হয়।’ কাদের মাসোহারা দিচ্ছেন—জানতে চাইলে ওইসব নেতার নাম বলতে রাজি হননি তাঁরা।
লালখান বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ তৌহিদ বলেন, ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চলে, এটা সত্য। তবে যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেউ এখান থেকে টাকা নেয় না।’ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে মাদক বিক্রেতাদের যোগাযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
লালখান বাজারের মতিঝর্না ছাড়াও ডেবার পাড়, তুলা পুকুর পাড়, উত্তর পাড়া এলাকায় আরও অন্তত ২০-৩০ জন মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
বাটালি পাহাড় ও টাইগার পাস: নগরের বাটালি পাহাড়ের ওপরে প্রতিরোধ দেয়ালের পাশে প্রতিদিন মাদক বিক্রি হয়। এখানকার মূল বিক্রেতা ফুল মিয়া, নূর মিয়া ও বেগমী। এঁরাও হেরোইন, গাঁজা ফেনসিডিল বিক্রি করেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর এক-দুইজন করে তরুণ-যুবক আসতে থাকে এবং যে যার মতো করে কিনে নিয়ে চলে যায়। কেউ কেউ পাহাড়ের কোলে একটু আড়ালে বসেই মাদক সেবন করে।
বাটালি পাহাড়ের পাশে টাইগার পাসের দুই পাশে আলী ও মুরাদ নামে দুইজন গাঁজা ও হেরোইনের ব্যবসা করেন।
রেল স্টেশন: চট্টগ্রামের পুরনো রেল স্টেশনের একটি পরিত্যক্ত বগির ভেতর সন্ধ্যার পর মাদক সেবন করে বেশ কিছু লোক। সরজমিনে দেখা যায়, তরুণ থেকে শুরু করে চল্লিশোর্ধ্ব লোকজনও এই বগিতে বসে মাদক সেবন করছে। সেবনের পর অনেকেই বাইরে এসে ঘাসের ওপর কিংবা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে বসে ঝিমায়।
খোদ বটতলী রেল স্টেশনের সামনে রাস্তার ওপর গাঁজা বিক্রি করে অন্তত দশজন নারী-পুরুষ। রিকশা সিএনজি অটোরিকশাযোগে ক্রেতারা এসে কিনে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নগরের ডবলমুরিং অঞ্চলে অন্তত ২৫টি স্থানে মাদক বেচাকেনা চলে। এ এলাকার ৪০ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম-ঠিকানা পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে জানান ডবলমুরিং অঞ্চলের সহকারি কমিশনার তানভীর আরাফাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালিকা ধরে আমরা কয়েকজন গ্রেপ্তারও করেছি। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা আবার মাদক ব্যবসা শুরু করে।’
বরিশাল কলোনি: এ কেলানিটি নগরের মাদক ব্যবসার অন্যতম আখাড়া হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ তিন দশক ধরে এখানে এই ব্যবসা চলে আসছে বলে জানায় পুলিশ। এখানে সব ধরনের মাদক পাওয়া যায়। এখানে মাদক সেবনেরও ব্যবস্থা আছে। রেল স্টেশনের ওভারব্রিজ হয়ে কিংবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড বা আইস ফ্যাক্টরি রোড দিয়ে এই কলোনিতে ঢোকা যায়।
এখানে প্রায় ৫০ জন ছোট বড় মাদক বিক্রেতা রয়েছে। পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ফারুক, মনির, ইউসুফ, মতিন ও নাছির বরিশাল কলোনির মূল মাদক বিক্রেতা। তারা পাইকারি হিসেবে কিনে কলোনীতে নিয়ে আসে এবং খুচরা বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়। সম্প্রতি হাটহাজারী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যতম বড় মাদক ব্যবসায়ী মো. আলম বরিশাল কলোনিসহ নগরের বিভিন্নস্থানে মাদক সরবরাহের কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানায়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলম পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মূলত ভারত থেকে ফেনসিডিল এনে বরিশাল কলোনিতে ফারুক, মনির, মতিন, ইউসুফ, নাছিরদের দিই। সেখানে একটি বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও আছে। তাকে আমরা ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করি। আমার মতো আরও কয়েকজন বরিশাল কলোনিতে ফেনসিডিল ও গাঁজা সরবরাহ করে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে আলম প্রথমে হাটহাজারী এলাকায় মাদক ব্যবসা শুরু করেন। দুই তিন বছর খুচরা বিক্রির পর ২০০৭ সালের দিকে পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
হাটহাজারী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মো. বাবুল আক্তার বলেন, ‘আলমকে ২০০৮ সালে যখন গ্রেপ্তার করি তখন তাঁর একটি মোটর সাইকেল ছিল। সম্প্রতি তিনি টয়োটা প্রিমিও গাড়ি কিনেছে। বরিশাল কলোনি ও হাটাহাজারীর বিভিন্নস্থানে পাইকারি হারে ফেনসিডিল সরবরাহ করেন তিনি। তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জনক আলম মদনহাটে একটি পাকা একতলা বাড়িও করেছেন।
গ্রেপ্তারের পর আলম থানায় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা পাঠাই। পরে কুমিল্লার ভাতিসা সীমান্ত থেকে ডাইল (ফেনসিডিল) সংগ্রহ করি। সেখান থেকে কাভার্ড ভ্যানে তা চট্টগ্রামে এনে বরিশাল কলোনির ফারুক ও মতিনদের কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করি।’
ফেনসিডিল ব্যবসা করতে গিয়ে এ পর্যন্ত আলমের অন্তত ৫০টি চালান পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টির মতো মামলা হয়েছে।
বরিশাল কলোনী এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, মাদক বেপারিদের দৌরাত্ম্যে এখানকার সাধারণ মানুষ অসহায় থাকে। মাদক বিক্রেতারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর নজর রাখতে এলাকায় পাহারাদারও নিয়োগ করেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এখানে অভিযান চালাতে গিয়ে ডবলমুরিং থানার এক উপ-পরিদর্শকসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। বছর খানেক আগে সহকারি কমিশনারের নেতৃত্বে অভিযান চালাতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় তিন গোয়েন্দা পুলিশ আহত হন।
সম্পতি একজন মাদক সেবীর সঙ্গে গেলে দেখা যায়, বরিশাল কলোনির পুরনো একটি ভবনের পাশে বসে অনেকে মাদক সেবন করছে। নারী মাদকসেবীও এখানে মাদক নেন। কেউ আসক্তিতে বুঁদ হয়ে আছে, কেউবা বসে বসে ঝিমুচ্ছে। কয়েকজনকে ইনজেকশন নিতেও দেখা যায়। (শেষ)।
No comments