দুজনই সমান সমান by সৌরভ রাহমান
রামপুরার একটি ব্যাচেলর বাড়িতে ছোট্ট কক্ষে ভাড়া থাকেন লিখন। নাচের অনুষ্ঠান, শুটিং কিংবা নাচের ক্লাস শেষে ব্যাচেলর বাড়ির ছোট্ট কক্ষটিই হয়ে ওঠে তাঁর অবসরের আড্ডাস্থল। তাই বলে কিন্তু লিখনকে একেবারেই ঘরকুনো স্বভাবের বলা যাবে না। কারণ আর কিছু নয়, খ্যাতির বিড়ম্বনা। লিখন বলেন, 'আড্ডা দেওয়ার জায়গা কোথায় রে ভাই! আর দশটা মানুষের মতো যে পার্ক রেস্টুরেন্ট, মার্কেট বা যেখানে-সেখানে আড্ডা দিয়ে সময়টাকে নিজের মতো
করে উপভোগ করব, তা কখনো হয়ে ওঠে না।' লিখনের প্রায় সময়ের আড্ডার সঙ্গী তাঁর দুই নাচের শিষ্য তুষার ও চঞ্চল। আড্ডার পাশাপাশি চলতে থাকে টিভি দেখা। কখনো টিভিতে বা ভিডিওতে নিজের নাচ দেখতে দেখতে লিখন নিজেই হয়ে ওঠেন সমালোচক। এরপর ভুল ও অপূর্ণতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিনিয়তই নিজেকে অতিক্রম করার সংগ্রামে লিপ্ত হন। কখনো কখনো আত্মসমালোচনায় লিখনের সঙ্গী হন নাদিয়া। মঞ্চে নাচ বা টিভি চ্যানেলের নাচের শুটিং শেষে যখন শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রশংসা পান, তখন তাঁরা ভাবেন, ইস! নাচটা আরো ভালো হতে পারত। ওই জায়গাটায় ওভাবে না করে এভাবে করলে বোধহয় আরো ভালো লাগত। শিবলী মহম্মদ, শামীম আরা নিপা ও আনজাম মাসুদ_এই তিন মানুষকে ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন লিখন। কারণ তাঁর আজকের এ অবস্থানে আসার জন্য অনেকখানি অবদান রেখেছেন তাঁরা। শৈশবে শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নিপার নাচ দেখেই নাচের প্রতি আগ্রহী হন লিখন। আবার সুরঙ্গমা সংগীত একাডেমীতে লিখনের সার্টিফিকেট কোর্সে নৃত্যগুরুদের মধ্যে শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নিপাও ছিলেন। এরপর ভারত সরকারের বৃত্তি পেয়ে শ্রীরাম ভারতীয় কলাকেন্দ্রে রানী খানমের কাছে কত্থক নৃত্যে ছয় বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন। ব্যক্তিগতভাবে কুচিপুড়ি শেখেন রাধা রেড্ডির কাছে। ২০০০ সালে দেশে ফিরে আনজাম মাসুদের বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে (আজকাল) ঈশিতার সঙ্গে যুগল নাচ করেন। প্রথম নাচ দিয়েই নির্মাতাদের সুদৃষ্টি কাড়েন লিখন। এরপর অন্যান্য বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান থেকেও ডাক আসতে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যুগল নাচ করেন রিচি, নাদিয়া, শ্রাবন্তী, অপি, বিজরী ও চাঁদনীর সঙ্গে। কিন্তু লিখন মুগ্ধ হন নাদিয়ার নাচ দেখে। নাদিয়াও লিখনের নাচ দেখে বিমোহিত হন। দর্শক ও নির্মাতাদের কাছেও নাদিয়া লিখনের যুগল নাচ গ্রহণযোগ্যতা পায়। 'আজকাল' ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে পর পর বেশ কিছু পর্বে তাঁরা যুগল নাচ করেন। ধীরে ধীরে নাদিয়া-লিখন জুটি দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পায়। দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের এই জুটি মঞ্চ ও টিভি মাতিয়ে চলেছে। শুরু থেকে এখনো দর্শকপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন তাঁরা। নাদিয়ার বিয়ের পরেও তাঁদের জুটিতে প্রভাব পড়েনি। লিখন বলেন, 'নাদিয়া নাচের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সংসার ও নাটকের শুটিংয়ে যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন, নাচের জন্য সে ঠিকই সময় বের করে নেয়।' ঈদ, পূজা, রবীন্দ্র-নজরুল জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন দিবসের বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান, করপোরেট শো_সবখানেই আছে তাঁদের সমান পদচারণ। গেল ঈদে এই জুটি নাচ করেছে সব কটি টিভি চ্যানেলে। শুধু দেশে নয়, নিয়মিত নাচেন বিদেশেও। সৌন্দর্য, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও অভিব্যক্তির অনন্যতায় তাঁদের প্রায় সব নাচই জয় করেছে দর্শকহৃদয়। লিখন-নাদিয়া খণ্ডনৃত্য ছাড়াও শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, তিনকন্যা, রক্তলাল অহংকার প্রভৃতি নৃত্যনাট্যে প্রধান চরিত্রে অংশ নিয়েছেন। এগুলোর বেশির ভাগের পরিচালকও তাঁরা দুজন। দুজনই বিটিভিতে শিল্পী ও পরিচালক হিসেবে তালিকাভুক্ত। নাদিয়ার মতো লিখনও অভিনয়ে নাম লিখিয়েছেন। ইতিমধ্যে 'পরখ', 'সানাইয়ে বিরহের সুর' এবং 'ভালোবাসা এক নদী' শীর্ষক খণ্ডনাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। তাঁরা দুজনে একসঙ্গে নৃত্যকথা নামের একটি নাচের স্কুলও গড়েছেন। সব কিছুতেই দুজনে সমানে সমান। তবে একটু অমিলও আছে। নাদিয়া দাম্পত্য জীবনযাপন করছেন। আর লিখন এখনো ব্যাচেলর। তবে এই অমিলটা বেশিদিন ধরে রাখতে চান না লিখন। শিগগিরই মনের মানুষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা ভাবছেন।
No comments