সড়কের গাছ চুরি-বৃক্ষেরও তবে পা গজায়!
বনফুলের বিখ্যাত ছোটগল্প 'নিমগাছ'-এ আমরা দেখেছি, প্রশংসায় মুগ্ধ বৃক্ষটি কবির সঙ্গে চলে যেতে চাইলেও পারে না। শিকড়ের কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কালিয়া সড়কের আট কিলোমিটার এলাকার ৭৬টি গাছও কি ওই সড়কে চলাচলকারী কোনো পথিকের পেছনে পেছনে চলে গেছে? সে ক্ষেত্রে শিকড় বোধহয় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউই যখন হদিস দিতে পারছেন না; স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় যে নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের তর্জনী, তিনিও যখন কিছু জানেন না; গাছগুলো আর যাবে কোথায়? বুধবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঈদের ছুটিতে দৌলতপুর-কালিয়া সড়কের গাছগুলো চুরি হয়। এখনও কেউ দায় স্বীকার করতে চাইছে না। কিন্তু আমরা মনে করি, দায় সবারই। গাছ চুরির সঙ্গে যুক্ত দুর্বৃত্তদের তো শাস্তি দিতেই হবে; যাদের অবহেলায় এটা ঘটেছে, ঈদের ছুটির দোহাই দিয়ে তারাও দায় এড়াতে পারেন না। যেভাবে গাছ কেটে গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে তাতে বেশ সময় লাগার কথা। এতগুলো গাছের পরিবহনও সময়সাপেক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দারাও চোখ বুজে ছিল না নিশ্চয়ই। সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে গাছচোর শনাক্ত করা কঠিন নয়। আমরা জেনে আনন্দিত যে, এলজিইডির পক্ষে অনতিবিলম্বে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। ওই প্রক্রিয়া আদতে বজ্র আঁটুটি ফসকা গেরো কি-না সেটাই এখন দেখা প্রয়োজন। অতীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের যোগসাজশেই সড়কের গাছ কাটা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের যে নেতার বিরুদ্ধে গাছচুরির অভিযোগ উঠেছে, তিনি এটাকে দলীয় কোন্দল হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইলেও দায় কিন্তু ঘুরেফিরে ক্ষমতাসীন দলের উপরেই বর্তায়। আমরা চাই, দলীয় ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থেই আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা গাছচোর শনাক্ত করতে প্রশাসনকে সহায়তা করবেন। সবার মনে রাখা জরুরি, গাছ চুরি কেবল রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট নয়, পরিবেশ সুরক্ষার প্রশ্নের মারাত্মক অপরাধ। সবাই জানে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মুখে বিপন্ন বাংলাদেশকে বাঁচাতে এখন গাছ লাগানো কতটা জরুরি। বিদ্যমান বৃক্ষসম্পদ রক্ষা আরও জরুরি।
No comments