টিভি চ্যানেলের ঈদ আয়োজন-মনে রাখার মতো কাজ কম by মঈন আবদুল্লাহ,মীরসামী ও সৈয়দ ইকবাল শিশির

প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের সব টিভি চ্যানেল ঈদ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। চ্যানেলগুলো কী ধরনের অনুষ্ঠানকে এবার প্রাধান্য দিয়েছিল তা নিয়ে লিখেছেন মঈন আবদুল্লাহ, মীর সামী ও সৈয়দ ইকবাল শিশির
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিটিভিসহ দেশের অন্য সব টেলিভিশন চ্যানেল কমপক্ষে পাঁচদিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছিল।


প্রতিবারের মতো এবারও আয়োজন অনেক থাকলেও বৈচিত্র্য বা নতুনত্ব এবং মনে রাখার মতো কাজ ছিল হাতেগোনা। বাংলা ছবি এখন আর কেউ হলে গিয়ে দেখেন না বলেই চ্যানেলগুলো হয়তো তা বাড়িতে বসে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে; কিন্তু ঈদের দীর্ঘ ছুটিতেও সেসব চলচ্চিত্র ঘরে বসে তা দর্শক খুব একটা দেখেছেন বলে মনে হয় না। তবু কেউ দেখুক আর না দেখুক, ঈদে টিভিতে ছবি চলতে থাকে! টিভি অনুষ্ঠানের মধ্যে চলচ্চিত্র বাদ দিলে থাকে নাটক, টেলিছবি ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। এ ছাড়া গতানুগতিক আয়োজনে ছিল নৃত্য, সঙ্গীত, টক শো। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান এবং শিশুদের জন্য নির্মিত অনুষ্ঠানের সংখ্যা ছিল খুব কম। এগুলো দেখতে বসলে বিজ্ঞাপন বিরতিতে অনুষ্ঠান, নাকি অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিজ্ঞাপন তা বোঝা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। এই বিজ্ঞাপন বিরতির যন্ত্রণা নিয়ে এর আগে অনেক লেখালেখি বা বলাবলি হলেও কোনো সমাধান হয়নি এবং হবে বলেও মনে হয় না। দেশের বাইরের টিভি চ্যানেলগুলোতেও বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার হয়; কিন্তু সেগুলো বাংলাদেশের মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে প্রচার হয় কি-না তা বের করতে গবেষণা করার দরকার হয় না। এত বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে অনুষ্ঠান দেখায় বিঘ্ন তো ঘটেই, এমনকি সেই বিজ্ঞাপনের ফাঁকে অন্য চ্যানেলে চলে গেলে সেই চ্যানেলে আগের চেয়ে ভালো মানের অনুষ্ঠান পেলে আর আগের চ্যানেলে ফিরে আসা হয় না। এমনিতেই টিভি দর্শকের সংখ্যা এরই মধ্যে অনেক কমে গেছে। ঈদের সময়ও যদি দর্শক তার পছন্দ অনুযায়ী কিছু না পায় তাহলে ভবিষ্যতে ঈদে টিভি দর্শকের সংখ্যা আরও কমবে বৈ বাড়বে না বলে অনেকে মনে করেন। গত কয়েকবারের ধারাবাহিকতায় এবারও প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেল নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ৫ থেকে ১৫ মিনিট পর অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করেছে। সঙ্গে ছিল বরাবরের মতো বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা। মোদ্দা কথা বিজ্ঞাপনের ভিড়ে হারিয়ে গেছে অনুষ্ঠান।
বিটিভি : সরকারি চ্যানেলটি এবারের ঈদ আয়োজন সাজিয়েছিল আটদিনের। এই ক'দিনে ২১টি নাটক ও সাতটি বাংলা ছবি প্রচার হয়েছে। তবে গত দু'তিন বছর স্পন্সর জটিলতার কারণে বিটিভিতে কোনো টেলিছবি প্রচার হয়নি। এ কারণে এবারের ঈদের আগেই বিটিভি টেলিছবি প্রচার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিটিভিতে ঈদের দিন ছিল তাদের নিজস্ব প্রযোজিত নানা অনুষ্ঠান। বিটিভিতে ঈদের দিন রাতে প্রচার হয় ফরিদুর রহমানের প্রযোজনায় 'অভিবাদন'। বৃন্দাবন দাসের রচনায় নাটকটিতে চঞ্চল চৌধুরী ও হোমায়রা হিমুর অভিনয় মন্দ লাগেনি। বিটিভিতে ঈদের পরদিন প্রচার হয় প্রসূন রহমানের রচনা এবং মাহফুজ আহমেদের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় 'মায়ের কাছে যাবো', যা ছিল প্রশংসনীয়। বিশেষ করে এ নাটকে ফেরদৌসী মজুমদারের অভিনয় ছিল অসাধারণ। বিটিভিতে প্রচারিত ফেরদৌস ওয়াহিদের উপস্থাপনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান 'যেতে দেবো না'র গানগুলো ছিল শ্রুতিমধুর।
এটিএন বাংলা : প্রতি বছরের মতো এবারও এ চ্যানেলটি পাঁচদিনের ঈদ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। নাটক, টেলিছবি, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, বাংলা ছবি, নৃত্যানুষ্ঠান, গেম শো, সঙ্গীতানুষ্ঠান, রান্নার অনুষ্ঠান, ছোটদের অনুষ্ঠানসহ আরও অনেক আয়োজন ছিল। তবে ভালো লেগেছে হানিফ সংকেতের নাটক 'প্রিয়জন নিবাস', হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও জুয়েল রানা পরিচালিত 'রহিমার প্রতিগৃহে যাত্রা', গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত 'ময়না', প্রসূন রহমানের রচনা ও মাহফুজ আহমেদ পরিচালিত টেলিছবি 'পতিহরণ', তানভীর হোসেন প্রবালের রচনা ও পরিচালনায় 'সংশয়', মানস পালের রচনা ও সাইদুল আনাম টুটুল পরিচালিত 'হেলিকপ্টার', মামুনুর রশীদের রচনা ও পরিচালনায় 'ধীরাশ্রম', মাসুম রেজার রচনা ও সৈয়দ আওলাদ পরিচালিত 'দ্য ট্রায়াল'। আর ফাগুন অডিও ভিশন নির্মিত 'পাঁচফোড়ন' ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি মন কেড়েছে। অন্যদিকে 'ইউ রক' নামের সঙ্গীতানুষ্ঠানে রেনেসাঁ ব্যান্ডের পরিবেশনা মুগ্ধ করেছে দর্শক-শ্রোতাকে।
চ্যানেল আই :বরাবরের মতোই চ্যানেল আই তাদের নিজস্ব ঢঙে অনুষ্ঠান সাজিয়েছিল এবারের ঈদেও। এবারে ঈদের আগের দিনসহ মোট সাতদিনের আয়োজন করেছিল তারা। প্রতিবারের মতো ঈদের দিন নতুন একটি ছবির 'ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার' করেছে চ্যানেলটি। এ ঈদে দর্শকদের জন্য ছিল নজরুল ইসলাম পরিচালিত 'বন্ধু তুমি আমার' [রিয়াজ, পূর্ণিমা, ইলিয়াস কাঞ্চন]। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বিরতির দুর্ভোগ নিয়েও দর্শক ছবিটি উপভোগ করেছেন। ঈদে চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত আয়োজনে এবারও ছিল শাইখ সিরাজের 'কৃষকের ঈদ আনন্দ'। সিডরকবলিত বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় চিত্রায়িত এ অনুষ্ঠান বাংলার কৃষকের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের কাহিনী নিয়ে জুয়েল রানা পরিচালিত 'চৌধুরী খালেকুজ্জামানের মৃত্যুচিন্তা' নাটকটি ভালো লেগেছে। আর মীর সামীর লেখা ও কৌশিক শংকর দাস পরিচালিত 'মার্বেল'-এর বিষয়বস্তুতে নতুনত্ব পাওয়া গেছে। এই চ্যানেলের মাহফুজ আহমেদ পরিচালিত 'ভালোবাসা এই পথে গেছে', সালাহউদ্দিন লাভলুর 'লাইট হাউস', শামীমা আক্তার বেবীর 'আধাআধি', রেজানুর রহমানের 'লসাগু গসাগু', মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর গল্প নিয়ে গোলাম কিবরিয়ার 'বিক্রয়ের জন্য নহে', রাবেয়া খাতুনের গল্প নিয়ে আবুল হায়াত পরিচালিত 'অঙ্গনে অন্তুক', গোলাম রাব্বানীর রচনা ও মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত 'কাকতালীয়', আনিসুল হকের রচনা ও শামীম শাহেদ পরিচালিত 'অন্তর্গতা', নাজাকাত খানের রচনা ও আকরাম খান পরিচালিত 'বিহাইন্ড দ্য স্ক্রিনিং বলস', ড. ফজলুল করিমের রচনা ও খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত 'তরঙ্গিত জীবন', কামরুল হাসানের রচনা ও হুমায়ুন ফরীদি পরিচালিত 'অদ্ভুত জাদুকর' নাটকগুলো ভালো লেগেছে।
একুশে টিভি :বরাবরের মতো এবারও একুশে টিভিতে প্রচার হয়েছে নানা ধরনের অনুষ্ঠান। তবে অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে নাটক ও টেলিছবির সংখ্যাই ছিল বেশি। একুশে টিভিতে প্রচারিত নাটকগুলোর মধ্যে হাসির নাটকের সংখ্যাই ছিল বেশি। অন্যদিকে একুশে টিভির অনুষ্ঠানমালায় রাতে ছিল ফোনো লাইভ স্টুডিও কনসার্ট। যেগুলো মধ্যরাত পর্যন্ত দর্শকদের জাগিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আতিকুল হক চৌধুরীর রচনা ও পরিচালনায় 'করিম খাঁর ঘর', এটিএম শামসুজ্জামানের রচনা ও দীপু হাজরার পরিচালনায় 'ভোঁদাই', জুয়েল মাহমুদের 'ভিক্ষুক বিলাপ'সহ অনেক নাটক ভালো ছিল।
এনটিভি : এনটিভি এবারের ঈদে ছয়দিনের আয়োজন করেছিল। এগুলোর মধ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান কম থাকলেও অনেকেরই চোখে পড়েছে দীপংকর দীপনের রচনা ও পরিচালনায় 'ভালোবাসি প্রতিদিন', শফিকুর রহমান শান্তুনুর রচনা ও জাহিদ হাসানের পরিচালানয় 'সেকেন্ডহ্যান্ড', লিটু সাখাওয়াতের রচনা ও নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের পরিচালনায় 'তুমি আছ তুমি নাই', মেজবাহউদ্দিন সুমনের রচনা ও শিহাব শাহীনের পরিচালনায় 'এই জীবন', মাহমুদ দিদারের রচনা ও পরিচালনায় 'চেরি ফুলের নামে নাম', জাকারিয়া সৌখিনের রচনা ও আরিফ এ আহনাফের পরিচালনায় 'এক জোড়া কালো জুতো', মুশফিকুর রহমান মঞ্জুর রচনা ও আলী ফিদা একরাম তোজোর পরিচালনায় 'মানি ফর নাথিং', ইফতেখার আহমেদ ফাহমীর রচনা ও পরিচালনায় 'অবশ্যম্ভাবী', তৌকীর আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় 'স্বপ্নের হাতে', রতন পালের রচনা ও পরিচালনায় 'একটি পৃৃথিবী একটি মানুষ', আহমদ জামান চৌধুরীর রচনা ও সৈয়দ জামিমের পরিচালনায় 'আমার অকাল বসন্তকাল', সুমন আনোয়ারের রচনা ও পরিচালনায় 'পাহাড়ি গোলাপ' প্রভৃতি। অন্যগুলোর মধ্যে আলফ্রেড খোকনের প্রযোজনা ও আবিদা সুলতানার উপস্থাপনায় 'মনে মনে' ভালো লেগেছে।
আরটিভি : প্রতি বছরের মতো এবারও বিজ্ঞাপনের ব্যবহার ছিল অনেক বেশি। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসকে নিয়ে 'প্রিয় জুটি' অনুষ্ঠানটি ভালো ছিল; কিন্তু ঈদের চতুর্থ দিন নাবিলার উপস্থাপনায় সজল আর বিন্দুকে নিয়ে সরাসরি প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানটি কেন যেন দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। নাটক ও টেলিছবির মধ্যে ভালো ছিল সোহেব আলম ও এম রাসেল পরিচালিত 'ফাও', আলভী আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় 'জুয়ারাশি', আশুতোষ সুজনের রচনা ও পরিচালনায় 'ঠগিনী', লিপি মনোয়ারের রচনা ও এসএ হক অলিকের পরিচালনায় 'উলটপালট', অনুরূপ আইচের রচনা ও শেখ সেলিমের পরিচালনায় 'এবার বিয়ে করবেন তিনি'। আরটিভিতে ঈদের দিন থেকে পরবর্তী সাতদিন প্রচার হয় দুটো ধারাবাহিক নাটক। এগুলোর মধ্যে শিমুল সরকারের রচনা ও পরিচালনায় 'হানিমুন ঠ্যালাগাড়ি'র হাস্যরসগুলো ছিল উপভোগ্য।
দেশ টিভি :টিভি চ্যানেলগুলোও শিশুদের জন্য অনুষ্ঠানের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। এর মধ্যে দেশ টিভিতে প্রচার হওয়া 'কল্পলোকের গল্পকথা' শিশুতোষ গল্প বলার অনুষ্ঠান। নাটকের মধ্যে 'আমার বউ রাঁধতে জানে' শুরুতে ভালো লেগেছে। গল্পটি সাধারণ তবে নির্মাণে আরিফ এ আহনাফ নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছেন।
৭ দিনের রহস্য ধারাবাহিক 'এখানে প্রবেশ নিষেধ' নির্মাতা গোলাম মুক্তাদির ও অর্ক মোস্তফা। ছোট কাহিনীকে টেনে লম্বা করার প্রবণতা দেখা গেছে। গ্রামের লোকেশন পছন্দের বিষয়টি ভালো লেগেছে। আতাউর রহমান অসাধারণ অভিনয় করেছেন। নিশো, জার্নালকে বেমানান লেগেছে। সাংবাদিকের চরিত্রে স্বাগতার অভিনয় ভালো লাগেনি। রুবাইয়াত হোসেন নাটকটি রচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
নাটক 'নেটওয়ার্ক' অনেকের কাছেই ভালো লেগেছে। দেশটিভির তরুণ নির্মাতাদের দিয়ে নাটক নির্মাণের উদ্যোগ অনেকটাই যে সফল হয়েছে তা এ নাটকটি দেখলে বোঝা যায়। পরিচালক তানিম পারভেজ নিজেই নাটকটি লিখেছেন। পার্থ বড়ূয়ার অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শককে। তরুণ নির্মাতাদের মধ্যে ফয়সাল রাজিবের 'আমার কিছু কথা ছিল' নাটকটি প্রশংসিত হয়েছে। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের গল্পটির নাট্যরূপে জিনাত হোসেন যুথী মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। আবদার রহমানের রচনা ও পরিচালনায় 'আজ কোনো কাজ নেই' নাটকটি দেখে ভারতের 'আমির' ছবির মিল পাওয়া গেছে। যদিও নাটকের টাইটেলে কোথাও 'বিদেশি গল্প অবলম্বনে' লেখা ছিল না। তার পরও সাঈদ বাবুর অভিনয় ভালো হয়েছে।
বাংলাভিশন : বাংলাভিশনের ৬ দিনের ঈদ আয়োজন অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভিন্ন কিছু অনুষ্ঠান দর্শকদের উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছে। চ্যানেলটির এবারও ঈদ আয়োজনের মধ্যে মূল পুঁজি ছিল 'আরমান ভাই' সিক্যুয়েলের নাটক। তবে এবার খণ্ড নাটক না হয়ে ৬ পর্বের ধারাবাহিকে নাটকটি প্রচার করা হয়। সাগর জাহানের রচনা ও পরিচালনায় নাটকটির নাম ছিল 'আরমান ভাই দ্য জেন্টেলম্যান'। মোহন খানের পরিচালনায় টেলিফিল্ম 'ভালোবাসায় সীমানায়' এবং ফেরদৌস হাসানের 'লক্ষ্মীছাড়া' নাটকটি প্রচারিত হয়, যা বরাবরের মতোই এই গুণী নির্মাতাদের গল্পের খেই হারানোর গল্প ফুটে ওঠে।
তবে মাহফুজ আহমেদ পরিচালিত 'জলতরঙ্গ' টেলিছবিটি দর্শকদের ভিন্নতার আমেজ দিতে সক্ষম হয়। মাসুদ সেজানের পরিচালনায় 'নিজস্ব সম্পত্তি', এসএ হক অলিকের পরিচালনায় 'তবুও আছো তুমি' এবং তানভীর হোসেন প্রবালের 'কোরবানি পেরেশানি' টেলিফিল্মগুলোর কথা। এগুলোর গল্পে ও নির্মাণে ভিন্নতা ছিল। নাটকের মধ্যে সালাহউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় 'স্কুল অব পলিটিক্স' এবং সকাল আহমেদের 'পাদুকা' নাটক দুটির গল্প ছিল অনেকটা বেখাপ্পা। ভালো লাগা নাটকের মধ্যে ছিল জুবায়ের ইবনে বকরের 'মেঘে মেঘে', আশরাফুল চঞ্চলের পরিচালনায় 'শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিট', সুস্ময় সুমনের 'মাধবীলতা'। যদিও 'মেঘে মেঘে' নাটকটির গল্পের সঙ্গে নাম অনেকটা বেখাপ্পা মনে হয়েছে। এ ছাড়া জাহিদ হাসানের পরিচালনায় 'মোটরসাইকেল' এবং আলভী আহমেদের 'লোকাল নন্দিনী' নাটকটির গল্পে ভিন্নতা ছিল।
অপি করিমের একক নৃত্যানুষ্ঠান 'আনন্দলোকে' সত্যি অপিভক্তদের মনের খোরাক জুগিয়েছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র 'টেলিভিশন' এর অভিনয়শিল্পীদের অংশগ্রহণে বিশেষ অনুষ্ঠান 'টেলিভিশনের ঈদ' অনুষ্ঠানটিও দর্শকদের ভালোলাগায় ঠাঁই পায়।
বৈশাখী টিভি :গত বছর নতুনভাবে শুরু হওয়া এ চ্যানেলে ছিল ৫দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করেছে চ্যানেলটি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মামামুসুর রশীদের রচনা ও পরিচালনায় 'উচিত কথা'। আলী ইমরান এর রচনায় ও জাহিদ হাসান এর পরিচালনায় 'গল্প নয় সত্য' সারোওয়ার-উল-ইসলামের রচনা ও চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় 'যে তুমি খুব কাছের', শিবব্রত বর্মন এর রচনা ও মাতিয়া বানু শুকুর পরিচালনায় 'জট'। ইশরাত জাহান কাদেরের রচনা ও মাহফুজ আহমেদের পরিচালনায় 'আমাকেও সঙ্গে নিও'।
মাছরাঙা টিভি :মাছরাঙা টিভিতে ঈদের অনুষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক সবার দৃষ্টি কেড়েছে। এর মধ্যে আলভী আহমেদের 'ছায়া' নাটকটি প্রশংসিত হয়েছে। নেতিবাচক চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। পাশাপাশি সজলের অভিনয়ও ভালো লেগেছে। এ ছাড়া সালাহউদ্দিন লাভলু পরিচালিত 'একটি ভালোবাসার গল্প' নাটকটিও দর্শকের মন জয় করেছে। এসএ হক অলিকের পরিচালনায় টেলিছবি 'মেঘ মা' প্রশংসা কুড়িয়েছে। মাসুম রেজার গল্পটি ভালো লেগেছে। অন্যদিকে মীর সাবি্বরের পরিচালনায় 'সুমন রাজন মোহন' টেলিছবিটিও প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া সাঈদ বাবু ও মাজনুন মিজানের অভিনয়ও দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হয়েছে। এ চ্যানেলের প্রশংসিত কাজের মধ্যে ধারাবাহিক নাটক 'ইতি তোমার রানু' অন্যতম। আনিসুল হকের লেখা এ নাটকটি পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ। এতে বিন্দুর অভিনয় দর্শক পছন্দ করেছে। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মধ্যে ফেরদৌস ও তানিয়া আহমেদের উপস্থাপনায় 'আনন্দ জলসা' ভালো লেগেছে।

No comments

Powered by Blogger.