সপ্তদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন-উন্নততর দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন
সার্কের সপ্তদশ শীর্ষ সম্মেলনটি অনেকের কাছেই নতুন আশার বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন বা সার্ক গঠিত হলেও মাঝপথে বহুবার এটি নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাষ্ট্রনেতারা এ নিয়ে ১৭ দফা বসলেও সার্কে আঞ্চলিকতার সংস্কৃতি আশানুরূপভাবে গড়ে ওঠেনি।
সত্যিকার অর্থে দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীতে বিশিষ্ট একটি অঞ্চল হিসেবেও আজ অবধি চিহ্নিত হতে পারেনি। তবে এ অঞ্চলের মানুষ এখনও আশা করে আছেন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বাণিজ্যিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের সার্বিক চেহারা পাল্টে দিতে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প যে নেই সে কথা বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। আসলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের উদাহরণ। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদাহরণও আসছে। অনেকেই মনে করেন, সার্ক যে প্রত্যাশিত মাত্রায় সফল হতে পারল না তার পেছনে আছে, ভারত ও পাকিস্তান এই দুই দেশের পারস্পরিক রেষারেষি ও দ্বন্দ্বই মূল কারণ। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ভালো-মন্দের দোলাচলে দোদুল্যমান। এ অবস্থায় শত আন্তরিকতা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার জাতিগুলো একত্র হয়ে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছে না। অবশ্য এখন পরিস্থিতি অনেকটাই ইতিবাচক। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কও বেশ ভালো। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্ক পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্তে উপনীত হয়েছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কে কিছু টানাপড়েন আছে সত্য, কিন্তু সম্প্রতি আফগানিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা ও সহাবস্থানের নতুন সম্পর্কে উপনীত হয়েছে ভারত। ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতই একমাত্র দেশ যার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের জল ও স্থল সীমান্ত রয়েছে। ফলে দেশটি যেমন দক্ষিণ এশীয় ভূগোলের কেন্দ্রে তেমনি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ভারতকে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পর্কের চেয়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্কের ওপরই জোর দিতে চান স্বপ্নদর্শী মানুষেরা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করতে হলে যে উদার মনোভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত তা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। এখানকার দেশগুলো যেদিন নিজেদের বাজারে পরস্পরের পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে সেদিন সার্ক সফলতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে এ নিশ্চিত করে বলা যায়। এবার মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে আজ ও আগামীকাল যে সম্মেলন হতে যাচ্ছে তার প্রতিপাদ্য সেতুবন্ধ রচনা। এবারের সম্মেলনে আশা অনেক বেশি, কেননা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উষ্ণতা বহুপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্যও তা সহায়ক। এ অবস্থায় সার্ক সম্মেলন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে বলে আশা করছেন সকলে। দুর্যোগকালে পরস্পরের সহযোগিতায় দ্রুত এগিয়ে আসার উপায় ও দক্ষিণ এশীয় বীজ ভাণ্ডার তৈরির দুটি বহুপক্ষীয় চুক্তি এবার স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে মালদ্বীপ পেঁৗছেছেন। আশা করা হচ্ছে, সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিস্তা ও অন্যান্য বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। সে বৈঠকগুলো সফল হোক। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সার্ক যে নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে উপনীত তাকে কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক ভিত্তিতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে পারলে সার্ক সফল হবে বলে এ অঞ্চলের মানুষেরা মনে করে। এবারের শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সার্ক একটি সফল আঞ্চলিক জোট হয়ে উঠুক।
No comments