চরাচর-ছব্বিশা গণহত্যা দিবস
১৭ নভেম্বর ১৯৭১ সাল ছাবি্বশা গণহত্যা দিবস। টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছাবি্বশা গ্রাম। বর্তমানে এটি ভূঞাপুর পৌরসভার অধীন। গ্রামটি মুক্তিযুদ্ধের সময় গোবিন্দাসী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭১ সালে ছাবি্বশা গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং যুদ্ধের শেষে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামটিতে গণহত্যা চালায়।
যে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড মধ্যযুগের হালাকু খান এবং বর্তমান যুগের ডবি্লউ বুশের হত্যাকাণ্ডকেও ম্লান করে দেয়। ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট মুক্তিবাহিনী কর্তৃক ভূঞাপুরের সিরাজকান্দিতে ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখে যমুনা নদীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই 'এসইউ ইঞ্জিনিয়ারস এলসি-৩' এবং 'এসটি রাজন' নামক দুটি জাহাজ দখল, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার এবং ধ্বংসের পর টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে ভূঞাপুর পাকিস্তানি হাইকমান্ডের টার্গেটে পরিণত হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্ছিদ্র প্রতিরোধের কারণে পাকিস্তানি হানাদাররা ভূঞাপুর আক্রমণের সুযোগ করে উঠতে পারেনি। ১৭ নভেম্বর, ১৯৭১ সাল। ছাবি্বশা গ্রামের সেই নির্মম, বিভীষিকাময়, অবিস্মরণীয় দিন। সেদিন সকাল আনুমানিক ১১টায় সিরাজগঞ্জ থেকে যমুনা নদী পার হয়ে গাবসারার কালীপুর, সেখান থেকে গোবিন্দাসী। এর পর শালদাইর দিয়ে এগিয়ে আসে পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল। অবস্থান নেয় ছাবি্বশার পশ্চিম পাশে শালদাইর ব্রিজের কাছে। পাকিস্তানি সেনাদের অন্য একটি দল কালীপুর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে কালীগঞ্জ, জিগাতলা-বাগবাড়ি হয়ে খুপিবাড়ির খাল ধরে ছাবি্বশার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান নেয়। বিকেল প্রায় ৪টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের গুলিবর্ষণ চলে। একপর্যায়ে হানাদারদের প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে সরে যান। মুক্তিযোদ্ধারা সরে গেলে পাকিস্তানি হানাদাররা ছাবি্বশা গ্রামে নির্মম গণহত্যা চালায়। ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর ছাবি্বশা গ্রামের যাঁরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যায় শহীদ হন এখানে তাঁদের নাম উল্লেখ করছি।
১. বিশা মণ্ডল, পিতা মৃত-ইসমাইল মণ্ডল, ২. মনির উদ্দিন, পিতা মৃত-ইয়াসিন আলী, ৩. ওমর আলী, পিতা মৃত-পাগু সরকার, ৪. সাজেদা বেগম, স্বামী মৃত-ওমর আলী, ৫. রাবেয়া খাতুন, পিতা মৃত-ওমর আলী, ৬. খালেদা খাতুন, নানা-ওমর আলী, ৭. ইসমাইল হোসেন, পিতা-কিতাবুল্লাহ, ৮. মমতাজ উদ্দিন, পিতা-কিতাবুল্লাহ, ৯. শমসের আলী, পিতা-আহসান আলী, ১০. মছিরন নেছা, স্বামী-ময়েজ শেখ, ১১. আয়নাল হক (আবদুল জুব্বার মুন্সীর দিনমজুর), ১২. হাফেজ উদ্দিন, পিতা মৃত- গোল হোসেন, ১৩. দানেছ আলী, পিতা মৃত-বছির উদ্দিন সরকার, ১৪. তাছেন আলী, পিতা মৃত-বছির উদ্দিন সরকার, ১৫. হায়দার আলী, পিতা মৃত-দানেছ আলী, ১৬. সেকান্দর আলী, পিতা মৃত-নতিবুল্লাহ, ১৭. রমজান আলী, পিতা মৃত-সেকান্দর আলী, ১৮. কোরবান আলী, পিতা মৃত-আয়েতুল্লাহ, ১৯. মাহমুদ আলী, পিতা মৃত-ময়েজ শেখ, ২০. আবুল হোসেন (সিরাজ আলীর দিনমজুর), ২১. ইউসুফ আলী, পিতা মৃত- আবদুল জুব্বার মুন্সী, ২২. শফিকুল ইসলাম, পিতা মৃত-আবদুল জুব্বার মুন্সী, ২৩. মোতালেব হোসেন, পিতা মৃত-আবদুল জুব্বার মুন্সী, ২৪. ইয়াকুব আলী, পিতা মৃত-মাজম আলী, ২৫. শুকুর মাহমুদ মণ্ডল, পিতা মৃত-আবদুস সোবহান মণ্ডল, ২৬. বাহাজউদ্দিন মণ্ডল, পিতা মৃত-গোমর মণ্ডল, ২৭. আবদুল গফুর, পিতা মৃত-হাজি হোসেন আলী, ২৮. রাবেয়া খাতুন, পিতা মৃত-আবদুল শেখ, ২৯. জহির উদ্দিন, পিতা মৃত-জসিম উদ্দিন, ৩০. সোনা উল্লাহ, পিতা মৃত-সায়েদ আলী, ৩১. সিরাজ আলী, পিতা মৃত-ময়েজ শেখ, ৩২. হোসনা খাতুন, পিতা-গোলাপ মিঞা (ওমর আলীর আত্মীয়)। সেদিন মারাত্মক আহত হয়ে এখনো বেঁচে আছেন সাহেবুল্লাহ, পিতা-ইসমাইল তালুকদার, নিজামউদ্দিন, পিতা-দানেছ আলী। গণহত্যা ছাড়াও সেদিন প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছিলেন। হানাদার বাহিনী কর্তৃক ছাবি্বশার গণহত্যার পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছিল স্থানীয় রাজাকাররা। ১৭ নভেম্বর এলে এখনো ছাবি্বশা গ্রামের মানুষ চোখের পানি ফেলে।
শফিউদ্দিন তালুকদার
১. বিশা মণ্ডল, পিতা মৃত-ইসমাইল মণ্ডল, ২. মনির উদ্দিন, পিতা মৃত-ইয়াসিন আলী, ৩. ওমর আলী, পিতা মৃত-পাগু সরকার, ৪. সাজেদা বেগম, স্বামী মৃত-ওমর আলী, ৫. রাবেয়া খাতুন, পিতা মৃত-ওমর আলী, ৬. খালেদা খাতুন, নানা-ওমর আলী, ৭. ইসমাইল হোসেন, পিতা-কিতাবুল্লাহ, ৮. মমতাজ উদ্দিন, পিতা-কিতাবুল্লাহ, ৯. শমসের আলী, পিতা-আহসান আলী, ১০. মছিরন নেছা, স্বামী-ময়েজ শেখ, ১১. আয়নাল হক (আবদুল জুব্বার মুন্সীর দিনমজুর), ১২. হাফেজ উদ্দিন, পিতা মৃত- গোল হোসেন, ১৩. দানেছ আলী, পিতা মৃত-বছির উদ্দিন সরকার, ১৪. তাছেন আলী, পিতা মৃত-বছির উদ্দিন সরকার, ১৫. হায়দার আলী, পিতা মৃত-দানেছ আলী, ১৬. সেকান্দর আলী, পিতা মৃত-নতিবুল্লাহ, ১৭. রমজান আলী, পিতা মৃত-সেকান্দর আলী, ১৮. কোরবান আলী, পিতা মৃত-আয়েতুল্লাহ, ১৯. মাহমুদ আলী, পিতা মৃত-ময়েজ শেখ, ২০. আবুল হোসেন (সিরাজ আলীর দিনমজুর), ২১. ইউসুফ আলী, পিতা মৃত- আবদুল জুব্বার মুন্সী, ২২. শফিকুল ইসলাম, পিতা মৃত-আবদুল জুব্বার মুন্সী, ২৩. মোতালেব হোসেন, পিতা মৃত-আবদুল জুব্বার মুন্সী, ২৪. ইয়াকুব আলী, পিতা মৃত-মাজম আলী, ২৫. শুকুর মাহমুদ মণ্ডল, পিতা মৃত-আবদুস সোবহান মণ্ডল, ২৬. বাহাজউদ্দিন মণ্ডল, পিতা মৃত-গোমর মণ্ডল, ২৭. আবদুল গফুর, পিতা মৃত-হাজি হোসেন আলী, ২৮. রাবেয়া খাতুন, পিতা মৃত-আবদুল শেখ, ২৯. জহির উদ্দিন, পিতা মৃত-জসিম উদ্দিন, ৩০. সোনা উল্লাহ, পিতা মৃত-সায়েদ আলী, ৩১. সিরাজ আলী, পিতা মৃত-ময়েজ শেখ, ৩২. হোসনা খাতুন, পিতা-গোলাপ মিঞা (ওমর আলীর আত্মীয়)। সেদিন মারাত্মক আহত হয়ে এখনো বেঁচে আছেন সাহেবুল্লাহ, পিতা-ইসমাইল তালুকদার, নিজামউদ্দিন, পিতা-দানেছ আলী। গণহত্যা ছাড়াও সেদিন প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছিলেন। হানাদার বাহিনী কর্তৃক ছাবি্বশার গণহত্যার পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছিল স্থানীয় রাজাকাররা। ১৭ নভেম্বর এলে এখনো ছাবি্বশা গ্রামের মানুষ চোখের পানি ফেলে।
শফিউদ্দিন তালুকদার
No comments