কে হচ্ছেন বিসিবির প্রার্থী?-কামাল-সাবেরের নামও আলোচনায় by রানা হাসান

বিশ্ব ক্রিকেটের শাসক সংস্থা আইসিসির প্রেসিডেন্ট পদটি প্রথাগতভাবেই পূরণ হয়ে আসছে রোটেশন পদ্ধতিতে। সমঝোতার এই পদ্ধতির কারণেই অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান-ইংল্যান্ড-ভারতের প্রতিনিধিত্ব থাকছে আইসিসির এই শীর্ষ পদটিতে। গত বছর হঠাৎ করেই বাতিল করা হয়েছিল এই রোটেশন পদ্ধতি। পরে অবশ্য অবশিষ্ট পূর্ণ সদস্য দেশগুলোকে সুযোগ দেওয়ার স্বার্থে সেই রোটেশন পদ্ধতি পুনর্বহালে বাধ্য করা হয় আইসিসির নির্বাহী কমিটিকে।


আইসিসির বর্তমান সভাপতি ভারতের শারদ পাওয়ারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের জুনে। রোটেশন পদ্ধতি বহাল থাকায় সে পদে আসছেন বর্তমান নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নিউজিল্যান্ডের অ্যালান আইজাক । জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসির বোর্ড সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে তাকে। সে সময় নির্বাচন করা হবে নির্বাহী কমিটির নতুন ভাইস প্রেসিডেন্টও। রোটেশন পদ্ধতির কারণে ২০১৪ সালের জুন মাসে আইসিসির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন তিনিই।
ইতিপূর্বে আইসিসির নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে আগামী জুনে আইসিসির নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব বর্তাবে এশিয়ার বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের যে কোনো একটি দেশের ওপর। এ ক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশের দাবিটি জোরালো। কারণ এর আগে ২০০৪-০৬ সালে দুই বছর মেয়াদে আইসিসির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পাকিস্তানের এহসান মানি। সরল যুক্তিতে সে পদের জন্য বাংলাদেশের দাবি সদস্য অনেক দেশের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের দাবি, বর্তমান সভাপতি শারদ পাওয়ারের আগের মেয়াদে আইসিসির সভাপতি ছিলেন ভারতের জগমোহন ডালমিয়া। তাই এহসান মানির পর পাকিস্তানের কেউ হলে বাধা থাকার কথা নয়। কিন্তু বিপত্তিটা হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের নাজুক অবস্থা। সে ক্ষেত্রে আইসিসিতে এশিয়ার অবস্থান ধরে রাখতেই বাংলাদেশের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ।
আইসিসির প্রেসিডেন্ট পদ বলে কথা। প্রয়োজন প্রস্তুতি, সঠিক প্রার্থী নির্বাচন। বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো কারণও নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে আইসিসির সদর দফতরে প্রার্থীর নাম পাঠানোর জন্য শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর। এ সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় জুনের নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা রোটেশন পদ্ধতির শুরু থেকেই যা কিছু হয়েছে সমঝোতার ভিত্তিতে। ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী হলে সে ক্ষেত্রে আইসিসির করণীয় কী তা জানা নেই কারও। সে কারণেই প্রার্থী নির্বাচনের সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিটাও বিসিবির জন্য জরুরি।
সব মিলিয়ে এর জন্য আর হাতে সময় মাত্র ছয় সপ্তাহ। বাংলাদেশের প্রার্থী হচ্ছেন কে, চূড়ান্ত হয়নি সেটিও। বিসিবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি এখনও। তবে বিসিবির বর্তমান সভাপতি সরকারদলীয় সাংসদ আ হ ম মোস্তফা কামালের নিকটজনদের দাবি, আইসিসির শীর্ষ পদে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে তিনি আগ্রহী। ক্রীড়া প্রশাসনের সম্মতিতে তিনি সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে বিসিবির এক প্রভাবশালী সূত্র। নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মোস্তফা কামাল বর্তমানে রয়েছেন দুবাইয়ে। সেখানে অবস্থান করছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নতুন সভাপতি জাকা আশরাফ। আইসিসির প্রেসিডেন্ট শারদ পাওয়ারের উপস্থিতিতে সেখানে আগামী নির্বাচন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার কথা জানিয়েছে একটি বার্তা সংস্থা। বিসিবি সভাপতি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও সমকালকে বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে আইসিসির নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের চূড়ান্ত অবস্থান নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে আগামী চার বছরের জন্য আইসিসির গুরুত্বপূর্ণ পদে আ হ ম মোস্তফা কামালের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছে বিসিবির সাবেক সভাপতি ও সরকারদলীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর নামও। সদস্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডে না থাকলেও আইসিসির প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া যায়_ এই নিয়মের কারণেই হঠাৎ করে আলোচনায় উঠে এসেছে সফল এই ক্রিকেট সংগঠকের নাম। সরকারদলীয় সাংসদ হলেও সাবের হোসেন চৌধুরী রাজনৈতিকভাবে কিছুটা কোণঠাসা থাকায় আইসিসির গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য তার নাম এখনও জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে না, এ তথ্য জানান বিসিবির সাবেক এই সভাপতির কাছের লোক হিসেবে পরিচিত এক ক্রীড়া সংগঠক। তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ইতিমধ্যেই সাবের হোসেন চৌধুরী সরকারের শীর্ষমহলের সবুজ সংকেত পেয়েছেন। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে আইসিসির মতো সংগঠনে সাবের হোসেন চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ক্রিকেট সংগঠকদের মধ্যে কোনো মতভেদ না থাকলেও সংশয় রয়েছে সরকারি সমর্থনের প্রশ্নে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বিষয়টি সুরাহা হবে।
আইসিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বাংলাদেশের প্রার্থীর নাম ও নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়টি গতকাল দুবাই থেকে নিশ্চিত করেছেন বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল নিজেই। বলেন, 'আগামী সাত দিনের মধ্যেই সব কিছু চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি।' এর বেশি কিছু বলতে চাননি বোর্ড সভাপতি। তবে পাকিস্তানি গণমাধ্যমের খবর, আগামী বছরের এপ্রিলে পাকিস্তান সফরের বিনিময়ে বাংলাদেশের পক্ষে আইসিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদটি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত পিসিবি।

No comments

Powered by Blogger.