ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ-নাড়ির টানে তুচ্ছ প্রাণ!
ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রায় ট্রেনই সিডিউল অনুযায়ী গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি বা পেঁৗছেনি। লঞ্চের ক্ষেত্রেও একই দশা। সড়কপথে বাস, মাইক্রোবাস ও ট্যাক্সি ছাড়াও অনেককে ট্রাকে চড়ে প্রিয়জনের কাছে পেঁৗছার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হয়েছে। তবে সড়কপথে অতীতের মতো এবার ঈদে দুর্ঘটনায় মানবমৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে। শুভ সংবাদ হলো, এবার বড় ধরনের কোনো লঞ্চ দুর্ঘটনা
ঘটেনি। তবে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ট্রেনে চলাচল করতে গিয়ে। এবারও ঈদে ট্রেনের ছাদে চড়ে গন্তব্যে পেঁৗছার চেষ্টা করতে গিয়ে দুটি পৃথক ঘটনায় আটজন যাত্রী মারা যান। অনেকের কাছে মনে হতে পারে, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ বিপজ্জনক। তাই এভাবে যারা বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক। তারা হয়তো ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ না করারও পরামর্শ দেবেন। কিন্তু আমাদের পরিবহন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল থাকে বলে আগ্রহী যাত্রীদের সবাইকে নিয়মমাফিক পরিবহন করা অসম্ভব। তাই ট্রেন-বাসের ছাদে ও লঞ্চে ঠাসাঠাসি করে মানুষের যাত্রা থামানো যায় না। কিন্তু এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ও আহত-নিহত হওয়া এড়ানো বা অনেকাংশে হ্রাস করা কি একেবারেই অসম্ভব? উত্তরাঞ্চলগামী ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গত শনিবার দুটি স্থানে যে চারজন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই তা এড়ানো যেত। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নওগাঁর রানীনগর স্টেশনের ওভারব্রিজের সঙ্গে ধাক্কায় একজন এবং আক্কেলপুর স্টেশনের পাশে হলহলিয়া ব্রিজের গার্ডারে ধাক্কা লেগে তিনজনের মৃত্যু হয়। এদিকে শুক্রবার দেওভোগ এলাকায় ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে আরও চার যাত্রীর মৃত্যু হয়। ট্রেন কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের কোথায় কোথায় ও কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে সে ব্যাপারে গাড়ি ছাড়ার সময় ব্রিফ করলে এবং ড্রাইভার ও গার্ড সম্ভাব্য দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো অতিক্রম করার সময় ধীরে ও সতর্কভাবে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করলে এসব হতভাগ্য হয়তো বেঘোরে প্রাণ হারাতেন না। আমরা ভবিষ্যতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চলাচলের নিরাপত্তা বিধানে আরও সতর্ক ও সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
No comments