নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ড-হত্যা পরিকল্পনার সবটাই জানেন আশরাফ সরকার
নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকারকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল বুধবার দুপুরে নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা তা মঞ্জুর করেন।
এদিকে মেয়র লোকমান হোসেনের মৃত্যুতে গতকাল সন্ধ্যায় নরসিংদীর সেবা সংঘের মোড়ে 'নরসিংদীর শোকাহত জনগণ'-এর ব্যানারে শোক ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নরসিংদী সদরের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু বীর প্রতীক লোকমানের খুনিদের ফাঁসিতে ঝোলানোর ওয়াদা করেন। গোয়েন্দা পুলিশ দুপুর সাড়ে ১২টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আশরাফ সরকারকে পুলিশের পোশাক, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে আদালতে হাজির করে। এ সময় পুরো এলাকা ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। আদালতের রিমান্ডের আদেশের পরে দ্রুত পিকআপ ভ্যানে করে তাঁকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার খিলগাঁও থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নরসিংদীর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আশরাফ সরকার লোকমান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি। এজাহারের ২ নম্বর আসামি আবদুল মতিন সরকারের ছোট ভাই তিনি। এই প্রথম পুলিশ লোকমান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত ১ নভেম্বর রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান নরসিংদীর মেয়র লোকমান হোসেন। এ ঘটনায় নিহত মেয়রের ছোট ভাই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে হাজি সেলিম ও টিপ্পন কাজী নামের দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ। লোকমানের ঘনিষ্ঠজনরা কালের কণ্ঠকে জানান, লোকমান হত্যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সব কিছু জানেন আশরাফ সরকার।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আশরাফ গ্রেপ্তারের পর পরই জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও জেরার মুখে জড়িত থাকার কথা তিনি স্বীকার করেন। নরসিংদী শহরে একটি পানি শোধনাগার নির্মাণ নিয়ে মেয়র লোকমানের সঙ্গে তাঁর সম্প্রতি বিরোধ সৃষ্টি হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আরো কয়েকজন আসামিকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা গেছে। যেকোনো সময় তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
টিপ্পন কাজী ওরফে পংকা জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, হত্যাকাণ্ডে মূল নেতৃত্ব দেন আশরাফ। তিনি পুরো পরিকল্পনার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। নরসিংদী পুলিশ টিপ্পন ও হাজি সেলিমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সালে লোকমান হোসেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অবস্থায় পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান আবদুল মতিন সরকারের সঙ্গে। সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে লোকমান হোসেন মেয়র নির্বাচিত হন। সেই থেকে দুই ভাই মামলার আসামি আবদুল মতিন সরকার ও আশরাফ হোসেন সরকার একাধিকবার লোকমান হোসেনকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনেও মতিন সরকার বিপুল ভোটে লোকমান হোসেনের কাছে পরাজিত হয়ে জামানত হারান। নিহতের পরিবার অভিযোগ করে, অনেকেই মেয়র লোকমানকে ভাড়াটে কিলার এনে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। মামলার বাদী ও নিহতের ছোট ভাই কামরুজ্জামান বলেন, 'আসামি আশরাফুল হোসেনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব কিছু বেরিয়ে আসবে, কিভাবে, কোথায় পরিকল্পনা করে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।' নিহতের পরিবারের অভিযোগ, মামলার প্রধান আসামি সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর ভাই রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। ওই পদে থেকে তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিজের ভাইকে বঁাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সূত্র জানায়, মামলার আসামি মোবারক হোসেন মোবা ও আশরাফ সরকার হত্যা পরিকল্পনার ছক করেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন আসামি মতিন সরকার, নুরুল ইসলাম, কবির সরকারসহ মামলার বাকি আসামিরা। হত্যা পরিকল্পনা শেষ করেই কবির সরকার, মোবারক হোসেন মোবা ও নুরুল ইসলাম মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। আরেক আসামি তারেক আহমেদ আছেন সৌদি আরবে। পুলিশ সুপার খ. মুহিদ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, আশরাফ সরকারকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খুনিদের ফাঁসিতে ঝোলানোর ওয়াদা এমপি হীরুর: নরসিংদী সদরের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) বলেছেন, 'লোকমান সারা জীবন লড়াই করেছেন সন্ত্রাস, মাদক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমি সেই যুদ্ধে শরিক হওয়ার জন্য তাঁর পাশে সব সময় ছিলাম। কিন্তু যেই যুদ্ধটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না, আজকে সেই যুদ্ধের জন্য তিনি আমাকে জনতার কাতারে রেখে গেছেন। সেই যুদ্ধটা হলো_সব কিছুর বিনিময়ে লোকমান হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের বের করতে হবে। তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই হলো নজরুল ইসলাম হীরুর ওয়াদা।' তিনি বলেন 'জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই বিচারের জন্য লড়াই করব এবং যেভাবে হোক এই বিচার আদায় করবই।' পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের মৃত্যুতে গতকাল সন্ধ্যায় নরসিংদীর সেবা সংঘের মোড়ে শোক ও প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 'নরসিংদীর শোকাহত জনগণ'-এর ব্যানারে এ শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে জেলা আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে লোকমান হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও অন্য আসামিদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন এমপি হীরু।
নজরুল ইসলাম হীরু গতকাল বলেন, 'তদন্ত সঠিকভাবেই চলছে। তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীরা চিহ্নিত হবে। তদন্তে যারা লোকমান হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হবে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নেই, কোনো সমবেদনা নেই এবং ছাড় নেই। আমরা সমস্ত নরসিংদীর জনতা তাদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার থাকব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াদা থেকে আমরা বিচ্যুত হব না।'
নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই ও মামলার বাদী কামরুজ্জামান সভায় বলেন, 'আমাদের ধারণা, মন্ত্রীর ভাই লোকমান হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেছে_সে খবর মন্ত্রী জানতেন। এ মন্ত্রীকে আমরা দেখতে চাই না। নরসিংদীবাসী এ মন্ত্রীকে দেখতে চায় না। যদি তা বিশ্বাস না হয়, আপনি আসুন নরসিংদীতে। লক্ষ মানুষের হৃদয়ের কথা বুঝে যান। নরসিংদীবাসী আপনাকে চায় না।'
কামরুজ্জমান আরো বলেন, 'রাজু যদি মন্ত্রী থাকেন তিনি তাঁর ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। তিনি একজন খুনীর পক্ষ নেবেন_সেটা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরও তিনি কিভাবে মন্ত্রী থাকেন? আপনি নরসিংদীবাসী ও রায়পুরাবাসীকে কলঙ্কিত করেছেন। সে বিচার নরসিংদীবাসী করবে।'
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ অহিভূষণ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে শোকসভায় আরো বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঞা, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ, সদর উপজেলার মহিষাশুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
লোকমান হোসেনের স্মরণে এর আগে সকালে নরসিংদী সরকারি কলেজ অডিটরিয়ামে শোকসভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শোকসভায় বক্তব্য দেন লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু এমপি, কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক, কলেজের শিক্ষকপর্ষদের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আমির হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এস এম কাইয়ুম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি শামীম নেওয়াজ, ভারপ্রাপ্ত জিএস শরীফ আহমেদ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা কলেজের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে প্রয়াত লোকমান হোসেনের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
গত ১ নভেম্বর রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান নরসিংদীর মেয়র লোকমান হোসেন। এ ঘটনায় নিহত মেয়রের ছোট ভাই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে হাজি সেলিম ও টিপ্পন কাজী নামের দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ। লোকমানের ঘনিষ্ঠজনরা কালের কণ্ঠকে জানান, লোকমান হত্যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সব কিছু জানেন আশরাফ সরকার।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আশরাফ গ্রেপ্তারের পর পরই জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও জেরার মুখে জড়িত থাকার কথা তিনি স্বীকার করেন। নরসিংদী শহরে একটি পানি শোধনাগার নির্মাণ নিয়ে মেয়র লোকমানের সঙ্গে তাঁর সম্প্রতি বিরোধ সৃষ্টি হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আরো কয়েকজন আসামিকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা গেছে। যেকোনো সময় তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
টিপ্পন কাজী ওরফে পংকা জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, হত্যাকাণ্ডে মূল নেতৃত্ব দেন আশরাফ। তিনি পুরো পরিকল্পনার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। নরসিংদী পুলিশ টিপ্পন ও হাজি সেলিমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সালে লোকমান হোসেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অবস্থায় পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান আবদুল মতিন সরকারের সঙ্গে। সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে লোকমান হোসেন মেয়র নির্বাচিত হন। সেই থেকে দুই ভাই মামলার আসামি আবদুল মতিন সরকার ও আশরাফ হোসেন সরকার একাধিকবার লোকমান হোসেনকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনেও মতিন সরকার বিপুল ভোটে লোকমান হোসেনের কাছে পরাজিত হয়ে জামানত হারান। নিহতের পরিবার অভিযোগ করে, অনেকেই মেয়র লোকমানকে ভাড়াটে কিলার এনে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। মামলার বাদী ও নিহতের ছোট ভাই কামরুজ্জামান বলেন, 'আসামি আশরাফুল হোসেনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব কিছু বেরিয়ে আসবে, কিভাবে, কোথায় পরিকল্পনা করে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।' নিহতের পরিবারের অভিযোগ, মামলার প্রধান আসামি সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর ভাই রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। ওই পদে থেকে তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিজের ভাইকে বঁাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সূত্র জানায়, মামলার আসামি মোবারক হোসেন মোবা ও আশরাফ সরকার হত্যা পরিকল্পনার ছক করেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন আসামি মতিন সরকার, নুরুল ইসলাম, কবির সরকারসহ মামলার বাকি আসামিরা। হত্যা পরিকল্পনা শেষ করেই কবির সরকার, মোবারক হোসেন মোবা ও নুরুল ইসলাম মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। আরেক আসামি তারেক আহমেদ আছেন সৌদি আরবে। পুলিশ সুপার খ. মুহিদ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, আশরাফ সরকারকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খুনিদের ফাঁসিতে ঝোলানোর ওয়াদা এমপি হীরুর: নরসিংদী সদরের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) বলেছেন, 'লোকমান সারা জীবন লড়াই করেছেন সন্ত্রাস, মাদক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমি সেই যুদ্ধে শরিক হওয়ার জন্য তাঁর পাশে সব সময় ছিলাম। কিন্তু যেই যুদ্ধটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না, আজকে সেই যুদ্ধের জন্য তিনি আমাকে জনতার কাতারে রেখে গেছেন। সেই যুদ্ধটা হলো_সব কিছুর বিনিময়ে লোকমান হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের বের করতে হবে। তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই হলো নজরুল ইসলাম হীরুর ওয়াদা।' তিনি বলেন 'জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই বিচারের জন্য লড়াই করব এবং যেভাবে হোক এই বিচার আদায় করবই।' পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের মৃত্যুতে গতকাল সন্ধ্যায় নরসিংদীর সেবা সংঘের মোড়ে শোক ও প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 'নরসিংদীর শোকাহত জনগণ'-এর ব্যানারে এ শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে জেলা আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে লোকমান হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও অন্য আসামিদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন এমপি হীরু।
নজরুল ইসলাম হীরু গতকাল বলেন, 'তদন্ত সঠিকভাবেই চলছে। তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীরা চিহ্নিত হবে। তদন্তে যারা লোকমান হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হবে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নেই, কোনো সমবেদনা নেই এবং ছাড় নেই। আমরা সমস্ত নরসিংদীর জনতা তাদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার থাকব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াদা থেকে আমরা বিচ্যুত হব না।'
নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই ও মামলার বাদী কামরুজ্জামান সভায় বলেন, 'আমাদের ধারণা, মন্ত্রীর ভাই লোকমান হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেছে_সে খবর মন্ত্রী জানতেন। এ মন্ত্রীকে আমরা দেখতে চাই না। নরসিংদীবাসী এ মন্ত্রীকে দেখতে চায় না। যদি তা বিশ্বাস না হয়, আপনি আসুন নরসিংদীতে। লক্ষ মানুষের হৃদয়ের কথা বুঝে যান। নরসিংদীবাসী আপনাকে চায় না।'
কামরুজ্জমান আরো বলেন, 'রাজু যদি মন্ত্রী থাকেন তিনি তাঁর ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। তিনি একজন খুনীর পক্ষ নেবেন_সেটা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরও তিনি কিভাবে মন্ত্রী থাকেন? আপনি নরসিংদীবাসী ও রায়পুরাবাসীকে কলঙ্কিত করেছেন। সে বিচার নরসিংদীবাসী করবে।'
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ অহিভূষণ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে শোকসভায় আরো বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঞা, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ, সদর উপজেলার মহিষাশুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
লোকমান হোসেনের স্মরণে এর আগে সকালে নরসিংদী সরকারি কলেজ অডিটরিয়ামে শোকসভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শোকসভায় বক্তব্য দেন লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু এমপি, কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক, কলেজের শিক্ষকপর্ষদের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আমির হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এস এম কাইয়ুম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি শামীম নেওয়াজ, ভারপ্রাপ্ত জিএস শরীফ আহমেদ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা কলেজের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে প্রয়াত লোকমান হোসেনের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
No comments