তাঁর সঙ্গে কিছু সময়

কটি মিঙ্ড অ্যালবামের কাজ করতে সম্প্রতি মুম্বাইয়ে যান গীতিকার জুলফিকার রাসেল। সেখানে তিনি দেখা করেন আশা ভোঁসলে, সনু নিগাম ও জাবেদ আলীর সঙ্গে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন তিনি।আমার মাথায় সব সময়ই বড় ও ব্যতিক্রমী কিছু একটা করার চিন্তা ঘুরপাক খায়। প্রতিটি মানুষের জীবনেই হয়তো এ রকম স্বপ্ন থাকে। তবে এই স্বপ্ন দেখতে যে সাহস লাগে, সেটা আমার ছিল।


বলতে গেলে শুধু সাহসকে পুঁজি করে গত জানুয়ারিতে আশাজি (আশা ভোঁসলে), সনু নিগামের গান করতে মুম্বাইয়ের দিকে হাত বাড়াই। আশাজি ও সনু নিগামের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করি। তাঁরা আমাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর প্রায় এক মাস পর তাঁরা জানান, আগে গান শুনবেন পরে তাঁরা সিদ্ধান্ত জানাবেন এই অ্যালবামে গাইবেন কি না। এরপর আমি গান তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই। কলকাতার জনপ্রিয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক জয় সরকারকে লিরিক পাঠিয়ে এই অ্যালবামের জন্য গান তৈরি করতে বলি। তিনি খুব দ্রুত রেসপন্স করেন। তিনিও জানান, আশাজি ও সনু নিগামের জন্য গান করার স্বপ্ন তাঁর বহুদিনের। গীতিকার ও সুরকারের স্বপ্ন এক হলে সেটার বাস্তবায়ন না হয়ে পারে? মুম্বাইয়ে গান পাঠালাম। আশাজি ও সনু নিগাম দুজনই ভীষণ পছন্দ করলেন গানগুলো। তাঁরা গান করতে রাজি হলেন। প্রথমে কথা ছিল আশাজি চারটি ও সনু নিগাম দুটি গান করবেন। আশাজি আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তাঁর গানগুলো গাইবেন বলে জানিয়েছিলেন। আমার পরিকল্পনা ছিল, আশাজির চারটি ও বাংলাদেশের সামিনা চৌধুরীর চারটি গান নিয়ে একটি অ্যালবাম করব। অন্যদিকে, সনু নিগাম ও সেখানকার আরেক জনপ্রিয় শিল্পী জাভেদ আলীর দুটি করে গান এবং বাংলাদেশের দুই জনপ্রিয় শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ও সামিনা চৌধুরীর দুটি করে গান নিয়ে আরেকটি অ্যালবাম করব। সবাইকে আমার পরিকল্পনার কথা জানাই। সামিনা আপা অনুরোধ করলেন, তাঁকে যেন মুম্বাই নিয়ে যাই_কেন না, তাঁর স্বপ্ন আশাজির সঙ্গে একটিবার দেখা করা। এরপর জুলাইয়ের শেষ দিকে আশাজি তাঁর কণ্ঠধারণের তারিখ পরিবর্তন করে ৮ ও ৯ নভেম্বর নিয়ে যান। আশাজির জন্য সনু নিগামও তারিখ দেন একই সময়। জাভেদ আলীর সময়ও মিলে যায়। আমি, আমার স্ত্রী ওয়ারদা আহমেদ এবং সামিনা চৌধুরী ঈদের আগের দিন ৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা হই। প্রথমে কলকাতায় গিয়ে জয় সরকারের সঙ্গে গান নিয়ে বসি। ৭ নভেম্বর আমরা মুম্বাই যাই। কিন্তু মুম্বাই পেঁৗছেই মন খারাপ করার মতো খবর_আশাজি অসুস্থ। তাঁর কোমরে ভীষণ ব্যথা। গান করবেন কি করবেন না_এই নিয়ে চরম দোলাচলে। সামিনা আপার মনও ভীষণ খারাপ। তিনি বললেন, 'শুধু আশাজির সঙ্গে দেখা করার জন্যই আমার এত দূর আসা। তাঁর সঙ্গে দেখা না হলে তো এখানে আসার কোনো মানে হয় না।' আমি আশাজির ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলি। তিনি সকালে জানাবেন বলে জানান।
সকালে ঘুম থেকে উঠি একটি বাক্য শুনে_'এখনো ঘুমাচ্ছেন! তাড়াতাড়ি উঠে তৈরি হয়ে নিন। আপনাকে আশাজি তাঁর বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আপনার স্ত্রী এবং সামিনা চৌধুরীকেও নিয়ে আসুন।' আমি তো আনন্দে আটখানা_ আশাজি আমাকে তাঁর বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন! এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? সামিনা আপাকে জানাতেই তিনি শুধু বললেন, 'অবশেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।'
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমরা আশাজির বাসায় যাই। তিনি আমাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা আড্ডা দিলেন। আমার গানের অনেক প্রশংসা করলেন। আমার মুখ থেকে আবার লিরিকগুলো শুনতে চাইলেন। আমি চারটি লিরিক তাঁকে শোনালাম। শুনে বললেন, আমার লেখার মধ্যে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাপ আছে। তিনি উপদেশ দিলেন_আমি যেন বেশি করে তাঁদের গান শুনি। আমি বললাম, 'এখন থেকে আরো মনোযোগ দিয়ে শুনব।' আশাজি বললেন, 'তোমার গান আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমার জন্য আটটি গান লেখো। এই গানগুলোর দু-তিনটিতে আমি নিজে সুর করব। বাকিগুলো কাকে দিয়ে করাব সেটা আমার নিজের ব্যাপার। কিন্তু আগামী পূজায় তোমার লেখা আটটি গান নিয়ে আমি অ্যালবাম করব। এর জন্য তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি শুধু মন দিয়ে গানগুলো লেখো।' তিনি তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে বিষয়টির ফলোআপ করতে বললেন। আমি আশাজিকে বললাম, 'মা'জি আমার লেখা গান নিয়ে অ্যালবাম করুন বা না করুন, মুখ দিয়ে যে বললেন_এটাই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। 'তোমার কাছে তো ভিডিও ক্যামেরা আছে। ওটাতে রেকর্ড করো। আমি আবার বলে দিচ্ছি।' আমি ভিডিও ক্যামেরা অন করলাম। তিনি পুরো বিষয়টি আবার বললেন। বললেন, ওই আটটি গান যেন মন দিয়ে লিখি। কোথায় রিলিজ হবে, কেমন করে, কাকে দিয়ে গানগুলো করাবেন পুরোটাই তিনি নিজের কাছে রেখে দিলেন। বলেন, 'এ নিয়ে তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না।' তাঁর কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজছে। এটা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে মনে করি।
আশাজির শরীর সত্যিই ভালো নেই। কোমরে ভীষণ ব্যথা। ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর একটি গানে ভয়েস দেবেন। চারটি ট্র্যাকের মধ্যে একটি ট্র্যাক বাছাই করে রেখে দেন তিনি। এরপর মাথায় হাত দিয়ে আমাকে আশীর্বাদ করে দেন।

No comments

Powered by Blogger.