মঠবাড়িয়া : বিএনপি-দুলাল বনাম মিলন
মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন দুলাল, কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) শাহজান মিলন। এই দুই নেতা গত সংসদ নির্বাচনে একত্র হয়ে নির্বাচন করেছেন। ওই নির্বাচনে এ আসনে বিএপির দলীয় প্রার্থী ছিলেন কর্নেল শাহজাহান মিলন। আর এ নির্বাচনের সমন্বয়কারী ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহল আমীন দুলাল। এখন এই দুই নেতার গতিপথ দুই দিকে বেঁকে গেছে।
কেউ কারো ছায়াও মাড়ান না। দুই জন দুই শিবিরে বিভক্ত। সেই বিভক্তি দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে। পাল্টাপাল্টি দলীয় কর্মসূচি, পৃথক অফিস, এ নিয়েই এখানকার বিএনপি।
দুই নেতার বিরোধ দেখা দেয় উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে। কাউন্সিল সভাপতি পদে হেরে যান শাহজাহান মিলন। পরে দুই দফায় তিনি দুটি পাল্টা কমিটি দাখিল করেন জেলা নেতাদের কাছে। অনেকের মতে, দলের মধ্যে তিনিই বিভক্তির জন্ম দেন। সেই থেকে রুহুল আমীন দুলাল আর শাহজাহান মিলন পরস্পরের প্রতিপক্ষ। তবে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে রুহুল আমীন দুলালের পক্ষে রয়েছে দলের মূলধারা আর শাহজাহান মিলনের পক্ষের 'ভুল ধারা'। দলীয় সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে দুজনই মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাই বিরোধ চলবে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত। তবে মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে স্থানীয় বিএনপিতে দুই পক্ষের মতবিরোধ থাকবে না বলে দুই পক্ষেরই অনেক নেতা-কর্মী দাবি করেছেন।
২০০১ সালে মঠবাড়িয়া শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠে বিএনপির একটি জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা শাহজাহান মিলন। তখন এ আসনে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন ডা. রুস্তম আলী ফরাজি। এ পর্যায়ে তিনি দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তবে গত ওয়ান ইলেভেনের সময় ডা. রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে সংস্কারপন্থীর অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দলের মধ্যে তাঁকে নিয়ে তৈরি হয় সংকট। এ সংকটের সুযোগ নেন শাহজাহান মিলন। এ সময় তিনি রুস্তম আলী ফরাজির বিরোধী মূল শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর ওয়ান ইলেভেনে সংস্কারপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিএনপির হাই কমান্ড ২০০৯ সালে তাকে বহিষ্কার করে। এ সুযোগে কর্নেল শাহজাহান মিলন স্থানীয় বিএনপির সমর্থন নিয়ে গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান। তবে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন।
২০১০ সালে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তে শাহজাহান মিলন পিরোজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ওই বছর মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে সভাপতি পদে স্থানীয় বিএনপির প্রবীণ নেতা দিলওয়ার হোসেন মুন্সীর সঙ্গে নির্বাচনে পরাজিত হন। এ সময় শাহজাহান মিলন মাত্র তিন ভোট পান। ওই কাউন্সিলে দিলওয়ার হোসেন মুন্সী সভাপতি ও রুহুল আমীন দুলাল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেদিন বিএনপির কাউন্সিলে ৭১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারসহ জেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিটি চ্যালেঞ্জ করে শাহজাহান মিলন সভাপতি পদে হেরে গিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো পাল্টা কমিটি গঠন করে জেলা কমিটিতে দাখিল করে দলের মধ্যে প্রথম বিতর্ক সৃষ্টি করেন। তবে স্থানীয় বিএনপির মূলধারার সভাপতি দিলওয়ার হোসেন মুন্সী ও সাধারণ সম্পাদক রুহল আমীন দুলালের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলে গঠিত কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে শাহজাহান মিলন নিজেকে সভাপতি করে নতুন একটি পাল্টা কমিটি জেলা কমিটির কাছে দাখিল করেন। ওই কমিটি অনুমোদন না পাওয়ায় আবার দিতীয় দফায় শাহজাহান মিলন নিজেকে উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি দাবি করে আরেকটি কমিটি দাখিল করেন। দিতীয় দফায় দাখিল করা তাঁর ওই কমিটি তৎকালীন জেলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন অনুমোদন দেন। এর পরই মূলত স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।
গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী শাহজাহান মিলনের নির্বাচনী অস্থায়ী কার্যালয়ে দলীয় অফিস বানিয়ে তিনি দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। আর দিলওয়ার-দুলালের কমিটির কার্যালয় দল-নির্ধারিত জায়গায়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় দুলাল পক্ষের নেতা-কর্মীরা মিলন পক্ষের অফিসের দলীয় সাইনবোর্ড খুলে আনেন। এ নিয়ে দুই পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পরকে দোষারোপ করা হয়। দুলাল পক্ষের দাবি কাউন্সিলে গঠিত কমিটিই মূল ধারার কমিটি। সেই কমিটির অফিসই স্থানীয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়। শাহজাহান মিলন যেটি দলীয় অফিস বলে দাবি করছেন, সেটি ছিল আসলে গত সংসদ নির্বাচন চলাকালীন তাঁর নির্বাচনী অফিস।
এর পর মিলন পক্ষের লোকজন আবার নতুন করে দলীয় সাইনবোর্ড টানালে কে বা কারা ওই সাইনবোর্ডে আলকাতরা লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় মিলন-পক্ষ দুলাল পক্ষের বিরুদ্ধে কার্যালয়ে হামলা ও সাইনবোর্ড ভাঙার অভিযোগ তোলে এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।
তবে একদিকে বিএনপির দুই পক্ষে মতবিরোধ, অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারি দলের বাধার কারণে প্রতিবাদের কোনো কর্মসূচি নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় নামতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি। ফলে একরকম ঘরোয়া কর্মসূচির মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে এখানকার বিএনপির কর্মকাণ্ড।
উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বাদল জানান, গত আড়াই বছরে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি পালনে তাঁরা পুলিশ ও সরকারদলীয় লোকজনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এ যাবৎ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ছয়টি সাজানো মামলা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের সময় সরকারদলীয় লোকজন বিএনপির অফিসে একবার সরাসরি হামলা চালিয়ে তছনছ করেছে । এসব কারণেই প্রকাশ্যে আন্দোলন-সংগ্রামে রাস্তায় নামতে পারেননি বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া দলের নেতা শাহজাহান মিলন কিছু সমর্থক নিয়ে পাল্টা দলীয় কর্মসূচি দিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের চেষ্টা করে চলেছেন। এতে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তবে দিলওয়ার হোসেন মুন্সী ও রুহুল আমীন দুলালের নেতৃত্বে মূলধারার কমিটির নেতৃত্বে স্থানীয় বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে।
টিকিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী হেমায়েত উদ্দিন বলেন, 'রুহুল আমীন দুলালের নেতৃত্বেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাই আমরা এ আসনে তাঁকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবেই প্রত্যাশা করছি।' এ ব্যাপারে বিএনপির এক পক্ষের নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) শাহজাহান মিলন বলেন, 'যারা দলের মূল ধারা বলে দাবি করছে, তারা ভুল ধারায় আছে। তারা স্বেচ্ছাচারীভাবে দল চালাতে চাইছে। গত নির্বাচনে আমি দলের প্রার্থী ছিলাম, তারা আমার নির্বাচন করার নাম করে তলে তলে দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজির হয়ে কাজ করায় আমি নির্বাচনে হেরেছি। এখনো মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছেন।'
এ ব্যাপারে বিএনপির অপর পক্ষের নেতা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পদক রুহুল আমীন দুলাল বলেন, 'শাহজাহান মিলন বিএনপির নতুন মুখ। তাঁর কার্যক্রম দলের সাংগঠনিক কাজের পরিপন্থী। তাঁকে দল মনোনয়ন দিয়ে ভুল করেছে। যিনি নিজের বাড়ির ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনে তৃতীয় হন, তাঁর নেতৃত্বে আর যা হোক মাঠের নেতা-কর্মীরা নেই। তিনি আসলে বিএনপির কথা বলে সরকারদলীয় এমপির বি-টিম হয়ে কাজ করছেন। আমাদের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। তিনি সংস্কারপন্থী। তাঁর সঙ্গে নেতা-কর্মী নেই।'
দুই নেতার বিরোধ দেখা দেয় উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে। কাউন্সিল সভাপতি পদে হেরে যান শাহজাহান মিলন। পরে দুই দফায় তিনি দুটি পাল্টা কমিটি দাখিল করেন জেলা নেতাদের কাছে। অনেকের মতে, দলের মধ্যে তিনিই বিভক্তির জন্ম দেন। সেই থেকে রুহুল আমীন দুলাল আর শাহজাহান মিলন পরস্পরের প্রতিপক্ষ। তবে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে রুহুল আমীন দুলালের পক্ষে রয়েছে দলের মূলধারা আর শাহজাহান মিলনের পক্ষের 'ভুল ধারা'। দলীয় সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে দুজনই মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাই বিরোধ চলবে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত। তবে মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে স্থানীয় বিএনপিতে দুই পক্ষের মতবিরোধ থাকবে না বলে দুই পক্ষেরই অনেক নেতা-কর্মী দাবি করেছেন।
২০০১ সালে মঠবাড়িয়া শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠে বিএনপির একটি জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা শাহজাহান মিলন। তখন এ আসনে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন ডা. রুস্তম আলী ফরাজি। এ পর্যায়ে তিনি দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তবে গত ওয়ান ইলেভেনের সময় ডা. রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে সংস্কারপন্থীর অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দলের মধ্যে তাঁকে নিয়ে তৈরি হয় সংকট। এ সংকটের সুযোগ নেন শাহজাহান মিলন। এ সময় তিনি রুস্তম আলী ফরাজির বিরোধী মূল শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর ওয়ান ইলেভেনে সংস্কারপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিএনপির হাই কমান্ড ২০০৯ সালে তাকে বহিষ্কার করে। এ সুযোগে কর্নেল শাহজাহান মিলন স্থানীয় বিএনপির সমর্থন নিয়ে গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান। তবে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন।
২০১০ সালে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তে শাহজাহান মিলন পিরোজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ওই বছর মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে সভাপতি পদে স্থানীয় বিএনপির প্রবীণ নেতা দিলওয়ার হোসেন মুন্সীর সঙ্গে নির্বাচনে পরাজিত হন। এ সময় শাহজাহান মিলন মাত্র তিন ভোট পান। ওই কাউন্সিলে দিলওয়ার হোসেন মুন্সী সভাপতি ও রুহুল আমীন দুলাল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেদিন বিএনপির কাউন্সিলে ৭১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারসহ জেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিটি চ্যালেঞ্জ করে শাহজাহান মিলন সভাপতি পদে হেরে গিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো পাল্টা কমিটি গঠন করে জেলা কমিটিতে দাখিল করে দলের মধ্যে প্রথম বিতর্ক সৃষ্টি করেন। তবে স্থানীয় বিএনপির মূলধারার সভাপতি দিলওয়ার হোসেন মুন্সী ও সাধারণ সম্পাদক রুহল আমীন দুলালের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলে গঠিত কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে শাহজাহান মিলন নিজেকে সভাপতি করে নতুন একটি পাল্টা কমিটি জেলা কমিটির কাছে দাখিল করেন। ওই কমিটি অনুমোদন না পাওয়ায় আবার দিতীয় দফায় শাহজাহান মিলন নিজেকে উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি দাবি করে আরেকটি কমিটি দাখিল করেন। দিতীয় দফায় দাখিল করা তাঁর ওই কমিটি তৎকালীন জেলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন অনুমোদন দেন। এর পরই মূলত স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।
গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী শাহজাহান মিলনের নির্বাচনী অস্থায়ী কার্যালয়ে দলীয় অফিস বানিয়ে তিনি দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। আর দিলওয়ার-দুলালের কমিটির কার্যালয় দল-নির্ধারিত জায়গায়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় দুলাল পক্ষের নেতা-কর্মীরা মিলন পক্ষের অফিসের দলীয় সাইনবোর্ড খুলে আনেন। এ নিয়ে দুই পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পরকে দোষারোপ করা হয়। দুলাল পক্ষের দাবি কাউন্সিলে গঠিত কমিটিই মূল ধারার কমিটি। সেই কমিটির অফিসই স্থানীয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়। শাহজাহান মিলন যেটি দলীয় অফিস বলে দাবি করছেন, সেটি ছিল আসলে গত সংসদ নির্বাচন চলাকালীন তাঁর নির্বাচনী অফিস।
এর পর মিলন পক্ষের লোকজন আবার নতুন করে দলীয় সাইনবোর্ড টানালে কে বা কারা ওই সাইনবোর্ডে আলকাতরা লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় মিলন-পক্ষ দুলাল পক্ষের বিরুদ্ধে কার্যালয়ে হামলা ও সাইনবোর্ড ভাঙার অভিযোগ তোলে এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।
তবে একদিকে বিএনপির দুই পক্ষে মতবিরোধ, অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারি দলের বাধার কারণে প্রতিবাদের কোনো কর্মসূচি নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় নামতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি। ফলে একরকম ঘরোয়া কর্মসূচির মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে এখানকার বিএনপির কর্মকাণ্ড।
উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বাদল জানান, গত আড়াই বছরে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি পালনে তাঁরা পুলিশ ও সরকারদলীয় লোকজনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এ যাবৎ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ছয়টি সাজানো মামলা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের সময় সরকারদলীয় লোকজন বিএনপির অফিসে একবার সরাসরি হামলা চালিয়ে তছনছ করেছে । এসব কারণেই প্রকাশ্যে আন্দোলন-সংগ্রামে রাস্তায় নামতে পারেননি বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া দলের নেতা শাহজাহান মিলন কিছু সমর্থক নিয়ে পাল্টা দলীয় কর্মসূচি দিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের চেষ্টা করে চলেছেন। এতে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তবে দিলওয়ার হোসেন মুন্সী ও রুহুল আমীন দুলালের নেতৃত্বে মূলধারার কমিটির নেতৃত্বে স্থানীয় বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে।
টিকিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী হেমায়েত উদ্দিন বলেন, 'রুহুল আমীন দুলালের নেতৃত্বেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাই আমরা এ আসনে তাঁকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবেই প্রত্যাশা করছি।' এ ব্যাপারে বিএনপির এক পক্ষের নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) শাহজাহান মিলন বলেন, 'যারা দলের মূল ধারা বলে দাবি করছে, তারা ভুল ধারায় আছে। তারা স্বেচ্ছাচারীভাবে দল চালাতে চাইছে। গত নির্বাচনে আমি দলের প্রার্থী ছিলাম, তারা আমার নির্বাচন করার নাম করে তলে তলে দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজির হয়ে কাজ করায় আমি নির্বাচনে হেরেছি। এখনো মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছেন।'
এ ব্যাপারে বিএনপির অপর পক্ষের নেতা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পদক রুহুল আমীন দুলাল বলেন, 'শাহজাহান মিলন বিএনপির নতুন মুখ। তাঁর কার্যক্রম দলের সাংগঠনিক কাজের পরিপন্থী। তাঁকে দল মনোনয়ন দিয়ে ভুল করেছে। যিনি নিজের বাড়ির ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনে তৃতীয় হন, তাঁর নেতৃত্বে আর যা হোক মাঠের নেতা-কর্মীরা নেই। তিনি আসলে বিএনপির কথা বলে সরকারদলীয় এমপির বি-টিম হয়ে কাজ করছেন। আমাদের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। তিনি সংস্কারপন্থী। তাঁর সঙ্গে নেতা-কর্মী নেই।'
No comments