উন্মাদ রাজার কাণ্ড
রাজা-বাদশাদের শাসনামলে অনেক রাজাই ছিলেন ভীষণ অত্যাচারী। তাদের অত্যাচারে কখনও কখনও প্রজারা পালিয়ে যেত এলাকা ছেড়ে। রাজ্য হয়ে পড়ত বিরান ভূমি। চন্দ্রদ্বীপে এমনই এক অত্যাচারী রাজা ছিলেন শিবনারায়ণ। রোহিণীকুমার সেন প্রণীত 'বাকলা' গ্রন্থে উল্লেখ আছে, রাজা শিবনারায়ণের পিতা উদয়নারায়ণ ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু এবং সদ্বিবেচক। তিনি সবসময় রাজ্যের উন্নতি কামনা করতেন। কিন্তু তারই সন্তান রাজা শিবনারায়ণ ছিলেন
অতিমাত্রায় অলস, উন্মাদ এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণ। তার লাম্পট্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল চন্দ্রদ্বীপের অসংখ্য নারী। শিবনারায়ণের অত্যাচারে রাজমহল, এমনকি প্রজারাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। অনেক প্রজাই আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন। অসৎ কর্মচারীদের আস্কারায় রাজা অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন। প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে মর্মাহত হতে থাকেন রাজা শিবনারায়ণের প্রধান মহিষী_ রানী দুর্গাবতী। এক সময় শিবনারায়ণ প্রতাব পরগনার একাংশ ইজারা দেন রামগোপাল নামে এক ব্যক্তির কাছে। ওই সম্পত্তি ফিরে পেতে শিবনারায়ণের হিতাকাঙ্ক্ষীরা মামলা করেন জাহাঙ্গীরনগরে [বর্তমান ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল]। মামলার বিচারক ছিলেন মি. এন গ্গ্নোভার এবং হরিরাম মলি্লক। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর এ মামলার নিষ্পত্তি হয়। রামগোপাল স্বেচ্ছায় ইজারা বাতিল করতে বাধ্য হন। এর কিছুদিন আগেই মোগল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে লর্ড ক্লাইভ তথা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি পেয়েছিল। যা-ই হোক, উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটতে থাকে রাজা শিবনারায়ণের। এক সময় পাহারাদার দিয়ে রাজাকে আগলে রাখা শুরু হয়। এরপরও তার অত্যাচারের মাত্রা বিন্দু পরিমাণ কমল না। অসৎ কর্মচারীদের অতি উৎসাহে তা বাড়তেই থাকে। একরাতে সবার অলক্ষ্যে বাইরে বের হয়ে পড়েন রাজা শিবনারায়ণ। আগুন ধরিয়ে দেন রাজপ্রাসাদে। অনুকূল বাতাস পেয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অট্টালিকায়। ভস্মীভূত হয় পুরনো দলিল, মূল্যবান জিনিসসহ বিপুল সম্পদ। রাজপরিবারের সদস্য এবং চাকরবাকররা কোনো রকমে বেঁচে যায়। ওই অগি্নকাণ্ড থেকে কাত্যায়ণী ও মদনগোপালের মন্দির এবং নহবতখানা কোনো রকমে রক্ষা পেয়েছিল বলে 'বাকলা' গ্রন্থে উল্লেখ আছে। এর পরও বেশ কিছুদিন বেঁচে ছিলেন রাজা শিবনারায়ণ। তার মৃত্যুর পর তারই বালকপুত্র জয়নারায়ণ চন্দ্রদ্বীপের রাজা হন। রাজা নিতান্তই বালক বলে রানী দুর্গাবতীই শাসন করতেন চন্দ্রদ্বীপ।
সাইফুল ইসলাম
সাইফুল ইসলাম
No comments