নিজ সেনাদের মৃত্যুর মুখে ফেলতে চান না ওবামাঃ আফগান যোদ্ধাদের আক্রমণ তীব্র হচ্ছে
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদার বাহিনী দিন দিন মনোবল হারিয়ে ফেলছে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত আফগান সেনারা আবার তাদের প্রতিরোধ শক্তি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। টানা আট বছর ধরে অব্যাহত রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে চলতি মাসে নিহত হয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মার্কিন সেনা। এই ঘটনা আফগানিস্তানে যুদ্ধে লিপ্ত বিদেশি বাহিনীর জন্য বড় ধরনের স্লমকি হয়েও দেখা দিয়েছে।
উপর্যুপরি হামলায় লণ্ডভণ্ড এ পার্বত্য দেশটি দৃশ্যত যুদ্ধক্লান্ত হলেও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন মোকাবিলার তাকত যে হারায়নি, সাম্প্রতিক হামলাগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করে। এ ঘটনায় মার্কিন সেনা ছাউনি থেকে শুরু করে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আফগান যোদ্ধাদের আক্রমণে মার্কিন সেনা হতাহতের সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। এদিন দক্ষিণ আফগানিস্তানে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা বিসেম্ফারণে এক বেসামরিক ব্যক্তিসহ মারা গেছে সাত মার্কিন সেনা। একই দিনে বিসেম্ফারণে মারা গেছে আরেকজন। এর আগের দিন অর্থাত্ ২৬ অক্টোবর তিনটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ১১ জন মার্কিন সেনাসহ নিহত হয় ১৪ জন। জানা যায়, গত চার বছরে একদিনের ব্যবধানে এটিই বেশি সংখ্যক মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা। এ নিয়ে শুধু অক্টোবর মাসেই নিহত মার্কিন সেনার সংখ্যা দাঁড়াল ৫৫ জনে। অনেকেরই ধারণা ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পূর্বাপর আফগানিস্তান প্রসঙ্গে যে মনোভাব ব্যক্ত করছেন তাতে যুদ্ধের প্রকৃতি কমবেশি পাল্টে যেতে পারে। গত ২৬ অক্টোবর ফ্লোরিডায় নৌ-ঘাঁটি পরিদর্শন করতে গিয়ে নৌ-সেনাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে নতুন করে আরও সেনা পাঠানোর প্রশ্নে তার কোনো তাড়া নেই। তিনি আরও বলেন, খুব প্রয়োজন না হলে আমি আমার দেশের সেনাদের মৃত্যুর মুখে ফেলে দিতে পারি না। সম্প্রতি আরও বেশি সেনা পাঠানোর জন্য আফগানিস্তানে কর্মরত সেনা কমান্ডারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা আফগানিস্তানে সেনা পাঠানোর ব্যাপারে দ্বিধান্বিত বলে কিছুদিন আগে তার কড়া সমালোচনা করেছিলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। নৌ সেনাদের উদ্দেশে ওবামার দেয়া বক্তৃতায় এরও জবাব উঠে এসেছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, কোনো ক্ষতিকর কাজের জন্য সেনা পাঠানোর আগে এর বিভিন্ন দিক ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। অযথা সেনাদের জীবন বিপন্ন করার অনিচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। তার এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতি এবং আফগান যুদ্ধের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ওবামা পূর্বসূরিদের পথ থেকে সরে যাচ্ছেন। এদিকে মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোসল্ট জানিয়েছে, আফগান যুদ্ধের প্রতিবাদে প্রথমবারের মতো পদত্যাগ করেছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। আফগানিস্তানে কর্মরত ওই কূটনীতিক পররাষ্ট্র দফতরে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন গত ১০ সেপ্টেম্বর। উচ্চপর্যায়ের পদ দেয়ার টোপ দিয়েও তাকে পদত্যাগ থেকে বিরত থাকতে রাজি করতে পারেনি মার্কিন প্রশাসন। এমনকি তিনি এ যুদ্ধের ব্যাপারে মার্কিন নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, অনেক আফগান হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে শুধু এই কারণে যে, তাদের দেশে মার্কিন সেনা সদস্যরা অবস্থান করছে। তিনি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা কমানো এবং সেখানকার দুর্নীতিবাজ সরকারকে সমর্থন দেয়া বন্ব্দ করার জন্য ওবামা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। কথায় আছে, বোয়ালের ডিম বোয়ালেই গালিয়ে দেয়। এক্ষেত্রেও যেন তাই হয়েছে। সম্ভবত এই পদত্যাগের ঘটনা প্রেসিডেন্ট ওবামার সাম্প্রতিক আফগান নীতিকে কমবেশি প্রভাবান্বিত করেছে এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি নতুন করে মূল্যায়ন করছে হোয়াইট হাউস। অন্যদিকে মার্কিন কূটনীতিকের পদত্যাগ যুদ্ধরত আফগান বাহিনীকে পরোক্ষভাবে হলেও নৈতিক সাহস জুগিয়েছে। সাম্প্রতিক আক্রমণের তীব্রতা থেকে তা অনেকটাই আঁচ করা যাচ্ছে। মার্কিন প্রশাসন বিষয়টিকে কীভাবে নেয় সেটিই এখন দেখার বিষয়। আফগানিস্তানের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে দখলদার বাহিনীর লাগাতার আট বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিণতি অঙ্ক কষে বের করার প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বের সব শান্তিকামী মানুষ এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে আফগানিস্তানের মুক্তি চায়। এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অনুসৃত নীতি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
No comments