ইউরোপে বসবাসরত লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী ঈদের দিনও ছুটি পান না by আব্দুল মোমিত রোমেল
ইউরোপে
বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রায় ৪০ ভাগই রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে
যুক্ত। প্রায় ২ লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন এই সেক্টরে। ঈদের দিনে
নামাজ আদায়ের সময়টুকু বাদ দিলে পূর্ণদিবস কাজ করতে হয় তাদের। এজন্য
ওভারটাইম কিংবা অন্য কোন সুবিধাও দেওয়া হয় না। বাংলাদেশি মালিকরাও তাদের
বঞ্চিত করেন ঈদের আনন্দ থেকে। হোটেলকর্মীদের কোনও অধিকারভিত্তিক সংগঠন না
থাকায় মালিক সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ । ফ্রান্স, ইল্যান্ড, স্পেন,
ইতালি, পর্তুগালে ঈদের দিন সরকারি ছুটি না থাকার কারণ দেখিয়ে এই অমানবিক
পরিস্থিতি চলমান রেখেছে তারা। সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে কেবল ক্রিসমাসের দিনেই
ছুটি মেলে সেখানকার বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট কর্মীদের। তাদের আকুতি, সেই
ছুটি কেড়ে নিয়ে হলেও অন্তত ঈদুল ফিতরের দিনে তাদের ছুটি দেওয়া হোক।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতর, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মেসি, জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন হাউস, সুপার মার্কেট পর্যন্ত প্রায় সব সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীই সেখানকার প্রচলিত শ্রম ও কর্মসংস্থান আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ছুটি পায়। সেই সঙ্গে শ্রমিক-কর্পোরেট কর্মী-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-মন্ত্রী-ক্লিনার-কেয়ারটেকার-নিরাপত্তাকর্মী সব পেশাজীবীই গ্রীষ্মের ছয় সপ্তাহ, ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার হলিডে আর ব্যাংক হলিডের মতো ছুটিগুলো নির্ধারিত সময়ে অথবা পরবর্তীতে ভোগ করে থাকেন। রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানস্বীকৃত এসব নাগরিক ও আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয় কেবল বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে কর্মরতদের। এই খাতের লক্ষাধিক শ্রমিক-ওয়েটার-কুক-শেফ-ম্যানেজার-অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার কেউই বছরের এই নির্ধারিত জাতীয় ছুটির দিনে সবেতন ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এমনকি বছরের দুই ঈদের দিনেও ছুটি থেকে বঞ্চিত হন তারা। কেননা, ক্রিসমাসের দিন ছাড়া রেস্টুরেন্ট কখনও বন্ধ থাকে না।
রোকনউদ্দিন আহমেদ নামে একজন শেফ বলেন ‘বৃটেনে বছরে ৩৬৪ দিন রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে। বন্ধ থাকে কেবল বড়দিনে (ক্রিসমাসের দিন)। ক্রিসমাসে আমাদের কাজ করতে আপত্তি নেই, তবু অন্তত রোজার ঈদে আমাদের ছুটি দেওয়া হোক। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের অভিবাসীদের মধ্যে যদিও ঈদের দিনের এই অনানুষ্ঠানিক ছুটি ভোগের সুযোগ পান মুসলিমরা। ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টকর্মীরা বা অধিবাসীরা। মালিকরা যখন ঈদের দিনে পরিবার-বন্ধু নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন, হোটেলে কর্মরতরা তখন রান্নাঘরে কিংবা বারের পেছনে কিংবা ওয়েটার হিসেবে কারও খাবার পরিবেশন করে দিন পার করেন। ঈদের আনন্দ তাদের কাছে কেবলই বাংলাদেশে রেখে যাওয়া স্মৃতি।
বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট কর্মীরা বহুদিন ধরেই ঈদের ছুটির দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে নিজেদের কোনও সংগঠন না থাকায় সম্মিলিতভাবে এই দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি তারা। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তারা প্রতিবাদ জোরালো করতেও পারেন নি।
ফ্রান্সে একটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের শেফ জাকির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পূর্ণ একটি মাস রোজা রেখে যখন আনন্দের ঈদ আসে তখন মালিক আমাদের ছুটি দেয় না। তাই তিনি অভিমান করে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে একতা নেই বলেই মালিকপক্ষ ঈদের ছুটি থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে পারেন।’
ফ্রান্সের একজন সিনিয়র সাংবাদিক ফারুক নেওয়াজ খান, কমিউনিটি নেতা সালে চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর ঈদের আগে এ নিয়ে কথা ওঠে। তবে সুরাহা হয় না। এজন্য দুই পক্ষের সংলাপ জরুরি। তবে সমস্যা হলো, ফ্রান্সে রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের কোনও সংগঠন নেই। ঐক্যবদ্ধ কোনও প্লাটফর্ম না থাকাটাই তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে সবথেকে বড় বাধা।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় একজন কমিউনিটি নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, ঈদের দিনটিকে ছুটি ঘোষণার দাবি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এলেও মালিকদের টনক নড়েনি। এ ছাড়াও ইউরোপে বসবাসরত প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি জানান, ঈদের দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছেন । সেই দাবি বাস্তবায়িত হলে ঈদের দিনটিতে রেস্টুরেন্ট মালিকরাও কর্মীদের ছুটি দিতে বাধ্য হবেন। ইংল্যান্ড প্রবাসী রাশু আহমেদ, ইতালি প্রবাসী নাজমুল হোসাইন, ফ্রান্স প্রবাসী লুৎফুর রহমান বাবু, স্পেন প্রবাসী এ আর লিটু জানান, বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট যে সমস্ত মালিক আছেন তাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করা প্রয়োজন এবং তাদের কর্মীদেরকে বছরের দুইটা দিন ঈদ আনন্দ দেশের মতো উপভোগ করতে দেওয়া উচিত। তারা বলেন, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন এবং সুনাম অর্জন করছেন । এটা অব্যাহত রাখতে আমাদের মতো কর্মীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতর, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মেসি, জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন হাউস, সুপার মার্কেট পর্যন্ত প্রায় সব সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীই সেখানকার প্রচলিত শ্রম ও কর্মসংস্থান আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ছুটি পায়। সেই সঙ্গে শ্রমিক-কর্পোরেট কর্মী-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-মন্ত্রী-ক্লিনার-কেয়ারটেকার-নিরাপত্তাকর্মী সব পেশাজীবীই গ্রীষ্মের ছয় সপ্তাহ, ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার হলিডে আর ব্যাংক হলিডের মতো ছুটিগুলো নির্ধারিত সময়ে অথবা পরবর্তীতে ভোগ করে থাকেন। রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানস্বীকৃত এসব নাগরিক ও আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয় কেবল বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে কর্মরতদের। এই খাতের লক্ষাধিক শ্রমিক-ওয়েটার-কুক-শেফ-ম্যানেজার-অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার কেউই বছরের এই নির্ধারিত জাতীয় ছুটির দিনে সবেতন ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এমনকি বছরের দুই ঈদের দিনেও ছুটি থেকে বঞ্চিত হন তারা। কেননা, ক্রিসমাসের দিন ছাড়া রেস্টুরেন্ট কখনও বন্ধ থাকে না।
রোকনউদ্দিন আহমেদ নামে একজন শেফ বলেন ‘বৃটেনে বছরে ৩৬৪ দিন রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে। বন্ধ থাকে কেবল বড়দিনে (ক্রিসমাসের দিন)। ক্রিসমাসে আমাদের কাজ করতে আপত্তি নেই, তবু অন্তত রোজার ঈদে আমাদের ছুটি দেওয়া হোক। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের অভিবাসীদের মধ্যে যদিও ঈদের দিনের এই অনানুষ্ঠানিক ছুটি ভোগের সুযোগ পান মুসলিমরা। ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টকর্মীরা বা অধিবাসীরা। মালিকরা যখন ঈদের দিনে পরিবার-বন্ধু নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন, হোটেলে কর্মরতরা তখন রান্নাঘরে কিংবা বারের পেছনে কিংবা ওয়েটার হিসেবে কারও খাবার পরিবেশন করে দিন পার করেন। ঈদের আনন্দ তাদের কাছে কেবলই বাংলাদেশে রেখে যাওয়া স্মৃতি।
বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট কর্মীরা বহুদিন ধরেই ঈদের ছুটির দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে নিজেদের কোনও সংগঠন না থাকায় সম্মিলিতভাবে এই দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি তারা। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তারা প্রতিবাদ জোরালো করতেও পারেন নি।
ফ্রান্সে একটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের শেফ জাকির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পূর্ণ একটি মাস রোজা রেখে যখন আনন্দের ঈদ আসে তখন মালিক আমাদের ছুটি দেয় না। তাই তিনি অভিমান করে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে একতা নেই বলেই মালিকপক্ষ ঈদের ছুটি থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে পারেন।’
ফ্রান্সের একজন সিনিয়র সাংবাদিক ফারুক নেওয়াজ খান, কমিউনিটি নেতা সালে চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর ঈদের আগে এ নিয়ে কথা ওঠে। তবে সুরাহা হয় না। এজন্য দুই পক্ষের সংলাপ জরুরি। তবে সমস্যা হলো, ফ্রান্সে রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের কোনও সংগঠন নেই। ঐক্যবদ্ধ কোনও প্লাটফর্ম না থাকাটাই তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে সবথেকে বড় বাধা।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় একজন কমিউনিটি নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, ঈদের দিনটিকে ছুটি ঘোষণার দাবি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এলেও মালিকদের টনক নড়েনি। এ ছাড়াও ইউরোপে বসবাসরত প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি জানান, ঈদের দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছেন । সেই দাবি বাস্তবায়িত হলে ঈদের দিনটিতে রেস্টুরেন্ট মালিকরাও কর্মীদের ছুটি দিতে বাধ্য হবেন। ইংল্যান্ড প্রবাসী রাশু আহমেদ, ইতালি প্রবাসী নাজমুল হোসাইন, ফ্রান্স প্রবাসী লুৎফুর রহমান বাবু, স্পেন প্রবাসী এ আর লিটু জানান, বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট যে সমস্ত মালিক আছেন তাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করা প্রয়োজন এবং তাদের কর্মীদেরকে বছরের দুইটা দিন ঈদ আনন্দ দেশের মতো উপভোগ করতে দেওয়া উচিত। তারা বলেন, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন এবং সুনাম অর্জন করছেন । এটা অব্যাহত রাখতে আমাদের মতো কর্মীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
No comments