এটিএম বুথে অভিনব চুরি: সতর্কতার কারণে অর্থ সংকটের আশঙ্কা
ঈদের
ছুটি শুরু হওয়ার আগেই এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) বুথে টাকা তুলতে গিয়ে
ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথে নগদ টাকার প্রবাহ কম
থাকায় গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া
গেছে। গতকাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে
পারেননি অনেক গ্রাহক। টাকা না থাকায় বেশকিছু এটিএম বুথ বন্ধ রাখার মতো
ঘটনাও ঘটেছে। এতে সাধারণ গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
টাকার যোগান না থাকলে ঈদের ছুটিতে এ ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শুক্রবার রাতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে সাইবার ক্রিমিনালরা অভিনব কায়দায় টাকা তোলার ঘটনায় বুথগুলোতে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছে নিজ নিজ ব্যাংকগুলো। এ কারণে বুথগুলোতে টাকার প্রবাহ কম।
জানা গেছে, বুথ থেকে জালিয়াতি করে অর্থ তুলে নিলেও তার রেকর্ড পাওয়া যায়নি ব্যাংকের সার্ভারে কিংবা কোনো গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা যায়নি। অর্থাৎ টাকাটা সরাসরি এটিএম মেশিন থেকে বের করে নিয়েছে দুর্বৃত্ত চক্র। কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে এক ধরনের কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলোর মেশিনে দিয়ে সরাসরি অর্থ বের করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আটক করেছে ইউক্রেনের ৫ নাগরিককে।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি ব্যাংকের সেবা ঘর (এটিএম বুথ) বন্ধ দেখা যায়। এ সময় বুথটির ভেতরে কর্মকর্তারা থাকলেও কলাপসিবল গেট বন্ধ করে রাখা হয়। বুথটির নিরাপত্তাকর্মী জানান, বুথে সমস্যা হয়েছে। টাকা না থাকার কারণে বুথ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ থেকে টানা ৫ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক। এ সময় কেবল এটিএম বুথ ও মোবাইল ব্যাংকিং চালু থাকবে।
এদিকে খুলনার ব্যাংক থেকে মজুরির টাকা তুলতে গিয়ে নতুন দুর্ভোগে পড়েছেন পাটকল শ্রমিকরা। ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় এই দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরই খালিশপুর এলাকার সব এটিএম বুথে টাকা শেষ হয়ে যায়। শুক্রবার সকালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বুথে টাকা দিলেও ১১টার মধ্যে তা শেষ হয়ে গেছে। ফলে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও তা হাতে পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।
ঈদের আগে শেষ ব্যাংকিং লেনদেন ছিল গতকাল। ফলে ব্যাংকে ছিল উপছে পড় ভিড়। ব্যাংকে লাইনে দাঁড়ানো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয়স্থল ছিল বুথ। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এটিএম বুথগুলোতেও নেটওয়ার্ক সমস্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দু-একটি ব্যাংকের বুথে অবশ্য নেটওয়ার্ক সমস্যার কথা ‘গ্রাহকের অবগতির স্বার্থে’ ব্যাংক কর্তৃপক্ষই সাদা কাগজে লিখে রেখেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত বেশকিছু ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথের সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া আছে। এখন কিছু বুথে নেটওয়ার্কের সমস্যার কথা শুনেছি। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, এটিএম বুথ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দেয়া হয়েছিল। জোরদার করতে বলা হয়েছিল নিজেদের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু বিষয়টিতে গুরুত্ব না দেয়ায় বিদেশি সাইবার ক্রিমিনালরা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল।
এর আগে ২০১৬ সালে বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৪টি এটিএম বুথে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য-উপাত্ত চুরি করে এটিএম থেকে অর্থ তোলার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে এসব তথ্য চুরি করা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ৪টি বুথে ১২০০ কার্ডে লেনদেন হয়েছে। তবে তথ্য চুরি ও কার্ড ক্লোন হয়েছে ৩৬টির মতো কার্ডে এবং এভাবে প্রায় ২০ লাখের মতো অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছিলো। আর ওই ঘটনাতেও উঠে এসেছিলো কয়েকজন বিদেশী নাগরিকের নাম। এসব কারণেই কার্ড ও এটিএম বুথ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ থাকে। এই বন্ধের সময় যেন কোন দুষ্টচক্র কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে সাইবার নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের ৬ নাগরিক রিমান্ডে: অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ইউক্রেনের ছয় নাগরিককে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দেনিস ভিতোমস্কি (২০), নাজারি ভজনোক (১৯), ভালেনতিন সোকোলোভস্কি (৩৭), সের্গেই উইক্রাইনেৎস (৩৩), শেভচুক আলেগ (৪৬) ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি (৩৭)। ঢাকার বিভিন্ন ডাচ বাংলা ব্যাংকের অটোমেটেড টেলার মেশিনের (এটিএম) বুথ থেকে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই বিদেশী চক্রটি। এই চক্রের পলাতক আরেক সদস্য ইউক্রেন নাগরিক ভিটালি’র (পাসপোর্ট নম্বর এফই ৮০৪৪৮) কাছে অন্তত ১০ লাখ টাকা রয়েছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তজার্তিক জালিয়াত চক্রের সদস্য। এর আগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩০টি দেশের এটিএম বুথ টার্গেট করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তারা। গত ১৫ দিনে তারা এই টাকা হাতিয়ে নেয়। এদের মধ্যে একটি গ্রুপের সাত জন গত ৩০শে মে বাংলাদেশে আসে। এরপর তারা ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বুথ থেকে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ইউক্রেনের নাগরিক। তারা আন্তজার্তিক ব্যাংক জালিয়াত চক্রের সদস্য। এরা টুরিষ্ট ভিসায় দেশে ঢুকেছেই মুলত ব্যাংকের বুথ থেকে জালিয়াতের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতে। এরা আন্তজার্তিক পুলিশ সংস্থা এফবিআইএর তালিকাভুক্ত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় বলে জানান তিনি।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিনব পদ্ধতিতে চক্রের সদস্যরা এটিএম বুথ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। তাদের এই আধুনিক কৌশল কোনোভাবেই বাংলাদেশের ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জানা থাকার কথা নয়। সারা বিশ্বেই এটা একটি নতুন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ব্যাংকের সার্ভারে কোন রেকর্ড থাকে না। এতদিন এটিএম কার্ড হোল্ডারদের কার্ড নকল করে বা ক্লোন করে এ ধরণের জালিয়াতি করা হতো। এ চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও একজন এখনও পলাতক রয়েছে। তার কাছেই ডাচ বাংলার বুথ থেকে হাতিয়ে নেয়া সাড়ে চার লাখ টাকা রয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
ডিবির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রায় এক সময়ে আন্তজার্তিক এটিএম বুথ জালিয়াতি চক্রের সাত সদস্য গত ৩০শে মে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা ঢাকার পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অবস্থান করে এটিএম বুথে কিভাবে ঢুকবে, টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর তারা কিভাবে পালাবে এমন নানান পরিকল্পনা করতে থাকে। এরপর গত শুক্রবার খিলগাঁও এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে এদের দু’জন তিন লাখ উঠায়।
তারা টাকা হাতিয়ে নিয়ে বুথ ত্যাগ করার সময় কিছু টাকা বুথে ফেলে যায়। এতেই সন্দেহ বাড়তে থাকে। পরে বিষয়টি বুথের নিরাপত্তারক্ষী ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানালে তারা ওই বুথে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজে দেখেন, দুই বিদেশি নাগরিক বুথ থেকে টাকা উঠিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু সিসিটিভিতে ওই দৃশ্য দেখা গেলেও ব্যাংকের সার্ভারে এই টাকা উত্তোলনের কোনও হিসাব জমা পড়েনি। এতে ব্যাপক সন্দেহ তাদের মনে দানা বাঁধে। পরের দিন শনিবার একই বুথ থেকে তারা টাকা হাতিয়ে নিতে ঢোকে। তারা মুখে মাস্ক দিয়ে ও মাথায় ক্যাপ দিয়ে বুথে ঢোকে। তবে বুথে ঢুকে বেশি সময় নেয়ায় সন্দেহ হয় নিরাপত্তারক্ষীর। তখন তিনি আশপাশের লোকজনকে ডেকে সহযোগিতা চান।
বিষয়টি টের পেয়ে দুই বিদেশি নাগরিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন একজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পালিয়ে যাওয়া ইউক্রেন নাগরিকের নাম ভিটালি (পাসপোর্ট নম্বর এফই ৮০৪৪৮)। বুথ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা তার কাছে রয়েছে বলে আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। তবে সে যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য দেশের সবকটি ইমিগ্রেশন পয়েন্টে তার বিষয়ে এলার্ট জারি করা হয়েছে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ডিবিকে জানিয়েছে, তাদের বুথ থেকে জালিয়াত চক্র মোট সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
হোটেও ওলিও ড্রিম হ্যাভেন কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৩০শে মে সাতজন ইউক্রেনের নাগরিক তাদের হোটেলের অষ্টম তলার ৮০৫ ও ৮০৭ নম্বরের দুটি কক্ষ ভাড়া নেয়। তাদের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। তারা দিনের বেলা ঘনঘন বাইরে বের হতো। আবার দ্রুতই কক্ষে প্রবেশ করত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শুক্রবার রাতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে সাইবার ক্রিমিনালরা অভিনব কায়দায় টাকা তোলার ঘটনায় বুথগুলোতে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছে নিজ নিজ ব্যাংকগুলো। এ কারণে বুথগুলোতে টাকার প্রবাহ কম।
জানা গেছে, বুথ থেকে জালিয়াতি করে অর্থ তুলে নিলেও তার রেকর্ড পাওয়া যায়নি ব্যাংকের সার্ভারে কিংবা কোনো গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা যায়নি। অর্থাৎ টাকাটা সরাসরি এটিএম মেশিন থেকে বের করে নিয়েছে দুর্বৃত্ত চক্র। কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে এক ধরনের কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলোর মেশিনে দিয়ে সরাসরি অর্থ বের করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আটক করেছে ইউক্রেনের ৫ নাগরিককে।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি ব্যাংকের সেবা ঘর (এটিএম বুথ) বন্ধ দেখা যায়। এ সময় বুথটির ভেতরে কর্মকর্তারা থাকলেও কলাপসিবল গেট বন্ধ করে রাখা হয়। বুথটির নিরাপত্তাকর্মী জানান, বুথে সমস্যা হয়েছে। টাকা না থাকার কারণে বুথ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ থেকে টানা ৫ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক। এ সময় কেবল এটিএম বুথ ও মোবাইল ব্যাংকিং চালু থাকবে।
এদিকে খুলনার ব্যাংক থেকে মজুরির টাকা তুলতে গিয়ে নতুন দুর্ভোগে পড়েছেন পাটকল শ্রমিকরা। ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় এই দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরই খালিশপুর এলাকার সব এটিএম বুথে টাকা শেষ হয়ে যায়। শুক্রবার সকালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বুথে টাকা দিলেও ১১টার মধ্যে তা শেষ হয়ে গেছে। ফলে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও তা হাতে পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।
ঈদের আগে শেষ ব্যাংকিং লেনদেন ছিল গতকাল। ফলে ব্যাংকে ছিল উপছে পড় ভিড়। ব্যাংকে লাইনে দাঁড়ানো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয়স্থল ছিল বুথ। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এটিএম বুথগুলোতেও নেটওয়ার্ক সমস্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দু-একটি ব্যাংকের বুথে অবশ্য নেটওয়ার্ক সমস্যার কথা ‘গ্রাহকের অবগতির স্বার্থে’ ব্যাংক কর্তৃপক্ষই সাদা কাগজে লিখে রেখেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত বেশকিছু ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথের সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া আছে। এখন কিছু বুথে নেটওয়ার্কের সমস্যার কথা শুনেছি। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, এটিএম বুথ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দেয়া হয়েছিল। জোরদার করতে বলা হয়েছিল নিজেদের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু বিষয়টিতে গুরুত্ব না দেয়ায় বিদেশি সাইবার ক্রিমিনালরা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল।
এর আগে ২০১৬ সালে বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৪টি এটিএম বুথে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য-উপাত্ত চুরি করে এটিএম থেকে অর্থ তোলার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে এসব তথ্য চুরি করা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ৪টি বুথে ১২০০ কার্ডে লেনদেন হয়েছে। তবে তথ্য চুরি ও কার্ড ক্লোন হয়েছে ৩৬টির মতো কার্ডে এবং এভাবে প্রায় ২০ লাখের মতো অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছিলো। আর ওই ঘটনাতেও উঠে এসেছিলো কয়েকজন বিদেশী নাগরিকের নাম। এসব কারণেই কার্ড ও এটিএম বুথ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ থাকে। এই বন্ধের সময় যেন কোন দুষ্টচক্র কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে সাইবার নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের ৬ নাগরিক রিমান্ডে: অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ইউক্রেনের ছয় নাগরিককে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দেনিস ভিতোমস্কি (২০), নাজারি ভজনোক (১৯), ভালেনতিন সোকোলোভস্কি (৩৭), সের্গেই উইক্রাইনেৎস (৩৩), শেভচুক আলেগ (৪৬) ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি (৩৭)। ঢাকার বিভিন্ন ডাচ বাংলা ব্যাংকের অটোমেটেড টেলার মেশিনের (এটিএম) বুথ থেকে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই বিদেশী চক্রটি। এই চক্রের পলাতক আরেক সদস্য ইউক্রেন নাগরিক ভিটালি’র (পাসপোর্ট নম্বর এফই ৮০৪৪৮) কাছে অন্তত ১০ লাখ টাকা রয়েছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তজার্তিক জালিয়াত চক্রের সদস্য। এর আগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩০টি দেশের এটিএম বুথ টার্গেট করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তারা। গত ১৫ দিনে তারা এই টাকা হাতিয়ে নেয়। এদের মধ্যে একটি গ্রুপের সাত জন গত ৩০শে মে বাংলাদেশে আসে। এরপর তারা ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বুথ থেকে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ইউক্রেনের নাগরিক। তারা আন্তজার্তিক ব্যাংক জালিয়াত চক্রের সদস্য। এরা টুরিষ্ট ভিসায় দেশে ঢুকেছেই মুলত ব্যাংকের বুথ থেকে জালিয়াতের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতে। এরা আন্তজার্তিক পুলিশ সংস্থা এফবিআইএর তালিকাভুক্ত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় বলে জানান তিনি।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিনব পদ্ধতিতে চক্রের সদস্যরা এটিএম বুথ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। তাদের এই আধুনিক কৌশল কোনোভাবেই বাংলাদেশের ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জানা থাকার কথা নয়। সারা বিশ্বেই এটা একটি নতুন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ব্যাংকের সার্ভারে কোন রেকর্ড থাকে না। এতদিন এটিএম কার্ড হোল্ডারদের কার্ড নকল করে বা ক্লোন করে এ ধরণের জালিয়াতি করা হতো। এ চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও একজন এখনও পলাতক রয়েছে। তার কাছেই ডাচ বাংলার বুথ থেকে হাতিয়ে নেয়া সাড়ে চার লাখ টাকা রয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
ডিবির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রায় এক সময়ে আন্তজার্তিক এটিএম বুথ জালিয়াতি চক্রের সাত সদস্য গত ৩০শে মে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা ঢাকার পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অবস্থান করে এটিএম বুথে কিভাবে ঢুকবে, টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর তারা কিভাবে পালাবে এমন নানান পরিকল্পনা করতে থাকে। এরপর গত শুক্রবার খিলগাঁও এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে এদের দু’জন তিন লাখ উঠায়।
তারা টাকা হাতিয়ে নিয়ে বুথ ত্যাগ করার সময় কিছু টাকা বুথে ফেলে যায়। এতেই সন্দেহ বাড়তে থাকে। পরে বিষয়টি বুথের নিরাপত্তারক্ষী ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানালে তারা ওই বুথে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজে দেখেন, দুই বিদেশি নাগরিক বুথ থেকে টাকা উঠিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু সিসিটিভিতে ওই দৃশ্য দেখা গেলেও ব্যাংকের সার্ভারে এই টাকা উত্তোলনের কোনও হিসাব জমা পড়েনি। এতে ব্যাপক সন্দেহ তাদের মনে দানা বাঁধে। পরের দিন শনিবার একই বুথ থেকে তারা টাকা হাতিয়ে নিতে ঢোকে। তারা মুখে মাস্ক দিয়ে ও মাথায় ক্যাপ দিয়ে বুথে ঢোকে। তবে বুথে ঢুকে বেশি সময় নেয়ায় সন্দেহ হয় নিরাপত্তারক্ষীর। তখন তিনি আশপাশের লোকজনকে ডেকে সহযোগিতা চান।
বিষয়টি টের পেয়ে দুই বিদেশি নাগরিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন একজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পালিয়ে যাওয়া ইউক্রেন নাগরিকের নাম ভিটালি (পাসপোর্ট নম্বর এফই ৮০৪৪৮)। বুথ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা তার কাছে রয়েছে বলে আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। তবে সে যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য দেশের সবকটি ইমিগ্রেশন পয়েন্টে তার বিষয়ে এলার্ট জারি করা হয়েছে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ডিবিকে জানিয়েছে, তাদের বুথ থেকে জালিয়াত চক্র মোট সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
হোটেও ওলিও ড্রিম হ্যাভেন কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৩০শে মে সাতজন ইউক্রেনের নাগরিক তাদের হোটেলের অষ্টম তলার ৮০৫ ও ৮০৭ নম্বরের দুটি কক্ষ ভাড়া নেয়। তাদের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। তারা দিনের বেলা ঘনঘন বাইরে বের হতো। আবার দ্রুতই কক্ষে প্রবেশ করত।
No comments