ব্যতিক্রমী এক খতিব by মোহাম্মদ ওমর ফারুক
মসজিদ
কিংবা ময়দান। আলেমদের বক্তব্য আকৃষ্ট করে মানুষকে। সাধারণ মানুষ থেকে উচ্চ
শিক্ষিত। ধর্মের ব্যাখ্যা পেতে, অনুপ্রাণিত হতে অনেকেই ছুটে যান মাহফিলে।
জুমার নামাজের আগে মসজিদে মসজিদে ইমামরাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বয়ান দেন
মুসল্লিদের উদ্দেশে। ইসলামের প্রারম্ভিক জমানায় খুৎবায় সাধারণ সমকালীন
বিষয়ে বক্তব্য রাখতেন আলেমরা। দিতেন দিক-নির্দেশনা। কিন্তু বাংলাদেশে
মসজিদের খতিবরা সাধারণত প্রাসঙ্গিক বা সমকালীন বিষয়ে কথা বলেন কম। এর মধ্যে
বেশির ভাগ ইমামই বিতর্কিত হওয়ার ভয়ে থাকেন, রয়েছে অন্য ভয়ও। এই বাস্তবতায়
ব্যতিক্রম এক খতিবের বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ
করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্নীতি নিয়ে তার বক্তব্য আলোচনার
ঝড় তুলেছে। ব্যতিক্রমি এই খতিবের নাম মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ
সাইফুল্লাহ। তিনি রাজধানীর পল্লবীর মসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব। অনেকেই
বলছেন তিনি মানুষের মনে কথা বলছেন। ওয়াজ এমনই হওয়া উচিত।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বালিশ দুর্নীতি নিয়ে বয়ানে তিনি বলেন, বালিশের দাম ছয় হাজার টাকা পড়ে গেছে। তা নয় পড়লো বালিশ যাতে ভালো হয়। কিন্তু বালিশ তুলতে গিয়ে সাত আট’শ টাকা করে লাগছে। নিচ থেকে বেডের মধ্যে নামিয়ে দিচ্ছে সাত’শ টাকা। এটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা না। আমি তো ভয়ংকর ভাবে বলছি এটাকে কেউ বলছে পুকুর চুরি, কিন্তু আমি তো বলবো সমুদ্র চুরি। সুমদ্র চুরি বলবো এ কারণে আমরা বালিশের দাম জানি, কোন বালিশ কত টাকা। বালিশ তোলার শ্রমিকের দামও জানি, কম হয়েছে কত, বেশি হয়েছে কত। কিন্তু বলেন তো ওখানে প্লাটিনাম, ইউরিনিয়াম, পারমাণবিক যে বস্তু গুলো আছে যেটা পুড়িয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। আমরা জানিই না এসবের রং কি, কিভাবে বিক্রি করে। এগুলো কেজিতে মাপ না মিটারের মাপ, না হালিতে মাপ, কিছু জানেন আপনারা? তাহলে যেটা জানেন সেটার দুর্নীতি আমারা বুঝতেছি কিন্তু যেটার রং জানি না, আকৃতি জানি না, কখনো দেখিই নাই মূল উপাদান ওইটাই। এখানে যে কি পরিমান চুরি হয়েছে সেটা বলতে পারেন? এ জন্য এটার নাম দিয়েছি আমি সমুদ্র চুরি। ওদের কাছে পাপ এখন আর কোনো সাবজেক্টেই না, পাপ এখন ওদের কাছে ওপেনআপ হয়ে গেছে। সারা বিশ্বে যেখানে পারমাণবিক বিদুৎ প্রকল্প বাদ দিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ অনেক ঝুঁকি নিয়ে করছে।
নারী অধিকার নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। নারীদের নিয়ে একটি ওয়াজে তিনি বলেন, যেসব নারী সংসারের কাজ করে তাদের আমরা তেমন মূল্যায়ন করতে চাই না। তবে তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ কোনো কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। কারণ আপনার মা বা স্ত্রী ঘরে যে কাজগুলো করেন তা তাদের জন্য ইহসান। তারা তা করতে বাধ্য নয়। রোজায় সাহরির কথা উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের মা ও স্ত্রীরা সাহরিতে সবার আগে উঠেছে, খাবারগুলো গরম করেছে, সবাইকে ডাকছেন। বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছেন, আবার খাওয়ার পরে সেই বাসনগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করছে। আপনি খেয়ে মসজিদে যাচ্ছেন নামাজ পড়তে। তিনি কিন্তু বসে নেই। বাসন ধোয়া ও মোছার কাজ শেষ হলেই তিনি নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাতে যান। খবর নিয়েছেন কখনো? তাদের প্রতি সম্মান দেখান, তাদের খবর নিন। পরিবারের ভালোবাসা থেকে তারা এটি করছেন। কিন্তু আপনি আমি কি করছি তাদের জন্য। ভেবে দেখেছেন কি? তাই এই মানুষগুলোর জন্য সহানুভূতিশীল হতে হবে, ভালোবাসতে হবে, তাদের ধন্যবাদ জানাতে হবে। না হলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপারেটিভ রিলিজিয়াস বিষয়ে পিএইচডি করছেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে হাদিসে অর্নাস, মার্স্টাস করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ শহরে উকিলপাড়া। বাবা নওগাঁ আলিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুহাদ্দিস ও নওগাঁ কাঁচারি মসজিদের খতিব। তার শৈশব কৈশর কেটেছে নওগাঁ শহরেই। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, নারীদের নিয়ে সবাই কথা বলেন। হয়তো সবাই নারীদের ভালোর জন্যই বলেন। নারীদের পর্দা করার জন্য বলেন। কিন্তু সেটা বলেন টিটকারী করে, তাদের হেয় করে। অনেক বক্তাকেই দেখি নারীদের ব্যাঙ্গ করে বলেন তারা ইন্ডিয়ান সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তাদের আর কোনো কাজ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্ত সব নারী তো এটা করছে না। তাহলে যখন নারীরা এ ওয়াজ গুলো শুনছেন তখন তাদের কেমন লাগছে, এই বিষয়টা কেউ বলতে পারবেন? আমার স্ত্রী আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, ঢাকা বারের সদস্য, তিনি জুশিডিয়ার সার্ভিসে পরিক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন। তারপরও তো তিনি আমার সংসার দেখছেন, কষ্ট করছেন। নারীদের প্রাপ্ত সম্মানটুকু দিতে হবে। আমার পারিবারিক শিক্ষাই ছিল এটা। পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্রের ওয়াজের ব্যপারে তিনি বলেন, আমি মসজিদে খুতবা দেয়ার সময় গুনাহ্র বিষয়টি বুঝাতে গিয়ে এটার উদাহরন দিয়েছি। আমি মনে করি সবাই সবার দায়িত্ব নিয়ে নিজের কাজটা করলে দেশটা অনেক এগিয়ে যাবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বালিশ দুর্নীতি নিয়ে বয়ানে তিনি বলেন, বালিশের দাম ছয় হাজার টাকা পড়ে গেছে। তা নয় পড়লো বালিশ যাতে ভালো হয়। কিন্তু বালিশ তুলতে গিয়ে সাত আট’শ টাকা করে লাগছে। নিচ থেকে বেডের মধ্যে নামিয়ে দিচ্ছে সাত’শ টাকা। এটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা না। আমি তো ভয়ংকর ভাবে বলছি এটাকে কেউ বলছে পুকুর চুরি, কিন্তু আমি তো বলবো সমুদ্র চুরি। সুমদ্র চুরি বলবো এ কারণে আমরা বালিশের দাম জানি, কোন বালিশ কত টাকা। বালিশ তোলার শ্রমিকের দামও জানি, কম হয়েছে কত, বেশি হয়েছে কত। কিন্তু বলেন তো ওখানে প্লাটিনাম, ইউরিনিয়াম, পারমাণবিক যে বস্তু গুলো আছে যেটা পুড়িয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। আমরা জানিই না এসবের রং কি, কিভাবে বিক্রি করে। এগুলো কেজিতে মাপ না মিটারের মাপ, না হালিতে মাপ, কিছু জানেন আপনারা? তাহলে যেটা জানেন সেটার দুর্নীতি আমারা বুঝতেছি কিন্তু যেটার রং জানি না, আকৃতি জানি না, কখনো দেখিই নাই মূল উপাদান ওইটাই। এখানে যে কি পরিমান চুরি হয়েছে সেটা বলতে পারেন? এ জন্য এটার নাম দিয়েছি আমি সমুদ্র চুরি। ওদের কাছে পাপ এখন আর কোনো সাবজেক্টেই না, পাপ এখন ওদের কাছে ওপেনআপ হয়ে গেছে। সারা বিশ্বে যেখানে পারমাণবিক বিদুৎ প্রকল্প বাদ দিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ অনেক ঝুঁকি নিয়ে করছে।
নারী অধিকার নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। নারীদের নিয়ে একটি ওয়াজে তিনি বলেন, যেসব নারী সংসারের কাজ করে তাদের আমরা তেমন মূল্যায়ন করতে চাই না। তবে তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ কোনো কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। কারণ আপনার মা বা স্ত্রী ঘরে যে কাজগুলো করেন তা তাদের জন্য ইহসান। তারা তা করতে বাধ্য নয়। রোজায় সাহরির কথা উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের মা ও স্ত্রীরা সাহরিতে সবার আগে উঠেছে, খাবারগুলো গরম করেছে, সবাইকে ডাকছেন। বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছেন, আবার খাওয়ার পরে সেই বাসনগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করছে। আপনি খেয়ে মসজিদে যাচ্ছেন নামাজ পড়তে। তিনি কিন্তু বসে নেই। বাসন ধোয়া ও মোছার কাজ শেষ হলেই তিনি নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাতে যান। খবর নিয়েছেন কখনো? তাদের প্রতি সম্মান দেখান, তাদের খবর নিন। পরিবারের ভালোবাসা থেকে তারা এটি করছেন। কিন্তু আপনি আমি কি করছি তাদের জন্য। ভেবে দেখেছেন কি? তাই এই মানুষগুলোর জন্য সহানুভূতিশীল হতে হবে, ভালোবাসতে হবে, তাদের ধন্যবাদ জানাতে হবে। না হলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপারেটিভ রিলিজিয়াস বিষয়ে পিএইচডি করছেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে হাদিসে অর্নাস, মার্স্টাস করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ শহরে উকিলপাড়া। বাবা নওগাঁ আলিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুহাদ্দিস ও নওগাঁ কাঁচারি মসজিদের খতিব। তার শৈশব কৈশর কেটেছে নওগাঁ শহরেই। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, নারীদের নিয়ে সবাই কথা বলেন। হয়তো সবাই নারীদের ভালোর জন্যই বলেন। নারীদের পর্দা করার জন্য বলেন। কিন্তু সেটা বলেন টিটকারী করে, তাদের হেয় করে। অনেক বক্তাকেই দেখি নারীদের ব্যাঙ্গ করে বলেন তারা ইন্ডিয়ান সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তাদের আর কোনো কাজ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্ত সব নারী তো এটা করছে না। তাহলে যখন নারীরা এ ওয়াজ গুলো শুনছেন তখন তাদের কেমন লাগছে, এই বিষয়টা কেউ বলতে পারবেন? আমার স্ত্রী আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, ঢাকা বারের সদস্য, তিনি জুশিডিয়ার সার্ভিসে পরিক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন। তারপরও তো তিনি আমার সংসার দেখছেন, কষ্ট করছেন। নারীদের প্রাপ্ত সম্মানটুকু দিতে হবে। আমার পারিবারিক শিক্ষাই ছিল এটা। পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্রের ওয়াজের ব্যপারে তিনি বলেন, আমি মসজিদে খুতবা দেয়ার সময় গুনাহ্র বিষয়টি বুঝাতে গিয়ে এটার উদাহরন দিয়েছি। আমি মনে করি সবাই সবার দায়িত্ব নিয়ে নিজের কাজটা করলে দেশটা অনেক এগিয়ে যাবে।
No comments