ট্রাম্প বনাম পর্নো তারকা: সেয়ানে সেয়ান
ঝড়ের
মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ঝড়ের নাম স্টর্মি ড্যানিয়েলস। এটি তাঁর
পোশাকি নাম। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের
অভিনয়শিল্পী, প্রকৃত নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। জানা গেছে, এক দশক আগে
ড্যানিয়েলস ও ট্রাম্প রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। সময়টা ছিল এমন, যখন
ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়া সদ্য পুত্রসন্তান প্রসব করেছেন। ট্রাম্পের
নারী কেলেঙ্কারি গোপন কিছু নয়। তিনি ধর্মযাজক নন, এ কথা জেনেই রিপাবলিকান
ভোটাররা তাঁকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন। সমস্যা বাধল এ বছরের গোড়ার
দিকে, এ নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর। এতে
বলা হলো ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন ড্যানিয়েলসকে চুপ রাখতে ১ লাখ ৩০
হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছেন। তিনি নাকি টাকাটা দিয়েছেন নিজের পকেট থেকে।
শুধু এই উদ্দেশ্যে তিনি এক ‘ফেক’ কোম্পানি খোলেন, যার মাধ্যমে অর্থের
আদান-প্রদান হয়। কোহেন এক বিবৃতিতে স্বীকার করেন, টাকাটা তিনি দিয়েছেন, তবে
এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিছু জানেন না। কোহেন কেন তাঁর মক্কেলকে
না জানিয়ে এত টাকা একজন পর্নো তারকাকে দিয়েছেন, তার কোনো ব্যাখ্যা অবশ্য
তিনি দেননি। মার্কিন আইনে মক্কেলের সম্মতি ছাড়া তাঁর পক্ষে কোনো অর্থ
প্রদান করা অপরাধ বলে বিবেচিত। আরও জানা গেল, অর্থপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবে গত
বছরের অক্টোবরে ড্যানিয়েলস ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ‘অপ্রকাশ’ বা
নন-ডিসক্লোজার চুক্তি করেছেন। এই চুক্তি অনুসারে, দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কোনো
কথা বলতে পারবেন না তিনি। যদি বলেন, তাহলে যখন ও যতবার মুখ খুলবেন, তাঁকে
ততবার এক মিলিয়ন ডলার করে জরিমানা দিতে হবে। এই চুক্তিতে অবশ্য ড্যানিয়েলস
অথবা ট্রাম্প কেউই নিজের নাম ব্যবহার করেননি। ড্যানিয়েলসের নাম রাখা হয়েছিল
পেগি প্যাটারসন, আর ট্রাম্পের নাম ছিল ডেনিস ডেনিসন। চুক্তিপত্রে পেগি
প্যাটারসনের স্বাক্ষর থাকলেও ডেনিস ডেনিসন অর্থাৎ ট্রাম্পের কোনো স্বাক্ষর
ছিল না। সম্ভবত ভবিষ্যতে বিপদে পড়লে অস্বীকার করতে পারেন, সে জন্যই ট্রাম্প
নিজের নামের নিচে কোনো স্বাক্ষর করেননি, এই অভিমত নিরপেক্ষ
আইনজীবীদের।জানুয়ারিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ এই নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা
হওয়ার পর বেঁকে বসলেন ড্যানিয়েলস। তাঁর দাবি, অর্থ আদান-প্রদানের কথা ফাঁস
করে দিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবী তাঁদের মধ্যকার চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। অতএব এ
ব্যাপারে বিস্তারিত বলাতে তাঁর, অর্থাৎ ড্যানিয়েলসের এখন আর কোনো বাধা নেই।
তিনি এখানে-সেখানে সাক্ষাৎকার দেওয়া শুরু করলেন। শোনা গেল, সঠিক দাম পেলে
তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রণয়ের বিস্তারিত বিবরণ, এমনকি প্রমাণপত্র
দিতেও প্রস্তুত আছেন।সম্ভবত এতে ভীত হয়েই ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে
ক্যালিফোর্নিয়ার এক আদালতের শরণাপন্ন হলেন কোহেন। ‘অপ্রকাশ’ চুক্তি দেখিয়ে
বললেন, এ নিয়ে কোনো কথা তিনি বলবেন না, ড্যানিয়েলস তেমন প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন। এখন কথা বললে তাঁকে চুক্তিমতো জরিমানা দিতে হবে। তাঁর সঙ্গে একমত
হয়ে আদালত ড্যানিয়েলসের নামে ‘নিরোধক নির্দেশ’ বা রেস্ট্রেইনিং অর্ডার
দিয়েছেন।ড্যানিয়েলের আইনজীবীরা বলছেন, যে চুক্তিতে এক পক্ষের স্বাক্ষর নেই,
তার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। অতএব ‘নীরব’ থাকার যে চুক্তির কথা ট্রাম্পের
আইনজীবী দাবি করেছেন, তারও কোনো আইনি ভিত্তি নেই। তাঁরা পাল্টা আদালতের
শরণাপন্ন হয়েছেন, যাতে এই চুক্তি বাতিল ঘোষণা করা হয়।এত দিন হোয়াইট হাউস
ড্যানিয়েলসের বিষয়টি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। গত বুধবার এ নিয়ে ভিন্ন সুর
শোনা গেল। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স
বলেন, ‘নিরোধক চুক্তি’ নিয়ে রায়ের পর এ নিয়ে তাঁদের আর বলার কিছু নেই,
আদালত এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের পক্ষে রায় দিয়েছেন। মুখ বন্ধ রাখার জন্য যে
১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ড্যানিয়েলকে দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে ট্রাম্পের
সম্মতি ছিল কি না, জানতে চাইলে সারাহ স্যান্ডার্স কিছু
বলেননি।পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, নিরোধক চুক্তির কথা স্বীকার করার মাধ্যমে এই
নারীর সঙ্গে ট্রাম্পের রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল, সে কথা হোয়াইট হাউস কার্যত
মেনে নিয়েছে। এটা নিয়ে এখন নানা মুখরোচক খবর বেরোচ্ছে। ট্রাম্প এর আগেও
একাধিক নারী কেলেঙ্কারিতে নিজের মুখে কালি মাখিয়েছেন, মোটা টাকা দিয়ে
তাঁদের মুখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এবার তিনি এমন একজনের হাতে
পড়েছেন, যাঁর লক্ষ্য এক বা দুই লাখ ডলার নয়, আরও মোটা অঙ্ক। নিজে পর্নো
ফিল্মের তারকা, নগ্ন হতে তাঁর কোনো দ্বিধা নেই। হয়তো ভবিষ্যতে তাঁদের
দুজনকে নিয়ে কোনো ফিল্মের অথবা বই লেখার চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
এদিকে সবাই প্রশ্ন করা শুরু করেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আসল নাম কী?
ডোনাল্ড ট্রাম্প না ডেনিস ডেনিসন?
হাসান ফেরদৌস যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি
হাসান ফেরদৌস যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি
No comments