ত্রিপুরার নির্বাচন ও সিপিএমের দেউলিয়া রাজনীতি by বদরুদ্দীন উমর
ত্রিপুরা
ভারতের একটা ছোট রাজ্য। কিন্তু সেখানে কয়েকদিন আগের নির্বাচনে সিপিএমের
পরাজয় ও বিজেপির বিজয় নিয়ে এখন ভারতজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। বিশেষ করে
পশ্চিমবঙ্গে এর বড় রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ত্রিপুরায় সদ্য সাবেক
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেছেন, এ পরাজয় তাদের কাছে একেবারে অপ্রত্যাশিত,
সব হিসাবের বাইরে। এর অর্থ দাঁড়ায়, তাদের হিসাবে ভুল ছিল। এই ভুলের
পর্যালোচনা তারা করবেন। কিন্তু পর্যালোচনার আগেই যে ভুলটি চোখে পড়ার মতো তা
হল, ত্রিপুরার আদিবাসী এলাকার দিকে ঠিকমতো নজর না দেয়া। সেখানে আরএসএস ও
বিজেপির প্রচারকরা যে লেগেপড়ে থেকে নির্বাচন সামনে রেখে তাদের কাজ
একটানাভাবে করে এসেছে, তার কোনো হিসাব না রাখা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে,
কংগ্রেসকে হটিয়ে সিপিএমকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানিক সরকারের
পূর্ববর্তী বিখ্যাত মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী আদিবাসী এলাকায় পড়ে থেকে
তাদের মধ্যে সাংগঠনিক কাজ ও মতাদর্শগত সংগ্রাম করেছিলেন।
আদিবাসী ও সমতলের
বাঙালিদের মধ্যে দ্বন্দ্বের একটা মীমাংসা এভাবে সম্ভব হয়েছিল। মানিক সরকারও
২০ বছর ধরে নৃপেন চক্রবর্তীর এই কাজ ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু এই নির্বাচনে
এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা ছিল অনেকটা হাতল ছেড়ে দেয়ার মতো। এই ভুলের উপলব্ধি
এখন তাদের হয়েছে। কিন্তু ভুলের খেসারত তো তাদের দিতেই হবে। এই ভুল সংশোধন
করে পরে তারা তাদের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে পারবেন কিনা এটা ভবিষ্যতের
ব্যাপার। তবে এটা শুধু ত্রিপুরার সিপিএমের ওপরই নির্ভর করে না। তাদের
কেন্দ্রীয় কমিটির নীতি ও লাইনও এদিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া ও চীনে
বিপ্লব দীর্ঘদিন আগে হওয়া সত্ত্বেও ভারতে বিপ্লব না হওয়ার সর্বপ্রধান কারণ,
প্রথম থেকেই তারা ভারতে সংসদীয় রাজনীতির ফাঁদে পড়ে। সেই ফাঁদে পড়া বগার
ক্রন্দনধ্বনিই এখন সিপিএমের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মুখে শোনা যাচ্ছে। একদিকে
ভারতের শোষিত-নির্যাতিত কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ এবং অন্যদিকে সংসদীয় পথে
ক্ষমতায় বসে শাসক শ্রেণীর অংশ হিসেবে গা ভাসিয়ে দেয়ার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব
আছে সেই দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে এখন সিপিএম ও তাদের বাম জোটের অবস্থা শোচনীয়।
No comments